Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

কমতে শুরু করেছে বন্যার পানি

ক্ষতিগ্রস্ত স্কুলে শিক্ষার্থী উপস্থিতি নিয়ে শঙ্কা

ইনকিলাব ডেস্ক | প্রকাশের সময় : ১২ সেপ্টেম্বর, ২০২১, ১২:০০ এএম

দেশের বিভিন্ন স্থানে কমতে শুরু করেছে বন্যার পানি। পরিস্থিতি উন্নতির দিকে থাকলেও শুরু হয়েছে ভাঙনের আশঙ্কা। কুড়িগ্রামে বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত প্রায় দুশ’ প্রাথমিক ও মাধ্যমিক স্কুলে শিক্ষার্থী উপস্থিতি নিয়ে শঙ্কায় শিক্ষক ও অভিভাবকরা। এ বছর বর্ষা ও বন্যায় ৭টি স্কুল নদীগর্ভে বিলীন হওয়ায় এখনও স্থানাভাবে স্কুল গৃহ নির্মাণ সম্ভব হয়নি। ঝুঁকিতে থাকা আরো ২০টি স্কুলের শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা আছেন ভাঙনের আতঙ্কে। টাঙ্গাইলে যমুনা ও অভ্যন্তরীণ নদীগুলোর পানি কমতে থাকায় জেলার সাতটি উপজেলায় বন্যা পরিস্থিতির ধীরে ধীরে উন্নতি হচ্ছে। বর্তমানে জেলার ৩৪টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ও ২৭টি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের শ্রেণিকক্ষ, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের মাঠ এবং বিদ্যালয়ে যাওয়ার রাস্তায় বন্যার পানি রয়েছে। এছাড়া পাঁচটি মাধ্যমিক বিদ্যালয়কে আশ্রয় কেন্দ্র হিসেবে ব্যবহার করা হচ্ছে। ফলে এসব বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীর ক্লাসে ফেরায় অনিশ্চয়তা দেখা দিয়েছে।
শফিকুল ইসলাম বেবু কুড়িগ্রাম থেকে জানান, কুড়িগ্রাম সদরের ধরলা তীরবর্তী সারডোব সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় গিয়ে দেখা গেছে স্কুলের মাঠে এখনও পানি। এ্যাসাইমেন্ট জমা দেয়ার জন্য দুজনছাত্রী স্কুলে আসছেন কোমর পানি ভেঙে। তিনজন শিক্ষক স্কুলে উপস্থিত হয়ে প্রস্তুতি নিচ্ছেন স্কুল খোলার। প্রধান শিক্ষক অতুল চন্দ্র রায় স্কুল খোলার শুরুর দিকে শিক্ষার্থী উপস্থিতি নিয়ে সংশয় প্রকাশ করেছেন।
তিনি জানান, স্কুলের চার দিকে পানি। রাস্তাঘাট ভেঙে গেছে। অনেকের বই-খাতা নষ্ট হয়েছে। তাই শুরুতে শক্ষার্থী উপস্থিতি কিছুটা কম হতে পারে। এদিকে নদীর ভাঙনে এ বছর বিলীন হয়েছে ৭টি স্কুল। উলিপুর উপজেলার পশ্চিম বজরা, চেরাগের আলগা ও বগুলা কুড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ছাড়াও ভাঙনে বিলীন হয়েছে নাগেশ্বরীর আকবর আলী ও রাজারহাটের গতিয়াশাম বগুড়াপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়। এছাড়া গত বছর স্থানান্তর করা রৌমারীর ফলুয়ার চর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ও ঘুঘুমারী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় এ বছর নদী ভাঙনের আবারও বিলীন হয়েছে। এসব স্কুলের মালামাল স্কুল কর্তৃপক্ষ সরিয়ে নিয়ে খোলা আকাশের নিচে রেখে দিয়েছেন। তবে স্কুল নির্মাণের জন্য নতুন করে জমি না পাওয়ায় দুশ্চিন্তায় শিক্ষক, অভিভাবক ও শিক্ষার্থীরা। এই পরিস্থিতিতে পাঠদান নিয়ে অনিশ্চিয়তা তৈরী হয়েছে এসব স্কুলে। আর এতে শিক্ষার্থী ঝরেপড়ার আশঙ্কাও সৃষ্টি হয়েছে।
