বাড়াবাড়ি ও ছাড়াছাড়ির কবলে শবে বরাত-৩
সুনানে ইবনে মাজায় বর্ণিত হয়েছে : হযরত আলী ইবনে আবু তালেব (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ
মানবশত্রু সাপ আখেরাতের ন্যায় দুনিয়াতেও আজাবে এলাহীরূপে বিদ্যমান। পাপীদের ওপর সাপ দ্বারা আজাব দেয়ার কাহিনীও আছে। ইতিহাস তালাশ করলে এরূপ ঘটনার দৃষ্টান্ত মিলে। উদাহরণস্বরূপ এখানে একটি ঘটনা বিশেষভাবে উল্লেখিত : আব্দুল হামীদ ইবনে মাহমুদ বর্ণনা করেন, একবার আমি হজরত আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রা.) এর নিকট উপস্থিত ছিলাম। তখন এক ব্যক্তি সেখানে এসে বলতে লাগল যে, আমরা ‘হাজাজ’ নামক স্থানে যাচ্ছিলাম ‘সাফাহ’ নামক স্থানে উপস্থিত হলে, আমাদের এক সহযাত্রীর ইন্তেকাল হয়ে যায়। আমরা তার জন্য একটি কবর খনন করি।
এসময় আমি দেখতে পাই যে, একটি কালো সাপ (আসওয়াদে সালেখ) এসে সমগ্র কবরকে তার কব্জাগত করে ফেলেছে। আমরা অপর একটি কবর খনন করি কিন্তু এ কবরেও পূর্বের ন্যায় একই অবস্থার সৃষ্টি হয়। অনুরূপ অপর একটি সাপ আসে এবং গোটা কবরটিকে ঘেরাও করে ফেলে এবং তাতে সে বসে পড়ে। আমরা তৃতীয় একটি কবর খনন করি কিন্তু এবারও সেই একই ঘটনার পুনরাবৃত্তি ঘটে। অতঃপর আমরা তাকে সেখানেই রেখে দিয়ে আপনার খেদমতে উপস্থিত হয়েছি । এখন আপনি বলুন আমাদের কি করা উচিত?
হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রা.) বললেন, এটি তার সেই আমল, যা সে নিজের জীবনে করত। তাই তোমরা যাও এবং তাকে অনুরূপ কোনো দিকে দাফন করো। কেননা তোমরা যদি তার জন্য সম্পূর্ণ জমিনই খনন করো তথাপি তোমরা তাকে একইভাবে পেতে থাকবে।
উক্ত লোকটির বর্ণনা, অবশেষে আমরা তাকে অনুরূপভাবে সাপটির সাথেই দাফন করে আসি এবং সফর হতে প্রত্যবর্তনের পর আমি তার স্ত্রীর নিকট গমন করি, উদ্দেশ্য তার আমল সম্পর্কে কিছু জিজ্ঞাসা করা। তার স্ত্রীর জানালো, সে (তার স্বামী ) খাবার বিক্রি করতো এবং প্রতিদিন তার পরিবারের জন্য সন্ধ্যে বেলার খাবার তুলে রাখত এবং বিক্রয়ের খাবারে ওই পরিমাণ যবের ভূসি মিসিয়ে বিক্রি করতো। সুতরাং তার আজাব আল্লাহ এভাবেই দিয়েছেন।
খাদ্যে ভেজাল জালিয়াতির ছড়াছড়ি আজকাল সর্বত্র, অনেকে এ ভেজালকে পাপ ও অন্যায়ও মনে করে না ; আইন কানুনেরও তোয়াক্কা করে না। তাদের উচিত বর্ণিত ঘটনাটি স্মরণ করে সংশোধিত হওয়া।
হাদীসে যেসব সাপের কথা উল্লেখিত হয়েছে সেগুলোর মধ্যে ‘শু’জা’ নামের সাপটি বাংলায় অজগর নামে পরিচিত। এটি আরোহী ও পদব্রজ চলাচলকারীদের উপর হামলা করে থাকে, তখন লেজ খাড়া হয়ে যায় এবং কোন সময় ঘোড়সাওয়ারের মস্তক পর্যন্ত উঁচু হয়ে যায়। এ সাপ সাধারণত জঙ্গলে বাস করে। আরবদের বিশ্বাস ছিল যে, কোনো ব্যক্তি দীর্ঘদিন অভুক্ত থাকলে তার পেটে একটি সাপ জন্ম নেয়, যাকে ‘শু’জা’ ও ‘সফর’ বলা হয়, এটি ছিল তাদের ভ্রান্ত বিশ্বাস।
‘শু’জা’ নামক এ অজগর সাপের উল্লেখ আছে বোখারী ও মুসলিমে বর্ণিত হাদীসে। হজরত জাবের (রা.) হজরত আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রা.) এবং হজরত আবু হোরায়রা (রা.) বর্ণনা করেন, হুজুর (সা.) বলেছেন : ‘যে ব্যক্তি ছাহেবে নেসাব হওয়ার পরও মালের যাকাত প্রদান করে না, কেয়ামত দিবসে সে মাল অজগরের আকার ধারণ করে তার পিছু হবে, তা হবে টাক মাথা এবং তার চোখ হবে রক্তাক্ত। এ মালদার ব্যক্তি এ অজগরকে দেখে ভীত ও সন্ত্রস্ত হয়ে পলায়ন করতে থাকবে, এমনকি অজগর তাকে পেঁচিয়ে ধরবে।
মুসলিমের বর্ণনানুযায়ী অজগর মুখ উন্মুক্ত করে তার দিকে ধাবিত হবে। যখন তার নিকটবর্তী হবে তখন লোকটি পালাতে থাকবে। অতঃপর অজগর আওয়াজ করবে, তোমার সেই ভান্ডার নিয়ে যাও, যা তুমি জমা করেছিলে।এ আওয়াজ শুনে লোকটি বুঝতে পারবে যে, এবার অজগর হতে রক্ষা পাওয়ার তার গত্যন্তর নেই। সে নিজের হাত অজগরের মুখে ঢুকিয়ে দেবে। অজগর তার হাতকে মাতালের ন্যায় চিবাতে থাকবে অতঃপর তার দুই চোয়াল পাকড়ে ধরবে এবং বলবে ‘আমি তোমার মাল, আমি তোমার ভান্ডার ।’
অতঃপর তিনি রসুলুল্লাহ (সা.) এ আয়াতটি পাঠ করেন: আর আল্লাহ নিজ অনুগ্রহে যা তোমাদেরকে দিয়েছেন তাতে যারা কৃপণতা করে তাদের জন্য উহা মঙ্গল, এটা যেন তারা কিছুতেই মনে না করে। এটা তাদের জন্য অমঙ্গল, যাতে তারা কৃপণতা করবে কিয়ামতের দিন ওটাই তাদের গলায় বেড়ি হবে। (সূরা আলে ইমরান : ১৮০)।
একটি হাদীসে সাপের সঙ্গে বিচ্ছুর কথাও আছে। হজরত রসুলুল্লাহ (সা.) এরশাদ করেছেন: ‘জাহান্নামে উটসম সাপ আছে। এ সাপ একবার কাউকে দংশন করলে উহার ব্যথা ও বিষক্রিয়া চল্লিশ বছর পর্যন্ত থাকবে এবং জাহান্নামে (গদি) তে বাঁধা খচ্চরগুলোর ন্যায় বিচ্ছু রয়েছে। সেগুলো একবার র্দশন করলে চল্লিশ বছর উহার প্রতিক্রিয়া থাকবে। (আহমদ)।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।