গুলিস্তানের বিস্ফোরণে নিহত ১৬ জনের নাম-পরিচয় পাওয়া গেছে
রাজধানীর গুলিস্তানের সিদ্দিক বাজার এলাকায় ভয়াবহ বিস্ফোরণের ঘটনায় এখন পর্যন্ত ১৬ জন নিহত হয়েছেন। এ
মুক্তিযুদ্ধে আওয়ামী লীগের অবদান কী সে প্রশ্ন রেখে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, তারা (আওয়ামী লীগ) যদি নিজেদেরকে একবার জিজ্ঞাসা করার চেষ্টা করে যে, তাদের অবদান কি এদেশের জন্য? তাদের অবদান হচ্ছে- পাকিস্তানীদের কাছে আত্মসমর্পণ, ভারতে পালিয়ে গিয়ে নেতা সাজা। আর মনে করে যে তারাই এদেশে স্বাধীনতা নিয়ে এসেছে। পরবর্তীতে তাদের অবদান গণতন্ত্রকে ধ্বংস করে ১৯৭৫ সালে একদলীয় শাসন ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠা করা।
বৃহস্পতিবার বিএনপির ৪৩তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে জাতীয় প্রেসক্লাবে আয়োজিত আলোচনা সভায় তিনি এসব কথা বলেন।
মির্জা ফখরুল বলেন, আমরা ভুলে যাইনি ৭৪ সালের দুর্ভিক্ষের কথা। আওয়ামী লীগের ইতিহাস এদেশের আত্মাকে বিক্রি করার ইতিহাস, মানুষের আকাঙ্ক্ষা গণতান্ত্রিক ব্যবস্থাকে ধ্বংস করার ইতিহাস।
মুক্তিযুদ্ধের ঘোষণা থেকে শুরু করে আধুনিক বাংলাদেশ বিনির্মাণে জিয়াউর রহমানের ভূমিকার কথা তুলে ধরে তিনি বলেন, আমাদের দলের প্রতিষ্ঠাতা স্বাধীনতার ঘোষক শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান তিনি যুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়তে অনুপ্রাণিত করেছিলেন, যুদ্ধে নেতৃত্ব দিয়েছেন। পরবর্তীকালে তাকে যখন রাষ্ট্র নির্মাণের দায়িত্ব দেয় তখন তিনি আমাদের বেঁচে থাকার স্বপ্ন দেখিয়েছিলেন, জাতিকে নির্মাণ করার স্বপ্ন দেখিয়েছিলেন, বাংলাদেশী জাতীয়তাবাদী দর্শন দিয়ে অস্তিত্বকে প্রতিষ্ঠিত করেছিলেন। আমরা একটা স্বাধীন জাতি এই ভূখন্ড সেটাই হচ্ছে জিয়াউর রহমান ও বিএনপির সবচেয়ে বড় অবদান।
বিএনপি মহাসচিব বলেন, আওয়ামী লীগ বন্ধুরা সার্বক্ষিণকভাবে সারাক্ষণ বিএনপির বিরুদ্ধে বিষোদগার করে। জিয়াউর রহমান, বেগম খালেদা জিয়া, তারেক রহমান এবং বিএনপিকে খাটো করার চেষ্টা করে। জিয়াউর রহমান এদেশের মানুষের হৃদয়ের মধ্যে আছেন। তিনি তার কাজের মধ্য দিয়ে পুরোপুরি প্রথিত হয়ে আছেন। শহীদ জিয়াউর রহমানকে ইতিহাস ধারণ করেছে। এই দেশের ধান ক্ষেতে পথে-প্রান্তরে শহীদ জিয়া আজকে চিরজাগ্রত হয়ে আছে।
আওয়ামী লীগ জনগণকে বিভ্রান্ত করে মিথ্যা ইতিহাস প্রতিষ্ঠা করতে চায় মন্তব্য করে তিনি বলেন, তারা গোয়েবেলসীয় কায়দায় মিথ্যা শুধু বার বার বলতেই থাকে। কিন্তু তাতে কোনো লাভ হবে না। এসময় তিনি সকল গণতান্ত্রিক শক্তিকে ঐকবদ্ধ করে বর্তমান সরকারকে পরাজিত করে জনগণের সরকার প্রতিষ্ঠা করার কথা বলেন। মির্জা ফখরুল বলেন, আসুন ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের নেতৃত্বে দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়াকে মুক্ত করতে এবং এই দেশে গণতন্ত্রকে ফিরিয়ে আনতে আমরা দূর্বার গণআন্দোলন গড়ে তুলি, গণঅভ্যুত্থান গড়ে তুলি। যার মাধ্যমে পরাজিত হবে এই স্বৈরাচারী, একনায়ক কর্তৃত্ববাদী আওয়ামী লীগের সরকার এবং জনগণের বিজয় হবে।
স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায় বলেন, ওরা নিজেদের সকল ব্যর্থতাকে চাপা দেয়ার জন্য অত্যন্ত হৃদয় স্পর্শ করা একটা ইস্যুকে তারা সামনে এনে আমাদেরকে ব্যর্থ রাখতে চায়। হ্যাঁ এটার আমরা জবাব দেবো। তবে প্রকৃষ্ট জবাব হলো এই সরকারের পতন ঘটিয়ে একটি অবাধ সুষ্ঠু নির্বাচন অনুষ্ঠান। একটা ইস্যুতে থাকি, এককথায় থাকি- আজকে থেকে সকল সমস্যার সমাধান শেখ হাসিনাকে ক্ষমতা থেকে পরিত্রাণ।
মুক্তিযোদ্ধা মন্ত্রী আকম মোজাম্মেল হকসহ কয়েকজন মন্ত্রীর বক্তব্যের প্রসঙ্গ টেনে মুক্তিযুদ্ধের সেক্টর কমান্ডার দলের ভাইস চেয়ারম্যান অবসরপ্রাপ্ত মেজর শাহজাহান ওমর বীর উত্তম বলেন, কয়েকজন মন্ত্রী ইদানিং বলা শুরু করেছে জিয়াউর রহমান সাহেব যে মুক্তিযোদ্ধা ছিলেন তার প্রমাণ দিতে হবে। আরে ব্লাডি ফুল তুমি কে? তুমি কি মুক্তিযোদ্ধা। ইউ হেভ বিন এ বিগ বডি রাজাকার। এই প্রশ্ন করার তুমি?
