পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
২৫ লাখ টাকা পকেটে না নিয়ে ঘরে ফেরেন না তারা। নানা কায়দায় প্রতিদিন তাদের এ টাকা চাই-ই চাই। বহিরাগমন এবং পাসপোর্ট অধিদফতরের এই কর্মকর্তাদের পরিচিতি তাই ‘জি-২৫ সিন্ডিকেট’-এর সদস্য হিসেবে। দুর্নীতির মাধ্যমে অর্জিত জি-২৫ সিন্ডিকেটভুক্ত পাসপোর্ট কর্মকর্তাদের সম্পদের পাহাড়ে এবার হাত পড়েছে দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক)। একটি গোয়েন্দা সংস্থার প্রতিবেদনের ওপর ভিত্তিতে অন্তত ২৪ কর্মকর্তার বিষয়ে অনুসন্ধান শুরু করেছে দুর্নীতিবিরোধী এই প্রতিষ্ঠান। অনুসন্ধান প্রক্রিয়ায় আজ (রোববার) পাসপোর্ট অধিদফতরের তিন উপ-পরিচালককে জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে। উপ-পরিচালক আবু বকর সিদ্দিক তাদের জিজ্ঞাসাবাদ করবেন বলে জানা গেছে।
দুদক সূত্র জানায়, জি-২৫ভুক্ত পাসপোর্ট কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে রয়েছে অভিযোগের পাহাড়। রোহিঙ্গাদেরে নামে হাজার হাজার পাসপোর্ট ইস্যু, ভারতীয় নাগরিকদের নামে বাংলাদেশি পাসপোর্ট প্রদান, একই ব্যক্তির বিভিন্ন নামে একাধিক পাসপোর্ট ইস্যু, দালাল-সিন্ডিকেট প্রতিপালন, পদোন্নতি প্রদান, প্রাইজ পোস্টিং, পাসপোর্ট সংক্রান্ত বিভিন্ন প্রকল্পসহ বিভিন্নভাবে কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নিচ্ছেন পাসপোর্টের বিভিন্ন অফিসে কর্মরত দুর্নীতিগ্রস্ত কর্মকর্তারা। তাদের বিরুদ্ধে পূঞ্জিভ‚ত অভিযোগের প্রেক্ষিতে ২০১৯ সালে ২০১৮ সালে তত্ত¡-তালাশ শুরু করে একটি গোয়েন্দা সংস্থা। এর মধ্যে সুনির্দিষ্ট অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে ২০২০ সালে সে সময়কার অতিরিক্ত মহাপরিচালক (এডিজি) এ টি এম আবু আসাদসহ ২৪ কর্মকর্তাকে ডেকে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করে গোয়েন্দা সংস্থাটি। ওই সংস্থার জিজ্ঞাসাবাদে অভিযোগের সত্যতা মেলে। ব্যাপক দুর্নীতি এবং ২০১৮ সালের জাতীয় সংসদ নির্বাচনে একটি রাজনৈতিক দলের প্রার্থীকে অর্থ সহায়তা ও সরাসরি সমর্থনের অভিযোগ প্রমাণিত হওয়ায় চলতি বছর শুরুর দিকে এ টি এম আবু আসাদকে বাধ্যতামূলক অবসরে পাঠায় সরকার। অন্যদিকে দুর্নীতির প্রমাণ পাওয়ায় সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে গোয়েন্দা প্রতিবেদনটি পাঠিয়ে দেয়া হয় দুদকে। প্রতিবেদনে উল্লেখিত দুর্নীতিগ্রস্ত কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে পর্যায়ক্রমে ব্যবস্থা নিচ্ছে দুদক। এ প্রক্রিয়ায় ইতোমধ্যেই