Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

১০ মুহাররম : মহিমান্বিত এক দিন

এ. কে. এম. ফজলুর রহমান মুনশী | প্রকাশের সময় : ২২ আগস্ট, ২০২১, ১২:০৩ এএম

মাহে মুহাররমে হযরত হুসাইন রা. স্বীয় লোকজনসহ জালিম ইয়াযীদ ও তার লোকদের দ্বারা অবরুদ্ধ হয়ে লড়াই করে শাহাদাত বরণ করেছেন। সে জন্য মাহে মুহাররমে হযরত হুসাইন রা.-এর এ ত্যাগের কথা স্মরণ করে দীনের হিফাজতের জন্য জান-মাল কোরবানি করার প্রত্যয় করা আমাদের কর্তব্য। তবে স্মরণ রাখা দরকার যে, সৃষ্ট জগতের প্রলয় শিঙ্গার ফুৎকারের মাধ্যমে সাধিত হবে। আল কোরআনে ইরশাদ হয়েছে : ‘আর শিঙ্গার ফুৎকার উচ্চকিত হবে, সেটা হবে নির্ধারিত দিনে।’ (সুরা ক্বাফ : আয়াত ২০)। আরো ইরশাদ হয়েছে : ‘যেদিন শিঙ্গার ফুৎকার উচ্চকিত হবে, সেদিন পৃথিবী ও আকাশমন্ডলীর বাসিন্দারা বেকারার হয়ে যাবে।’ (সূরা নমল : আয়াত ৮৭)। এই ফুৎকার মুহাররমের ১০ তারিখ কোনো এক শুক্রবার দিন উচ্চকিত হবে। কিন্তু কিছু লোক আশুরার ব্যাপারে বাড়াবাড়ি করে অতিরঞ্জিত ও গর্হিত কার্যকলাপ দ্বারা বিদআত ও নাজায়েজ বিষয়ের অবতারণা করে চলেছেন। মুসলমানদের সেসব গর্হিত কাজ থেকে দূরে থাকতে হবে।

যেমন: ১. আশুরার সিয়ামকে শোক পালনের উদ্দেশ্যে করা : মহররম মাসের বা আশুরার সুন্নত আমল হিসেবে রোজা রাখা কর্তব্য। আশুরার সেই রোজার উদ্দেশ্য স্পষ্ট হাদিস দ্বারা পরিষ্কারভাবে প্রমাণিত। আর তা হলো, অত্যাচারী শাসক ফিরাউনের কবল থেকে মুসা আ.-এর নাজাতের শুকরিয়া স্বরূপ ও সিয়াম পালন করা। কিন্তু সেই উদ্দেশ্যকে পাশ কাটিয়ে শোক পালনের উদ্দেশ্যে সিয়াম পালনের কোনো সুযোগ নেই। অথচ অনেকে তা করে থাকেন। বলা বাহুল্য, আশুরার এই সিয়ামের সূচনা হয়েছে মুসা আ.-এর সময় থেকে। আর রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম স্বীয় জীবদ্দশায় সেই সিয়াম পালন করেছেন। অপরদিকে কারবালার ঘটনা ঘটেছে রাসুলুল্লাহ সা.-এর ওফাতের ৫০ বছর পর ৬১ হিজরিতে। হাদিস শরীফে সেই রোজা পালনের উদ্দেশ্যের কথা স্পষ্টভাবে বর্ণনা করা হয়েছে। তা হচ্ছে অত্যাচারী শাসক ফিরাউনের কবল থেকে মুসা আ.-এর নাজাতের জন্য আল্লাহর দরবারে শুকরিয়া স্বরূপ। সুতরাং রাসুলুল্লাহ সা. যে উদ্দেশ্যে আশুরার রোজা রেখেছেন, আমাদেরও সেই উদ্দেশ্যকেই সামনে রেখে রোজা রাখতে হবে।

