Inqilab Logo

শুক্রবার ০৮ নভেম্বর ২০২৪, ২৩ কার্তিক ১৪৩১, ০৫ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

সন্ত্রাসী ও জঙ্গি অর্থায়ন রোধে ত্রিমুখী নজরদারি জোরদার

প্রকাশের সময় : ৬ অক্টোবর, ২০১৬, ১২:০০ এএম

আশরাফুল ইসলাম নূর, খুলনা থেকে : সঠিক পরিসংখ্যান না থাকলেও সরকারি-বেসরকারি ব্যাংক ও আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী সকলেই একমত- প্রবাসীরা হুন্ডির মাধ্যমে প্রচুর পরিমাণ অর্থ খুলনাঞ্চলে পাঠায়। এতে প্রতিবছরই সরকার বড় অংকের মুদ্রা বিনিময় রাজস্ব হারাচ্ছে। সম্প্রতি সন্ত্রাসী ও জঙ্গিবাদে হুন্ডির মাধ্যমে অর্থায়ন প্রমাণিত হওয়ায় নড়েচড়ে বসেছে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। তাই দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলে সন্ত্রাসী ও জঙ্গি অর্থায়ন রোধে ব্যাংক, গোয়েন্দা সংস্থা ও পুলিশের ত্রিমুখী নজরধারি জোরদার করা হয়েছে বলে সূত্রগুলো জানিয়েছেন।
বছরের শুরুতেই গত ২৬ জানুয়ারি দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের বহুল আলোচিত হুন্ডি ব্যবসায়ী ফারুক আহম্মেদ কাজল ওরফে হুন্ডি কাজলকে তিন বছরের কারাদ- দেয় ঝিনাইদহের আদালত। তবে পুলিশের দায়ের করা এই মামলার বাকি ৯৭ আসামীকে খালাস দেয়া হয়। তবে রায়ে সাজাপ্রাপ্ত একমাত্র আসামী কাজল ঝিনাইদহের কোটচাঁদপুর উপজেলার সলেমানপুর গ্রামের বাসিন্দা। পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগের (সিআইডি) সহকারী পুলিশ সুপার মোঃ দুলাল উদ্দিন আকন্দ ঝিনাইদহের কোটচাঁদপুর থানায় দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের ১৪০ জনের নাম উল্লেখ করে মামলা দায়ের করেছিলেন।
সিআইডির আঞ্চলিক সহকারী পুলিশ সুপার দুলাল উদ্দিন আকন্দ জানিয়েছেন, হুন্ডি ব্যবসায়ীরা এজেন্টের মাধ্যমে দেশব্যাপী বা অঞ্চলভিত্তিক লেনদেন করে থাকে। কতিপয় ব্যাংক কর্মকর্তারাও তাদের সহায়তা করে থাকেন। সর্বশেষ, গত ১০ জুন বেনাপোল আমড়াখালি চেকপোস্টে ২৬ লাখ হুন্ডির টাকাসহ ইয়ানুর রহমান (২৫) নামে যুবককে আটক করেছিল বিজিবি। হুন্ডির অর্থ নিয়ে ভারতে পাড়ি দিচ্ছিল বলে জানিয়েছিলেন ২৬ বিজিবির কমান্ডিং লেঃ কর্নেল জাহাঙ্গীর হোসেন। বাংলাদেশ ব্যাংক খুলনা কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, সা¤প্রতিক সময়ের জঙ্গিবাদ ও সন্ত্রাসবাদে অর্থায়ন প্রতিরোধে ব্যাংক কর্মকর্তা, দুর্নীতি দমন বিভাগ, জেলা ও পুলিশ ্র্রশাসনের সমন্বয়ে গঠিত আঞ্চলিক টাস্কফোর্সের সভা গত গত ২৫ আগস্ট বেলা ১১টায় বাংলাদেশ ব্যাংক-খুলনার সভাকক্ষে অনুষ্ঠিত হয়েছিল। সভায় সংশ্লিষ্ট তফসিল ব্যাংকের কর্মকর্তারা আলোচ্য বিষয় সম্পর্কে প্রতিবেদন দাখিল করেন। সভায় বক্তারা- হুন্ডির জন্য মানি এক্সচেঞ্জগুলো, জুয়েলার্স, হিমায়িত খাদ্য, পাট ও বস্ত্র আমদানি-রপ্তানিকারক এবং প্রবাসী ব্যবসায়ীদের দায়ী করেন। বাংলাদেশ ব্যাংক খুলনা কার্যালয়ের অধীন দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলে হুন্ডিতে ঠিক কি পরিমাণ অর্থের লেনদেন হয় তা সুনির্দিষ্ট করে বলতে না পারলেও বিপুল পরিমাণ অর্থের আদান-প্রদান হয় এটা স্বীকার করেন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারাও। ফলে মানি এক্সচেঞ্জগুলোর ওপর গোয়েন্দা নজরদারি শুরু করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক। সরকারি ও বেসরকারি ব্যাংকের শাখাগুলোতে ১০ লাখ টাকা লেনদেনের গ্রহক সম্পর্কে তাৎক্ষণিক তথ্য দিতে নির্দেশনা দিয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। সাম্প্রতিক সময়ের জঙ্গিবাদ ও সন্ত্রাসবাদে অর্থায়ন প্রতিরোধে ব্যাংক কর্মকর্তা, দুর্নীতি দমন বিভাগ, জেলা ও পুলিশ প্রশাসনের সমন্বয়ে গঠিত আঞ্চলিক টাস্কফোর্স কাজ করছে। এর আগে, ২৪ মে টাস্কফোর্স সভায় অসামঞ্জস্য টাকা লেনদেনের ব্যাপারে মনিটরিং এবং তাৎক্ষণিকভাবে বাংলাদেশ ব্যাংককে জানাতে বলা হয়েছিল। সভায় অবৈধ হুন্ডি তৎপরতা, বিদেশে অর্থ পাচার, মানি লন্ডারিং প্রতিরোধ ও দমন কার্যক্রম জোরদার করার ওপরত্বারোপ করা হয়।
অগ্রণী ব্যাংক-খুলনা সার্কেলের সহকারী মহাব্যবস্থাপক বিধান চন্দ্র দাস জানান, মানি লন্ডারিং বিষয়ে দক্ষতা অর্জনের লক্ষ্যে স্থানীয় ব্যাংক কর্মকর্তাদের দু’দিনের প্রশিক্ষণ হয়। তিনি জানান, বড় অংকের টাকা লেনদেনের সময় পরীক্ষা-নিরীক্ষা করা হচ্ছে। দক্ষিণাঞ্চলে ব্যাংকের ১৩৪টি শাখাকে লেনদেনের ব্যাপারে সতর্কতা এবং ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানাতে বলা হয়েছে।
জনতা ব্যাংকের উপ-মহাব্যবস্থাপক মোঃ কবির আহমেদ জানান, লেনদেন সন্দেহজনক হলে তাৎক্ষণিকভাবে বাংলাদেশ ব্যাংক কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়। এখানে সন্দেহজনক লেনদেন নেই বললেই চলে। প্রবাসীদের পাঠানো টাকা চুয়াডাঙ্গা, সাতক্ষীরা সদর, শ্যামনগর, খুলনা মহানগরীর আলমনগর ও দৌলতপুর শাখায় আসার পরিমাণ বেশি। অপরিচিত কোন ব্যক্তিকে বেশি অংকের টাকা উত্তোলনের সুযোগ দেয়া হয় না। গোয়েন্দা পুলিশের দাবি, মানি এক্সচেঞ্জ ব্যবসার আড়ালে চলছে স্বর্ণের চোরাচালানের ব্যবসা। এসব ব্যবসায়ীরা স্বর্ণ চোরাচালানের অর্থের জোগান দিয়ে থাকে। দেশ থেকে হুন্ডির মাধ্যমে তারা পাচার করছে ডলার।
তবে খুলনা মেট্রোপলিটন পুলিশের (কেএমপি) মুখপাত্র উপ-পুলিশ কমিশনার শেখ মনিরুজ্জামান মিঠু বললেন, খুলনাতে হুন্ডি ব্যবসা আছে বলে জানা নেই। তবে সতর্কাবস্থায় নজরদারি রয়েছে সন্ত্রাসী ও জঙ্গিবাদের অর্থায়ন উৎসের সন্ধানে।
খুলনা রেঞ্জ ডিআইজি এসএম মনির-উজ-জামান বলেন, খুলনাঞ্চলে হুন্ডি লেনদেনের দৃশ্যমান কোন তৎপরতা নেই। হুন্ডি ব্যবসায়ী, সন্ত্রাসী-জঙ্গিরা দেশ ও জাতির শত্রু। এদের নিধনে পুলিশ সার্বক্ষণিক তৎপর।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: সন্ত্রাসী ও জঙ্গি অর্থায়ন রোধে ত্রিমুখী নজরদারি জোরদার
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