পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
সড়ক ও জনপথ (সওজ) বিভাগের পদে পদে দুর্নীতি। দুর্নীতির খাতগুলো চিহ্নিত করে ২১ দফা সুপারিশ পেশ করেছিল দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। তিন বছর পেরিয়ে গেলেও চিহ্নিত এসব খাতের দুর্নীতি দমনে কার্যকর কোনো পদক্ষেপ নেয়নি সংস্থাটি নিজেই। জানা গেছে, কোনো এক অদৃশ্য সুতার টানে থমকে গেছে দুদকের কার্যক্রম।
দুদক সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, দুর্নীতি প্রতিরোধের লক্ষ্যে ‘সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তর’ সংক্রান্ত একটি প্রাতিষ্ঠানিক টিম গঠন করে সংস্থাটি। ওই টিম দীর্ঘ অনুসন্ধান শেষে দফতরটিতে দুর্নীতির খাতসমূহ চিহ্নিত করে। এ বিষয়ে ২০১৮ সালের ২৮ ফেব্রুয়ারি মন্ত্রিপরিষদ সচিবের কাছে প্রতিবেদন জমা দেয়। এতে সওজ’র প্রকৌশলীদের বহুমাত্রিক অনিয়ম- দুর্নীতির কৌশল সম্পর্কেও সবিস্তর উল্লেখ করা হয়। সুপারিশ প্রণয়ন করা হয়েছে অন্তত ৩ বছর আগে। অথচ এ সময়ের মধ্যে সংস্থাটি নিজেই সড়ক ও জনপথের দুর্নীতির বিষয়ে কার্যকর কোনো ব্যবস্থা নেয়নি। বিশেষ করে দুর্নীতিগ্রস্ত কর্মকর্তা, প্রকৌশলীদের অবাধ লুটপাট, সরকারি অর্থের অপচয়, অপ্রয়োজনীয় জনবল নিয়োগ, নিম্নমানের সামগ্রী দিয়ে রাস্তা ও ব্রিজ মেরামত, ফেরি ও ফেরিঘাট মেরাতের দুর্নীতির বিষয়ে কোনো পদক্ষেপ গ্রহণ করেনি। উপরন্তু দুর্নীতির মাধ্যমে লব্ধ অবৈধ সম্পদ অর্জন মামলার তদন্তে অনীহা, দুর্নীতির সুনির্দিষ্ট অভিযোগগুলোকে বাছাই পর্যায়ে ফেলে দেয়ার মতো একাধিক ঘটনা ঘটে।
দুর্নীতির অনুসন্ধান-তদন্তে অনীহা : ২০১৭ সালে সড়ক ও জনপথের তৎকালীন অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী এ কিউ এম একরামুল্লাহর বিষয়ে অনুসন্ধান শুরু করে দুদক। অনুসন্ধান প্রক্রিয়ায় সে বছর ৬ সেপ্টেম্বর তিনি এবং তার ওপর নির্ভরশীল ব্যক্তিদের সম্পদ বিবরণী চাওয়া হয়। উপ-পরিচালক মোসাম্মৎ মাসুদা খাতুন এ নোটিশ পাঠান। নোটিশের প্রেক্ষিতে তিনি ওই বছরই নিজের এবং পোষ্যদের সম্পদ বিবরণী দাখিল করেন।
এর আগে কমিশনের তৎকালীন উপ-পরিচালক আবদুস সোবহান তার অনুসন্ধানে প্রকৌশলী এ কিউ এম একরামুল্লাহর পরিবারের বিপুল পরিমাণ অবৈধ সম্পদের সন্ধান পান। বসুন্ধরা সিটিতে কমার্শিয়াল স্পেস, বাংলামোটর জহুরা স্কয়ারে দোকান, ঢাকায় ৪টি ফ্ল্যাটসহ নামে-বেনামে বিপুল বিত্ত-বৈভব। কিন্তু সেই অনুসন্ধান গত চার বছরেও আলোর মুখ দেখেনি।
