Inqilab Logo

সোমবার, ২৯ এপ্রিল ২০২৪, ১৬ বৈশাখ ১৪৩১, ১৯ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

পাটের স্বর্ণযুগ ফিরে আসছে আবাদ উৎপাদন ও দরে কৃষকের মুখে হাসি

নাছিম উল আলম | প্রকাশের সময় : ১১ সেপ্টেম্বর, ২০২১, ১:৩২ পিএম

সরকারী পাটকল বন্ধের পরেও এবার দেশে পাট আবাদ উৎপাদন ও বিপনন ইতিবাচক ধারায় ফিরে আসায় দক্ষিণাঞ্চল সহ সারা দেশের পাট চাষীদের মুখে দীর্ঘ প্রতিক্ষিত হাসি ফিরে এসেছে। দক্ষিণাঞ্চল সহ দেশের বাজারে এখন পাটের দর প্রতি মন আড়াই হাজার থেকে ৩ হাজার টাকা। কোথাও তা ৩ হাজার টাকার ওপরেও বিক্রী হচ্ছে। এবার পাটের আবাদ এবং উৎপাদনও গত কয়েকটি বছরের তুলনায় যথেষ্ঠ আশাব্যাঞ্জক ধারায় ফিরেছে। গত বছর দেশে ৭৭.২৫ লাখ বেল-এর স্থলে এবার দেশে ৮৬ লাখ ১১ হাজার বেল পাটের সম্ভাব্য উৎপাদনের কথা জানিয়েছে কৃষি সম্প্রসারন অধিদপ্তর-ডিএই’র দায়িত্বশীল মহল। এবার আবহাওয়া অনুকুল থাকায় হেক্টর প্রতি উৎপাদন ১১.৪৮ টন।