তিনি বলেন, আসলে সবাই জিয়াউর রহমানকে ভয় পায়। শেখ হাসিনা ঘুমাইতে পারে না, আওয়ামী লীগ ঘুমাইতে পারে না। দরজা-জানালা সব আটকিয়ে ঘুমায়। কখন জিয়ার প্রেতাত্মা বোধহয় ঘুম থেকে উঠে মেরে ফেলে-এই ভয়ে দরজা-জানালা সব লকআউট করে তারপরে ঘুমায়। আর সারা রাত স্বপ্ন দেখে- জিয়া এই আসলো, এই আর্মি, এই জিয়া।
চন্দ্রিমা উদ্যানে জিয়াউর রহমানের লাশ নেই-প্রধানমন্ত্রীর এই বক্তব্যের জবাব দিতে গিয়ে মুক্তিযুদ্ধে জেড ফোর্সে সদস্য বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান অবসরপ্রাপ্ত মেজর হাফিজ উদ্দিন আহমেদ বীর বিক্রম বলেন, লে. কর্ণেল জয়নুল আবেদীনের প্রত্যক্ষ তত্ত্বাবধায়নে জিয়াউর রহমানের লাশকে কবরে (চন্দ্রিমা উদ্যান) নামানো হয়েছে। জয়নুল নিজেও কবরে নেমেছিলেন। অথচ তারা বলে যে, কবরে লাশ নেই। কবরের পাশে তিনি (শেখ হাসিনা) বসবাস করে আতঙ্কিত হয়ে গেছেন। আজকে যত মানুষ এখানে জড়ো হয়েছে আপনারা যদি রাস্তায় একটা মিছিল করতে পারেন তাহলে কিন্তু তাদের পলায়ন শুরু হয়ে যাবে। একবার সাহস করে রাস্তায় নামেন। মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসকে তারা (আওয়ামী লীগ) বারং বার বিকৃত করেছে। রাজপথে সংগ্রাম ছাড়া এই অনির্বাচিত প্রতিবেশী রাষ্ট্রের আশ্রিত সরকারকে সরানো যাবে না। আসুন আমরা সবাই মিলে আরেকটি মুক্তিযুদ্ধ অংশ গ্রহণ করি।
মির্জা ফখরুল ইসলামের সভাপতিত্বে ও প্রচার সম্পাদক শহিদউদ্দিন চৌধুরী ও সহ-প্রচার সম্পাদক আমিরুল ইসলাম আলীমের সঞ্চালনায় আলোচনা সভায় বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন, ভাইস চেয়ারম্যান অধ্যাপক এজেডএম জাহিদ হোসেন, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা কাউন্সিলের সদস্য আমান উল্লাহ আমান ও আবদুস সালাম, যুগ্ম মহাসচিব সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল, সাংগঠনিক সম্পাদক ফজলুল হক মিলন, যুবদলের সাইফুল আলম নিরব, স্বেচ্ছাসেবক দলের আবদুল কাদির ভুঁইয়া জুয়েল, মহিলা দলের আফরোজা আব্বাস, মুক্তিযোদ্ধা দলের সাদেক আহমেদ খান, ছাত্রদলের ফজলুর রহমান খোকন প্রমূখ বক্তব্য রাখেন।
এই অনুষ্ঠানে বিএনপির শওকত মাহমুদ, খায়রুল কবির খোকন, সৈয়দ এমরান সালেহ প্রিন্স, শিরিন সুলতানা, এবিএম মোশাররফ হোসেন, আবদুস সালাম আজাদ, হাসান মামুন, আকরামুল হাসান, নিপুণ রায় চৌধুরী, অবসরপ্রাপ্ত মেজর আক্তারুজ্জামান, এস এ সিদ্দিক সাজু, অঙ্গসংগঠনের আমিনুল হক, রফিকুল আলম মজনু, আরিফা সুলতানা রুমা, হেলেন জেরিন খান, শাহ নেসারুল হক, রফিকুল ইসলাম মাহতাব, মুন্সি বজলুল বাসিত আনজু, এসএস জাহাঙ্গীর, ইকবাল হোসেন শ্যামল, আমিনুর রহমান আমিন সহ কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।
মিলনায়তনের বাইরেও শত শত নেতা-কর্মীর সরব উপস্থিতি দেখা গেছে। পবিত্র কোরআন তেলোয়াত ও দোয়া অনুষ্ঠানের পর জাতীয় সঙ্গীত ও দলীয় সঙ্গীত পরিবেশনার মধ্য দিয়ে এই আলোচনা সভা শুরু হয়। অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান লন্ডন থেকে বক্তব্য রাখেন যা বড় ডিজিটাল পর্দায় দেখানো হয়।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।