পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল বলেছেন, আগস্ট বাঙালীর জীবনে শোকাহত ও অভিশপ্ত মাস, বেদনা আর শোকের দুর্বিষহ স্মৃতির মাস। ঘাতকদের উদ্যত অস্ত্রের সামনে ভীতসন্ত্রস্ত বাংলাদেশ বিহŸল হয়ে পড়েছিল শোকে আর অভাবিত ঘটনার আকস্মিকতায়। কাল থেকে কালান্তরে জ্বলবে এ শোকের আগুন। বিশাল হৃদয়ের যে মানুষটিকে কারাগারে বন্দী রেখেও পাকিস্তানী হানাদাররা স্পর্শ করার সাহস দেখাতে পারেনি, অথচ স্বাধীন বাংলার মাটিতে নির্মমভাবে সপরিবারে তাঁকে জীবন দিতে হয়েছে। জাতির জনক বঙ্গবন্ধুকে হারানোর সেই দুঃসহ স্মৃতি এখনও বয়ে বেড়াচ্ছে গোটা জাতি।
গতকাল অর্থ মন্ত্রণালয়ের অর্থবিভাগ, আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগ ও অভ্যন্তরীণ সম্পদ বিভাগ আয়োজিত স্বাধীনতার মহান স্থপতি জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান-এঁর ৪৬ তম শাহাদত বার্ষিকী উপলক্ষে এক ভার্চুয়াল আলোচনা সভা ও দোয়া মাহফিলে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল বলেন, ১৯৪৭ থেকে ৭১-এই দীর্ঘ পথপরিক্রমণে একেকটি আন্দোলনের সোপান উত্তরণের মাঝে একেক গুচ্ছ তরুণ তাজা তপ্ত প্রাণ অবিস্মরণীয় অবদান রেখেছেন। কিন্তু এ সব কিছুরই পরোক্ষ এবং প্রত্যক্ষ প্রতীক ছিলেন জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। স্বায়ত্তশাসন থেকে স্বাধিকার, স্বাধিকার থেকে স্বাধীনতা আন্দোলনের উত্তরণ-এর সমস্ত কিছুর অগ্রভাগে ছিলেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান, তিনি ছিলেন আন্দোলনের স্থপতি। ছাত্র অধিকার আন্দোলন, সাধারণ মানুষের মৌলিক অধিকারের সংগ্রাম, ভাষা আন্দোলন, ছয় দফা, উনসত্তরের গণ অভ্যুত্থান, সত্তরের সাধারণ নির্বাচন এবং একাত্তরের স্বাধীনতা যুদ্ধে নেতৃত্ব দেবার পথপরিক্রমায় বরণ করেন ৪ হাজার ৬ শত ৮২ দিন কারাবাস। আর এর সাথে অবর্ণনীয় জুলুম—নির্যাতন।
অর্থ বিভাগের সিনিয়র সচিব আব্দুর রউফ তালুকদার স্বাগত বক্তব্যে বলেন, ভৌগলিক স্বাধীনতার পাশাপাশি আমাদের বঙ্গবন্ধু আমাদের অর্থনৈতিক মুক্তি এনে দিতে চেয়েছিলেন। ১০ জানুয়ারী ১৯৭২ পাকিস্তানের কারাগার থেকে মুক্ত হয়ে দেশে প্রত্যাবর্তন করে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান শূন্য থেকে শুরু করেন দেশ বিনির্মাণের কঠিনতম কাজ। ১৯৭২ সালেই তিনি প্রনয়ন করেন বাংলাদেশের প্রথম পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনা। তিনি বাংলাদেশের আর্থসামজিক উন্নয়নের সামগ্রীক পরিকল্পনা প্রনয়ন করেন যার ভিত্তি মূলে আমাদের আজকের বাস্তবতা রূপ লাভ করেছে।
বিশেষ অতিথির বক্তব্যে অভ্যন্তরীণ সম্পদ বিভাগের সিনিয়র সচিব আবু হেনা রহমাতুল মুনিম বলেন, স্বাধীনতার পর থেকে উন্নয়নের মাপকাঠিগুলোর দিকে যদি তাকাই দেখা যায় জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুর হাত দিয়ে যেগুলো শুরু হয়েছিল, ২০১০ সালের পর থেকে এগুলো উর্ধ্বমুখী রয়েছে। বঙ্গবন্ধুর দেখানো পথ ধরেই আমরা এগিয়ে যাবো। বঙ্গবন্ধুকে শুধু মুখে নয়, অন্তরে ধারণ করে আমাদেরকে অগ্রসর হতে হবে।
বিশেষ অতিথির বক্তব্যে আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের সিনিয়র সচিব আসাদুল ইসলাম বলেন, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ছিলেন অতুলনীয় বিশাল ব্যক্তিত্ব। ১৫ আগস্টের হত্যাকান্ড জঘন্যতম হত্যাকান্ড যার নজির ইতিহাসে বিরল, ঐ কালরাতে শিশু অন্তঃসত্ত¡া নারীকেও নির্মমভাবে হত্যা করা হয়। জাতির পিতা আমাদের স্বাধীনতা এনে দিয়েছিলেন, পাশাপাশি তিনি অতি অল্প সময়ের মধ্যে আমাদের আর্থিক খাতগুলোর জন্য মহা পরিকল্পনা প্রনয়ন করেন। তিনি মাত্র সাড়ে তিন বছরে আমাদের আর্থিক খাতের প্রায় প্রতিটি সেক্টরে যে কর্মযজ্ঞ শুরু করেন তা অকল্পনীয়। বঙ্গবন্ধু চেয়েছিলেন সাধারণ মানুষের অর্থনৈতিক মুক্তি।