অথচ গত বছর করোনা সংকটের মধ্যেই সরকারী পটকলগুলো বন্ধ করে দেয়ায় পাট নিয়ে কৃষকদের দুঃশ্চিন্তা আর দূর্ভোগের শেষ ছিলনা। যেখানে প্রতিমন পাটের উৎপাদন ব্যায় দু হাজার টাকার ওপরে, সেখানে গত বছর প্রতিমন পাট বিক্রী হয়েছে ১৮শ থেকে ২ হাজার টাকার মধ্যে। ফলে সারা দেশের মত দক্ষিণাঞ্চলের পাট চাষিরাও সর্বশান্ত হতে বসেছিল। অথচ ধানের চেয়ে বেশী দাম পাবার আশায় দক্ষিণাঞ্চলের কৃষকরা গত কয়েকটি বছর পাট চাষে আগ্রহী হয়ে উঠছিল।
কিন্তু তারা হতাশ হয়ে দমে থাকেনি। এবার দেশে প্রায় সাড়ে ৭ লাখ হেক্টর আবাদ লক্ষ্যমাত্রার বিপরিতে ৭ লাখ ৪৬ হাজার হেক্টরে পাটের আবাদ হয়েছে। যা লক্ষ্যমাত্রার ৯৯.৪৫%। তবে গত বছরের তুলনায় বেশী। এরমধ্যে দক্ষিণাঞ্চলের ১১টি জেলায়ই আবাদ হয়েছে ২ লাখ ৩৫ হাজার হেক্টরে। ডিএই’র মতে বর্তমানে দেশের প্রায় ৩০% পাটের আবাদ হচ্ছে দক্ষিণাঞ্চলে। দক্ষিণাঞ্চলের প্রায় সব জেলাতেই পাটের আবাদ গত বছরের চেয়ে এবার বেশী ছিল। বৃহত্বর ফরিদপুরের ৫ জেলায় গত বছর ২ লাখ ১৮ হাজার ৭শ হেক্টরের স্থলে এবার প্রায় ২লাখ ২২ হাজার হেক্টরে পাটের আবাদ হয়। বরিশাল বিভাগের ৬ জেলাতেও পাটের আবাদ বাড়ছে। তবে এখনো পটুয়াখালী, ভোলা ও ঝালকাঠীতে আবাকৃত পাট সবজী হিসেবেই বিক্রী করে কৃষকরা আগাম অর্থ ঘরে তোলে।
এরপরও বরিশাল,পিরোজপুর ও ভোলাতে পাটের আবাদ এবং উৎপাদন বাড়ছে। গত বছর যেখানে দক্ষিণাঞ্চলের ১১ জেলায় প্রায় ২৭ লাখ বেল পাট উৎপাদন হয়েছিল, এবার সেখানে ফরিদপুর অঞ্চলের ৫ জেলাতেই ২৬ লাখ ৩১ হাজার বেল সম্ভাব্য উৎপাদন হয়েছে। এর বাইরে বৃহত্বর বরিশালের জেলাগুলোতেও আরো অন্তত ৩ লাখ বেল পাট উৎপাদনের ব্যপারে আশাবাদী ডিএই। এমনকি পাট গবেষনা ইনষ্টিটিউট ইতোমধ্যে দক্ষিণাঞ্চলের পরিবেশ উপযোগী নোনা পানি সহিষ্ঞু পাটের জাত উদ্ভাবন করেছে। ইনষ্টিটিউট ইতোমধ্যে নাবী জাতের পাটবীজ উদ্ভাবন করেছে। যা আমদানীকৃত বীজের চেয়ে উন্নমানের ও উচ্চ ফলনশীল। আগামীতে এ পাট বীজই দেশের মোট আবাদকৃত এলাকার চাহিদা মেটাবে।
বেসরকারী পাটকলগুলো ইতোমধ্যে ফরিদপুর, রাজবাড়ী,শরিয়তপুর ও মাদারীপুর সহ দক্ষিণাঞ্চলের বিভিন্ন এলাকা থেকে পাট কেনা প্রায় শেষ করে এনেছে। তবে বোরো ধানের পরে পাট নির্ভর বৃহত্বর ফরিদপুরে বেসরকারী খাতের ১৯টি পাটকলের সচল রয়েছে ১৩টি। বরিশাল অঞ্চলে ছোট ও মাঝারী মাপের আরো ৫টি পাটকল থাকলেও সবগুলোই চলতি মুলধন সহ আধুনিক মেশিনারির অভাব সহ মুলধনের অভাবের সাথে ব্যাংকের দেনার দায়ে বন্ধ। বেসরকারী খাতে দেশের অন্যতম বৃহত করিম জুট মিল ও পারটেক্স গ্রুপের পাটকলও ফরিদপুর অঞ্চলে।
কৃষি মন্ত্রনালয়ের হিসেবে দেশে পাট চাষির সংখ্যা প্রায় ২০ লাখ হলেও এখাতের ওপর নির্ভিরশীল প্রায় ৪০ লাখ মানুষ। আর জিডিপি’তে পাটের অবদান ০.২৬% হলেও কৃষি সেক্টরে একক অবদান ১.১৪%। দেশে উৎপাদিত পাটের ৫১% এখনো স্থানীয় পাটকলে ব্যবহৃত হলেও ৪৪% কাঁচা পাট বিদেশে রপ্তানি হচ্ছে।
রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর মতে, পাট ও পাটজাত পণ্য রপ্তানি আয় প্রায় ১শ কোটি ডলারের কাছে। এ খাতে প্রতি বছরই প্রবৃদ্ধি ঘটছে। পাটখাতের রপ্তানি আয়ের সিংহভাগই আসছে পাটসুতা থেকে। কাঁচাপাট ও পাটজাত পন্য ছাড়াও পাটের বস্তা ও চট রপ্তানি করেও প্রতি বছর আয় বাড়ছে। পাট খাতে প্রবৃদ্ধি প্রায় ৩০%। ফলে দীর্ঘদিন পরে পাটজাত পণ্য রপ্তানি চামড়াজাত পণ্যকে ছাড়িয়ে গেছে।
অপরদিকে পরিবশেবীদদের মতে, পাটের আবাদ বাড়লে গ্রাম বাংলায় জ¦ালানি চাহিদার বড় অংশই মিটবে। পাট উৎপাদন এলাকার বড় জনগোষ্ঠী জ¦ালানী হিসেবে পাটকাঠি ব্যাবহার করছে। ফলে গাছপালা কেটে জ¦ালানী হিসেবে ব্যবহারের প্রবনতা কিছুটা হলেও নিয়ন্ত্রনে থাকছে। এছাড়া পাটখড়ি থেকে ‘পারটেক্স বোডর্’ সহ গত কয়েক বছর ধরে রপ্তানি পণ্য ‘চারকল’ উৎপাদিত হচ্ছে। জ¦ালানি সংকট মোকবেলা সহ দেশী পাটকল সচল রাখার সাথে রপ্তানী খাতকে সজীব রাখতে পাট আবাদের বর্তমান ধারা অব্যাহত রাখার কোন বিকল্প নেই বলে মনে করছেন কৃষিবীদ ও পরিবেশবীদগন।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