হিন্দুত্ববাদী রাজনীতির খড়গ : আসামের এনআরসি এবং বাংলাদেশ
কিশোর শিক্ষার্থীদের নিরাপদ সড়ক দাবীর আন্দোলনে ঢাকাসহ সারাদেশে তীব্র রাজনৈতিক উত্তেজনা ও অনিশ্চয়তা দেখা যাচ্ছিল,
মোবায়েদুর রহমান
ভারতের প্রখ্যাত এবং প্রবীণ সাংবাদিক কূলদ্বীপ নায়ার একটি চরম সত্য প্রকাশ করেছেন। একটি সিন্ডিকেটেড কলামে তিনি লিখেছেন, ‘সম্প্রতি আমি ছাত্রদের আমন্ত্রণে শ্রীনগরে একটি অনুষ্ঠানে যোগ দিতে যাই। দেখলাম, তরুণেরা স্বাধীন ও সার্বভৌম দেশ চায়। তারা বুঝতে পারছে না, ভারত নিজের সীমান্তে আরও একটি মুসলিম দেশ চায় না।’ মিঃ কূলদ্বীপ নায়ার নবতিপর বৃদ্ধ। নব্বই ঊর্ধ্ব কোন অ্যাকটিভ সাংবাদিক ভারতে বর্তমানে জীবিত আছেন বলে আমার জানা নেই। তিনি একসময় ইংল্যান্ডে ভারতের রাষ্ট্রদূত ছিলেন। রাজনীতি ও কূটনীতির সর্বোচ্চ মহলে তার যাতায়াত আছে। তিনি মোটামুটি সত্য কথা বলেন। তবে তিনি যেহেতু একজন ভারতীয় তাই হয়ত সবসময় চরম সত্যটি তার পক্ষে বলা সম্ভব হয় না। তারপরও তিনি বলেছেন যে, কাশ্মীরের তরুণরা স্বাধীনতা চায়।
এরপর তিনি লিখেছেন, “আজাদীর দাবীটা কাশ্মীরের সেই অংশেই সীমিত হয়ে আছে যেখানকার ৯৮ শতাংশ মানুষই মুসলমান।” ঐ কলামের অন্যত্র তিনি লিখেছেন, “দেশভাগ মানুষের মনে যে ক্ষত সৃষ্টি করেছিল, আজ ৭০ বছর পরও তা শুকায়নি। মানুষ কীভাবে আশা করে, ভারত আবারও একটি দেশভাগ মেনে নেবে; তা সে কাশ্মীরিদের ভাবাবেগ যতই খাঁটি হোক না কেন। আর সেই দেশভাগ যদি আবারও ধর্মের ভিত্তিতে হয় তাহলে ধর্মনিরপেক্ষ রাষ্ট্রের অস্তিত্বই কমজোর হবে। কাশ্মীরের চলে যাওয়ার ফলাফল এত মারাত্মক হবে যে তা আমরা কল্পনাও করতে পারছি না।”
উনি যতটুকু বলেছেন, তার বাইরেও কিছু সত্য রয়ে গেছে। সে সত্যটি যদি এখানে যোগ করা না হয় তাহলে প্রকৃত সত্য এবং পূর্ণ সত্য জানা যাবে না। সেটি হল, কাশ্মীরের শুধুমাত্র তরুণরাই নয়, সেখানকার আবালবৃদ্ধবনিতা নির্বিশেষে সকলেই কাশ্মীরের ব্যাপারে একমত এবং ঐক্যবদ্ধ। সকলেই কাশ্মীরের স্বাধীনতা চায়। আবার একটি উল্লেখযোগ্য অংশ পাকিস্তানে যোগ দিতে চায়। তা সে পাকিস্তানে যোগ দিতে চাক আর স্বাধীনতা চাক, আসল কথা হল কেউই ভারতের সাথে যুক্ত থাকতে চায় না।
তাহলে কাশ্মীর সমস্যার সমাধান কি? ভারত ভাগ হয়েছে ৬৯ বছর আগে। কাশ্মীর নিয়ে দুইটি পূর্ণাঙ্গ যুদ্ধ হয়েছে। একটি ১৯৪৭-৪৮ সালে। আর একটি ১৯৬৫ সালে। আর একটি হয়েছে সীমিত আকারের যুদ্ধ। সেটিকে বলা হয় কারগিল যুদ্ধ। সেটি ১৯৯৯ সালে। ১৯৭১ সালে যে যুদ্ধ হয় সেটি বাংলাদেশকে কেন্দ্র করে। এখানে একটি তৃতীয় পক্ষ এবং প্রধান পক্ষ ছিল। সেটি হল বাংলাদেশের মুক্তিবাহিনী। তার পরেও এই যুদ্ধে ভারত জয়লাভের সুযোগে পাকিস্তানের কিছু ভূখ- দখল করতে চেয়েছিল। কিন্তু মার্কিন বিমানবাহী জাহাজ সপ্তম নৌবহর আরব সাগরে মোতায়েন থাকায় ভারতের পক্ষে সেটি সম্ভব হয়নি। এখানে আরও উল্লেখ করা দরকার যে, বাংলাদেশ যুদ্ধের সময় ভারত বা পাকিস্তান কারও হাতেই অ্যাটম বোমা ছিল না।
