Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

মুহাররম ও আশুরা গুরুত্ব ও ফজিলত-১

মুহাম্মাদ আশিক বিল্লাহ তানভীর | প্রকাশের সময় : ১৬ আগস্ট, ২০২১, ১২:০০ এএম

মাহে যিলহজ্ব গত হয়ে শুরু হয়েছে মুহাররম মাস। হতে যাচ্ছে একটি বছরের বিদায় আর একটি বছরের সূচনা। পশ্চিমাকাশে হেসে উঠেছে মুহাররমের হেলাল-নতুন বছরের নতুন চাঁদ। দিন যায় রাত আসে। সপ্তাহ পেরিয়ে মাস আসে। ধীরে ধীরে তা-ও ফুরিয়ে যায়। এভাবে বারটি মাস ঘুরতেই কেটে যায় একটি বছর। শুরু হয়ে যায় আবার নতুন বছরের আয়োজন। এভাবে একদিন নিভে আসে জীবনবাতি। বুদ্ধিমান তো সেই যে জীবনের এ মূল্যবান সময়গুলো যথাযথ কাজে লাগায়।

প্রাত্যহিক জীবনে দিন-রাতের এ পরিক্রমা অনেকের কাছেই অনেকটা স্বাভাবিক। তবে জ্ঞানীদের জন্য এ থেকে শিক্ষা গ্রহণের বহু উপলক্ষ রয়েছে। কোরআনে কারীমে আল্লাহ তাআলা বিষয়টি বিভিন্নভাবে বোঝাতে চেয়েছেন। আল্লাহ তাআলা বলেন : নিশ্চয়ই আকাশমন্ডল ও পৃথিবীর সৃজনে এবং পালাক্রমে রাত-দিনের আগমনে বহু নিদর্শন আছে ওই সকল বুদ্ধিমানদের জন্য...। (সূরা আলে ইমরান : ১৯০)।

আল্লাহ তাআলা আরো চমৎকার উপস্থাপনে বলেন : কত মহান সেই সত্তা, যিনি আসমানে ‘বুরূজ’ সৃষ্টি করেছেন এবং তাতে স্থাপন করেছেন উজ্জ্বল প্রদীপ এবং আলো বিস্তারকারী চাঁদ। এবং তিনিই সেই সত্তা, যিনি রাত ও দিনকে পরস্পরের অনুগামী করে সৃষ্টি করেছেন; (কিন্তু এসব বিষয় উপকারে আসে কেবল) সেই ব্যক্তির জন্য, যে উপদেশ গ্রহণের ইচ্ছা রাখে কিংবা কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন করতে চায়। (সূরা ফুরকান : ৬১, ৬২)।

তবে বাস্তব কথা হলো, কেউ এ থেকে শিক্ষা গ্রহণ করে, কেউ করে না। রাসূলুল্লাহ (সা.) ইরশাদ করেন : প্রতিটি মানুষ সকাল যাপন করে; অতঃপর নিজেকে বিক্রি করে। এভাবে কেউ নিজেকে (আল্লাহর আনুগত্যে নিয়োজিত করে জীবনকে ধ্বংস থেকে) রক্ষা করে। আর কেউ (নফস ও শয়তানের আনুগত্যে নিয়োজিত হয়ে) নিজেকে ধ্বংস করে ফেলে। (সহীহ মুসলিম : হাদীস ২২৩)।

বুদ্ধিমান তো সেই, যে প্রতিটি নতুন সময় ও সূচনায় নিজেকে এমন কাজে নিয়োজিত করে, যার মাধ্যমে তার আখেরাত সুন্দর হয়। আর নির্বোধ ওই ব্যক্তি, যে নতুন সময় ও সূচনায় এমন কাজকর্মে লিপ্ত থাকে, যা তার ধ্বংস টেনে আনে। তাই জীবনের প্রতিটি নতুন মুহূর্তে কল্যাণের দিকে আরো ধাবিত হওয়ার প্রত্যয় গ্রহণ করাই মুমিনের ঈমানের দাবি। আল্লাহ আমাদের সেই তাওফীক নসীব করুন।

