বিএনপির মানববন্ধন আজ, পাল্টা কর্মসূচি আওয়ামী লীগ
সারা দেশের মহানগর ও জেলা পর্যায়ে আজ মানববন্ধন করবে বিএনপি ও তার মিত্ররা। আর এ
খাগড়াছড়ির পাহাড়ে এঁকেবেঁকে গেছে পাকা সড়ক। সরু সড়কে অতিরিক্ত ঝুঁকিপূর্ণ বাঁকে দেখা যায় বিপরীত দিক থেকে আসা যানবাহন। এতে মরণ ফাঁদে পরিণত হয়েছে স্থানগুলো। পর্যটকের কারণে খাগড়াছড়ির আঞ্চলিক ও জেলা মহাসড়কে গাড়ির চাপ বাড়ছে। সেই সঙ্গে বাড়ছে দুর্ঘটনা। অতিরিক্ত ঝুঁকিপূর্ণ বাঁক ৯০ শতাংশ দুর্ঘটনার কারণ।
সড়কগুলো সরু হওয়ায় চলতি বছরের এপ্রিল পর্যন্ত অন্তত ২০টি মালবোঝাই ও যাত্রীবাহী গাড়ি উল্টে গেছে। এ ছাড়া বাঁকে বিপরীত দিক থেকে আসা গাড়ি দেখতে না পেয়ে মুখোমুখি সংঘর্ষে প্রাণহানির ঘটনাও ঘটেছে। নিয়মানুযায়ী আঞ্চলিক মহাসড়ক ২৪ ফুট প্রস্থ হওয়ার কথা। কিন্তু খাগড়াছড়ির আঞ্চলিক সড়কের প্রস্থ ১৮ ফুট ও জেলা মহাসড়কের প্রস্থ মাত্র ১২ ফুট। উঁচু-নিচু পাহাড়ি সড়কে দুর্ঘটনা রোধে দ্রুত ব্যবস্থা নেয়ার দাবি পরিবহন নেতাদের। এ জন্য সড়কের প্রস্থ বৃদ্ধি ও বাঁক সরলীকরণে ট্রপোগ্রাফিক সার্ভে করছে বলে জানিয়েছে সড়ক ও জনপথ (সওজ) বিভাগ।
খাগড়াছড়ি সড়ক বিভাগ সূত্রে জানা যায়, জেলার অধিকাংশ সড়ক নির্মিত হয়েছে আশির দশকে। সে সময় অনেকটা অপরিকল্পিত ও তাড়াহুড়ো করে পাহাড় কেটে এসব সড়ক নির্মাণ করা হয়। ফলে সড়কগুলো সরু ও অতিরিক্ত বাঁকসম্পন্ন হয়। এতে যান চলাচল অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে উঠেছে। খাগড়াছড়ি থেকে দীঘিনালা, বাঘাইছড়ি, রামগড়, তাইন্দং যাওয়ার সড়কসহ আলুটিলা-মাটিরাঙ্গা সড়কে সবচেয়ে বেশি বাঁক রয়েছে। এসব সড়কে একসঙ্গে দুটি ট্রাক বা যাত্রীবাহী বাস চলাচল করতে পারে না। এমনকি ভারী যানবাহনের পাশ দিয়ে অটোরিকশা, মাহেন্দ্র, মোটরসাইকেল, জিপের মতো ছোট যান চলতেও সমস্যা হয়।
সবচেয়ে বেশি বাঁক আছে খাগড়াছড়ি-দীঘিনালা জেলা মহাসড়কে। প্রায় ৪০ কিলোমিটার দীর্ঘ এই সড়কে বাঁক ১০৮টি। এর মধ্যে ৮০টি বাঁক অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ। জেলার ব্যস্ততম এই সড়কে দীঘিনালা ছাড়াও পর্যটনকেন্দ্র সাজেক, বাঘাইছড়ি ও লংগদুগামী যানবাহন চলাচল করে। এ ছাড়া প্রতিদিন শতাধিক বাঁশ ও কাঠবোঝাই ট্রাক যাতায়াত করে। দ্বিতীয় অবস্থানে থাকা মাটিরাঙ্গা থেকে আলুটিলা হয়ে খাগড়াছড়ি পর্যন্ত ১০০টি ছোট-বড় বাঁক আছে। এর এক-তৃতীয়াংশই ঝুঁকিপূর্ণ।