সওজ’র তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী মোসলেহউদ্দিন আহমেদের দুর্নীতির বিষয়ে দুর্নীতির অভিযোগ জমা পড়ে ২০১৯ সালে। কিন্তু অদৃশ্য ইশারায় দুদকের বাছাই কমিটি থেকেই অভিযোগটি গায়েব হয়ে যায়।
তবে দুদক থেকে ‘দায়মুক্তি’র পর তিনি বিপুল উদ্যমে দুর্নীতি অব্যাহত রেখেছেন মর্মে অভিযোগ পাওয়া যায়। দুদকের অনুসন্ধান সংশ্লিষ্ট এক কর্মকর্তা জানান, প্রকৌশলী মোসলেহউদ্দিনের নিয়োগ-বাণিজ্য, অনিম-দুর্নীতির রেকর্ডপত্র হাতে পেলেও ‘উপরের নির্দেশ’ না পাওয়ায় তিনি অনুসন্ধান চালাতে পারছেন না।
দুদক সূত্র জানায়, ক্ষমতার অপব্যবহারের মাধ্যমে অপ্রয়োজনীয়ভাবে মাস্টার রোলে জনবল নিয়োগ, নিয়োগকৃত কর্মচারীদের পরবর্তীতে নিয়মিতকরণের মাধ্যমে লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নেন মোসলেহউদ্দিন। এই কর্মচারীদের বেতন-ভাতা বাবদ সরকারের লাখ লাখ টাকা অপচয় করেন তিনি। নিয়োগপ্রাপ্ত এসব কর্মচারীকে দিয়ে তিনি ব্যক্তিগত ফুটফরমাস খাটান। কারখানা সার্কেলে চাকরি করার সময় তিনি অন্তত ১৬ জন এমআর কর্মচারী নিয়োগ দিয়ে দেড় কোটি টাকা হাতিয়ে নেন। তাদের মাসিক বেতন ১৫ হাজার টাকা করে প্রদান করে সরকারের প্রতি মাসে প্রায় সাড়ে ৭ লাখ টাকা অপচয় করেন।
সরঞ্জাম নিয়ন্ত্রণ ও সংগ্রহ সার্কেল থেকে কারখানা সার্কেল, ঢাকায় বদলি হওয়ার আগমুহূর্তেও তিনজনকে নিয়োগ দেন। এখানেও ৩০ লাখ টাকা হাতিয়ে নেয়ার অভিযোগ রয়েছে।
বদলি-বাণিজ্যেও এগিয়ে তিনি। বাসায় কর্মরত ওই দুই বিশ্বস্ত কর্মচারীকে মোসলেহউদ্দিন অবৈধভাবে নিয়ম ভেঙে ফেরি প্লানিং সার্কেল থেকে বদলি করে নিয়ে আসেন। এ ছাড়া নিয়ম ভেঙে বার বার এ দুই কর্মকর্তার পদ-পদবি পরির্বতন করেন তিনি। বদলি হওয়ার আগেও নিয়ম বহির্ভূতভাবে দু’জন কর্মচারীকে পিয়ন থেকে কম্পিউটার অপারেটর হিসেবে পদোন্নতি দিয়েছেন (স্মারক নং-৩৬ তারিখ ১১/০৮/২০২১)। নির্বাহী প্রকৌশলী মো: আরিফুর রহমান এক চিঠিতে লেখেন, (পরিপত্র নং -০৭.০০.০০০.১৭৩.৬৬.০৫৯.১৫-৩৪ তারিখ ১৪/০৫/২০১৬) সড়ক ও সেতু মন্ত্রণালয়ের সাথে সঙ্গতি রেখে কাজে লাগানোর শর্তে ‘কাজ নাই মজুরি নাই’ পদ্ধতিতে অস্থায়ী দৈনিক হাজিরাভিত্তিক নিয়োগ দেয়া হয়েছে। অত্র বিভাগে ওয়েল্ডার হিসেবে গত ১১/০৮/২০২১ তারিখে ওয়াসি উল্লাহ সজিব, পিতা-ফারুক মিয়া, গ্রাম-সাভিয়ানগর, ডাকঘর- সাভিয়ানগর বাজার-২৩৮০ অষ্টগ্রাম, কিশোরগঞ্জ (এনআইডি নং- ৪২১০৮২১৭০০)-কে নিয়োগ দেয়া হয়। কিন্তু উক্ত দপ্তরে দু’টি ওয়েল্ডার পদের বিপরীতে দু’জন লোক কর্মরত রয়েছেন। তাই এ পদে নতুন লোকবলের প্রয়োজন নেই। অন্যদিকে এ দপ্তরে প্রয়োজনের অতিরিক্ত মাস্টাররোল (এমআর) জনবল রয়েছে। অপ্রতুল বরাদ্দের কারণে প্রতি মাসে কর্মচারীদের বেতন প্রদান দুরুহ হয়ে যাচ্ছে। এ কারণে এ নিয়োগটি পুন: বিবেচনা করা যেতে পারে।