মুহাররম : আল্লাহ্ তাআলার নির্ধারিত সম্মানিত মাস এবং হিজরি বর্ষের প্রথম মাস। হিজরি বর্ষের সর্বপ্রথম মাস- মুহাররামুল হারাম তথা মুহাররম মাস। হাদীসের ভাষায়- শাহরুল্লাহ আলমুহাররাম। আল্লাহ তাআলা বছরের যে ক’টি মাসকে বিশেষ মর্যাদায় মহিমান্বিত করেছেন মুহাররম তার অন্যতম। পবিত্র কোরআন মাজীদে আল্লাহ তাআলা বলেন : আল্লাহ যেদিন আসমান যমীন সৃষ্টি করেছেন সেদিন থেকেই মাসসমূহের গণনা আল্লাহ তাআলার নিকট তাঁর বিধান মতে বারটি। তন্মধ্যে চারটি মাস সম্মানিত। এটাই সহজ-সরল দ্বীন (-এর দাবি) অতএব তোমরা এ দিনগুলোতে নিজের উপর জুলুম করো না।... (সূরা তাওবা : ৩৬)।

এ চার মাস কী কী? হাদীস শরীফে তা বলে দেওয়া হয়েছে। নবী কারীম (সা.) বলেন- সময়ের হিসাব যথাস্থানে ফিরে এসেছে, আসমান-যমীনের সৃষ্টির সময় যেমন ছিল। (কারণ, জাহেলী যুগে আরবরা নিজেদের স্বার্থ ও মর্জিমতো মাস-বছরের হিসাব কম-বেশি ও আগপিছ করে রেখেছিল।) বার মাসে এক বছর। এর মধ্য থেকে চারটি মাস সম্মানিত। তিনটি মাস ধারাবাহিক- যিলকদ, যিলহজ্ব ও মুহাররম। আরেকটি হলো রজব, যা জুমাদাল আখিরাহ ও শাবানের মধ্যবর্তী মাস। (সহীহ বুখারী : হাদীস ৪৬৬২)।

হাদীসে এ মাসকে শাহরুল্লাহ তথা আল্লাহর মাস বলে আখ্যায়িত করা হয়েছে। হযরত আবু হুরাইরা (রা.) থেকে বর্ণিত, নবী কারীম (সা.) ইরশাদ করেন : রমজানের পর সবচে উত্তম রোজা হলো আল্লাহর মাস মুহাররমের রোজা। আর ফরজ নামাযের পর সবচে উত্তম নামাজ হলো রাতের নামাজ (অর্থাৎ তাহাজ্জুদের নামাজ)। (সহীহ মুসলিম : হাদীস ১১৬৩)।

প্রকৃতপক্ষে সকল মাসই তো আল্লাহর মাস। তথাপি এ মাসকে বিশেষভাবে ‘আল্লাহর মাস’ বলে ব্যক্ত করার মাঝে রয়েছে বিশেষ তাৎপর্য। যেমন পৃথিবীর সকল মসজিদই আল্লাহর ঘর। কিন্তু কাবা শরীফকে বিশেষভাবে বাইতুল্লাহ বা আল্লাহর ঘর বলার হেকমত কী? কারণ এর রয়েছে বিশেষ মর্যাদা। তেমনি বছরের অন্যান্য মাস অপেক্ষা মুহাররমের রয়েছে বিশেষ গুরুত্ব।

আল্লাহ তাআলা কোরআন মাজীদে হিজরি সময়ের গুরুত্ব সম্পর্কে বলেছেন : লোকেরা আপনার কাছে নতুন চাঁদ সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করে। আপনি তাদেরকে বলে দিন, এটা মানুষের (বিভিন্ন কাজ-কর্মের) হিসাব এবং হজ্বের সময় নির্ধারণ করার জন্য। (সূরা বাকারা : ১৮৯)।



