Inqilab Logo

শনিবার, ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১, ১৭ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

দুর্ভোগে হাজারো মানুষ

রাঙ্গাবালীতে ঝুঁকিপূর্ণ আয়রন ব্রিজ

শাহ নেওয়াজ, রাঙ্গাবালী (পটুয়াখালী) থেকে : | প্রকাশের সময় : ৩০ আগস্ট, ২০২১, ১২:০২ এএম

পটুয়াখালীর রাঙ্গাবালী উপজেলা সদরের গহীনখালী খালের ওপর নির্মিত আয়রন ব্রিজটি দীর্ঘদিন যাবৎ জরাজীর্ণ অবস্থায় পড়ে আছে। এটিকে এখন আর ব্রিজ বলা যায় না। হাজারও মানুষের পারাপারের এ মাধ্যমটি এখন মরণ ফাঁদে পরিণত হয়েছে! যে কোন সময় বড় ধরণের দুর্ঘটনা ঘটতে পারে বলে মনে করছেন সচেতন মহল। কিন্তু ঝুঁকিপূর্ণ এ ব্রিজটিতে মানুষ চলাচল কোনভাবেই থামছে না। স্কুল, কলেজ ও মাদরাসাগামী শিক্ষার্থীসহ প্রতিনিয়ত শত শত মানুষ ঝুঁকি নিয়েই পারাপার হচ্ছেন। দুর্ঘটনারোধে কোন পদক্ষেপ নেয়নি স্থানীয় প্রশাসন।
জানা গেছে, রাঙ্গাবালী উপজেলা সদর ও ছোটবাইশদিয়া ইউনিয়নের সাথে সড়কপথে যোগাযোগের লক্ষ্যে গহীনখালি খালের উপরে প্রায় দেড় যুগ আগে একটি আয়রন ব্রিজ নির্মিত হয়। অপরিকল্পিতভাবে নির্মাণের কারণে ব্রিজের নিচ দিয়ে কার্গো, ট্রলার চলাচল করতে গিয়ে ধাক্কা লেগে ব্রিজটি নড়বড়ে হয়ে যায়। এরপরে ঝুঁকিপূর্ণ সাইনবোর্ড লাগিয়ে যানবাহন চলাচল বন্ধ করা হয়। এরই মধ্যে হঠাৎ করে ব্রিজটি ধ্বসে পড়ে। যার কারণে দুই পারের স্কুল, কলেজপড়–য়া শিক্ষার্থীসহ হাজারো মানুষের চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। পরে স্থানীয়রা নিজেদের অর্থায়নে ও স্বেচ্ছাশ্রমে ভাঙা ব্রিজের পিলারের উপরে কাঠ বসিয়ে পারাপার যোগ্য করে তোলেন। দীর্ঘদিন কাঠের ওপর দিয়ে মানুষ চলাচল করলেও এখন সেটিও নষ্ট হয়ে গেছে। কিন্তু এখন পর্যন্ত নতুন ব্রিজ নির্মাণের সিদ্ধান্ত হয়নি। এদিকে থামছে না ব্রিজ দিয়ে মানুষের যাতায়াত। এ কারণে বড় ধরনের দুর্ঘটনা ঘটতে পারে বলে মনে করছেন সচেতন মহল।
স্থানীয়রা জানান, প্রতিদিন ওই ব্রিজ দিয়ে রাঙ্গাবালী মডেল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, রাঙ্গাবালী মডেল মাধ্যমিক বিদ্যালয় ও ছোটবাইশদিয়া ইসলামিয়া দাখিল মাদরাসার শত শত কোমলমতি শিক্ষার্থী, নারী, বৃদ্ধ জীবনের ঝুঁকি নিয়ে যাতায়াত করলেও কোনো প্রকার যানবাহন চলাচল একেবারেই অসম্ভব। লোকজন ভারি বোঝা নিয়ে ওই ব্রিজ দিয়ে চলাচল করতে না পেরে চরম দুর্ভোগ পোহাচ্ছেন।
ছোটবাইশদিয়া ইউনিয়নের চতলাখালী গ্রামের আব্দুর রব ফরাজী বলেন, ‘আমাগো পোলাপান স্কুলে যায়, আমরা বাজারে যাই এই ব্রিজ দিয়া। কোন সময় যে ব্রিজটা ভাইঙ্গা যায় কেডা যানে। ব্রিজটা করলে করবে, না করলে ভাইঙ্গা লাইবে। তাও মানুষের ঝুঁকি নেয়া লাগবেনা, নৌকা দিয়া পাড়াইবে’।
রাঙ্গাবালী মডেল মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী আরমান হোসেন বলেন, ‘আমাদের এই ব্রিজ দিয়ে প্রতিদিন স্কুলে যাওয়া লাগে। ব্রিজটি যখন পারাই তখন অন্তরের মধ্যে একটা কামর মারে, কখন যেন ব্রিজটি ভেঙে নিচে পরে যাই। তবুও করার কিছু নেই। প্রতিদিন স্কুল ও প্রাইভেট পড়তে যেতেই হয়’।
ছোটবাইশদিয়া ইসলামিয়া দাখিল মাদরাসার শিক্ষক মাওলানা সালেহ উদ্দিন জানান, ওই ব্রিজটা দিয়ে প্রতিদিন আমাদের শতশত ছাত্র-ছাত্রী ঝুঁকি নিয়ে স্কুলে আসে। ব্রিজটির আবস্থা খুবই খারাপ। একটা দুর্ঘটনা হয়ে যেতেই পারে। তাই এটি অতি শিগগিরই ভেঙে দিয়ে বিকল্প ব্যবস্থা নেয়া দরকার।
রাঙ্গাবালী মডেল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষিকা সোহেলা পারভীন বলেন, ব্রিজের ওই পাড়ের শিশুরা প্রতিদিন ঝুঁকি নিয়ে নিয়ে আসা-যাওয়া করে। অনেকের পিতা-মাতা এসে এগিয়ে দিয়ে যায়। ব্রিজের মাঝখানের সিমেন্টগুলো খসে পড়ে গেছে, এটা দেখলেও অন্তর কেপে ওঠে। ছেলে মেয়েদের কথা কি বলবো, আমরাইতো কখনো ওই ব্রিজে উঠতে সাহস করি না। আসলে ব্রিজটি এত বছর ধরে ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় ঝুলে আছে, এটা কারো চোখে পড়েনা? এটা দুঃখজনক।
এ ব্যাপারে রাঙ্গাবালী সদর ইউপি চেয়ারম্যান সাইদুজ্জামান মামুন খান বলেন, দীর্ঘদিন ব্রিজটি ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় পড়ে আছে। আমরা এই ব্রিজটি সংস্কারের দাবি জানিয়েছি। কিন্তু এখনো কোন অগ্রগতি দেখছি না। তবে আশাকরি অতি শিগগিরই ব্যবস্থা নিবে কর্তৃপক্ষ।
এ ব্যাপারে জানতে চাইলে এলজিইডির রাঙ্গাবালী উপজেলা প্রকৌশলী মো. মিজানুল কবির জানান, বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে অবহিত করা হয়েছে। বরাদ্দ পেলে সংস্কার বা নির্মাণ করা হবে।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: ঝুঁকিপূর্ণ আয়রন ব্রিজ
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