উলিপুর উপজেলার ব্রহ্মপুত্রের চরে চেরাগের আলগা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়টি এক মাস আগে নদী ভাঙনের কবলে পড়ায় স্কুল গৃহ ভেঙে মোহর আলী মেম্বারের বাড়িতে রাখা হয়েছে। নতুন করে জমি ও অর্থ বরাদ্দ না পাওয়ায় স্কুল নির্মাণ সম্ভব হয়নি। একই অবস্থা চরের উচ্চ বিদ্যালয় গুলোতে। সদর উপজেলার ধরলা নদীর তীরে অবস্থিত সারডোব আদর্শ উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধানশিক্ষক ফজলার রহমান জানান, সপ্তম থেকে দশম শ্রেণির অনেক শিক্ষার্থী কাজ করতে দেশের বিভিন্ন জায়গায় গেছে। বেশ কিছু ছাত্রীর বাল্য বিয়েও হয়ে গেছে। তাই শিক্ষার্থী উপস্থিতি অনেক কম হবে বলে মনে করছেন তিনি।
কুড়িগ্রাম জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার মো. শহিদুল ইসলাম জানান, সরকারি নির্দেশনা মোতাবেক স্কুলের কার্যক্রম চালুর ব্যাপারে সব ধরণের প্রস্তুতি নেয়া হয়েছে। তবে নদী ভাঙন ও বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত স্কুল গুলোতে যেন লেখা পড়া বিঘ্নিত না হয় সে ব্যাপারে উদ্যোগ নেয়া হয়েছে।
আতাউর রহমান আজাদ টাঙ্গাইল থেকে জানান, চলতি বছরের বন্যায় জেলার এক হাজার ৬২৪টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের মধ্যে ৩৬৬টি বিদ্যালয়ে পানি প্রবেশ করে। ৩৪টি বিদ্যালয়ের শ্রেণিক্ষ ও মাঠে এখনও পানি রয়েছে। ৬৯৬টি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের মধ্যে ৮৭টি বন্যা কবলিত হয়। ২৭টি বিদ্যালয়ের শ্রেণিকক্ষ এখনও বন্যা কবলিত। এছাড়া পাঁচটি মাধ্যমিক বিদ্যালয়কে আশ্রয় কেন্দ্র হিসেবে ব্যবহার করায় পাঠদানযোগ্য নয়।
সরেজমিনে টাঙ্গাইল সদর উপজেলার মগড়া ইউনিয়নের অয়নাপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের মাঠে এখনও বন্যার পানি প্রবাহিত হচ্ছে। স্কুলে যাতায়াতের রাস্তাটি পানির নিচে। বিদ্যালয়ের তিনটি ভবনের মধ্যে দুটির শ্রেণিকক্ষে পানি রয়েছে। একই উপজেলার গালারচর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়েরও একই অবস্থা। এ বিদ্যালয়ের মাঠে এখনও হাটু পানি রয়েছে। পশ্চিম দিকে একটি ভবনের প্রায় অর্ধাংশ পানির নিচে রয়েছে। এই নিয়ে এ সমস্ত বিদ্যালয়ে রোববার থেকে পাঠদান অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে।
টাঙ্গাইলে যমুনা ও অভ্যন্তরীণ নদীগুলোর পানি কমতে থাকায় জেলার সাতটি উপজেলায় বন্যা পরিস্থিতির ধীরে ধীরে উন্নতি হচ্ছে। যমুনা, ধলেশ^রী ও ঝিনাই নদীর পানি কমে বিপদসীমার নিচে চলে গেছে। তবে বংশাই নদীর পানি মির্জাপুর পয়েন্টে বিপদসীমার ১৬ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। সকল নদীর পানি কমা অব্যাহত থাকায় লোকালয় থেকে বন্যার পানি নেমে যাচ্ছে।
