বাড়াবাড়ি ও ছাড়াছাড়ির কবলে শবে বরাত-৩
সুনানে ইবনে মাজায় বর্ণিত হয়েছে : হযরত আলী ইবনে আবু তালেব (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ
প্রাণঘাতী করোনাভাইরাস মহান আল্লাহ রাব্বুল আলামীনের পক্ষ থেকে মানবজাতির জন্য পরীক্ষাস্বরূপ। এই অদৃশ্য শক্তিশালী মহামারির সংক্রমণে জর্জরিত আজ গোটা দুনিয়া।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থাসহ সকল অভিজ্ঞ চিকিৎসক, গবেষকরা বলছেন, করোনা প্রতিরোধে সবচেয়ে কার্যকর দাওয়া হলো নিজেকে হামেশা পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখা, মাস্ক পরিধান করা, নিয়মিত সাবান পানি দিয়ে হাত ধোয়া, সামাজিক ও শারীরিক দূরত্ব মেনে চলা, সাধ্যমতো হ্যান্ড সেনিটাইজার ব্যবহার করা এবং প্রয়োজনে আইসোলেশন ও কোয়ারেন্টিন এবং লকডাউন পালন করা।
লক্ষণীয় হলো, পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা ইসলামের গুরুত্বপূর্ণ একটি ইবাদত এবং অবশ্যপালনীয় বিধান। পবিত্র থাকার ব্যাপারে কোরআন ও হাদিসের বিভিন্ন জায়গায় বারংবার উৎসাহিত করা হয়েছে, তাকিদ দেওয়া হয়েছে। এবং যারা পূতপবিত্র থাকবে, তাদের জন্য প্রতিশ্রুতি দেয়া হয়েছে প্রভূত কল্যাণ ও সওয়াবের।
মদিনার নিকটবর্তী কূবা এলাকার লোকজন পরিচ্ছন্ন জীবনযাপন করত। তাদের ভূয়সী প্রশংসা করে মহান আল্লাহ তায়ালা বলেন, ‘সেখানে এমন লোকেরা রয়েছে, যারা ভালোভাবে পবিত্রতা অর্জন করতে পছন্দ করে। আর আল্লাহ তা’য়ালা পবিত্রতা অর্জনকারীদের পছন্দ করেন।’ (সুরা তাওবা: ১০৮)। আরো বর্ণিত আছে, ‘নিশ্চয়ই আল্লাহ তায়ালা তাওবাকারীদের ভালোবাসেন এবং ভালোবাসেন অধিক পবিত্রতা অর্জনকারীদের।’ (সুরা বাকারা: ২২২)।
প্রিয়নবী (সা.) এরশাদ করেন, ‘তোমরা তোমাদের উঠান ও আঙ্গিনা পরিচ্ছন্ন ও পরিপাটি করে রাখো।’ অন্যত্র হযরত আবু মালেক আশআরি (রা.) বলেন, রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা ঈমানের অর্ধেক।’ (মুসলিম)। আল্লাহ তায়ালা পবিত্রতা অর্জনের সরাসরি নির্দেশনা দিয়ে বলেন, ‘হে বস্ত্রাচ্ছাদিত, উঠুন, সতর্ক করুন; এবং আপনার প্রতিপালকের শ্রেষ্ঠত্ব ঘোষণা করুন। আপনার কাপড় পবিত্র রাখুন, অপবিত্রতা পরিহার করে চলুন।’ (সূরা মুদ্দাছছির: ১-৪)।
কোরআন ও হাদীসে বর্ণিত পবিত্রতা অর্জনের কথা ও বর্তমানে প্রচলিত স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার তাকিদ একে অপরের সম্পূরক। করোনাভাইরাসের সংক্রমণের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তোলার জন্য আল্লাহ রাব্বুল আলামীনের ওপর খালেস তাওয়াককুল করা, পবিত্রতা অর্জন ও স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার বিকল্প কোনো উপায় নেই।
ইসলাম একটি সর্বাধুনিক, বিজ্ঞানসম্মত, পূর্ণাঙ্গ জীবনব্যবস্থা। গোটা মানবজাতির সব ধরনের সমস্যার সার্বিক ও সহজতর সমাধান ইসলাম দিয়েছে। আজ থেকে প্রায় চৌদ্দোশত বছর আগে অর্ধ জাহানের শাসনকর্তা, ইসলামের দ্বিতীয় খলিফা হজরত ওমর ইবনুল খাত্তাব (রা.)-এর খেলাফতকালে ফিলিস্তিনে ‘আমওয়াস’ নামক মহামারির প্রাদুর্ভাব দেখা দিলে মিসর বিজেতা সাহাবি হজরত আমর ইবনুল আস (রা.) সেখানে উপস্থিত মুসলমানদের উদ্দেশ্যে এক ভাষণ দেন। যেখানে তিনি ‘আইসোলেশন ও কোয়ারেন্টিন’র কথা উল্লেখ করে বলেন, ‘যখন এ ধরনের মহামারি দেখা দেয় তখন তা আগুনের মতো চারদিকে ছড়িয়ে পড়ে। এরপর তিনি (উপস্থিত) সবাইকে ছোট ছোট দলে ভাগ করে পাহাড়ে চলে যাওয়ার নির্দেশ দিলেন।
তাদের প্রতি এ মর্মে নিষেধাজ্ঞাও জারি করেন যে- কেউ কারো সঙ্গে মিশতে পারবে না। অতপর তারা পৃথক পৃথক দলে বিভক্ত হয়ে দীর্ঘদিন পাহাড়ে অবস্থান করেন। আর আক্রান্তদের অনেকে শাহাদাত বরণ করেন। একপর্যায়ে আল্লাহ তাআলা মহামারি তুলে নিলে সাহাবি আমর ইবনুল আস (রা.) জীবিতদের নিয়ে সুস্থ শরীরে শহরে ফিরে আসেন।’ (তারিখে দিমাশক)। অন্যত্র মহামারি কবলিত অঞ্চলের মানুষের জন্য বিশ্বনবি (সা.)-এর নির্দেশনায় এ রকম ইঙ্গিত পাওয়া যায়। হাদিসে এসেছে- আম্মাজান হজরত আয়েশা (রা.) বলেন, আমি রাসুলুল্লাহ (সা.)-কে মহামারি সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করলে তিনি বলেন, ‘মহামারি হলো আল্লাহ প্রদত্ত একটি আজাব।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।