Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

বন্যার পানি কমলেও বেড়েছে দুর্ভোগ

প্রকাশের সময় : ৭ আগস্ট, ২০১৬, ১২:০০ এএম

ত্রাণ ও বিভিন্ন সামগ্রী সহায়তা চান ভুক্তভোগীরা
ইনকিলাব ডেস্ক : উত্তরাঞ্চলসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে বন্যার পানি কমতে শুরু করেছে। তবে বন্যা পরবর্তী দুর্ভোগ বেড়েই চলেছে বন্যার্তদের। বাড়ি-ঘর, রাস্তা-ঘাটের ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হওয়ায় সংস্কারের প্রয়োজনীয়তা দেখা দিয়েছে। এতে বিভিন্ন ধরনের সামগ্রীর জরুরি সহায়তা প্রয়োজন।
ফরিদপুরে বন্যার্তদের দুর্ভোগ বেড়েছে
ফরিদপুর জেলা সংবাদদাতা ঃ ফরিদপুরে পদ্মার নদীর পানি কমে বিপদসীমার ৫১ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। জেলার চার উপজেলার ১৬ ইউনিয়নের সার্বিক বন্যা পরিস্থিতির ধীরে ধীরে উন্নতি হলেও পানি কমার সাথে সাথে বন্যার্তদের দূর্ভোগ বেড়েছে। বন্যাকবলিত এলাকার বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোতে পানি থাকায় তিনটি উপজেলার ৬০টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ রয়েছে এখনো।
এদিকে শুক্রবার ভাঙ্গন কবলিত ও বন্যার্ত পাঁচ হাজার পরিবারের মাঝে চাল ও নগদ টাকা বিতরণ করেছেন বাংলাদেশ আ.লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য কাজী জাফর উল্লাহ ও জেলা প্রশাসক সরদার সরাফত আলী। অপরদিকে বৃহস্পতিবার রাতে ভাঙ্গা উপজেলার নাসিরাবাদ ইউনিয়নের দরগাহ বাজার এলাকায় আড়িয়াল খাঁ নদীর ভাঙ্গনে গোয়ালন্দ-তাড়াইল সড়কের ২০০ মিটার সড়ক নদী গর্ভে বিলীন হওয়ার পথে।
বন্যায় ল-ভ- ঘর-বাড়ি রাস্তা-ঘাট :
জামালপুর জেলা সংবাদদাতা : জামালপুরে এবারের বন্যা পরবর্তী চিত্র ১৯৮৮ সালের বন্যার চেয়েও ভয়াবহ। টানা ১৫ দিনের ভয়াবহ বন্যায় ল-ভ- হয়ে গেছে জেলার যমুনা তীরবর্তী ১০টি ইউনিয়নের অসংখ্য ঘর-বাড়ি ও রাস্তা-ঘাট। বিশেষ করে ইসলামপুরের যমুনা তীরবর্তী সাপধরী, চিনাডুলি, নোয়ারপাড়া, বেলগাছা ও কুলকান্দি ইউনিয়ন এবং দেওয়ানগঞ্জ উপজেলার চুকাইবাড়ি ও চিকাজানি ইউনিয়নই সবচেয়ে বেশী ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। তন্মধ্যে ইসলামপুরের জোড়ডোবা, কাসাড়ীডোবা, চরনন্দনের পাড়া, ঘোনাপাড়া, ছড়াবাতা, কুলকান্দি এবং দেওয়ানগঞ্জের চুকাইবাড়ি ও চিকাজানি এলাকা সমূহের প্রায় পাঁচ হাজার বাড়িঘর যমুনার তীব্র¯্রােতে ভেসে গেছে। ওইসব বাড়িঘরের মানুষ স্থানীয় উঁচু সড়কের উপর আশ্রয় নিয়ে মানবেতর জীবন যাপন করছে। এদিকে বন্যার পানি কিছুটা নেমে যাওয়ায় অনেকেই তাদের বসতভিটায় ফিরে কাঁদা পানিতে দাঁড়িয়ে নতুন করে ঘরবাড়ি নির্মাণের চেষ্টা করছেন। নৌকা যোগে শুক্রবার ইসলামপুরের জোড়ডোবা ও কাশাড়ীডোবা গ্রামে গিয়ে দেখা গেছে গ্রাম দুটির সহ¯্রাধিক বাড়িঘর যমুনার তীব্র¯্রােতে ভেসে গেছে। অধিকাংশ বাড়িঘরের