বাড়াবাড়ি ও ছাড়াছাড়ির কবলে শবে বরাত-৩
সুনানে ইবনে মাজায় বর্ণিত হয়েছে : হযরত আলী ইবনে আবু তালেব (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ
কে ওই শোনাল মোরে আজানের ধ্বনি।
মর্মে মর্মে সেই সুর, বাজিল কি সুমধুর
আকুল হইল প্রাণ, নাচিল ধমনী।
কি মধুর আজানের ধ্বনি!
আমি তো পাগল হয়ে সে মধুর তানে,
কি যে এক আকর্ষণে, ছুটে যাই মুগ্ধমনে
কি নিশীথে, কি দিবসে মসজিদের পানে।
হৃদয়ের তারে তারে, প্রাণের শোণিত-ধারে,
কি যে এক ঢেউ উঠে ভক্তির তুফানে-
কত সুধা আছে সেই মধুর আজানে।
নদী ও পাখির গানে তারই প্রতিধ্বনি।
ভ্রমরের গুণ-গানে সেই সুর আসে কানে
কি এক আবেশে মুগ্ধ নিখিল ধরণী।
ভূধরে, সাগরে জলে নির্ঝরণী কলকলে,
আমি যেন শুনি সেই আজানের ধ্বনি।
আহা যবে সেই সুর সুমধুর স্বরে,
ভাসে দূরে সায়াহ্নের নিথর অম্বরে,
প্রাণ করে আনচান, কি মধুর সে আজান,
তারি প্রতিধ্বনি শুনি আত্মার ভেতরে।
নীরব নিঝুম ধরা, বিশ্বে যেন সবই মরা,
এতটুকু শব্দ যবে নাহি কোন স্থানে,
মুয়াযযিন উচ্চৈঃস্বরে দাঁড়ায়ে মিনার ‘পরে
কি সুধা ছড়িয়ে দেয় উষার আজানে!
জাগাইতে মোহমুদ্ধ মানব সন্তানে।
আহা কি মধুর ওই আজানের ধ্বনি।
মর্মে মর্মে সেই সুর বাজিল কি সমধুর
আকুল হইল প্রাণ, নাচিল ধমনী।
-কায়কোবাদ
চাঁদে গিয়ে নীল আর্ম স্ট্রং লাগাতার একটি গুঞ্জরন টাইপ ধ্বনি ও সুরের অনুরণন শুনতে পান। এর বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যা বা কারণ তিনি জানতেন না। বহু বছর পর জাকার্তায় এর অনুরূপ ধ্বনি তিনি শুনতে পান। উৎস অনুসন্ধান করে জানলেন এটি ফজরের আজানের সমন্বিত সুরধ্বনি। এমনটি কায়রোতে আবার শোনার সুযোগ হয় তার। এ সংবাদ আজ থেকে অন্তত ৪০ বছর আগে বিশ্ব মিডিয়া প্রকাশ করে। দৈনিক ইত্তেফাক ইন্দোনেশিয়ার জাকার্তায় আজানের অনুরণন বিষয়ক সংবাদটি প্রকাশ করে। অন লাইনে ঘুরে বেড়াচ্ছে জনৈক ইউরোপীয় তরুণীর আজান শুনে ইসলাম গ্রহণের সচিত্র ফিচার। যিনি ইস্তাম্বুলের বু মস্ক খ্যাত সুলতান আহমদ মসজিদ পরিদর্শনে এসে আজান শুনে প্রভাবিত হন। লন্ডনে ফিরে কিছুদিন পর ব্যাপক পড়াশোনা ও বোঝাপড়ার পর তিনি ইসলাম গ্রহণ করেন। এরপর আবার তুরস্কে এসে তিনি এ পরিবর্তনের বিষয়টিকে ভিডিও রূপান্তরিত করে ইন্টারনেটে ছেড়েছেন।
সম্প্রতি ঢাকা সফরের অনুভূতি প্রকাশে এক বিদেশি অমুসলিম অতিথি ঢাকার হোটেলে বসে রাজধানীর ফজরের আজান ধ্বনির অপূর্ব সুরধ্বনির অবিস্মরণীয় আনন্দের অভিজ্ঞতার কথা উল্লেখ করেন। আবহমান বাংলার সৌন্দর্যের মধ্যেও আজানের মধুর ধ্বনি উল্লেখযোগ্য। মহাকবি কায়কোবাদের আজান কবিতার বাণী এখনো জীবন্ত চিরন্তন। জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের কবিতায় আজানের মহিমা উচ্চকিত। দূর থেকে ভেসে আসা আজান যেন স্রষ্টার তরফ থেকে সান্ত¡নার বাণী। প্রভুর পক্ষ থেকে আশ্বাসের উচ্চারণ।
সেই আজানের শুদ্ধ সুর নিয়েও ইদানীং খুব বাড়াবাড়ি হচ্ছে। একদল আলেম আজানকে সোজা সাপ্টা কয়েকটি বাক্যমাত্র মনে করেন। কিরাত ও তাজভিদের নিয়ম ঠিক রেখে কোরআন শরীফ টেনে লম্বা করে সুললিত কণ্ঠে পড়া হয়। হাদীস শরীফে নবী করিম (সা.) বলেছেন, তোমরা তোমাদের কণ্ঠস্বর কাজে লাগিয়ে কোরআনকে লালিত্যময় কর। যায়্যিনুল কোরআনা বি আসওয়াতিকুম। আজানের বেলায়ও এ নীতি দেড় হাজার বছর যাবত চলে এসেছে।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।