Inqilab Logo

শক্রবার ০৯ নভেম্বর ২০২৪, ২৪ কার্তিক ১৪৩১, ০৬ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

ভ্রাম্যমাণ মৌ বাক্সে মধুর হাঁসি

প্রকাশের সময় : ৭ অক্টোবর, ২০১৬, ১২:০০ এএম

আবদুল ওয়াজেদ কচি, সাতক্ষীরা থেকে
কখনো টাঙ্গাইল বা গাজীপুর। আবার কখনো খুলনা, শরীয়তপুর বা সাতক্ষীরা। বছরের একেক সময় একেক জেলায় যান শরিফুল ইসলাম। তবে, কখনো একা যান না তিনি। সঙ্গে নিয়ে যান তার সব সময়কার সঙ্গী মৌমাছিদের, আর তিন শতাধিক মৌ বাক্স। এভাবেই ভ্রাম্যমাণ মৌচাষের মাধ্যমে জীবিকা নির্বাহ করেন সাতক্ষীরার শ্যামনগর উপজেলার মুন্সীগঞ্জের বনজীবী গোলদার গাইনের বড় ছেলে শরিফুল ইসলাম। সাতক্ষীরার তালা উপজেলার নগরঘাটা ইউনিয়নের পোড়া বাজার-চৌরাস্তা ধরে যেতে সড়কের ধারেই গাছ-গাছালিতে ছায়া ঢাকা বাগানে দেখা মেলে শত শত মৌ বাক্সের। এখন বরুই ফুলের মৌসুম। ওই এলাকায় বরুই বাগানো রয়েছে বেশ। আর বরুই ফুলের মধু সংগ্রহ করতে সেখানে তিনশ’ মৌবাক্স বসিয়ে ঘাঁটি গেড়েছেন শরিফুল। নগরঘাটা পোড়া বাজার এলাকায় মাস দুয়েক থাকবেন তিনি। আর এভাবেই মধু সংগ্রহ করতে সরিষা ফুলের মৌসুমে মানিকগঞ্জ ও টাঙ্গাইল, লিচু ফুলের মৌসুমে গাজীপুর, তিলের মৌসুমে খুলনা এবং ধনে ও কালোজিরার মৌসুমে শরীয়তপুরে যান শরিফুল। আর বরুই ফুল ও সুন্দরবনের মধু সংগ্রহ করতে ফিরে আসেন নিজ জেলা সাতক্ষীরায়। তিন বোন, দুই ভাইয়ের মধ্যে শরিফুল ইসলাম বড়। বাবা গোলদার গাইন জীবিকার তাগিদে এখনো যান বাদায়। বাঘ কিংবা কুমিরের ভয় উপেক্ষা করে এক সময় বাবার সাথে শরিফুলও যেতেন বাদায়। কিন্তু বছর সাতেক আগে বিসিক (বাংলাদেশ ক্ষুদ্র ও কুটিরশিল্প কর্পোরেশন) আয়োজিত স্থানীয় এক প্রশিক্ষণে অংশ নেন শরিফুল। তারপর বৈজ্ঞানিক পদ্ধতিতে মৌচাষের প্রশিক্ষণ নিয়ে ভ্রাম্যমাণ মৌ বাক্সে মৌমাছি চাষ শুরু করেন তিনি। শুরু হয় বিভিন্ন জেলায় ভ্রমণ। শরিফুল ইসলাম জানান, ১২ দিন আগে নগরঘাটার পোড়াবাজারের পাশে চার হাজার টাকায় বাগান ভাড়া নিয়ে সেখানে তিনশ’ মৌবাক্স বসিয়েছেন তিনি। আর দু’দিন পরেই বাক্সগুলো থেকে মধু সংগ্রহ করা হবে। প্রতিবার বাক্স স্থাপন করে দু’মাসে তিন থেকে চার বার মধু পাওয়া যায়। একেক বারে মধু উৎপাদন হয় পাঁচ থেকে ছয় মণ। তিনি জানান, এক জায়গা থেকে মধু সংগ্রহ করা হয়ে গেলে, মৌবাক্সে মৌমাছিগুলো বিশেষভাবে আটকে নিয়ে যাওয়া হয় অন্য জেলায়। বাক্সগুলো বানাতে খরচ হয় প্রতি পিস ছয়শ’ টাকা। একেকটি চলে তিন-চার বছর। প্রতি বছর খরচ বাদ দিয়ে দুই থেকে আড়াই লাখ টাকা থাকে তার। এভাবেই কেটেছে গত সাতটি বছর। শরিফুল বলেন, বরুইফুলের মধু আট হাজার, কালোজিরার মধু ১৫ হাজার, ধনের মধু ছয় হাজার ও লিচু ফুলের মধু আট হাজার টাকায় প্রতি মণ বিক্রি করেন তিনি। ভ্রাম্যমাণ মৌচাষে সফল যুবক শরিফুল যুবসমাজের উদ্দেশে বলেন, যে কেউই প্রশিক্ষণ নিয়ে বৈজ্ঞানিকভাবে মৌচাষ করতে পারে। এর মাধ্যমে একদিকে যেমন বেকারত্ব ঘুচানো সম্ভব, তেমনি দূর হতে পারে দারিদ্র্য।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: ভ্রাম্যমাণ মৌ বাক্সে মধুর হাঁসি
আরও পড়ুন
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