ওই কর্মকর্তা আরো জানান, রাষ্ট্রের একজন গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তির নাম ভাঙিয়ে তিনি এসব নিয়োগ দেন। এছাড়া টেন্ডার থেকেও কমিশন বাবদ হাতিয়ে নেন লাখ লাখ টাকা। এভাবে তিনি গড়ে তুলেছেন সম্পদের পাহাড়। রাজধানীতে রয়েছে তার একাধিক বিলাসবহুল ফ্ল্যাট। গুলশানের ১৩৭ নং সড়কের ১০ নং বাড়িতে রয়েছে ২২শ’ বর্গফুটের ফ্ল্যাট। এর মূল্য প্রায় ৩ কোটি টাকা। বসুন্ধরা আবাসিক এলাকায় ‘কে’ ব্লকের ১১ নং রোডের হোল্ডিং ৫০৯-এ রয়েছে ডুপ্লেক্স বাড়ি। এটির মূল্যও প্রায় ৪ কোটি টাকা। রয়েছে বহু বেনামী সম্পদ। অভিযোগ রয়েছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং কানাডায় অর্থ পাচারের। ছেলে আমেরিকা এবং মেয়ে পড়াশুনা করছে কানাডায়। নামে-বেনামে অন্তত অর্ধশত কোটি টাকার মালিক হলেও সওজ’র এই নির্বাহী প্রকৌশলী সপদে চাকরি করছেন দিব্যি।
এদিকে ‘ওয়েস্টার্ন বাংলাদেশ ব্রিজ ইম্প্রুভমেন্ট প্রজেক্ট’র তৎকালীন প্রকল্প পরিচালক ও অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী মোহাম্মদ জাওয়েদ আলম এবং তার স্ত্রী আনোয়ারা বেগমের বিরুদ্ধে অবৈধ সম্পদের মামলা হয় গত বছর ৫ নভেম্বর। তাদের বিরুদ্ধে ৩ কোটি ৯ লাখ টাকা অবৈধভাবে অর্জনের অভিযোগ উল্লেখ করা হয় এজাহারে। মামলার তদন্তকালে বেরিয়ে আসে আরো অন্তত ১০ কোটি টাকার সম্পদ। মামলার পর তাদের দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা দেয়া হয়। কিন্তু এক বছরে তদন্ত এগোয়নি একচুল। দুদকের উপ-পরিচালক মো. নাসিরউদ্দিন মামলাটি তদন্ত করছেন বলে জানা গেছে।
এদিকে সড়ক ও জনপথে নানামাত্রিক অনিয়ম-দুর্নীতি শনাক্ত করলেও সেই দুর্নীতি নিয়ে কাজ করতে দুদক নিজেই আগ্রহী নয় বলে জানা গেছে। এ কারণে কখনও বাছাই পর্যায়ে অভিযোগ আমলে না নিয়ে, কখনওবা দায়সারা মামলা দিয়ে তদন্ত বিলম্বিত করে কখনও বা মামলার চূড়ান্ত প্রতিবেদন দাখিল করে সওজ’র দুর্নীতির এক ধরনের ‘দায়মুক্তি’ দেয়া হচ্ছে। এ বিষয়ে দুদক সচিব ড. মুহা: আনোয়ার হোসেন হাওলাদার বলেন, দুদক আইনে দায়মুক্তির কোনো সুযোগ নেই। অভিযোগ প্রমাণিত না হলে নথিভুক্ত করার বিষয়টি আইনেই রয়েছে। এখানে আইনি প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়েই বিষয়গুলো নিষ্পত্তি হয়।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।