Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

মুহাররম ও আশুরায় যা বর্জনীয়

এ কে এম ফজলুর রহমান মুনশী | প্রকাশের সময় : ১৫ আগস্ট, ২০২১, ১২:০১ এএম

ইসলামী বর্ষপঞ্জির প্রথম মাস মুহাররম। এ মাস খুবই বরকত ও ফজিলতপূর্ণ। এ মাসের ১০ তারিখ আশুরা নামে খ্যাত। এ দিনে আল্লাহপাক বহু গুরুত্বপূর্ণ কাজ সম্পাদন করেছেন। এ দিনের মর্তবাও অনেক বেশি। সুতরাং মুহাররম মাস ও আশুরার দিনে বর্জনীয় ও নিষিদ্ধ কাজ হতে নিজেকে দেশ ও জাতিকে বিরত রাখার প্রয়াস চালানো প্রত্যেক মোমিন-মুসলমানেরই একান্ত কর্তব্য। বস্তুত, বর্জনীয় কাজ ও মন্দকাজ বলতে ওই সকল কাজকে বোঝায় যা আল-কোরআন ও আল-হাদীসের নির্দেশনাবলীর বিপরীত। যে কাজের প্রতি কোরআন ও হাদীসের কোনো রকম অনুমোদন নেই, সেগুলো বর্জনীয় কাজের অন্তর্ভুক্ত।

এ সকল কাজকর্মের দ্বারা নেমে আসে শাস্তি ও দুর্যোগের ঘনঘটা। এতে জানমাল ও ইজ্জতের নিরাপত্তা বিঘিœত হয়। ফলে ব্যক্তি চরিত্র হতে শুরু করে জাতীয় চরিত্র পর্যন্ত ক্লেদপূর্ণ হয়ে যায়। সুতরাং মুসলিম সমাজের সকল শ্রেণির মানুষের উচিত, বিশেষ করে আলেম, বিদ্বান সম্প্রদায় ও প্রশাসনযন্ত্রের কর্তব্য হলো এ সমস্ত মন্দকাজ হতে জনগণকে দূরে থাকার নির্দেশ প্রদান করা এবং জতীয় চরিত্রকে পবিত্র রাখার জন্য চেষ্টা করা। পিয়ারা নবী মোহাম্মদুর রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন: যখন তোমাদের মধ্যে কেউ কোনো মন্দ কাজ সংঘটিত হতে দেখে, তাহলে তার উচিত স্বীয় হস্ত দ্বারা তা প্রতিহত করা। তবে যদি বাহুবলে প্রতিহত করার শক্তি না থাকে, মুখে তা নিষেধ করা। আর যদি মুখে বলারও সামর্থ্য না থাকে, তাহলে অন্তরে এক ঘৃণা করা। তবে এটা হবে দুর্বল ঈমানের পরিচায়ক।

এই হাদীসের মূল প্রতিপাদ্য বিষয় হচ্ছে এই যে, শরীয়তবিরোধী কার্যবলী ও মানবতাবর্জিত অনুষ্ঠানসমূহকে বাধা দেয়া হতে কোনোমতেই বিরত থাকা চলবে না বরং অন্যায়ের বিরুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়তে হবে। যারা এ সকল ব্যাপারে নীরবতার আশ্রয় গ্রহণ করে বা অলস হয়ে বসে থাকে, করুণাময় আল্লাহপাকের দরবারে তারা নিন্দনীয় ও অভিশপ্ত বলে চিহিৃত হবে। কেননা, যারা খারাপ কাজ করছে বা খারাপ কাজ সংঘঠিত হতে দেখছে কিন্তু তা নিষেধ করছে না, বাধা দেয়ার চেষ্টা করছে না, তারাও খারাপ এবং মন্দলোকের মধ্যে শামিল। স্বয়ং অন্যায় কর্মে লিপ্ত হওয়া এবং এর প্রতি সমর্থন ও সহানুভ‚তি প্রদর্শন করা একই কথা। এমতাবস্থায়, নীরব দর্শক হওয়া একান্তই গর্হীত এবং অন্যায়।

প্রথম চলমান প্রশাসন কর্তৃপক্ষের মাধ্যমে অন্যায়কে প্রতিহত করার চেষ্টা করতে হবে। যদি সরকারি সাহায্য লাভে বিলম্ব ঘটে বা সময় মতো না পাওয়া যায়, তাহলে সৎ উপদেশের মাধ্যমে মন্দের বিরুদ্ধে অগ্রসর হতে হবে। যদি প্রকাশ্য সৎ উপদেশের দ্বারাও সুফল পাওয়া না যায়, তাহলে মনে মনে সে কাজ বা অনুষ্ঠানকে ঘৃণা করতে হবে এবং এর সংস্পর্শ হতে নিজেকে এবং পরিবার-পরিজনকে দূরে রাখতে হবে।

অনুরূপভাবে যে সকল কাজ বা অনুষ্ঠানে উম্মতে মোহাম্মাদীর ইজমা বা ঐকমত্যের বিপরীত, এটা হতেও মানুষকে নিষেধ করতে হবে। মনে রাখতে হবে, সৎকাজের আদেশ ও অসৎ কাজের নিষেধ করার দায়িত্ব শুধু কেবল মহত ও নেক লোকদের উপরই ন্যস্ত নয় বরং সমাজের সর্বস্তরের লোকের উপরই এই পবিত্র দায়িত্ব সমানভাবে অর্পিত হয়েছে। এক্ষেত্রে বান্দাদের সৎ কাজ বা নেক আমল বছরের সম্মান ও মর্যাদার অধিকারী মাস এবং সপ্তাহিক দিনগুলোর বরকতময় শ্রেষ্ঠ দিন হতেই শুরু করা বাঞ্ছনীয়। কেননা, যে কাজের বরকতময় পরিবেশে শুরু হয়, এর শেষ কালও পাওয়া যায় অশেষ রহমত ও করুণার দ্বারা পরিপ্লুত। শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত সকল অবস্থায়ই তা কল্যাণ ও মঙ্গলের ভেতর দিয়ে অতিবাহিত হয়। ভালো এবং মঙ্গলকর আমল ব্যক্তি জীবনে যেমন সুফল বয়ে আনে, তেমনি সমাজ বা জাতীয় জীবনেও কল্যাণকর ভ‚মিকা পালন করে থাকে।

