Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

আলোর মুখ দেখেনি প্রত্যাবাসন

আজ রোহিঙ্গা আগমনের চার বছর

মুহাম্মদ ছিদ্দিকুর রহমান, টেকনাফ (কক্সবাজার) থেকে | প্রকাশের সময় : ২৫ আগস্ট, ২০২১, ১২:০১ এএম

মিয়ানমারে ক্রমবর্ধমান সহিংসতার ফলে ২০১৭ সালের ২৫ আগস্ট রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠি রাখাইন রাজ্যে থেকে বাংলাদেশে আগমনের ঢল নেমেছিল। এদিন থেকে হারিয়ে যাওয়া প্রিয়জনের স্মৃতি বুকে নিয়ে বেঁচে যাওয়া মানুষজন এক মাসের মধ্যে প্রায় ৮ লাখ ১৯ হাজার ৭৮৭ জন রোহিঙ্গা তাদের বাড়িঘর ছেড়ে মিয়ানমার সীমান্ত পেরিয়ে কক্সবাজার জেলায় আশ্রয় নেয়।
বর্তমানে মিয়ানমার থেকে চার দফায় ১১ লাখের বেশি রোহিঙ্গা শরণার্থী হয়ে বাংলাদেশে অবস্থান করছেন। ফলে দেশে রোহিঙ্গারা বোঝা হয়ে দাঁড়িয়েছেন। কক্সবাজারের উখিয়া ও টেকনাফের পাহাড়ের চ‚ড়ায় এসব রোহিঙ্গাদের অবস্থান।
যারা বেঁচে গেছে তাদের জন্য এটি ছিল এক যন্ত্রণাদায়ক যাত্রা। দীর্ঘ পথ হেঁটে পাহাড়, পর্বত, নদী ও সাগর পেরিয়ে তারা এদেশে এসেছে। এদেশে আসতে কারো কারো কয়েক দিন লাগলেও, অনেকের জন্য এক মাসেরও বেশি সময় লেগেছে। বাড়ি থেকে পালিয়ে আসার সময় সামনে জিনিষপত্র যা পেয়েছে সবই নিয়ে এসেছে। রোহিঙ্গাদের নিয়ন্ত্রণে কঠোর ব্যবস্থাসহ আশ্রিতদের মধ্য থেকে কিছু রোহিঙ্গাকে নোয়াখালীর ভাসানচরে স্থানান্তর করেছে সরকার। তবে দুই দেশ কিছু রোহিঙ্গার স্বদেশে প্রত্যাবাসনে একমত হলেও রোহিঙ্গাদের নানা শর্তে তা আর আলোর মুখ দেখেনি। একে একে দ্বিতীয়বারের মতো প্রত্যাবাসনের জন্য সব প্রস্তুতি নিয়েছে বাংলাদেশ ও মিয়ানমার সরকার। কিন্তু শর্ত না মানার অজুহাতে দীর্ঘ চার বছরেও আলোর মুখ দেখেনি এ প্রক্রিয়া।
পুলিশের পরিসংখ্যানে দেখা যায়, গেল চার বছরের এই সময়ে রোহিঙ্গা শিবিরগুলোতে হত্যা, গুমসহ নানা অপরাধে অন্তত ১ হাজার মামলা হয়েছে। তার মধ্যে চলতি বছর ছাড়া গেল তিন বছরে কক্সবাজারে রোহিঙ্গা শরণার্থীদের বিরুদ্ধে ১২ ধরনের অপরাধে কমবেশি ৭৩১টি মামলা হয়েছে। যাতে আসামি হয়েছেন ১ হাজার ৬৭১ জন রোহিঙ্গা। এসব অপরাধের মধ্যে আছে- অস্ত্র, মাদক, ধর্ষণ, অপহরণ, বিশেষ ক্ষমতা আইন, পুলিশ আক্রান্ত, ডাকাতি, হত্যা, মানব পাচার।
উখিয়া ও টেকনাফের সর্বত্র শরণার্থী শিবির। দুই উপজেলার জনসংখ্যা প্রায় সাড়ে ৫ লাখ। অথচ মিয়ানমার থেকে পালিয়ে এসে আশ্রয় নেয় ১১ লাখের বেশি রোহিঙ্গা। যা স্থানীয়দের চেয়ে দ্বিগুণ। এছাড়া দিন যতই গড়াচ্ছে, রোহিঙ্গা শিবিরে বাড়ছে অস্থিরতা। একই সঙ্গে বাড়ছে হত্যা, গুম, অপহরণসহ নানা অপরাধ। প্রতিদিন রোহিঙ্গাদের কাছে কোনো না কোনো সমস্যায় পড়ছেন স্থানীয়রা।
টেকনাফ উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান নুরুল আলম বলেন, মিয়ানমারের মিথ্যাচারের কারণে রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন বন্ধ রয়েছে। বাংলাদেশে আশ্রিত রোহিঙ্গারা এখন বিভিন্ন স্থানে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে যাচ্ছে, এতে দেশ ঝুঁকির মধ্যে পড়ে যাচ্ছে। তবে রোহিঙ্গার তৎপরতায় নানা সঙ্কট তৈরি করলেও তাদের নিয়ন্ত্রণে সরকার কাজ করে যাচ্ছে।
রোহিঙ্গা প্রতিরোধ কমিটির সভাপতি মোজাম্মেল হক বলেন, একে একে চারটি বছর পার হচ্ছে তবুও একজন রোহিঙ্গাকে স্বদেশে ফেরানো যায়নি। এটা খুবই দুঃখজনক। সরকারের উচিত দৃশ্যমান কিছু করা। না হলে যে হারে রোহিঙ্গারা অপরাধ করে বেড়াচ্ছে তাতে স্থানীয় বাসিন্দাদের বসবাস করা কঠিন হয়ে পড়বে।
আরাকান রোহিঙ্গা সোসাইটি ফর পিস অ্যান্ড হিউম্যান রাইটস (এআরএসপিএইচ) ভাইস চেয়ারম্যান আব্দুর রহিম বলেন, রোহিঙ্গারা বাংলাদেশে দীর্ঘদিন ধরে থাকবে এটা কিন্তু আমরা চাই না। বাংলাদেশ আমাদের বাড়ি নয়। চিরদিন বাংলাদেশের রোহিঙ্গা শিবিরে থাকতে চাই না। আমরা নিজ দেশে ফিরতে চাই।
কক্সবাজারের পুলিশ সুপার হাসানুজ্জামান বলেন, উখিয়া-টেকনাফে ৩৪টি শিবিরের নিরাপত্তায় সেনাবাহিনীর পাশাপাশি কাজ করছে এপিবিএনের তিনটি ব্যাটালিয়ন। তবুও নিজেদের আধিপত্য নিয়ে যেসব সংঘাত বা হত্যাকান্ড ঘটছে তা দমনে সর্বোচ্চ চেষ্টা করছে পুলিশ।



