Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

উৎসবের আমেজ শিক্ষার্থীদের

চলছে পোশাক-ব্যাগসহ অন্যান্য উপকরণ কেনা

স্টাফ রিপোর্টার | প্রকাশের সময় : ৮ সেপ্টেম্বর, ২০২১, ১২:০১ এএম

২০২০ সালে যেসব শিক্ষার্থী এসএসসি-দাখিল পরীক্ষা দিয়ে উত্তীর্ণ হয়ে উচ্চমাধ্যমিক শ্রেণিতে ভর্তি হয়েছেন একটি বারের জন্য তাদের সুযোগ হয়নি কলেজে যাওয়ার। কলেজ জীবনের ক্লাস কেমন হয় সেই অনুভূতি বা অভিজ্ঞতা পায়নি তারা। শিক্ষাজীবনের গুরুত্বপূর্ণ এই সময়ে সহপাঠীদের সাথে পরিচয়ই হয়নি অনেকের। একই অবস্থা চলতি বছর যারা প্রথম শ্রেণিতে ভর্তি হয়েছে। দীর্ঘ দেড় বছর ধরে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকায় বাকীরাও বঞ্চিত হয়েছে স্কুল-কলেজ, ক্লাসরুম, শিক্ষক-সহপাঠী-বন্ধুবান্ধব থেকে। করোনার কারণে স্থবির সময়ে ঘরবন্দী হয়ে ছিলেন শিক্ষার্থীরা। অনলাইন এবং টেলিভিশনে পাঠদান চললেও সেটিতে সকলের অংশগ্রহণের সুযোগ, ক্লাসের অভিজ্ঞতাসহ নানা বিষয়ে রয়েছে প্রশ্ন।

দেশে বিগত কয়েক সপ্তাহ ধরে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ কমতে শুরু করায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশনার পর করোনা সংক্রান্ত জাতীয় কারিগরি পরামর্শক কমিটির মতামতের ভিত্তিতে আগামী ১২ সেপ্টেম্বর থেকে স্কুল-কলেজ-মাদরাসা খুলে দেয়ার ঘোষণা দিয়েছে সরকার। ইতোমধ্যে সারাদেশের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোকে পাঠদান উপযোগী করতে চলছে প্রস্তুতিও। শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি জানিয়েছেন, আগামী ৯ সেপ্টেম্বরের মধ্যে সকল ক্লাসরুম পাঠদানের উপযোগী করার নির্দেশনা প্রদান করা হয়েছে। ওইদিন সারাদেশের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো পরিদর্শন করবে সংশ্লিষ্টরা।

শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলার সংবাদে শিক্ষার্থীদের মধ্যে বিরাজ করছে উৎসবের আমেজ। দীর্ঘদিন পর প্রিয় প্রতিষ্ঠানে যেতে যেন তর সইছে না তাদের। এজন্য অনেকেই ঘোষণার পর থেকে প্রায় প্রতিদিনই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের সামনে যাচ্ছেন ব্যাগ নিয়ে। অনেকে আবার বন্ধুর সহ স্কুলের মাঠে প্রবেশ করে এক পলক দেখছেন ক্লাসরুমগুলো। গতকাল রাজধানীর মগবাজার বিটিসিএল হাইস্কুলে ব্যাগ নিয়ে স্কুলের মাঠে হাটতে দেখা যায় রাফিউল, ইমরান ও সুজন নামে তিনজনকে। রাফিউল জানায়, তারা ৭ম শ্রেণির শিক্ষার্থী। দীর্ঘদিন ধরে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকায় ঘরবন্দী তারা। অবশেষে খোলার ঘোষণা আসায় এখন তারা প্রায় প্রতিদিনই স্কুলের মাঠে বন্ধুরা মিলে আসেন। ইমরান বলেন, ১২ তারিখ খুলবে শোনার পর থেকেই ক্লাসে ফেরার অপেক্ষা আর ফুরাচ্ছে না। সুজন বলেন, আমরা অপেক্ষায় আছি আবারও বন্ধুরা মিলে আড্ডা দিবো, সবার সাথে অনেকদিন পর দেখা হবে, খেলাধুলা করবো। অনেক শিক্ষকের সাথেও দেখা নেই। সবার সাথে দেখা হবে ভাবতেই ভালো লাগছে। বানানী বিদ্যানিকেতন, সেগুনবাগিচা হাইস্কুল, আজিমপুর গার্লস হাইস্কুলসহ রাজধানীর বেশ কয়েকটি স্কুল ঘুরে দেখা যায় শিক্ষার্থীরা কেউ কেউ একা, আবার সহপাঠীদের সাথে নিয়ে স্কুলে প্রবেশ করছেন। পাঠদান উপযোগী করার জন্য যে কাজ চলছে সেগুলো তারা দেখছেন, কেউবা ক্লাসরুমে ঘুরে দেখছেন।