২. ১০ মুহাররমকে আনন্দ উৎসবে পরিণত করা : রাফেজিরা (কট্টর শিয়া) হযরত হুসাইন রা.-এর শাহাদতের শোক স্বরূপ শোক দিবস পালন করে। পক্ষান্তরে একটি গোষ্ঠী রাফেজিদের বিরোধিতা করার লক্ষ্যে এ দিনটিকে আনন্দ উৎসবে পরিণত করে। এ উভয় প্রকার কাজই গর্হিত ও বিদআত। রাসুলুল্লাহ সা. ও সাহাবায়ে কিরাম রা. এ দিনটিকে শোক দিবস হিসেবেও পালন করেননি, আবার আনন্দ উৎসবে পরিণত করেননি। তারা শুধুমাত্র ফিরাউনের কবল থেকে মুসা আ.-এর নাজাতের শুকরিয়া স্বরূপ সিয়াম পালন করেছেন। সুতরাং আমাদেরও তা-ই করতে হবে।

৩. তাযিয়া : তাযিয়া অর্থ বিপদে সান্ত্বনা দেয়া। তবে বর্তমানে শাহাদাতে হুসাইন রা.-এর শোক মিছিলে রূপ নিয়েছে। অথচ ইসলামে কারো মৃত্যুতে তিন দিনের অধিক (আর স্বামীর মৃত্যুতে স্ত্রীর জন্য চার মাস দশ দিনের অধিক) শোক পালন করা নিষেধ। (দ্রষ্টব্য : সুনানে আবু দাউদ, হাদিস নং- ৪৪৬২)। তাই শিয়াদের উদ্ভাবিত উক্ত তাযিয়া সম্পূর্ণ বিদআত। তা থেকে সকলের দূরে থাকতে হবে।

৪. আশুরা উপলক্ষে চোখে সুরমা লাগানো : অনেকেই আশুরার দিন বা ১০ মুহাররম উপলক্ষে এদিন বিশেষ ফজিলতের আশায় চোখে সুরমা লাগিয়ে থাকেন। এটাও সুস্পষ্ট বিদাআত। কেননা, রাসুলুল্লাহ সা. ও সাহাবায়ে কিরাম রা. আশুরার নিয়মরূপে চোখে সুরমা লাগাননি এবং কোনো ফজিলত বর্ণনা করেননি। এ মর্মে যা প্রচলিত আছে, তা মাওযূ বা জাল।

৫. ১০ মুহাররমে বিশেষ পদ্ধতিতে সালাত আদায় করা : অনেকে ১০ মুহাররমে বিশেষ বিশেষ পদ্ধতিতে সালাত আদায় করে থাকেন। এটাও সম্পূর্ণ বিদআত। কেননা, রাসুলুল্লাহ সা. ও সাহাবায়ে কিরাম রা. এদিনে বিশেষ কোনো সালাত আদায় করেছেন বা বলেছেন মর্মে কোনো নির্ভরযোগ্য দলিল নেই। এ সম্পর্কে আল্লামা ইবনে তাইমিয়াহ রহ. বলেন, সিয়াম ব্যতীত আশুরা সম্পর্কিত কোনো বিশেষ নিয়মের আমলের ব্যাপারে কোনো সহীহ হাদিস বর্ণিত হয়নি। সুতরাং আশুরা উপলক্ষে আমাদের ইসলামের সহীহ আমলরূপে রোজা পালন করতে হবে। এ জন্য আশুরার দিন এবং তার সাথে মিলিয়ে তার আগের বা পরের দিনসহ রোজা পালন করা বাঞ্ছনীয়। আর এ মাসকে সম্মানিত জ্ঞান করে এ মাসে দাঙ্গা-ফাসাদ ও ঝগড়া-বিবাদ থেকে বিশেষভাবে বিরত থাকতে হবে। এ ছাড়াও কারবালার ঘটনার ব্যাপারে সকল প্রকার আবেগ ও বাড়াবাড়ি হতে বিরত থাকতে হবে।



 

Show all comments
  • Burhan uddin khan ২০ আগস্ট, ২০২১, ১২:১৮ এএম says : 0
    Most important time for muslims
    Total Reply(0) Reply
  • মুরাদ ২০ আগস্ট, ২০২১, ১২:৪৪ এএম says : 0
    কোন হাদীসের আলোকে এগুলো বললেন? বিভিন্ন মানুষের মন গড়া ও শোনা হাদীস থেকে বলেছেন। আশুরার সত্যতা স্বীকার না করেন, কিন্তু উল্টাপাল্টা প্রচার না করার অনুরোধ রইল।
    Total Reply(0) Reply

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: মুহাররম

১৯ আগস্ট, ২০২১

আরও
আরও পড়ুন