অবশিষ্টাংশ দুমড়ে মুছড়ে পানিতে পড়ে আছে। এসময় জোড়ডোবা গ্রামের আব্দুল আজিজ বলেন, এবছর বানের শুরু থেইকা আঙ্গেরে এলাকার উপর দিয়া যমুনার তীব্র¯্রােত বয়ে ঢালা পইরা গেছিল। ওই ¯্রােতের টানে আঙ্গেরে গ্রামের পাঁচশ’রও বেশী ঘরবাড়ি ভাইসা গেছে। ওই সময় আমরা কোন রহমে নৌকায় উঠে জীবন বাঁচাইছি। আর তহন থেইকাই আমরা উলিয়া সড়কের উপর ছাপড়া তুইলা আশ্রয় নিছি। অনেকেই এলাকা ছাইড়া দুরে আতœীয় স্বজনের বাড়িত গেছে। এরপরও কেউ আঙ্গরে তেমন কোন সহযোগীতা করে নাই। তয় যমুনা ব্যাংক ফাউন্ডেশনের পক্ষ থেইকা আঙ্গরে গায়ের সবাইকে এড করে বস্তায় ভরে রিলিফ দিছে। ওই বস্তায় ১০ কেজি চাল, দুই কেজি ডাইল, আলু, চিড়া ও চিনি দিছিল। ওইগুলাই খাইয়া বাইচা আছি।
কাশাড়ী ডোবা গ্রামের মোঃ আব্দুস ছালাম বলেন, এবারে বন্যার দিনগুলো জীবনের সবচেয়ে কষ্টের দিন গেছে। চরের মাটি, তাই উচু ভিটা বানায়ে (তৈরি) বাড়ি করছিলাম। এরপরও ঘরে বানের পানি উঠছিল। বানের পানির সোতে (¯্রােত) বাড়ির চারিদিকেই খুড়ে গেছে। দুটি ঘর আটকাইতে পারি নাই। ¯্রােতের চোটে দুমড়ে মুচড়ে পানিতে ডোবে সোতের টানে হারাইয়া গেছে। তখন থেইকা আমি ছইল পইল আর গরু বাছুর নিয়া একটা ঘরেই কোন রহমে বানের দিনগুলা কাটাইছি। তবে আঙ্গরে বাড়ির আশপাশে যাদের বাড়ি নিচু ভিটেত আছিলো তাগোরে সগলেরই (সকলের) বাড়ি ভাইসা গেছে। আবার কারো কারো বাড়ি দুমড়ে মুছড়ে জড়ো হয়ে আছে। বানের সময় কেরা কহন কই গেছে জানবারও পাই নাই। দেওয়ানগঞ্জের চুকইবাড়ি ইউপি চেয়ারম্যান জানান, তার ইউনিয়নে এবছরের ভয়াবহ বন্যায় প্রায় দুই সহ¯্রাধিক ঘরবাড়ি যমুনার তীব্র¯্রােতে ভেসে গেছে এবং ইউনিয়নটির সকল রাস্তাঘাট ভেঙ্গে গেছে। এছাড়াও এখনো প্রায় ১০ হাজার মানুষ পানিবন্দি জীবন কাটাচ্ছে। এদিকে অনেকেই পানি বাহিত রোগে আক্রান্ত বিভিন্ন হাসপাতালে চিকিৎসা নিচ্ছেন।

টাঙ্গাইলের ৬টি উপজেলার ৪০ হাজার পরিবার ক্ষতিগ্রস্ত :
টাঙ্গাইল জেলা সংবাদদাতা : টাঙ্গাইলে বন্যা পরিস্থিতির উন্নতি হলেও ছয়টি উপজেলায় কৃষিসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। এসব উপজেলার ৪২টি ইউনিয়নের ৩৯ হাজার ৭শ’ ছয়টি পরিবার ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। সরকারিভাবে নগদ অর্থসহ চাল বিতরণ অব্যাহত থাকলেও এখন পর্যন্ত চাহিদা নিরুপণ করতে পারেনি প্রশাসন। এছাড়াও বাসাইল ও ধনবাড়ী উপজেলাকে বন্যা কবলিত চিহ্নিত করা হলেও কোন ধরণের ক্ষয়ক্ষতি নিরুপণ হয়নি। ক্ষতিগ্রস্থ দুর্গত এলাকায় কোন ধরণের স্থায়ী বা অস্থায়ী আশ্রয়কেন্দ্র নেই। সড়ক যোগাযোগ ক্ষেত্রেও ক্ষতির পরিমাণ নির্ণয় সম্ভব হয়নি। ফলে বন্যামুক্ত হওয়ার পর ক্ষতির পরিমাণ আরও বাড়তে পারে বলে জানিয়েছে সংশ্লিষ্ট বিভাগ।
