বাড়াবাড়ি ও ছাড়াছাড়ির কবলে শবে বরাত-৩
সুনানে ইবনে মাজায় বর্ণিত হয়েছে : হযরত আলী ইবনে আবু তালেব (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ
মাহে যিলহজ্ব গত হয়ে শুরু হয়েছে মুহাররম মাস। হতে যাচ্ছে একটি বছরের বিদায় আর একটি বছরের সূচনা। পশ্চিমাকাশে হেসে উঠেছে মুহাররমের হেলাল-নতুন বছরের নতুন চাঁদ। দিন যায় রাত আসে। সপ্তাহ পেরিয়ে মাস আসে। ধীরে ধীরে তা-ও ফুরিয়ে যায়। এভাবে বারটি মাস ঘুরতেই কেটে যায় একটি বছর। শুরু হয়ে যায় আবার নতুন বছরের আয়োজন। এভাবে একদিন নিভে আসে জীবনবাতি। বুদ্ধিমান তো সেই যে জীবনের এ মূল্যবান সময়গুলো যথাযথ কাজে লাগায়।
প্রাত্যহিক জীবনে দিন-রাতের এ পরিক্রমা অনেকের কাছেই অনেকটা স্বাভাবিক। তবে জ্ঞানীদের জন্য এ থেকে শিক্ষা গ্রহণের বহু উপলক্ষ রয়েছে। কোরআনে কারীমে আল্লাহ তাআলা বিষয়টি বিভিন্নভাবে বোঝাতে চেয়েছেন। আল্লাহ তাআলা বলেন : নিশ্চয়ই আকাশমন্ডল ও পৃথিবীর সৃজনে এবং পালাক্রমে রাত-দিনের আগমনে বহু নিদর্শন আছে ওই সকল বুদ্ধিমানদের জন্য...। (সূরা আলে ইমরান : ১৯০)।
আল্লাহ তাআলা আরো চমৎকার উপস্থাপনে বলেন : কত মহান সেই সত্তা, যিনি আসমানে ‘বুরূজ’ সৃষ্টি করেছেন এবং তাতে স্থাপন করেছেন উজ্জ্বল প্রদীপ এবং আলো বিস্তারকারী চাঁদ। এবং তিনিই সেই সত্তা, যিনি রাত ও দিনকে পরস্পরের অনুগামী করে সৃষ্টি করেছেন; (কিন্তু এসব বিষয় উপকারে আসে কেবল) সেই ব্যক্তির জন্য, যে উপদেশ গ্রহণের ইচ্ছা রাখে কিংবা কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন করতে চায়। (সূরা ফুরকান : ৬১, ৬২)।
তবে বাস্তব কথা হলো, কেউ এ থেকে শিক্ষা গ্রহণ করে, কেউ করে না। রাসূলুল্লাহ (সা.) ইরশাদ করেন : প্রতিটি মানুষ সকাল যাপন করে; অতঃপর নিজেকে বিক্রি করে। এভাবে কেউ নিজেকে (আল্লাহর আনুগত্যে নিয়োজিত করে জীবনকে ধ্বংস থেকে) রক্ষা করে। আর কেউ (নফস ও শয়তানের আনুগত্যে নিয়োজিত হয়ে) নিজেকে ধ্বংস করে ফেলে। (সহীহ মুসলিম : হাদীস ২২৩)।
বুদ্ধিমান তো সেই, যে প্রতিটি নতুন সময় ও সূচনায় নিজেকে এমন কাজে নিয়োজিত করে, যার মাধ্যমে তার আখেরাত সুন্দর হয়। আর নির্বোধ ওই ব্যক্তি, যে নতুন সময় ও সূচনায় এমন কাজকর্মে লিপ্ত থাকে, যা তার ধ্বংস টেনে আনে। তাই জীবনের প্রতিটি নতুন মুহূর্তে কল্যাণের দিকে আরো ধাবিত হওয়ার প্রত্যয় গ্রহণ করাই মুমিনের ঈমানের দাবি। আল্লাহ আমাদের সেই তাওফীক নসীব করুন।
