Inqilab Logo

রোববার ১৭ নভেম্বর ২০২৪, ০২ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ১৪ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

মেয়র সাদিক হুকুমের আসামি

ইউএনওর বাসায় হামলা

বরিশাল ব্যুরো | প্রকাশের সময় : ২০ আগস্ট, ২০২১, ১২:০৩ এএম

গ্রেফতার ১০ অভিযান অব্যাহত : নগরীর নিরাপত্তায় ১০ প্লাটুন বিজিবি মোতায়েন : তদারকিতে ১০ নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট


বরিশাল সদর উপজেলা পরিষদ ও ইউএনও’র বাসার সামনে থেকে প্রতিপক্ষের ব্যানার খুলতে গিয়ে গত বুধবার রাতে যুবলীগ এবং ছাত্রলীগ নেতা-কর্মীদের সঙ্গে পুলিশ ও আনসারের সংঘর্ষসহ দু’ দফা গুলিবর্ষণ, লাঠিচার্জ ও ইটপাটকেল নিক্ষেপে কোতয়ালী থানার ওসি ছাড়াও বিসিসির প্যানেল মেয়রসহ অন্তত ২৫ জন আহত হয়েছেন। এ ব্যাপারে ইউএনও মুনিবুর রহমান সিটি মেয়র সাদিক আবদুল্লাহকে হুকুমের আসামি করে একটি মামলা করেছেন। পুলিশও বাদী হয়ে অজ্ঞাতনামাদের বিরুদ্ধে ভিন্ন মামলা করেছে বলে বিভিন্ন সূত্রে জানা গেছে। রাতেই ঘটনাস্থল থেকে দু’জন ছাড়া হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ২৫ জনের মধ্যে ৮ নেতা-কর্মীকে ইতোমধ্যে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। অন্যরা রাতেই পালিয়েছে। আইন-শৃংখলা নিয়ন্ত্রণে ১০ প্লাটুন বিজিবি ছাড়াও ১০জন নির্বাহী ম্যাজিষ্ট্রেট চেয়ে বরিশালের জেলা প্রশাসক বার্তা পাঠিয়েছেন বলে জানা গেছে।

ইউএনও’র বাসভবনের সামনে পুলিশ ও অনসার দু’ দফা গুলিবর্ষণ করে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনার চেষ্টা করে। রাতেই ইউএনও’র বসভবনের সামনের বরিশাল-ঢাকা ও বরিশাল-পটুয়াখালী-কুয়াকাটা মহাসড়ক সিটি করেপারেশনের গার্বেজ ট্রাক দিয়ে অবরোধ করে রাখা হয়। এসময় রাস্তায় ময়লা আবর্জনার ফেলাসহ আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনের নেতা-কর্মীরা অবস্থানও নেয়। রাত দেড়টার পরে বিভাগীয় কমিশনার, মহানগর পুলিশ কমিশনার ও জেলা প্রশাসক উপজেলা কমপ্লেক্সসহ ইউএনও’র বাসভবন পরিদর্শন করেন। ভোর থেকে বরিশালসহ দক্ষিণাঞ্চলের সড়ক যোগাযোগ এবং সকাল ৮টার পরে নৌযোগাযোগও বন্ধ করে দেয়া হয়। মহানগরী থেকে বাইরে কোন যানবাহনই বের হতে বা প্রবেশ করতে পারছিল না। বিমান বন্দরের যাতায়াতকারী যাত্রীরা পর্যন্ত চরম ভোগান্তিতে পড়েন। পুলিশ ও প্রশাসনের পক্ষ থেকে এ ব্যপারে দুটি মামলা দায়ের করা হয়েছে। হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ২৫ জনের মধ্যে ৮ নেতা-কর্মীকে ইতোমধ্যে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। অন্যরা রাতেই পালিয়েছে।

তবে দুপুর ১টা পরে সড়ক ও নৌ অবরোধ প্রত্যাহার করা হয়েছে।
বিগত কিছুদিন ধরেই বরিশাল সদর আসনের এমপি ও পানি সম্পদ প্রতিমন্ত্রী কর্ণেল (অবঃ) জাহিদ ফারুক শামিমের সঙ্গে মেয়র সাদিক আবদুল্লাহর বিরোধ অনেকটা প্রকাশ্যে চলে আসে। নগরীতে মেয়র ও এমপি’র ভিন্ন ভিন্ন ব্যানার টানানো ও তা খোলার একটি প্রবণতাও চলছিল। ১৫ আগস্ট জাতীয় শোক দিবস উপলক্ষে নগরীতে উভয় গ্রæপই ব্যানার ও প্লাকার্ড লাগায়।

বুধবার রাতে যুবলীগ ও ছাত্রলীগের কিছু নেতা-কর্মী সিটি করপোরেশনের পরিচ্ছন্ন কর্মীদের নিয়ে নগরীর বিভিন্ন এলাকা থেকে ব্যানার খোলার কাজ শুরু করে। এক পর্যায়ে তারা নগরীর সিএন্ডবি রোডে সদর উপজেলা কমপ্লেক্সের অভ্যন্তরে ও ইউএনও’র বাসভবনের সামনের ব্যনারও খুলতে যায়। এসময় নিরপত্তা রক্ষী আনসার সদস্যরা এলাকাটি সংরক্ষিত বিধায় দিনের বেলায় তা খোলার অনুরোধ করলে নেতা-কর্মীরা ফিরে গিয়ে রাত সাড়ে ১০টার দিকে ৫০-৬০ জনের একটি দল সেখানে চড়াও হয়।

