Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

করোনা ও প্রাকৃতিক বিপর্যয়-৩

খালেদ সাইফুল্লাহ সিদ্দিকী | প্রকাশের সময় : ২৮ আগস্ট, ২০২১, ১২:০০ এএম

উদাহরণস্বরূপ নিম্নে কয়েকটি আয়াতের অর্থ তুলে ধরা হয়েছে, যেগুলোতে আল্লাহর ভয়ের বিভিন্ন অর্থ স্পষ্ট হয়ে উঠে: নিশ্চয় যারা মোমেন (মুসলমান) যারা ইহুদী, ছাবেয়ী, খৃষ্টান তাদের মধ্যে যারা বিশ্বাস স্থাপন করে আল্লাহর প্রতি, কিয়ামতের প্রতি এবং সৎকর্ম সম্পাদন করে তাদের কোনো ভয় নেই এবং তারা দুঃখিতও হবে না। (সূরা মায়েদাহ, আয়াত : ৬৯)।

আয়াতে চারটি সম্প্রদায়ের প্রতি মুক্তির ওয়াদা করা হয়েছে। বর্ণিত চারটি সম্প্রদায়কে সম্বোধন করে যে নির্দেশ দেয়া হয়েছে তা হচ্ছে, আল্লাহর প্রতি বিশ্বাস, কেয়ামতের প্রতি বিশ্বাস এবং সৎকর্ম। শত শত আয়াতে সুষ্পষ্টভাবে বলা হয়েছে, রাসূল ও তাঁদের বাণীরপ্রতি পূর্ণ বিশ্বাস স্থাপন ব্যতীত মুক্তি নেই এবং এ বিশ্বাস ছাড়া কোনো ঈমান ও সৎকর্মই গ্রহণীয় নয় ও পারলৌকিক মুক্তির জন্য ইসলাম গ্রহণকরা জরুরি নয় বলে যে ধর্ম দ্রোহীদলটি তার ভ্রান্ত মতবাদ প্রচার করে, তার অসারতা এ আয়াত দ্বারা প্রমাণিত। খোদ রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন: আজ যদি মুসা (আ.) জীবিত থাকতেন, আমার অনুসরণ ব্যতিত গন্ত্যতর ছিল না। কোনো কোনো বর্ণনায় হযরত ঈসা (আ.)-এর কথাও বলা হয়েছে।

সূরা বাকারার ১৫৫ নং আয়াতে যে পাঁচটি খোদায়ী পরীক্ষার কথা বলা হয়েছে তার প্রথমটি ‘খওফ’, ভয়-ভীতি। আয়াতটির তফসীরি ব্যাখ্যা সর্ম্পকে অনেকে অনেক কিছু লিখেছেন। এখানে আমরা কেবল হজরত ইমাম শাফেঈ (রহ.) এর ব্যাখ্যাটি উদ্বৃত করছি। তিনি আয়াতে বর্ণিত পাঁচটি বিষয়ের অর্থ করেছেন এইভাবে, বর্ণিত ‘ভয়’ মানে ‘আল্লাহর ভয়’ জু‘উ মানে ‘বান্দাদের রোজা সমূহ’, ধন-সম্পদের ঘাটতি মানে ‘যাকাত ও সদকাহ সমূহ প্রদান করা; জীবন সমূহের ঘাটতি মানে, রোগের কারণে মৃত্যু হওয়া, ‘ফল-ফসলের ঘাটতি’ মানে ‘সন্তান-সন্ততির মৃত্যু’ কেননা সন্তান-সন্ততি হচ্ছে ‘হৃদয়ের ফল সামরাতুল ক্বালব’ ।
‘তফসীর খাযেন’ এর বরাতে আরো বলা হয় যে, হুজুর (সা.) এরশাদ করেছেন: যখন কারো শিশুসন্তানের মৃত্যু হয় তখনি আল্লাহ তা’আলা ফেরেশতাকে বলেন, তোমরা কি আমার বান্দার শিশু সন্তানের মৃত্যু ঘটিয়েছ? তারা আরজ করেন, হ্যাঁ, হে প্রতিপালক! আল্লাহপাক এরশাদ করেন, এতে আমার বান্দা কি বলেছে? তারা আরয করেন, আপনার প্রশংসা করেছেন এবং ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাহি রাজিউন পাঠ করেছে। তখন আল্লাহ তা’আলা বলেন: তার জন্য বেহেস্তে প্রাসাদ তৈরি করো, আর সেই প্রাসাদের নাম রাখো বায়তুল হামদ (প্রশংসা ভবন)।

মনে রেখো যারা আল্লাহর বন্ধু তাদের না কোনো ভয়-ভীতি আছে, না তারা চিন্তিত হবে যারা ঈমান এনেছে এবং ভয় করতে রয়েছে তাদের জন্য সুসংবাদ পার্থিব জীবন ও পরবর্তী জীবনে। (সূরা ইউনসু :আয়াত ৬২-৬৩)। আল্লাহ ভীতি বা আল্লাহকে ভয় করার ক্ষেত্রে ‘তাকওয়া’ শব্দটির ব্যাপক ব্যবহার কোরআনে লক্ষ্য করা যায়। বর্ণিত আয়াতে আল্লাহর ভীতির যে ব্যাখ্যা রয়েছে তা আল্লাহর আনুগত্য ও তার আদেশ-নিষেধাজ্ঞাগুলোকে নির্দেশ করে। সুতরাং আল্লাহকে ভয় না করার পরিণতি দুনিয়াতেই তার আজাব-গজব আকারে দেখা দিতে পারে ।