পাসপোর্টের তিন কর্মকর্তার বিরুদ্ধে মামলা করেছে দুদক। বর্তমান পর্যায়ে পাসপোর্ট ও পরিকল্পনা শাখার উপ-পরিচালক মো. শাহাদাৎ হোসেন, ই-পাসপোর্ট এবং স্বয়ংক্রিয় বর্ডার কন্ট্রোল ব্যবস্থাপনা প্রবর্তন প্রকল্পে কর্মরত উপ-পরিচালক রোজী খন্দকার, নোয়াখালী পাসপোর্ট অফিসের পরিচালক এ কে এম মাজহারুল ইসলাম এবং চট্টগ্রাম বিভাগীয় পাসপোর্ট অফিসের পরিচালক মো. আবু সাঈদের বিরুদ্ধে অনুসন্ধান চলছে। এদের মধ্যে মাজহারুল ইসলাম এবং আবু সাঈদের বিরুদ্ধে অনুসন্ধান করছেন দুদকের সহকারী পরিচালক দেবব্রত মন্ডল। অনুসন্ধান প্রক্রিয়ায় আজ শাহাদাৎ হোসেন, রোজী খন্দকার এবং এ কে এম মাজহারুল ইসলামকে জিজ্ঞাসাবাদের কথা রয়েছে। একই অনুসন্ধানের অংশ হিসেবে গত বছর ১৫ অক্টোবর উপ-পরিচালক বিপুল গোস্বামী এবং উপ-সহকারী পরিচালক মোত্তালেব সরকারকে জিজ্ঞাসাবাদ করেন আবু বকর সিদ্দিক। ভারতীয় নাগরিককে পাসপোর্ট দেয়ার অভিযোগে মামলা হয়েছে রাজশাহী সহকারী পরিচালক মো. আবজাউল আলমসহ জড়িত ৮ কর্মচারীর বিরুদ্ধে ইতোমধ্যে মামলা হয়েছে। দুদকের সহকারী পরিচালক মামুনুর রশিদ চৌধুরী মামলাটি দায়ের করেন। গোয়েন্দা প্রতিবেদনে উল্লিখিত আরো অন্তত ১৬ কর্মকর্তার বিরুদ্ধে অনুসন্ধান চলছে। এদের মধ্যে পাসপোর্টের পরিচালক (প্রশাসন ও অর্থ) মো. শিহাবউদ্দিন খান, সাইদুল ইসলাম, পরিচালক মো. তৌফিকুল ইসলাম খান, উপ-পরিচালক নাদিরা আক্তার, উপ-পরিচালক শাহ মোহাম্মদ ওয়ালিউল্লাহ, উপ-পরিচালক মহেরউদ্দিন শেখ, উপ-পরিচালক নূরুল হুদা রয়েছেন বলে জানা গেছে।
সূত্রমতে, উল্লেখিত কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে রয়েছে বিস্তর অভিযোগ। এদের মধ্যে এ টি এম আবু আসাদ এবং সহকারী পরিচালক মোত্তালেবের বিরুদ্ধে রয়েছে সহকারী পরিচালককে উপ-পরিচালকের পদে এবং সহকারী পরিচালকের পদে উপ-সহকারী পরিচালককে পোস্টিং দিয়ে দু’টি পদের ‘উপুরি আয়’-এ ভাগ বসিয়ে কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নেয়ার প্রমাণ মেলে।
জানা গেছে, ‘জি-২৫’ নামক সিন্ডিকেট সদস্যরা পাসপোর্টের নানা খাত থেকে দৈনিক গড়ে ২৫ লাখ টাকা না নিয়ে ঘরে ফেরেন না। তৎকালীন পরিচালক (প্রশাসন ও অর্থ), পরবর্তীতে অতিরিক্ত মহাপরিচালক (এডিজি) আবু আসাদের ছত্রছায়ায় পরিচালক মো. তৌফিকুল ইসলাম ‘জি-২৫’ সিন্ডিকেট গড়ে তোলেন। উপ-সহকারী পরিচালক মোত্তালেব, কুমিল্লার সহকারী পরিচালক শামীম, শফিকুল ইসলাম গিয়াস, পিয়ন থেকে পদোন্নতি লাভকারী উচ্চমান সহকারী মিজান শিকদার, ডাটা এন্ট্রি অপারেটর শাহজালাল জি-২৫ গ্রুপের সদস্য।