এসময় ইউএনও মুনিবুর রহমান তার বাসার দোতালা থেকে নিচে নেমে নেতা-কর্মীদের বোঝাবার চেষ্টা করলে কয়েকজন তার বাসভবনের ভেতরে ঢুকে পড়ে বলে অভিযোগ ওঠেছে। তারা অকথ্য ভষায় গালিগালাজ করেন বলেও অভিযোগ ইউএনও’র। নিরপত্তা কর্মীরা বাসভবনে ঢুকতে বাধা দিলে তা অমান্য করে আনসার সদস্যদের সঙ্গে সংঘর্ষে জড়িয়ে পরে নেতা-কর্মীরা। এক পর্যায়ে আনসার সদস্যরা গুলিবর্ষণ করে।

ইতোমধ্যে ঘটনাস্থলে পৌছে যায় কোতয়ালী থানার ওসির নেতৃত্বে একদল পুলিশ। তারাও পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনার চেষ্টা করে ব্যর্থ হয়ে পুলিশও কয়েক রাউন্ড ফাঁকা গুলি ছোড়ে। সংঘর্র্ষে সিটি করপোরেশনের দু’ নম্বর প্যানেল মেয়র ও কাউন্সিলর রফিকুল ইসলাম খোকন ছাড়াও ওসি নুরুল ইসলামসহ অন্তত ৩৫জন আহত হয় বলে জানা গেছে। আহত অন্যদের মধ্যে প্রায় ২৫ জনকে শেরে বাংলা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। দুই পুলিশ সদস্যকে বিভাগীয় পুলিশ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।

এদিকে এ ঘটনার জের ধরে বৃহস্পতিবার ভোর থেকে বরিশাল কেন্দ্রীয় বাস টার্মিনাল ও মিনি বাস টার্মিনাল থেকে সব যানবাহন চলাচল বন্ধ করে দেয়া হয়। পাশাপাশি বরিশাল-ফরিদপুর-ঢাকা এবং বরিশাল-পটুয়াখালী-কুয়াকাটা ও বরিশাল- পিরোজপুর-খুলনা মহাসড়কেও যান চলাচল বন্ধ করে দেয়া হয়। ফলে দক্ষিণাঞ্চলের সঙ্গে সারা দেশের সড়ক যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে। সকাল ৮টার পরে বরিশাল নৌ বন্দর থেকে অভ্যন্তরীন ও আঞ্চলিক সব রুটের নৌযান চলাচলও বন্ধ করে দেয়া হয়। তবে দুপুর ১টার পরে মেয়রের নির্দেশে সড়ক ও নৌপথের অবরোরাধ প্রত্যাহার হলে যোগাযোগ ব্যবস্থা স্বাভাবিক হয়।

সকাল থেকে পুলিশ ও র‌্যাব সিটি মেয়র সাদিক আব্দুল্লাহর কালীবাড়ী রোডের বাসভবনের সামনের রাস্তায় অবস্থান নেয়। দুপুর ১২টার দিকে পুলিশ প্রত্যাহার করা হলেও আরো বেশ কিছু সময় সেখানে র‌্যাব অবস্থান করছিল।

বুধবার রাতে ইউএনও’র বাস ভবনে গোলযোগের মধ্যেই সেখানে সিটি মেয়র হাজির হলেও তার উপস্থিতিতেই গুলি বর্ষণের ঘটনা ঘটে। তখন তিনি দুঃখ ও লজ্জায় বাসায় চলে আসেন বলে জানিয়ে ওই সংঘর্ষে তার আহত হওয়ার খবরটি সঠিক নয় বলেও তিনি মন্তব্য করেছেন। শেষ রাতে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে ‘তাকে কেউ সহযোগিতা করছে না’ বলে জানিয়ে ‘প্রধানমন্ত্রী চাইলে তিনি পদত্যাগ করতেও প্রস্তুত আছেন’ বলেও জানিয়েছেন সিটি মেয়র।

এদিকে বৃহস্পতিবার বিকেলে মেয়রের বাসভবনে আহুত এক সংবাদ সম্মেলনে জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক তালুকদার মোঃ ইউনুস ও মহানগর সভাপতি একেএম জাহাঙ্গীরসহ নেতৃবৃন্দ বুধবার রাতের ঘটনায় তাদের তরফ থেকে ব্যাখ্যা প্রদান করে এ ব্যাপারে বিচার বিভাগীয় তদন্ত দাবি করেছেন।

মহানগরীর পরিস্থিতি সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত থমথমে থাকলেও পরে স্বাভাবিক হয়ে এসেছে। প্রশাসন ও পুলিশ সতর্ক অবস্থানে রয়েছে বলে জানিয়েছে দায়িত্বশীল মহল।

 

 



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: মেয়র সাদিক


আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