এদিকে অপেক্ষার পাশপাশি শিক্ষার্থীদের প্রস্তুতিও চলছে ক্লাসরুমে ফেরার। দেড় বছর পর শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলার ঘোষণার পর শিক্ষার্থীরা গোছাচ্ছেন বই-খাতাসহ শিক্ষার উপকরণ। যাদের পোষাক প্রয়োজন তারা ইতোমধ্যে তৈরি করতে দিয়েছেন। খাতা, ব্যাগ, কলমসহ অন্যান্য আনুষঙ্গিক উপকরণ কেনার কাজও চলছে তাদের। গতকাল রাজধানীর ঈসা খাঁ মার্কেটে গিয়ে দেখা যায় ব্যাগের দোকানগুলোতে শিক্ষার্থীদের ভিড়। ব্যাগ কিনতে আসা ভিকারুননিসা নুন স্কুলের শিক্ষার্থী সাদিয়া বলেন, দেড় বছর ধরে আগের ব্যাগটি থাকায় সেটি নষ্ট হয়ে গেছে। যেহেতু ১২ সেপ্টেম্বর থেকে স্কুল খুলছে তাই ব্যাগ কিনতে এসেছি। তার সাথে আরও দু’জন শিক্ষার্থীও দেখছেন নতুন ব্যাগ। মালিবাগ, মগবাজার, মহাখালী ওয়ারল্যাসসহ সারাদেশের স্টেশনারিগুলোতেও চলছে শিক্ষার্থীদের শিক্ষা উপকরণ কেনাকাটা।
এদিকে প্রায় দেড় বছর ঘরে বসে থাকা ও না পড়া এসব শিক্ষার্থী যাতে স্কুলে গিয়ে পড়ার চাপে না পড়ে সে বিষয়ে দৃষ্টি দিয়েছে শিক্ষা বিভাগ। এ কারণে খোলার দুই মাসের মধ্যে কোনো ধরনের আনুষ্ঠানিক পরীক্ষা ও মূল্যায়ন না করার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলার জন্য যে বিধিমালা জারি করেছে সেখানে এ বিষয়টিও তুলে ধরা হয়েছে। এছাড়াও প্রথম এক/দুই সপ্তাহ পাঠ্যক্রমভিত্তিক শিখনের ওপর গুরুত্ব না দিয়ে বিভিন্ন ধরনের খেলাধুলা ও সহশিক্ষাক্রমিক কার্যক্রম পরিচালনার পরিকল্পনা গ্রহণ এবং সে বিষয়ে প্রত্যেক শ্রেণির শ্রেণিশিক্ষকদের অবহিতকরণের জন্য যথাযথ পরিকল্পনা প্রণয়নের নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।

জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ডের (এনসিটিবি) সদস্য (শিক্ষাক্রম) প্রফেসর মো. মশিউজ্জামান বলেন, পরীক্ষার কথা শুনলেই শিক্ষার্থীরা একপ্রকার চাপ মনে করে। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলার পর এমন চাপে পড়ুক সেটা চাই না। এ কারণে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান চালুর দুই মাসের মধ্যে কোনো পরীক্ষা না নেওয়ার জন্য বলেছি।

ক্লাস হবে যেভাবে: বিদ্যমান করোনা পরিস্থিতিতে স্কুল কলেজে শ্রেণিপাঠ পরিচালনার পদ্ধতি বিষয়ক দিক নির্দেশনা দিয়েছে মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তর (মাউশি)। মঙ্গলবার স্কুল-কলেজের প্রধানদের সঙ্গে বৈঠক করে একটি মৌলিক রুটিন প্রণয়ন করেছে (মাউশি)। আজ বুধবার এটি মাউশির ওয়েবসাইটে প্রকাশ করা হতে পারে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে। নতুন ক্লাস রুটিন অনুযায়ী ২০২১ সালের এসএসসি-এইচএসসি পরীক্ষার্থীদের সপ্তাহে শনিবার থেকে বৃহস্পতিবার দুটি বিষয়ের চারটি ক্লাস নেওয়া হবে। ২০২২ সালের এসএসসি-এইচএসসি পরীক্ষার্থীদের শনিবার ও রোববার দুটি বিষয়ের চারটি ক্লাস হবে।

এছাড়া ষষ্ঠ শ্রেণির ক্লাস সোমবার, সপ্তম শ্রেণির মঙ্গলবার, অষ্টম শ্রেণির বুধবার ও নবম শ্রেণির ক্লাস বৃহস্পতিবার নেওয়া হবে। মাধ্যমিকের সকল স্তরে প্রতিদিন দুটি বিষয়ের চারটি করে ক্লাস করানো হবে।
ধানমন্ডি গভর্মেন্ট বয়েজ হাই স্কুলের প্রধান শিক্ষক সাবিনা ইয়াসমিন বলেন, দেশের বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের প্রধানদের মতামত নিয়ে মাউশি একটি গাইডলাইনমূলক ক্লাস রুটিন প্রণয়ন করেছে। এতে শিক্ষকরা সম্মতি দিয়েছেন। সেটি অনুসরণ করে শ্রেণি পাঠদান পরিচালনা করা হবে। এটি একটি সুন্দর ও বাস্তবসম্মত রুটিন।
তিনি বলেন, করোনার মধ্যে আমরা কীভাবে, কখন ও কতক্ষণ ক্লাস নেবো তা নিয়ে একধরনের দুশ্চিন্তা তৈরি হয়েছিল। বর্তমানে সেটি কেটে গেছে। আমাদের নতুন চ্যালেঞ্জ নিয়ে শ্রেণিতে পাঠদান শুরু করতে হবে। স্বাস্থ্যবিধি মেনে তা করতে হবে।

মাউশির মহাপরিচালক প্রফেসর সৈয়দ গোলাম ফারুক বলেন, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের প্রধানদের সঙ্গে বৈঠক করে আমরা একটি গাইডলাইনমূলক মৌলিক ক্লাস রুটিন তৈরি করছি। সেটি অনুসরণ করে দেশের সকল শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে রুটিন ও ক্লাস পরিচালনা করতে হবে।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: শিক্ষার্থী

১০ নভেম্বর, ২০২২

আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