এদিকে দেখা দিয়েছে যমুনা ও ধলেশ্বরী নদীর তীব্র ভাঙন। ভাঙনের ফলে নদী তীরবর্তী এলাকায় ইতিমধ্যে তিন শতাধিক বসতভিটা, মসজিদ, বাঁধ, রাস্তাসহ নানা স্থাপনা নদীগর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। এদিকে টাঙ্গাইল কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, ৯৮০ হেক্টর রোপা আমন পানির নিচে তলিয়ে রয়েছে।
ফয়সাল হক চিলমারী (কুড়িগ্রাম) থেকে জানান, বড় আশা নিয়ে মাঠে নামছিলোম বাহে এই বানে হামার কপাল পুরাইলো। চিলমারী কৃষক ফসল ফলিয়ে দেখবে সুখের আলো। কিন্তু সব স্বপ্ন সব আশা নিমিষেই ভেঙ্গে দিল বন্যা আর টানা বৃষ্টি। বন্যার থাবায় চোখের সামনে ফসল নষ্ট হতে দেখে নীরবেই কষ্ট আর দুঃখে কাটাচ্ছে কৃষকের দিনকাল। বানের পানি শুকানো শুরু করলেও শুকায়নি কৃষকের চোখের জল। ৩৫০০ হেক্টর ক্ষতিতে লোকসান গুনছে প্রায় ২৫ হাজার কৃষক।
আবদুস ছালাম খান লোহাগড়া (নড়াইল) থেকে জানান, নড়াইলের লোহাগড়া উপজেলার সীমান্তবর্তী এলাকা দিয়ে প্রবাহিত মধুমতি নদী ভাঙ্গনের ফলে শালনগর ইউনিয়নের পুরানো মানচিত্র পাল্টে যাচ্ছে। প্রমত্তা মধুমতি নদীর তীব্র স্রোতে গত কয়েক বছরের অব্যাহত ভাঙ্গনের ফলে এই ইউনিয়নের ৬টি গ্রাম নদী গর্ভে বিলিন হয়ে গেছে। এ বছর আরো অন্তত ১২টি গ্রামে নদী ভাঙ্গন চলছে। বিলিন হওয়া গ্রামের লোকজন নদীর বিপরীত পাড়ে অবস্থিত ফরিদপুর জেলার আলফাডাঙ্গা উপজেলার টগরবন্দ ও বুড়াইচ ইউনিয়নে আশ্রয় নিয়েছে।
গত শনিবার সরেজমিন ভাঙ্গন কবলিত এলাকা ঘুরে দেখা গেছে , মধুমতি নদীর তীরবর্তী শালনগর ইউনিয়নের রামকান্তপুর, শিয়েরবর গ্রাম ও হাট, চর আজমপুর, মন্ডলবাগ, চর গোপালপুর খেয়াঘাট, চাকশী, নওখোলা মিয়াপাড়া, চরশালনগর, কাশিপুর, মাকড়াইল ও চর মাকড়াইল , রামচন্দ্রপুর এলাকায় বসতবাড়ি ,ফসলি জমি ও পাকা রাস্তা মধুমতি নদীতে ভেঙ্গে যাচ্ছে। এ সব গ্রামের বসবাসকারী লোকজন নদী ভাঙনের ভয়ে তাদের বাড়ীঘর ভেঙ্গে অন্যত্র সরিয়ে নিচ্ছে।
নড়াইল পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী উজ্বল সেন বলেন, নদী ভাঙনের বিষয়টি উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে লিখিতভাবে জানানো হয়েছে। বরাদ্দ পেলে নদী ভাঙন রোধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহন করা হবে।
রনি ইমরান পাবনা থেকে জানান, পাবনায় পদ্মাসহ বিভিন্ন শাখা নদীর পানি কমতে শুরু করেছে। জেলার দক্ষিণে পদ্মা নদীর পানি বাড়ায় আশপাশের নিম্নাঞ্চল প্রাবিত হয়েছিল। নিম্নাঞ্চলের বেশিরভাগ এলাকা থেকে পানি নামতে শুরু করেছে। গতমাসের শেষে পদ্মা নদীতে পানি বৃদ্ধি পাওয়াতে পাবনা সদর ও ঈশ্বরদী উপজেলার বিস্তীর্ণ চরাঞ্চলের মানুষ বন্যা কবলিত হয়ে পড়ে। পাবনার চাটমোহরসহ চলনবিল অঞ্চলে বন্যা পরিস্থিতির অবনতি হয়। সেপ্টেম্বরের শুরু থেকেই এ পরিস্থিতির উন্নতি হয়েছে।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