জেলা ত্রাণ ও পুণর্বাসন অফিস সূত্র জানায়, চলতি বন্যায় টাঙ্গাইলের ১২টি উপজেলার মধ্যে ৬টি উপজেলাকে বন্যা কবলিত এলাকা হিসেবে চিহ্নিত করে প্রাথমিকভাবে ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ নিরুপণ করা হয়েছে। দুর্গত এলাকার জন্য ১১০ মেট্রিকটন চাল ও সাত লাখ টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। ক্ষতিগ্রস্থদের মধ্যে টাঙ্গাইল সদর উপজেলার ১২টি ইউনিয়নের সাত হাজার ৮৫০টি পরিবার, ভূঞাপুর উপজেলার সাতটি ইউনিয়নের ১২ হাজার ১৯২টি পরিবার, গোপালপুর উপজেলার দুইটি ইউনিয়নের সাত হাজার ৫০০টি পরিবার, নাগরপুর উপজেলার ১২টি ইউনিয়নের ১১ হাজার ৮০০টি পরিবার, দেলদুয়ার উপজেলার পাঁচটি ইউনিয়নের দুইশ’টি পরিবার, কালিহাতী উপজেলার চারটি ইউনিয়নের ১৬৪টি পরিবার ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে। তবে উল্লেখিত ত্রাণ সামগ্রী দিয়ে দুর্গত মানুষের দুর্দশা কতটুকু লাঘব হবে তা নিয়ে সংশয় প্রকাশ করেছেন অনেকেই। জেলা প্রশাসক মো. মাহবুব হোসেন জানান, প্রাপ্ত ত্রাণ দুর্গত এলাকায় বিতরণ করা হয়েছে। আরও ত্রাণ সামগ্রীর প্রয়োজনীয়তা থাকলে সে অনুযায়ী বরাদ্দ দেওয়া হবে। এ ব্যাপারে সংশ্লিষ্ট দপ্তরকে তাদের চাহিদা নিরুপণের জন্য নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
শিবচরে ব্যাপক নদী ভাঙ্গন
শিবচর উপজেলা সংবাদদাতা ঃ গত ২৪ ঘন্টায় শিবচরে পদ্মা নদীর পানি ১৫ সে.মি. কমে এখনো বিপদসীমার ৩৫ সে.মি. উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। এখনো রোপা আমন, পাট, শাক সবজিসহ প্রায় সাড়ে ৩ হাজার হেক্টর ফসলের মাঠই পানিতে তলিয়ে রয়েছে। পদ্মা ও আড়িয়াল খা নদী ভাঙ্গনের তীব্রতা বেড়েএ পর্যন্ত পদ্মা ও আড়িয়াল খাঁ নদের ভাঙ্গনে প্রায় ৫ শ ঘর বাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এদিকে শনিবার দিনভর সাবেক হুইপ ও সংসদ সদস্য নুর ই আলম চৌধুরী বন্যা দূর্গত ও নদী ভাঙ্গন আক্রান্ত পদ্মা নদীর চরাঞ্চল চরজানাজাত, কাঠালবাড়ি, মাদবরচর, বন্দরখোলা ও সন্ন্যাসীচরের সহ¯্রাধিক পরিবারের মাঝে ত্রানের চাল, শুকনো খাবার ও নগদ টাকা বিতরন করেন। এয়াড়াও তিনি এসময় নদী ভাঙ্গন কবলিতদের জন্য নগদ ৫ লাখ টাকা অনুদানের ঘোষনা দেন। তিনি পানি না কমা পর্যন্ত ত্রান ও অনুদান বিতরনের আশ^াস দেন। এসময় জেলা পরিষদের প্রশাসক মিয়াজউদ্দিন খান, জেলা আওয়ামীলীগের সভাপতি শাহাবুদ্দিন মোল্লা, সিনিয়র সহসভাপতি মুনির চৌধুরী, পৌর মেয়র আওলাদ হোসেন খান, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোঃ ইমরান আহমেদ, ভাইস চেয়ারম্যান দেলোয়ার বেপারি, উপজেলা আওয়ামীলীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি আঃ লতিফ মোল্লা, সাধারণ সম্পাদক ডাঃ মোঃ সেলিম, পৌর আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক তোফাজ্জেল হোসেন খান প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: বন্যার পানি কমলেও বেড়েছে দুর্ভোগ
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