বাইশ বছর পর ইউএস ওপেনের ফাইনালে মুখোমুখি হয়েছিলেন দুই কিশোরী। তাদের একজন কানাডার লেইলেহ ফার্নান্দেজ। যার বয়স ১৯ বছর। অন্যজন ব্রিটেনের এমা রাদুকানু। যার বয়স ১৮। বাংলাদেশ সময় শনিবার দিবাগত রাতে অনুষ্ঠিত ইউএস ওপেনের ফাইনালে কানাডার ফার্নান্দেজকে সরাসরি সেটে (৬-৪ ও ৬-৩) হারিয়ে ইউএস ওপেনের শিরোপা জিতেছেন ব্রিটিশ কিশোরী রাদুকানু। রূপকথার পথ বেয়ে গড়েছেন নতুন এক ইতিহাস। ব্রিটেনের ৪৪ বছরের অপেক্ষার পালা ঘুচিয়েছেন।
এ যেন রূপকথাকেও হার মানিয়েছে। ইউএস ওপেনে তার যাত্রাটা ছিল অবিশ্বাস্য এক যাত্রা। যেটার সমাপ্তি ঘটলো গ্র্যান্ডস্লাম জয়ের মধ্য দিয়ে। তাও ক্যারিয়ারের প্রথম গ্র্যান্ডস্লাম। অথচ তিনি ইউএস ওপেনের অংশ নিয়েছিলেন একেবারে আনকোড়া হিসেবে। র্যাঙ্কিংয়ে যার অবস্থান ছিল ১৫০।
একাধিকবারের গ্র্যান্ডস্লাম জয়ীসহ বাঘা বাঘা টেনিস তারকাদের ভীড়ে তার পক্ষে বাজি ধরার মতো লোক খুঁজে পাওয়া দূরের কথা প্রশ্নই ছিল না। কিন্তু সে-ই কিনা হলেন ইউএস ওপেনের নতুন রাণী। গড়লেন ইতিহাস।
রাদুকানু বাছাইপর্ব তথা ওয়াইল্ড কার্ডের মাধ্যমে ইউএস ওপেনের এবারের আসরের মূলপর্বে টিকিট পেয়েছিলেন। যিনি বাছােইপর্ব পেরুতে পারবেন কিনা সেটা নিয়েও ছিল সন্দেহ। তাইতো তিনি দেশে ফেরার ফিরতি টিকিটও কেটে রেখেছিলেন! এরপর যিনি যা করেছেন সেটা অবিশ্বাস্য। রূপকথার চেয়েও বেশি কিছু।
বাছাইপর্ব থেকে শুরু করে ইউএস ওপেনের গোটা আসরে একটি সেটও হারেননি। তিনিই টেনিসের উন্মুক্ত যুগের প্রথম খেলোয়াড় যিনি বাছাইপর্ব পেরিয়ে এসে ইউএস ওপেনের সেমিফাইনাল খেলেছেন এবং ফাইনাল খেলে শিরোপা জিতেছেন। তাছাড়া এটা ছিল তার দ্বিতীয় কোনো বড় টুর্নামেন্টে অংশ নেওয়া। আর প্রথমবার ওঠেন সেমিফাইনালে। এরপর ফাইনালে।
২০০৪ সালে মারিয়া শারাপোভা সবচেয়ে কম বয়সী টেনিস খেলোয়াড় হিসেবে কোনো গ্র্যান্ডস্লামের ফাইনালে উঠেছিলেন। এবার তাকে পেছনে ফেলে সবচেয়ে কম বয়সী টেনিস খেলোয়াড় হিসেবে ফাইনালে উঠেছিলেন ব্রিটিশ এই টেনিস বিস্ময় বালিকা। আর ফাইনাল জিতে গড়লেন ইতিহাস। ব্রিটেনকে এনে দিলেন উৎসবের উপলক্ষ। কারণ, ১৯৭৭ সালের পর প্রথম কোনে ব্রিটিশ নারী হিসেবে গ্র্যান্ডস্লাম জিতলেন তিনি।
অবশ্য কানাডিয়ান কিশোরী ফার্নান্দেজের এবারের ইউএস ওপেনের যাত্রাটাও ছিল বিস্ময়কর। এবারের আসরের জায়ান্ট কিলার ছিলেন তিনি। বড় বড় তারকাদের হারিয়ে ফাইনালে এসেছিলেন র্যাঙ্কিংয়ে ৭৩ নম্বরে থাকা ফার্নান্দেজ। তিনি হারিয়েছিলেন সাবেক দুই ইউএস ওপেন চ্যাম্পিয়নকে। তারা হলেন র্যাঙ্কিংয়ের ৩ নম্বরে থাকা নাওমি ওসাকা ও ১৭ নম্বরে থাকা অ্যাঙ্গেলিক কেরবার। হারিয়েছিলেন ৫ নম্বরে থাকা ইলিনা ভিতোলিনাকেও।
সেমিফাইনালে তিনি র্যাঙ্কিংয়ের দুইয়ে থাকা বেলারুশের আরিনা সাবালেঙ্কাকে হারিয়েছিলেন ৭-৬ (৩), ৪-৬ ও ৬-৪ সেটে। উঠেছিলেন ফাইনালে। কিন্তু শেষ হাসিটা হাসতে পারলেন না। ব্রিটিশ কিশোরী রাদুকানুর কাছে হেরে রানার-আপ হয়েই সন্তুষ্ট থাকতে হলো।