এদিকে এদিন বিকেলে বাংলাদেশ ইন্সুরেন্স এসোসিয়েশন আয়োজিত স্বাধীনতার মহান স্থপতি জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান-এঁর ৪৬ তম শাহাদত বার্ষিকী উপলক্ষে এক ভার্চুয়াল আলোচনা সভা ও দোয়া মাহফিলে প্রধান অতিথির বক্তব্যে বক্তব্যে অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল বলেন, যুদ্ধবিধ্বস্ত বাংলাদেশের ক্ষতির পরিমাণ এবং ভয়াবহতা ছিল অবর্ণনীয়। পোড়ামাটি নীতি অবলম্বন করে পাকিস্তানিরা বাংলাদেশকে এক ভয়ঙ্কর অবস্থার মধ্যে ফেলে দিয়েছিল। বাংলাদেশ ব্যাংকের হিসাব মতে, সারাদেশের মানুষজনের হাতে তখন মাত্র চার কোটি টাকার মতো ছিল। বৈদেশিক মুদ্রার কোনো মজুদ বাংলাদেশ ব্যাংকে ছিল না। মাত্র ১০ হাজারের মতো নথি দিয়ে শুরু হয় বাংলাদেশ সরকারের সচিবালয়। বঙ্গবন্ধু যেদিন টেলিফোনে কথা বলতে শুরু করেন সেদিন ঢাকা জেলা থেকে মাত্র তিনটি জেলার সঙ্গে যোগাযোগের ব্যবস্থা ছিল। পাকিস্তান সেনাবাহিনীর নির্দেশে আল-বদরের সদস্যরা রাষ্ট্রীয় ব্যাংকের সব টাকা ১৬ ডিসেম্বর সকালে রাস্তায় এনে আগুন দিয়ে ধ্বংস করে ফেলেছিল। এমন একটি বিধ্বস্ত অবস্থা থেকে বাংলাদেশকে দাঁড় করাতে আপ্রাণ চেষ্টা করেছিলেন বঙ্গবন্ধু। একটি ধ্বংসস্তুপের ছাই থেকে শুরু করেন বঙ্গবন্ধু, তার নেয়া সেসব যুগান্তকারী পদক্ষেপের সুফল বাংলাদেশের মানুষ ভোগ করে চলেছে। যার ভিত্তিভ‚মির উপর আজ দাঁড়িয়ে আছে দেশের উন্নয়ন ও অর্থনীতি। সোনার বাংলা গঠনের মজবুত ভিত বঙ্গবন্ধুর হাতেই তৈরি।
সভায় অর্থমন্ত্রী বলেন, অবিসংবাদিত নেতা, স্বাধীন বাংলাদেশের স্থপতি, সর্বকালের সর্ব শ্রেষ্ঠ বাঙ্গালী, জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বাংলাদেশের অস্তিত্বস্পর্শী অমর নাম। ন্যায্য, সত্য, কল্যাণ এবং আত্মমুক্তির পক্ষে সোচ্চার উদার হৃদয় মহান মানুষ। একটি স্বাধীন জাতিসত্তার অপরিমেয় অহংকার, বর্ণিল ঐশ্বর্য। জাতির পিতার নেতত্বে আমাদের স্বাধিকার থেকে স্বাধীনতা আন্দোলনে দেশের জন্য যাঁরা জীবন দিয়েছেন, সেই সকল নিঃশঙ্ক বীরসন্তান, মুক্তিযুদ্ধে শহীদ ত্রিশ লাখ বীর মুক্তিযোদ্ধা ও সম্ভ্রম হারানো ২ লাখ মা বোন - যাঁদের চরম ত্যাগ আর এক সাগর রক্তের বিনিময়ে আজ আমরা স্বাধীন, পেয়েছি স্বাধীন সত্তা বাংলাদেশ। আমরা তাদেরই উত্তরাধিকার, কেননা আমরা হয় কেউ নিজেই মুক্তিযোদ্ধা, না হয় কোন মুক্তিযোদ্ধা পরিবারের সদস্য, না হয় কোন না কোনভাবে মুক্তিযুদ্ধের সাথে জড়িত। তাই আমাদেরকে আজ এই শোকের দিনে বঙ্গবন্ধুসহ সকল শহীদানের আদর্শ ও অভিপ্রায়কে সামনে রেখে, শোককে শক্তিতে রূপান্তরের মাধ্যমে, বর্তমান প্রজন্মের কিংবদন্তী ও আধুনিক বাংলাদেশের রূপকার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে জাতির জনকের স্বপ্নের সুখী ও সমৃদ্ধ ‘সোনার বাংলা’ গড়াড় দৃঢ় শপথ নিতে হবে।
বাংলাদেশ ইন্সুরেন্স এসোসিয়েশনের প্রেসিডেন্ট শেখ কবির হোসেনের সভাপতিত্বে সভায় বিশেষ অতিথি হিসাবে আরো উপস্থিত ছিলেন সংসদ সদস্য ড. মো. আব্দুস সহিদ, প্রবীণ রাজনীতিবিদ ও আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য মোজাফফর হোসেন পল্টু এবং বাংলাদেশ ইন্সুরেন্স এসোসিয়েশনের সদস্য ও সম্পৃক্ত ব্যক্তিবর্গ। উভয় অনুষ্ঠানেই মহান আল্লাহ রাব্বুল আলামীন-এর কাছে ১৫ আগস্টের সকল শহীদানদের রুহের মাগফিরাত কামনা করে বিশেষ দোয়া পরিচালনা করা হয়।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।