॥ দুই ॥
ইস্যু যাই হোক না কেন, ভারত এবং পাকিস্তানের মধ্যে এ পর্যন্ত চারটি যুদ্ধ হয়েছে। তার পরেও কাশ্মীর সমস্যার সমাধান হয়নি। ৬৯ বছর পর ২০১৬ সালের শেষ প্রান্তে দুই দেশে যুদ্ধের দামামা বাজতে চলেছে। এবার যুদ্ধ লাগলে সেটি আণবিক যুদ্ধে পর্যবসিত হবে। তাই বলছিলাম, এই সমস্যার সমাধান কোন পথে? পাকিস্তানের পক্ষে যেমন ভারতকে পরাস্ত করা সম্ভব নয় তেমনি ভারতও সমগ্র পাকিস্তান গ্রাস করতে পারবে না। বরং যুদ্ধ শেষে পাকিস্তানের ২০ কোটি মানুষ এবং ভারতের ১১০ কোটি মানুষের মধ্যে সৃষ্টি হবে চরম তিক্ততা। যার ফল আগামী ভবিষ্যতে গেরিলা যুদ্ধে রূপ নিতে পারে। এই সমস্যা অনন্তকাল ধরে চলবে।
এই সমস্যা সমাধানের একটি মাত্র পথই খোলা আছে। আর সেটি হল কাশ্মীরিদের ভাগ্য কাশ্মীরিরাই নির্ধারণ করবে। একমাত্র গণভোটের মাধ্যমেই কাশ্মীরিরা বিশ্ববাসীকে জানিয়ে দিতে পারে যে তারা কোন দিকে যাবে। তারা কি পাকিস্তানে যোগ দেবে? নাকি তারা ভারতে যোগ দেবে? নাকি তারা এই দুটি দেশের কোনটাতেই যোগ না দিয়ে স্বাধীন ও সার্বোভৌম রাষ্ট্র গঠন করবে? আসলে জনগণকে সেই অধিকার দেয়া হলে ভারত-পাকিস্তানের মধ্যে যুদ্ধ লাগার মত কোন পরিস্থিতির সৃষ্টি হবে না। দুই দেশই বিশাল সামরিক বাহিনী পুষছে। তারা সেনাবাহিনীর আকার ছোট করতে পারবে এবং হাজার হাজার কোটি টাকার সামরিক বাজেটের একটি উল্লেখযোগ্য অংশ তাদের জনগণের দারিদ্র বিমোচনে ব্যয় করতে পারবে।
এটি শুধু আমাদের কথা নয়, এটি বিশ্বসভা অর্থাৎ জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদেরও কথা। একাধিকবার জাতিসংঘ এ ধরনের প্রস্তাব গ্রহণ করেছে। ১৯৪৮ সালের এপ্রিল মাসে গৃহীত ৪৭ নং প্রস্তাব, একই বছরের আগস্ট মাসে গৃহীত প্রস্তাবসহ একাধিক প্রস্তাব গৃহীত হয়েছে। যথা ১৯৪৮ সালের আগস্ট মাসের প্রস্তাবের অংশবিশেষ নিম্নরূপঃ
PART III
The Government of India and the Government of Pakistan reaffirm their wish that the future status of the State of Jammu and Kashmir shall be determined in accordance with the will of the people and to that end, upon acceptance of the truce agreement, both Governments agree to enter into consultations with the Commission to determine fair and equitable conditions whereby such free expression will be assured.