মুহাররম : আল্লাহ্ তাআলার নির্ধারিত সম্মানিত মাস এবং হিজরি বর্ষের প্রথম মাস। হিজরি বর্ষের সর্বপ্রথম মাস- মুহাররামুল হারাম তথা মুহাররম মাস। হাদীসের ভাষায়- শাহরুল্লাহ আলমুহাররাম। আল্লাহ তাআলা বছরের যে ক’টি মাসকে বিশেষ মর্যাদায় মহিমান্বিত করেছেন মুহাররম তার অন্যতম। পবিত্র কোরআন মাজীদে আল্লাহ তাআলা বলেন : আল্লাহ যেদিন আসমান যমীন সৃষ্টি করেছেন সেদিন থেকেই মাসসমূহের গণনা আল্লাহ তাআলার নিকট তাঁর বিধান মতে বারটি। তন্মধ্যে চারটি মাস সম্মানিত। এটাই সহজ-সরল দ্বীন (-এর দাবি) অতএব তোমরা এ দিনগুলোতে নিজের উপর জুলুম করো না।... (সূরা তাওবা : ৩৬)।
এ চার মাস কী কী? হাদীস শরীফে তা বলে দেওয়া হয়েছে। নবী কারীম (সা.) বলেন- সময়ের হিসাব যথাস্থানে ফিরে এসেছে, আসমান-যমীনের সৃষ্টির সময় যেমন ছিল। (কারণ, জাহেলী যুগে আরবরা নিজেদের স্বার্থ ও মর্জিমতো মাস-বছরের হিসাব কম-বেশি ও আগপিছ করে রেখেছিল।) বার মাসে এক বছর। এর মধ্য থেকে চারটি মাস সম্মানিত। তিনটি মাস ধারাবাহিক- যিলকদ, যিলহজ্ব ও মুহাররম। আরেকটি হলো রজব, যা জুমাদাল আখিরাহ ও শাবানের মধ্যবর্তী মাস। (সহীহ বুখারী : হাদীস ৪৬৬২)।
হাদীসে এ মাসকে শাহরুল্লাহ তথা আল্লাহর মাস বলে আখ্যায়িত করা হয়েছে। হযরত আবু হুরাইরা (রা.) থেকে বর্ণিত, নবী কারীম (সা.) ইরশাদ করেন : রমজানের পর সবচে উত্তম রোজা হলো আল্লাহর মাস মুহাররমের রোজা। আর ফরজ নামাযের পর সবচে উত্তম নামাজ হলো রাতের নামাজ (অর্থাৎ তাহাজ্জুদের নামাজ)। (সহীহ মুসলিম : হাদীস ১১৬৩)।
প্রকৃতপক্ষে সকল মাসই তো আল্লাহর মাস। তথাপি এ মাসকে বিশেষভাবে ‘আল্লাহর মাস’ বলে ব্যক্ত করার মাঝে রয়েছে বিশেষ তাৎপর্য। যেমন পৃথিবীর সকল মসজিদই আল্লাহর ঘর। কিন্তু কাবা শরীফকে বিশেষভাবে বাইতুল্লাহ বা আল্লাহর ঘর বলার হেকমত কী? কারণ এর রয়েছে বিশেষ মর্যাদা। তেমনি বছরের অন্যান্য মাস অপেক্ষা মুহাররমের রয়েছে বিশেষ গুরুত্ব।
আল্লাহ তাআলা কোরআন মাজীদে হিজরি সময়ের গুরুত্ব সম্পর্কে বলেছেন : লোকেরা আপনার কাছে নতুন চাঁদ সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করে। আপনি তাদেরকে বলে দিন, এটা মানুষের (বিভিন্ন কাজ-কর্মের) হিসাব এবং হজ্বের সময় নির্ধারণ করার জন্য। (সূরা বাকারা : ১৮৯)।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।