Inqilab Logo

বৃহস্পতিবার ২১ নভেম্বর ২০২৪, ০৬ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ১৮ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

একটা-দুইটা গান বা সিঙ্গেল ট্র্যাক দিয়ে একজন শিল্পী খুব বেশি দূর যেতে পারে না-বেবী নাজনীন

বিনোদন রিপোর্ট: | প্রকাশের সময় : ২৩ আগস্ট, ২০২১, ১২:০২ এএম

আজ সঙ্গীতজগতের প্রখ্যাত শিল্পী ব্ল্যাক ডায়মন্ডখ্যাত বেবী নাজনীনের জন্মদিন। তিনি এখন যুক্তরাষ্ট্রে অবস্থান করছেন। গত মার্চে দেশে ফেরার কথা থাকলেও করোনার কারণে নিউ ইয়র্কে লকডাউন থাকায় ফিরতে পারেননি। জন্মদিন প্রসঙ্গে তার সঙ্গে যোগাযোগ করলে অনেকটা মন খারাপ করেই বললেন, ‘আর জন্মদিন! প্রতিদিন এখন খারাপ খবর দিয়েই সকাল শুরু হয়। প্রতিদিনই দেশ, অন্যদেশ কিংবা আমেরিকার অন্য শহর থেকেও কম-বেশি দুঃসংবাদ পাই। ফোন বাজলেই মনে হয়, আবারও হয়তো কোনো দুঃসংবাদ শুনতে হবে। পুরো পৃথিবীর চেহারা বদলে গেছে। এমনটি হতে পারে চিন্তা করতে পারিনি কোন দিন। মাঝেমধ্যে টুকটাক বাজার সদাই করা ছাড়া ঘরের বাইরে যাওয়া হয়না। ছেলে মহারাজ অনলাইনে পড়াশোনা করে। আমার সময় কাটে নিউজ দেখে, এটা সেটা রান্না করে, নামাজ ও কোরআন শরিফ পড়ে। আর পরিবার বন্ধু আপনজনদের খোঁজ-খবর নিয়ে। এভাবেই কাটছে বিগত কয়েক মাস। কবে দেশে যেতে পারবো বলতে পারছি না। আপনারা দোয়া করবেন এবং ভাল থাকবেন। মহান আল্লাহ চাইলে, নিশ্চয়ই আমরা আগের পৃথিবী ফিরে পাবো ইনশাআল্লাহ। বেবী নাজনীন বাংলাদেশ বেতার, চলচ্চিত্র, টেলিভিশন এবং মঞ্চের এক অপ্রতিদ্বন্দ্বী এবং লক্ষ শ্রোতার হৃদয়ে প্রভাব বিস্তারকারী একজন গানের শিল্পী। ‘ব্ল্যাক ডায়মন্ড’ নামে যার খ্যাতি ছড়িয়েছে দেশ ছাড়িয়ে উপমহাদেশ এবং বিদেশেও। গানের মাধ্যমে সরকারী এবং বেসরকারীভাবে পৃথিবীর বহু দেশে তিনি বাংলাদেশের প্রতিনিধিত্ব করে আসছেন বহু বছর ধরে। যে কারণে বিভিন্ন ভাষার গানও তাকে রপ্ত করতে হয়েছে। এক কথায় একজন বহুমাত্রিক গানের শিল্পী তিনি। জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার পেয়েছেন একাধিকবার। দেশ এবং বিদেশের অনেক সন্মান-সন্মাননা অর্জন করেছেন। আধুনিক গানের বাইরে রবীন্দ্র-নজরুল, লালন, পল্লী, ভাওয়াইয়া গানের ব্যাপক দখল রয়েছে তার। হিন্দী-উর্দু গান আর গজলেও তার রয়েছে অসামন্য দখল। তার সঙ্গীতজীবন চল্লিশ বছরের অধিক। বাংলাদেশের হাতে গোনা যে দুই তিনজন সঙ্গীতশিল্পী গানের বিভিন্ন ধারায় বিচরণ করে মুন্সিয়ানা দেখিয়েছেন বেবী নাজনীন তাদের অন্যতম একজন। তিনি বলেন, ‘আসলে কোন গান কোথায় গাইবো এটা নির্ভর করে কোন ধরণের গানের শ্রোতার সামনে আমি উপস্থিত রয়েছি। নিজেকে সেভাবেই প্রস্তুত করতে এবং রাখতে হয়। একজন শিল্পীর সবচেয়ে বড় পরীক্ষার জায়গা হল মঞ্চ। এটি একটি কঠিন জায়গা। যেখানে বিভিন্ন রকমের মানুষের সমাগম ঘটে। তাদের পছন্দও হয় বিভিন্ন রকম। নানা রকমের গানের অনুরোধ আসবে, তখন যদি সেই পছন্দ অনুযায়ী উপস্থাপন করতে না যায়, তাহলে দর্শক-শ্রোতার কাছে আলাদা কোন অবস্থান তৈরী হবে না। গান গাইতে হলে বিভিন্ন ধারার গানের সঠিক চর্চা থাকতে হবে অবশ্যই।’ এক সম্ভ্রান্ত পরিবারে জন্ম এবং বেড়ে ওঠা বেবীর গানের হাতে খড়ি তার বাবা সঙ্গীতব্যক্তিত্ব মনসুর সরকারের কাছে। জীবনের দীর্ঘ চলারপথে সঙ্গীতের নানা দীক্ষা এবং সাধনায় যেন নিজেই নিজেকে গড়ে তুলেছেন বেবী নাজনীন। সেই দিক বিবেচনা করলে বেবী নাজনীন একজন ‘সেলফ মেইড’ সঙ্গীত তারকা। আধুনিক বাংলা গানের বাজারে রয়েছে তার সর্বাধিক সংখ্যক একক (৫০টি একক এবং দুই‘শোরও বেশী মিশ্র) ও মিশ্র অ্যালবাম। ১৯৮০ সালে এহতেশাম পরিচালিত ‘লাগাম’ চলচ্চিত্রে আজাদ রহমানের সুর ও সঙ্গীতে আহমেদ জামান চৌধুরীর লেখা একটি গানের মাধ্যমে চলচ্চিত্রের গানে অভিষেক ঘটে বেবী নাজনীনের। ১৯৮৭ সালে মকসুদ জামিল মিন্টুর সঙ্গীত পরিচালনায় সারগাম থেকে প্রকাশিত প্রথম অ্যালবাম ‘পত্রমিতা’ বেবী নাজনীনের ক্যারিয়ারের মোড় ঘুড়িয়ে দেয়। সঙ্গীতপ্রিয় সব মানুষের মনে তিনি যেন এক স্থায়ী আসন বানিয়ে ফেলেন ঐ অ্যালবাম দিয়েই। তারপর নিঃশব্দ সুর, ‘কাল সারা রাত’, ‘প্রেম করিলেও দায়’, ‘দুচোখে ঝুম আসে না’- শিরোনামের অ্যালবামগুলো আধুনিক গানের বাজারে বেবী নাজনীনকে অত্যন্ত জনপ্রিয় এবং সর্বত্রই গ্রহণযোগ্য শিল্পী হিসেবে চিন্হিত করে। ঐ রংধনু থেকে, কাল সারা রাত ছিলো স্বপনেরও রাত, এলো মেলো বাতাসে উড়িয়েছি শাড়ির আঁচল, দু চোখে ঘুম আসে না তোমাকে দেখার পর, আমার ঘুম ভাঙ্গাইয়া গেলোরে মরার কোকিলে, মানুষ নিষ্পাপ পৃথিবীতে আসে, কই গেলা নিঠুর বন্ধুরে-সারা বাংলা খুঁজি তোমারে, পূবালী বাতাসে, ও বন্ধু তুমি কই কই রে.. এমন অনেক কালজয়ী গানের শিল্পী বেবী নাজনীন লেখক হিসেবেও সুনাম অর্জন করেছেন। তার নিজের অনেক গান তিনি নিজেই লিখেছেন, সুরারোপও করেছেন। তার লেখা ‘সে,’ ঠোঁটে ভালবাসা.’ এবং ‘প্রিয়মুখ’ শিরোনামে তিনটি কাব্যগ্রন্থ প্রকাশিত হয়েছে। তার সর্বশেষ একক অ্যালবামটি ছিলো ‘ব্ল্যাক ডায়মন্ড বেবী নাজনীন’ শিরোনামে। এই সময়ের সংস্কৃতি অঙ্গন নিয়ে তিনি বলেন, আমাদের সংস্কৃতির ঐতিহ্য হারাতে বসেছে। খুবই দুঃখের বিষয়, যে ঐতিহ্য নিয়ে গত কয়েক দশকে এগিয়েছে আমাদের অডিও ইন্ডাস্ট্রি এবং চলচ্চিত্র সঙ্গীত, সেই ধারায় এখন আর তা নেই। প্রযুক্তির কারণে সংস্কৃতি বাজারজাতের ধারা হয়ত বদলেছে, কিন্তু সেভাবে উঠে আসছে না আগামী দিনের শিল্পী এবং সংস্কৃতি। সংস্কৃতিকে এখন পেশা হিসেবে নেয়ার সাহসও করা যায় না। কারণ, এই মাধ্যমে এখন নতুন বিনিয়োগ নেই, নেই সুযোগ এবং পৃষ্ঠোপোষকতা। একটা দুইটা গান বা সিঙ্গেল ট্র্যাকের মাধ্যমে নিজেদের চেষ্টায় কেউ কেউ হয়ত যুক্ত হচ্ছেন গানের বাজারে। কিন্তু এভাবে কত দূর যাওয়া যায়? মেধা বিকাশের কোন প্ল্যাটফর্ম নেই। সঙ্গীতে যারা নিজের ভাগ্য গড়তে চান, তাদের ভবিষ্যৎ নিয়ে শঙ্কা দেখা দিচ্ছে। এই ধারার পরিবর্তন হওয়া জরুরী।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