দুদকে আসা গোয়েন্দা প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়, উপ-সহকারী পরিচালক আবু মোত্তালেব আবু আসাদকে হাত করে তার ৯ জন আত্মীয়কে পাসপোর্টের নিম্নতম পদে চাকরি দিয়েছেন। তবে তাদের কাছ থেকে নেয়া হয় মোটা অংকের টাকা। আবু আসাদ থাকতে কর্মচারীদের বদলি নিয়ন্ত্রণ করতেন মোত্তালেব। প্রতিদিন এক লাখ টাকা না হলে তিনি অফিস ছাড়তেন না। আর্জেন্ট পাসপোর্ট প্রিন্ট করতে তিনি পাসপোর্টপ্রতি এক হাজার টাকা করে নেন। দিনে গড়ে ৫০টি পাসপোর্ট প্রিন্ট করলেই পকেটে ৫০ হাজার টাকা চলে আসে। পাসপোর্ট নবায়ন, সংশোধনের জন্য আবেদনপ্রতি নেন ৫শ’ টাকা। বিভিন্ন কোম্পানিতে কর্মরত বিদেশি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের ভিসা ইস্যু করিয়ে তিনি দুই থেকে চার হাজার টাকা করে নেন। কর্মচারী বদলিতে নেন ৪-৫ লাখ টাকা করে। আসাদকে বদলির ফাইল তৈরিই করে দিতেন মোত্তালেব। গোয়েন্দা প্রতিবেদনের তথ্যমতে, মোত্তালেব গত তিন বছরে অন্তত ২০ কোটি টাকার সম্পত্তির মালিক হয়েছেন। তার স্ত্রীর অ্যাকাউন্টেই রয়েছে ৬ কোটি টাকা।
দুদকে আসা গোয়েন্দা প্রতিবেদনের তথ্য মতে, বাংলাদেশের ৬৯টি আঞ্চলিক পাসপোর্ট অফিসে প্রতি মাসে গড়ে ২ লাখ ২৬ হাজার ৫শ’টি পাসপোর্টের আবেদন জমা হয়। এর মধ্যে ৫০ থেকে ৬০ শতাংশ জমা হয় দালালদের মাধ্যমে। দালালদের জমা করা আবেদনপ্রতি পাসপোর্ট কর্মকর্তারা ঘুষ নেন এক হাজার টাকার নির্ধারিত রেটে। সে হিসেবে পাসপোর্ট আবেদন থেকে প্রতি মাসে ঘুষ হিসেবেই আদায় হয় ১১ কোটি ৩২ লাখ ৫০ হাজার টাকা। প্রধান কার্যালয়ে আসা বিপুল অংকের ঘুষের টাকা গ্রহণ ও বণ্টনের দায়িত্ব পালন করেন ৪-৫ জন প্রভাবশালী কর্মকর্তা। এ তালিকায় রয়েছেন বিপুল কুমার গোস্বামী, তৎকালীন উপ-পরিচালক (অর্থ) তৌফিকুল ইসলাম খান, সহকারী পরিচালক (প্রশাসন) আজিজুল ইসলাম, সিস্টেম অ্যানালিস্ট নজরুল ইসলাম ভূঁইয়া এবং হিসাবরক্ষণ কর্মকর্তা মাসুদ রানা।
দুদকের আজকের (রোববার) জিজ্ঞাসাবাদ সম্পর্কে জানতে শাহাদাৎ হোসেন, রোজী খন্দকার এবং মাজহারুল ইসলামের অফিসিয়াল মোবাইল নম্বরে ফোন করা হয়। তাদের নম্বরগুলো বন্ধ পাওয়া যায়। পাসপোর্টের দুর্নীতিগ্রস্ত কর্মকর্তাদের দুর্নীতি অনুসন্ধান সম্পর্কে জানতে চাইলে কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি হননি উপ-পরিচালক আবু বকর সিদ্দিক। তবে দুদক সচিব ড. মুহা. আনোয়ার হোসেন হাওলাদার পাসপোর্টের বেশ কিছু কর্মকর্তার বিষয়ে অনুসন্ধান চলছে বলে স্বীকার করেন।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।