Source: United Nations
বাংলা অনুবাদ : পাকিস্তান ও ভারত সরকার এই মর্মে তাদের ইচ্ছা পুনর্ব্যক্ত করছে যে, জম্মু ও কাশ্মীরের ভবিষ্যৎ নির্ধারিত হবে সেখানকার মানুষের ইচ্ছানুযায়ী। তাদের ইচ্ছাকে বাস্তবে রূপ দেয়ার জন্য যুদ্ধ বিরতি কার্যকর হলে উভয় সরকারই জাতিসংঘ কর্তৃক গঠিত কমিশনের সাথে আলাপ-আলোচনা করবে। জনগণের ইচ্ছা অবাধ ও নিরপেক্ষভাবে প্রকাশ করার জন্য উপযুক্ত পরিবেশ সৃষ্টি করা হবে। এজন্য উভয় সরকার অনুকূল পরিবেশ সৃষ্টি করার জন্য আলাপ-আলোচনা করবে।
কিন্তু জাতিসংঘের প্রস্তাবসমূহকে বুড়ো আঙ্গুল দেখিয়েছে ভারত। সামরিক শ্রেষ্ঠত্বের বলে ভারত কাশ্মীরের সবচেয়ে উর্বরা অংশ এবং আয়তনে কাশ্মীরের দুই-তৃতীয়াংশ দখল করে আছে। কাশ্মীরের সমস্ত অশান্তির মূল সেখানেই। সন্ত্রাসী হামলা বলুন আর গেরিলা হামলা বলুন, সবকিছু হল ভারতীয় জবরদখলদারিত্বের বিরুদ্ধে। কিন্তু সেই মূল ইস্যুকে বাদ দিয়ে পরবর্তীকালে সৃষ্ট ইস্যুগুলো নিয়ে হইচই করা হচ্ছে। এগুলো হল বাই প্রোডাক্ট। মূল প্রোডাক্টকে বাদ দিয়ে বাই প্রডাক্টকে নিয়ে এতই হইচই করা হচ্ছে যে, সেই হইচইকে কেন্দ্র করে আণবিক যুদ্ধের দ্বারপ্রান্তে এসে দাঁড়িয়েছে এই উপমহাদেশ।
॥ তিন ॥
পাকিস্তানে কথিত সার্জিক্যাল হামলার ভারতীয় দাবি এবং পাকিস্তান কর্তৃক তা প্রত্যাখ্যাত হওয়ায় অব্যবহিত পরে পাকিস্তান ও ভারতের মধ্যে ৬ ঘণ্টাব্যাপী কামান ও মর্টারের গুলিবিনিময় হয়। এই গুলিবিনিময়ে ২০ জন ভারতীয় সৈন্য নিহত হয়। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভারতীয় হামলার ভিডিও ক্লিপিং ইউটিউবের মাধ্যমে ছড়িয়ে দেয়া হয়েছে। দেখা যাচ্ছে, নিয়ন্ত্রণ রেখার এধারে অর্থাৎ ভারত অধিকৃত কাশ্মীর এলাকায় বিপুল সৈন্য সমাবেশ করা হয়েছে। তারা দূরপাল্লার ভারী কামান থেকে আজাদ কাশ্মীরের অভ্যন্তরে গোলা নিক্ষেপ করে। ভারতীয় ভারী অস্ত্রের গোলা বর্ষণে এত প্রচ- আওয়াজ হয় যে আশপাশের এলাকা কেঁপে ওঠে। ১২ ঘণ্টা পার হতে না হতেই পাকিস্তান এই হামলার প্রতিশোধ নেয়। ইন্টারনেট ব্রাউজ করে দেখা যায় যে, পাকিস্তানের যে প্লাটুন পাল্টা অপারেশনে জড়িত ছিল তাদের পেছনে ছিল সেকেন্ড লাইন অব ডিফেন্স। পাকিস্তানের পাল্টা আঘাতের পর সারাদেশে সর্বাত্মক যুদ্ধ প্রস্তুতি গ্রহণ করা হয়। ভারতীয় হামলার পর দিন পাকিস্তানের প্রতিরক্ষামন্ত্রী স্পষ্ট ভাষায় ঘোষণা করেন যে, পাকিস্তানের অস্ত্রভা-ারে যে সমস্ত আণবিক বোমা মওজুদ রয়েছে সেগুলি শো পিস হিসেবে প্রদর্শনের জন্য নয়। পাকিস্তান স্পষ্ট ভাষায় ঘোষণা করছে যে, ভারতীয় সেনাবাহিনী যদি পাকিস্তানের সীমান্ত অতিক্রম করে তাহলে পাকিস্তান ভারতের বিরুদ্ধে পারমাণবিক হামলা চালাবে। পাকিস্তান ও ভারত উভয় দেশই কাশ্মীর সীমান্ত থেকে দশ কিলোমিটার অভ্যন্তরে বসবাসকারী লোকজনকে সরিয়ে নিয়েছে।