খাগড়াছড়ি থেকে ঢাকা-চট্টগ্রামে নিয়মিত বাঁশ পরিবহন করেন চালক আব্দুল মান্নান। তিনি বলেন, সড়কে বিপরীত দিক থেকে গাড়ি এলে বাঁশবোঝাই ট্রাক ক্রস করা যায় না। রাস্তাটি আরও বড় করলে আমাদের চলাচলে সুবিধা হবে। মালবাহী ট্রাকের চালক আব্দুল্লাহ আল মামুন ও বকুল জানান, সড়কে তাদের সামনেই অনেকে দুর্ঘটনায় পড়ে। প্রতি মাসে গড়ে ১০ থেকে ২০টি দুর্ঘটনা হয়। কেবল বাঁকের কারণে এসব গাড়ি উল্টে যায়।
সিএনজিচালিত অটোরিকশার চালক মো. আনোয়ার হোসেন ও বাবুল বলেন, সাজেক পর্যটনকেন্দ্রে প্রচুর গাড়ি যাতায়াত করায় খাগড়াছড়ি-দীঘিনালা সড়কে যানবাহনের চাপ বেশি। রাস্তা চিকন হওয়ায় বিপরীত দিক থেকে আসা গাড়ি দেখা যায় না। ফলে অনেক সময় দুর্ঘটনা ঘটে। এই সড়কে নিয়মিত চলাচলকারী রেহানা বেগম বলেন, রাস্তা দিয়ে বাস-ট্রাক যাওয়ার সময় অটোরিকশা চালকদের পাশাপাশি আমরাও ভয় থাকি। সরু রাস্তায় বড় গাড়ির কারণে ছোট গাড়ি চলতে পারে না। বাধ্য হয়ে রাস্তা থেকে পাশে নেমে যেতে হয়।
সড়ক প্রশস্ত করণ ও বাঁক সরলীকরণে ট্রপোগ্রাফিক সার্ভে করছে সড়ক ও জনপদ বিভাগ। আঞ্চলিক মহাসড়ক ২৪ ফুট প্রশস্ত হওয়ার নিয়ম থাকলেও খাগড়াছড়ির আঞ্চলিক সড়কের প্রশস্ততা ১৮ ফুট। পাহাড়ি সড়কে দুর্ঘটনা রোধে দ্রুত ব্যবস্থা নেয়ার দাবি পরিবহন নেতাদের। এদিকে দুর্ঘটনা রোধে সড়ক প্রশস্তকরণ ও বাঁক সরলীকরণে কাজ চলমান আছে বলে জানিয়েছে সড়ক ও জনপদ বিভাগ।
খাগড়াছড়ি সড়ক ও জপনদ বিভাগরে নির্বাহী প্রকৌশলী শাকিল মোহাম্মদ ফয়সাল বলেন, পাহাড়ি সড়কগুলো প্রশস্ত করা এখন সময়ের দাবি। ইতোমধ্যে আমরা ট্রপোগ্রাফিক সার্ভের কাজ শুরু করেছি। সার্ভারের কাজ শেষ হলে আমরা প্রকল্প প্রস্তুত করে উর্ধতন কর্তৃপক্ষের কাছে পাঠাব। প্রকল্পটি অনুমোদন হলে পাহাড়ের পরিবেশগত প্রভাব নিরুপণ করে আঞ্চলিক মহাসড়কগুলো ২৪ ফুট প্রশস্ত করা হবে এবং জেলা মহাসড়ক ১৮ ফুট প্রশস্ত করা হবে।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।