বাড়াবাড়ি ও ছাড়াছাড়ির কবলে শবে বরাত-৩
সুনানে ইবনে মাজায় বর্ণিত হয়েছে : হযরত আলী ইবনে আবু তালেব (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ
আবহাওয়া ও প্রাকৃতিক পরিবেশ বিজ্ঞানী ও পরিবেশ কর্মীদের নিকট একটি গুরুত্বপূর্ণ আলোচনার বিষয়ে পরিণত হয়েছে। বিভিন্ন দেশে সৃষ্ট দাবানলের ঘটনাবলি এ আলোচনাকে নতুনভাবে চাঙ্গা করে তুলেছে। সম্প্রতি প্রকাশিত এক খবরে বলা হয়েছে, বিশ্বব্যাপী তাপমাত্রা স্বাভাবিক স্তরের চেয়ে ২৭.৭ ডিগ্রী ফারেনহাইট বৃদ্ধি রোধে গ্রীণহাউস গ্যাস নির্গমণ হ্রাস করতে বিশ্ব একজোট করতে ব্যর্থ হয়েছে। এতে প্রশান্ত মহাসাগরের উত্তর-পশ্চিমে আরো দুর্যোগের সৃষ্টি হতে পারে।
বিশ্বময় নজিরবিহীন নানা প্রাকৃতিক দুর্যোগ, প্লাবন দেখা দেয়ার আগে বিজ্ঞানীরা কোনো পূর্বাভাস দিয়েছিলেন কি’না জানা নেই। দিয়ে থাকলে তা মোকাবিলার প্রস্তুতি কিংবা বিশ্ববাসীকে সে বিষয়ে সর্তক করা হয়েছিল কি’না সে প্রশ্ন থেকেই যায়। ‘নিয়মিত এবং তীব্র হবে প্রাকৃতিক বিপর্যয়’ শীর্ষক খবরের একস্থানে একটি অদ্ভুত ঘটনার তথ্য প্রকাশ করা হয়েছে, যা খোদার কুদরতি কারিশমা ছাড়া আর কিছুই হতে পারে না। তাতে দাবানলকে ‘আগুনও রক্তলাল সূর্য বলা হয়েছে’।
যুক্তরাষ্ট্রে ‘লাল সূর্যোদয়’ প্রত্যক্ষ করার এ বিস্ময়কর ঘটনায় স্থানীয় অধিবাসীদের মধ্যে সূর্য পূজার প্রচলনের তথ্যও উঠে এসেছে। প্রকাশিত খবরের সংশ্লিষ্ট অংশ: ‘গত বুধবার যুক্তরাষ্ট্রের নিউইর্য়ক সিটিতে মানুষ একটি তীব্র লাল সূর্যোদয় প্রত্যক্ষ করেছে। সেই সাথে তারা বন্য আগুনের গন্ধে একটি ঘন বাদামী ধোঁয়ার মধ্যে জেগে উঠেছে। সাধারণত আকাশে অশুভ রক্তলাল সূর্যকে দুর্ভাগ্যের প্রতীক হিসেবে দেখা হয়, তবে বাস্তবে বিষয়টি তার থেকেও বেশি বিপদজ্জনক।
এটি কোনো রোগ নয়, প্রাকৃতিক দাবানল ও অন্যান্য অসংখ্য দূর্যোগ বিপর্যয়ের ন্যায় একটি ব্যতিক্রমী খোদায়ী পরীক্ষা, যা সচরাচর ঘটতে দেখা যায় না। এটি মানুষের দুষ্কর্মেরই পরিণতি ছাড়া আর কিছু নয়। আল্লাহ সকলকে এ খোদায়ী মহাপরীক্ষা হতে রক্ষা করুন।
আল্লাহর প্রকৃতি কি? এটি একটি বিশ্লেষণযোগ্য বিষয়। ইসলামকে বলা হয় ‘দ্বীনে ফিতরাত’ অর্থাৎ প্রকৃতির-স্বভাব ধর্ম। হাদীসে বলা হয়েছে, প্রত্যেক মানব শিশু এই সহজাত স্বভাব ইসলাম নিয়ে জন্মগ্রহণ করে। হাদীসের ভাষ্য: প্রত্যেক শিশু সহজাত প্রকৃতির ওপর জন্মগ্রহণ করে। অতঃপর তার পিতা-মাতা তাকে ইহুদী বানায়, নাসারা (খৃষ্টান) বানায় এবং মজুসী বানায় (অগ্নি উপাসক)।
