বাড়াবাড়ি ও ছাড়াছাড়ির কবলে শবে বরাত-৩
সুনানে ইবনে মাজায় বর্ণিত হয়েছে : হযরত আলী ইবনে আবু তালেব (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ
পৃথিবী সৃষ্টির শুভ লগ্ন হতে শুরু করে পৃথিবী বিলয় পর্যন্ত একটা অখণ্ড সময় অতিক্রম করছে পৃথিবী ও তার বাসিন্দারা। এই অখণ্ড সময়কে ভাগ করে পৃথিবীবাসীদের চলার পথকে সহজতর করে দেয়া হয়েছে। যেমন, সেকেণ্ড, মিনিট, ঘণ্টা, দিন-রাত, সপ্তাহ, মাস, বছর, যুগ, কাল, কালান্তর ইত্যাদি। এই ব্যবস্থাপনা আল্লাহপাক নিজেই করে দিয়েছেন। তারপরও সৃষ্টির সেরা মানুষ এই অখণ্ড সময়কে নিজেদের সুবিধামতো ব্যবহার করে চলেছে। কারণ, মানুষ এই পৃথিবীতে আল্লাহর ‘খলীফা’ বা প্রতিনিধি। প্রতিনিধিত্বশীল দায়িত্ব ও কর্তব্য পালনে পারঙ্গম।
আল কোরআন গভীর মনোযোগের সাথে অধ্যায়ন করলে দেখা যায় যে, মহান আল্লাহপাক সরাসরি খলীফা শব্দটি আল কোরআনে দু’বার ব্যবহার করেছেন। যথা: (ক) আর (স্বরণ কর সে সময়ের কথা) যখন তোমার পালনকর্তা ফিরিশতাদেরকে বললেন: আমি পৃথিবীতে একজন প্রতিনিধি বানাতে যাচ্ছি, তখন ‘ফিরিশতাগণ বলল, আপনি কি পৃথিবীতে এমন কাউকে সৃষ্টি করবেন যে দাঙ্গা হাঙ্গামার সৃষ্টি করবে এবং রক্তপাত ঘটাবে? অথচ আমরা সর্বদাই আপনার গুণকীর্তন করছি এবং আপনার পবিত্র সত্তাকে স্মরণ করছি। তিনি বললেন: নিঃসন্দেহে আমি যা জানি, তোমরা তা জান না। (সূরা বাকারাহ : আয়াত-৩০)।
(খ) হে দাউদ! আমি তোমাকে পৃথিবীতে প্রতিনিধি করেছি, অতএব তুমি মানুষের মাঝে ন্যায়সঙ্গতভাবে রাজত্ব কর এবং খেয়াল খুশির অনুস্বরণ কর না। তা তোমাকে আল্লাহর পথ থেকে বিচ্যুত করে দেবে। নিশ্চয়ই যারা আল্লাহর পথ থেকে বিচ্যুত হয়, তাদের জন্যে রয়েছে কঠোর শাস্তি, এ কারণে যে, তারা হিসাব দিবসকে ভুলে যায়। (সূরা সোয়াদ : আয়াত-২৬)।
উল্লিখিত দু’টি আয়াতের প্রথমটিতে ‘খলীফা’ শব্দের দ্বারা সামগ্রিকভাবে প্রতিনিধিত্বশীল দায়িত্বপালনের কথা বুঝানো হয়েছে এবং দ্বিতীয়টিতে বিশেষ করে রাষ্ট্রীয় ক্ষমতা ন্যায়সঙ্গতভাবে ব্যবহারের নির্দেশ প্রদান করা হয়েছে। এতে স্পষ্টতই বুঝা যায় যে, মানুষের ব্যক্তিগত জীবন হতে শুরু করে, পারিবারিক, সামাজিক এবং দেশ ও জাতীয় জীবনের সকল অঙ্গনে এমনকি গোটা বিশ্বের সর্বত্র শান্তি ও নিরাপত্তা বিধানে ন্যায়পরায়ণতার সাথে সকল মানুষ প্রতিনিধিকে নির্দেশ পালন করতে হবে। অন্যথায় প্রতিনিধিত্বশীল দায়িত্ব পালন করা হবে না এবং কঠোর শাস্তির নিগঢ় হতেও রেহাই পাওয়া যাবে না।
আর ‘খলীফা’ শব্দটির বহুবচন ‘খুলাফা’ শব্দটি আল কোরআনে তিনবার ব্যবহৃত হয়েছে। যথা: (ক) তোমরা কি আশ্চর্য বোধ করছ যে, তোমাদের কাছে, তোমাদের পালনকর্তার পক্ষ থেকে তোমাদের মধ্য থেকেই একজনের বাচনিক উপদেশ এসেছে, যাতে সে তোমাদেরকে ভীতি প্রদর্শন করে। তোমরা স্মরণ কর, যখন আল্লাহ তোমাদেরকে কাউমে নূহের পর ‘খলীফা’ (প্রতিনিধি) করেছেন এবং তোমাদের দেহের বিস্তৃতি বেশি করেছেন। তোমরা আল্লাহর নেয়ামতসমূহ স্মরণ কর যাতে তোমাদের মঙ্গল হয়। (সূরা আ’রাফ : আয়াত-৬৯)।
(খ) তোমরা স্মরণ কর, যখন তোমাদেরকে আদ জাতির পরে খলীফা করেছেন, তোমাদেরকে পৃথিবীতে ঠিকানা দিয়েছেন। তোমরা নরম মাটিতে অট্টালিকা নির্মাণ কর এবং পর্বত গাত্র খনন করে প্রকোষ্ঠ নির্মাণ কর। অতএব আল্লাহর অনুগ্রহ স্মরণ কর এবং পৃথিবীতে অনর্থ সৃষ্টি কর না। (সূরা আ’রাফ : আয়াত-৭৪)।
বলতো কে অসহায়দের ডাকে সাড়া দেন যখন সে ডাকে এবং কষ্ট দূরীভূত করেন এবং তোমাদেরকে পূর্ববর্তীদের খলীফা (স্থলাভিষিক্ত) করেন। সুতরাং আল্লাহর সাথে অন্য কোনো উপাস্য আছে কি? তোমরা অতি সামান্যই চিন্তা-ফিকির কর। (সূরা নামল : আয়াত-৬২)।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।