 

Show all comments
  • Md. Mofazzal Hossain ১৬ আগস্ট, ২০২১, ১:১৪ এএম says : 0
    ইসলামের ইতিহাসে এই মাসটি কতগুলো ঘটনার জন্য উল্লেখযোগ্য এবং স্মৃতিবিজড়িত। স্মৃতিবিজড়িত ঘটনা ও মর্যাদার কারণেই মহররম মাসের গুরুত্ব অত্যাধিক। কুরআনুল কারিমে এ মাসকে বিশেষ মর্যাদা দেওয়া হয়েছে
    Total Reply(0) Reply
  • MD FOKHRUL ISLAM ১৬ আগস্ট, ২০২১, ১:১৪ এএম says : 0
    এই মাসটিকে মহররম হিসেবে নামকরণের অন্যতম কারণ হচ্ছে- এই মাসটি হারাম মাস; যাতে যুদ্ধ-বিগ্রহ; রক্তপাত করা হারাম বা নিষিদ্ধ। এ বিষয়টির প্রতি তাগিদ দিতেই মহররমকে হিজরি সনের প্রথম মাস করার প্রস্তাব দিয়েছিলেন হজরত ওসমান রাদিয়াল্লাহু আনহু। তাঁর প্রস্তাব অনুসারেই হিজরি সনের প্রথম মাস হিসেবে মহররমকে নির্ধারণ করা হয় এবং নিষিদ্ধের জন্য মহররম নাম রাখা হয়।
    Total Reply(0) Reply
  • Chowdhury Nur Alom ১৬ আগস্ট, ২০২১, ১:১৫ এএম says : 0
    মহররম মাস আল্লাহর পক্ষ থেকে সতর্কবার্তা। আল্লাহ তাআলা বলেছেন, فَلَا تَظْلِمُوا فِيهِنَّ أَنْفُسَكُمْ অর্থাৎ এই সময়ের (মহররম মাসের) মধ্যে তোমরা নিজেদের উপর জুলুম করো না।’ আল্লাহর পক্ষ থেকে হারামকৃত ৪ মাসের মধ্যে তোমরা একে-অপরের প্রতি জুলুম করো না। এই মাসে পাপাচার থেকে বিরত থাকার প্রতি বিশেষভাবে নিষেধ করা হয়েছে।
    Total Reply(0) Reply
  • Md Faruque Ahmed ১৬ আগস্ট, ২০২১, ১:১৫ এএম says : 0
    রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম থেকে শাবান মাসে বেশি বেশি রোজা পালনের বিষয়টি প্রমাণিত হলেও তা হারামকৃত (চার) মাসের চেয়ে উত্তম নয়।
    Total Reply(0) Reply
  • Nazrul Islam ১৬ আগস্ট, ২০২১, ১:১৫ এএম says : 0
    হজরত ইবনে আব্বাস রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেন, আমি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে আশুরার দিনের রোজার উপরে অন্য কোনো দিনের রোজাকে প্রাধান্য দিতে দেখিনি এবং এ মাস অর্থাৎ রমজান মাস (এর উপর অন্য মাসের গুরুত্ব দিতেও দেখিনি)।’ (বুখারি)
    Total Reply(0) Reply
  • Umar Faruk ১৬ আগস্ট, ২০২১, ১:১৬ এএম says : 0
    আশুরার রোজা পালনের মাধ্যমে গোনাহ মাফের আশা করেছেন বিশ্বনবি
    Total Reply(0) Reply
  • এম জি মুহীউদ্দীন ১৬ আগস্ট, ২০২১, ২:৪৫ পিএম says : 0
    আল্লাহপাক সকল ঈমানদারগনকে আশুরার রোযা রাখার তৌফিক দান করুন আমিন।
    Total Reply(0) Reply

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: ইসলাম

৩ মার্চ, ২০২৩
২ মার্চ, ২০২৩
১ মার্চ, ২০২৩
২৮ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩
২৬ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩

আরও
আরও পড়ুন