‘ফিতরাত’ অর্থাৎ সহজাত স্বভাব বা প্রকৃতি, যার অর্থ করা হয়েছে ইসলাম। প্রত্যেক মানব শিশু ইসলাম নিয়ে অথবা ইসলামের ওপর জন্মগ্রহণ করে। অতঃপর পিতামাতার লালন-পালনের প্রভাবে সে শিশু প্রভাবিত অথবা পারিপার্শিকতা তাকে প্রভাবিত করে এবং সে ক্রমান্বয়ে তার স্বভাব ধর্ম হতে দূরে সরে যায় এবং সে মুসলমান থাকে না। সুতরাং তার ধর্মানুভ‚তির মূল কারণ হয় তার পিতামাতা। ‘ফিতরাত’ অর্থাৎ প্রকৃতি বা স্বভাব সর্ম্পকে সূরা রূমে আল্লাহ বলেন: তুমি একনিষ্ঠ হয়ে (হানিফ) নিজেকে দ্বীনে প্রতিষ্ঠিত কর, আল্লাহর প্রকৃতি অনুসরণ কর। যে প্রকৃতি অনুযায়ী তিনি মানুষ সৃষ্টি করেছেন, আল্লাহর সৃষ্টির কোনো পরিবর্তন নেই। এটাই সরল দ্বীন, কিন্তু অধিকাংশ মানুষ জানে না (আয়াত-৩০)।
প্রাকৃতিক-আসমানি রোগ-বালাই, বিপদাপদ, দুর্যোগ-বিপর্যয় প্রভৃতি প্রাকৃতিক নির্দেশনাবলীর অংশ। প্রাকৃতিক বিষয়াবলীতে কোনো পরিবর্তন হতে পারে না বলে আয়াতে উল্লেখ করা হয়েছে। চলমান-প্রাণঘাতী বৈশ্বিক করোনা মহামারিও একটি প্রাকৃতিক দূর্যোগ, যা মহামারি আকারে সারা বিশ^কে গ্রাস করে চলেছে। এ মহামারি হতে আরো বহু উপসর্গেরও উদ্ভব হয়েছে। এসব আল্লাহর নিয়ন্ত্রণে এবং তাঁরই পক্ষ হতে অবতীর্ণ হয়েছে। এগুলো নিয়ন্ত্রণ ও রোধ করার ক্ষমতা মানুষকে প্রদান করা হয়নি। অবশ্য এগুলো হতে আত্মরক্ষার নানা উপায় অবলম্বন করার শক্তি আল্লাহ মানুষকে প্রদান করেছেন।
সুরা বাকারায় আল্লাহ বলেন: নিশ্চয়ই আকাশ মন্ডল ও পৃথিবীর সৃষ্টিতে, রাত্রি ও দিবসের পরিবর্তনে যা মানুষের হিত সাধন করে তাসহ সমুদ্রে বিচরনশীল নৌযান সমূহে আল্লাহ আকাশ হতে যে বারি বর্ষণ দ্বারা ধরিত্রিকে তার মৃত্যুর পরপুনর্জীবিত করেন তাতে এবং তার মধ্যে যাবতীয় জীবজন্তুর বিস্তরণে, বায়ূর দিক পরিবর্তনে, আকাশ ও পৃথিবীর মধ্যে নিয়ন্ত্রিত মেঘমালাতে জ্ঞানবান জাতির জন্য নিদর্শন রয়েছে। (আয়াত-১৬৪)।
সূরা জাছিয়ায় অনুরূপ আল্লাহ বলেন: নির্দশন রয়েছে চিন্তাশীল স¤প্রদায়ের জন্য, রাত্রিও দিবসের পরিবর্তনে এবং আল্লাহ আকাশ হতে যে পরিবর্তন দ্বারা ধরিত্রিকে উহার মৃত্যুর পর পুনর্জীবিত করেন তাতেও বায়ূর পরিবর্তনে। (আয়াত-৫)। সূরা আলে-ইমরানে আল্লাহ বলেন: মানুষের মধ্যে এই দিনগুলোর পর্যায়ক্রমে আমি আবর্তন ঘটাই (আয়াত-১৪০)।
আয়াতে দুর্দিন ও সুদিন বা জয়-পরাজয়ের কথা বলা হয়েছে। যা ওহুদ যুদ্ধ সর্ম্পকিত। এটি একটি বিশেষ ঘটনার প্রতি ইঙ্গিতবহ হলেও এর মধ্যে বিদ্যমান সার্বজনীনতা রয়েছে এবং সমগ্র মানব স¤প্রদায়ের জন্যও রয়েছে মহামূল্যবান সবক। আল্লাহ তা’আলা মানুষের মাঝে ‘দিনগুলোর আবর্তন’ ঘটিয়ে থাকেন। এ উক্তির তাৎপর্য অনুধাবন করতে হলে বিবেচনা করতে হবে দিন, অর্থ, সময়, ক্ষণ বা যুগ-জামানাকে। এ প্রবাহমান সময়-ক্ষণ ইত্যাদি সর্বদা একই অবস্থায় স্থির থাকে না, আবর্তিত হতে থাকে আল্লাহরই নির্দেশে। সূরা আলে-ইমরানে আল্লাহ মোনাজাত ও দোয়ার ভাষায় স্পষ্ট করে বলে দিয়েছেন: ‘তুমিই রাত্রিকে দিবসে পরিণত এবং দিবসকে রাত্রিতে পরিণত কর। (আয়াত-২৭) অর্থাৎ কখনো রাতের সময় হ্রাস করে দিনকে বাড়িয়ে দেয়া হয় এবং কখনো তার বিপরীত করা আল্লাহরই কুদরতি কারিশমা।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।