মনে হচ্ছে, এসব ঘটনাবলীতে বৃহৎ শক্তিগুলোর টনক নড়েছে। চিরাচরিত অভ্যাস অনুযায়ী আমেরিকা ইচ্ছা করে এতদিন ঘুমিয়ে ছিল। গত ২৯ সেপ্টেম্বর বৃহস্পতিবার আমেরিকা তাদের অফিসিয়াল ভূমিকা ব্যক্ত করেছে। ভারত ও পাকিস্তান উভয়কেই সংযমী হওয়ার জন্য অনুরোধ জানিয়েছে জাতিসংঘ। উভয় দেশকে শান্তি প্রচেষ্টা অব্যাহত রাখা এবং সংলাপের মাধ্যমে সমস্যা সমাধানের পরামর্শ দিয়েছে জাতিসংঘ। এর এক দিন আগে সীমান্তে সন্ত্রাসী হামলার ঘটনায় মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ভারতীয় অবস্থানের প্রতি তার সমর্থন ব্যক্ত করেছে। আমেরিকার জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা সুসান রাইজ ভারতের জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা অজিত দোভালকে টেলিফোন করেছেন এবং উরিতে সন্ত্রাসী হামলায় যেসব ভারতীয় সৈন্য নিহত হয়েছে তাদের পরিবারের প্রতি শোক প্রকাশ করেছেন।
সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে আমেরিকা প্রকাশ্যে ভারতকে সমর্থন করলেও কাশ্মীর বিরোধে এই দেশটি রহস্যজনক নীরবতা পালন করছে। বর্তমান সংকট যে কাশ্মীরে ভারতের দুই মাসব্যাপী লাগাতার কারফিউ জারি এবং কাশ্মীরি বিক্ষোভকারীদের ওপর ভারতীয় নিরাপত্তা বাহিনীর গুলিতে ৯০ জন কাশ্মীরির প্রাণহানির ঘটনায় যে উরি চৌকিতে হামলার কারণ সেটি সম্পর্কে আমেরিকা সম্পূর্ণ নীরবতা অবলম্বন করেছে।
ঐদিকে চীনও বসে নেই। গত ২৯ সেপ্টেম্বর হিন্দুস্তান টাইমসের খবরে প্রকাশ, সার্ক সম্মেলন বয়কট করে নয়াদিল্লি পাকিস্তানকে কোণঠাসা করার উদ্যোগ গ্রহণের পরই চীন সরকারিভাবে তার অবস্থান জানিয়ে দিয়েছে। কাশ্মীর বিতর্ক মিটিয়ে ফেলতে বুধবার ইসলামাবাদ ও নয়াদিল্লিকে প্রস্তাব দিয়েছে বেইজিং। তবে একই সঙ্গে জানিয়ে দিয়েছে, কাশ্মীর সম্পর্কে পাকিস্তানের অবস্থানকে বিশেষ গুরুত্ব দিচ্ছে তারা। চীনের সহকারী পররাষ্ট্রমন্ত্রী লিউ ঝেনমিন কাশ্মীর নিয়ে ইসলামাবাদের এক প্রতিনিধি দলকে বলেছেন, বেইজিং আশা করছে, ভারত ও পাকিস্তান আলোচনার পথে এগোবে এবং আঞ্চলিক শান্তি প্রতিষ্ঠা করবে। চীনের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের ওয়েবসাইটে এ কথা জানানো হয়েছে। এতদিন ধরে ভারতের আপত্তিকে গুরুত্ব না দিয়েই পাকিস্তান নিয়ন্ত্রিত কাশ্মীরে বাণিজ্য করিডর তৈরি করতে এগিয়েছে চীন। বেইজিং স্পষ্ট করে বলে দিয়েছে, কাশ্মীর নিয়ে পাকিস্তানের মতামতকে গুরুত্ব দিচ্ছে তারা। কূটনীতিকেরা মনে করছেন, সিন্ধু ও ব্রহ্মপুত্রের পানি নিয়ে বেইজিংয়ের অবস্থান ভারতের কাছে খুবই গুরুত্বের। কেননা, সিন্ধুর উৎপত্তি চীনে। আর ব্রহ্মপুত্রে বাঁধ দেয়া নিয়ে ইতিমধ্যেই চীনের বিরুদ্ধে ক্ষোভ জানিয়েছে ভারত। ফলে সিন্ধু চুক্তি নিয়ে ইসলামাবাদকে কোণঠাসা করতে চাইলেও চীন পাকিস্তানকে সমর্থন করে কিনা, তাও দেখতে হচ্ছে ভারতকে।
এখন পরিস্থিতি কোথায় গিয়ে দাঁড়ায় সেটি দেখার জন্য এই উপমহাদেশের মানুষ ফিঙ্গার ক্রস করে বসে আছে।
[email protected]
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।