 

Show all comments
  • মোঃ+দুলাল+মিয়া ২৫ আগস্ট, ২০২১, ৩:০৯ এএম says : 0
    এরা ও আমাদের মত মানুষ এদের ইজ্জত এদের অধিকার দেওয়া আমাদের উত্তম কাজ হবে,রিজিক আল্লাহর নিকট সবাইকে আল্লা বানাইছে,তাই এরা আমাদের দেশের নাগরিক হলো ও আপত্তি নেই,অত্যাচার অবিচার থেকে পালিয়ে আমাদের কাছে এসেছে কি জন্য,একটু বাঁচার জন্য,এরা অবশ্যই জানে আমরা আল্লাহ কে ভয় করি আললাহর ইবাদত করি সেই হিসেবে আমাদের কাছে এসেছে তাহারা এখানেই সুখে দুঃখে থাকবে,আমাদের উচিত এদের আমাদের দেশের নাগরিক হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়া,সবাই একদিন দুনিয়া থেকে বিদায় হতে হবে,কেউ সুখে কেউ দুঃখে,কেউ ডেলি মাছ মাংস দিয়ে খায় আর কেউ ডাল দিয়ে খায় কিন্তু রাতে সবাই ঘুমায়,আর সবাইর থেকে ঐ দিনটি বিদায় হয়ে থাকে,দিন কি মাছ মাংস দিয়ে যে খেয়েছে এবং ডাল দিয়ে খেয়েছে এই গুলি দেখেন না তাই এঁদের ও আমাদের দেশে আমাদের সাথে থাকা উচিত।
    Total Reply(0) Reply
  • মোহাম্মদ দলিলুর রহমান ২৫ আগস্ট, ২০২১, ৩:১০ এএম says : 0
    মানুষ মানুষের জন্য।
    Total Reply(0) Reply

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: রোহিঙ্গা

১৮ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩

আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