কাফের মোশরেকদের জটিল প্রশ্নের ন্যায় সাহাবায়ে কেরামও মাঝে মধ্যে হুজুর (সা.)-কে প্রাকৃতিক বিষয়ে নানা প্রশ্ন করতেন। হুজুর (সা.) সব প্রশ্নের জবাব বলেছেন ওহীর মাধ্যমে। যেমন : আবহাওয়া, পরিবেশ-পরিস্থিতি, সময়ের পরিবর্তন, দুর্যোগ-দুর্বিপাক প্রভৃতি অজস্র বিষয়। এ সব কিছুরই পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ করেন খোদ সর্বশক্তিমান খোদাতাআলা। এগুলোকে বলা হয়েছে ‘ইবাতলা’ বা পরীক্ষা। এসব রকমারী ঘটনা প্রবাহের ধারাবাহিকতায় বর্তমানে গোটা বিশে^ বহুমুখী প্রাণঘাতী করোনা মহামারির পাশাপাশি নানা দেশের নানা স্থানে প্রত্যক্ষ করা যাচ্ছে প্রাকৃতিক দুর্যোগ আকারে দাবানল তাপ-প্রবাহ , ভূমিকম্প, ভূমিধস, পাহাড়ধস, নদীভাঙন, ঝড়-তুফান, প্লাবন, পঙ্গপাল, বাদুরের হানা, ক্ষেত বিনষ্টকারী পোকা-মাকড় এবং অসংখ্য প্রকারের রোগ, বালা-মসিবত প্রভৃতি।



 

Show all comments
  • তোফাজ্জল হোসেন ২৮ আগস্ট, ২০২১, ১:৩২ এএম says : 0
    মানুষ সামাজিক জীব ও প্রকৃতির অংশ, সুষ্ঠুভাবে জীবনধারণের জন্য প্রাকৃতিক পরিবেশ সুরক্ষা ও সামাজিক পরিবেশের উন্নয়ন জরুরি
    Total Reply(0) Reply
  • দেওয়ান মাহদী ২৮ আগস্ট, ২০২১, ১:৩৩ এএম says : 0
    আল্লাহ রাব্বুল আলামিন মানুষকে দুনিয়াতে পাঠানোর শত–সহস্র বছর আগেই পৃথিবীকে সাজিয়েছেন প্রাকৃতিক সম্পদে। আগুন, পানি, বাতাস, মাটি—এ মূল চার উপাদানে সৃজন করলেন প্রকৃতি। পাহাড়, সাগর, নদী–নালা, খাল–বিল, গাছপালা, উদ্ভিদ ও তৃণলতা; ফলমূল, বৃক্ষ–তরু; পশু–পাখি, জীব, জড়, প্রাণী—এসব দিয়ে ভারসাম্যপূর্ণ করে সাজালেন এই জগৎ ও সংসার।
    Total Reply(0) Reply
  • তৌহিদুজ জামান ২৮ আগস্ট, ২০২১, ১:৩৩ এএম says : 0
    সৃষ্টি ও সৃষ্ট জগতের শৃঙ্খলা, স্থিতিশীলতা ও উন্নয়নের জন্য প্রাকৃতিক ভারসাম্য রক্ষা করা ও সামাজিক সাম্য বজায় রাখা অপরিহার্য। এ জন্য প্রয়োজন দূষণমুক্ত প্রকৃতি ও সুশৃঙ্খল সামাজিক পরিবেশ।
    Total Reply(0) Reply
  • গাজী ফজলুল করিম ২৮ আগস্ট, ২০২১, ১:৩৩ এএম says : 0
    জলবায়ু ও আবহাওয়ার দ্রুত পরিবর্তন মানবসভ্যতার জন্য এক অশনিসংকেত। বৈশ্বিক উষ্ণতা বৃদ্ধি, বরফ গলে যাওয়া এবং ওজোনস্তরের ফুটো বা ফাটল সভ্যতার ধ্বংসের কারণ হতে পারে। সামাজিক ও প্রাকৃতিক বিপর্যয়ের কারণ উল্লেখ করে আল্লাহ তাআলা বলেন, জল–স্থলে বিপর্যয় মানুষের কৃতকর্মের ফল। (আল–কোরআন, সুরা-৩০ রুম, আয়াত: ৪১)।
    Total Reply(0) Reply
  • সৈকত ফকির ২৮ আগস্ট, ২০২১, ১:৩৪ এএম says : 0
    এ প্রকার সামাজিক ও জাতীয় দুর্যোগের কারণ হলো ‘আমর বিল মারুফ’ তথা ‘সৎকাজের আদেশ’ ও ‘নাহি আনিল মুনকার’ অর্থাৎ ‘অসত্কাজের নিষেধ করা’ ছেড়ে দেওয়া। এর থেকে পরিত্রাণের উপায় হলো বিশ্বাস, সত্কর্ম, সদুপদেশ ও ধৈর্য।
    Total Reply(0) Reply

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: ইসলাম

৩ মার্চ, ২০২৩
২ মার্চ, ২০২৩
১ মার্চ, ২০২৩
২৮ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩
২৬ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩

আরও
আরও পড়ুন