আল-কোরআন ও আল-হাদীসের আলোকে জানা যায় যে, পরম কৌশলী ও করুণানিধান আল্লাহপাকের সৃষ্ট বছরগুলোর মাঝে, জিলক্বদ, জিলহজ, মুহাররম ও রজব বিশেষ মর্যাদার অধিকারী। অনুরূপভাবে আল্লাহপাকের বিন্যাসকৃত দিনগুলোর মধ্যে ঈদুল ফিতর, ঈদুল আজহা, আরাফা এবং আশুরার দিন শ্রেষ্ঠ ও ফজিলতের অধিকারী। পরিতাপের বিষয় এই যে, কোনো কোনো মুসলিম দেশে, শহর-বন্দর ও গ্রামেগঞ্জে মুহাররম উপলক্ষে ও আশুরার দিনে যে সকল কর্মকান্ড আমরা দেখতে পাই, তা বেদাতী ও শেরকী কর্ম ছাড়া আর কিছুই নয়। মুহাররমের দশ তারিখের সাথে কারবালার মর্মন্তদ কাহিনি ওৎপ্রোতভাবে জড়িত থাকলেও শুধু কেবল হায় হোসেন, হায় হোসেন, মাতম করাই মুহাররম ও আশুরার মূল উদ্দেশ্য নয়। মুহাররম মাস ও আশুরার দিনে সংঘটিত হাজারো ঘটনাবলীর মধ্যে কারবালার ঘটনা একটি মর্মস্পর্শী ঘটনামাত্র।

এ জন্য শোক পালন করা, মাতম জারি করা নগ্ন ও অর্ধনগ্নভাবে নারী-পুরুষের বিশ্রী নর্তন, কর্দন, নাচ-গান, হৈ-হুল্লা, চল্লিশা উদযাপন খই-মুড়ি ছিটানো, খাদ্যদ্রব্যের অপচয় করা, মুসলমানদের বিবাহ-শাদীর জন্য এই মাসটিকে মনহুস মনে করা, মটকা ভরা পানি যত্রতত্র ছিটানো, দই-খিচুড়ির আড্ডা জমানো, কালো বস্ত্র পরিধান করা, শোরগোল চিৎকার করা, তাজিয়া তৈরি করা, শোভাযাত্রার আয়োজন করা, কৃত্রিম কবর জিয়ারত করা, মনগড়া কিচ্ছা-কাহিনির সাহায্যে বক্তৃতামঞ্চ গরম করা ইত্যাদি কর্মকান্ড ইসলামী শরীয়তের নির্দেশ মোতাবেক হারামা! এ সকল হারামকেই একশ্রেণির মুসলমান নামধারী ব্যক্তি পূণ্যকর্ম মনে করে বেদাত ও শেরেকে লিপ্ত হয়ে থাকে। এই অবস্থাকে কোনো মতেই শরীয়তগ্রাহ্য বলে বিবেচনা করা যায় না। আর যায় না বলেই এ সকল আচার-উচ্ছেদ কল্পে সকলেরই এগিয়ে আশা একান্ত দরকার। এই দরকারি কাজটি মুসলিম মিল্লাত যতবেশি আগ্রহ সহকারে সম্পন্ন করবে, ততই মঙ্গল সাধিত হবে।



 

Show all comments
  • Shahin Hassan ১৫ আগস্ট, ২০২১, ৬:১৬ এএম says : 0
    আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহকে মহররম মাসের মর্যাদা রক্ষার এবং আশুরার ৯ ও ১০ তারিখ রোজা পালনসহ ইসলামের কল্যাণে আশুরার ঘটনাবহূল আলোচনা মানুষের কাছে তুলে ধরার তাওফিক দান করুন। কুরআন-সুন্নাহর ওপর যথাযথ আমল করার তাওফিক দান করুন। আমিন।
    Total Reply(0) Reply
  • Nishi Islam ১৫ আগস্ট, ২০২১, ৬:১৭ এএম says : 0
    হিজরি বছরের প্রথম মাস মহররম। হজরত ওসমান রাদিয়াল্লাহু আনহুর প্রস্তাবনায় মহররম মাসকে হিজরি বছরের প্রথম মাস হিসেবে সাব্যস্ত করা হয়।
    Total Reply(0) Reply
  • Imran Selim ১৫ আগস্ট, ২০২১, ৬:১৮ এএম says : 0
    রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, রমজানের রোজার পর সবচেয়ে উত্তম রোজা হলো মহররম মাসের রোজা।’ (মুসলিম)
    Total Reply(0) Reply
  • Imam Hossain ১৫ আগস্ট, ২০২১, ৬:১৮ এএম says : 0
    মহররম মাসের ১০ম দিনকে আশুরা বলা হয়। এ দিন আল্লাহ তাআলা হজরত মুসা আলাইহিস সালাম এবং তাঁর জাতিকে ফেরাউনের জুলুম থেকে মুক্তি দিয়েছেন। এ উপলক্ষ্যে ইসলামের আগমনের আগে থেকেই ইয়াহুদিরাও রোজা রাখতেন।
    Total Reply(0) Reply
  • Kamal Pasha Jafree ১৫ আগস্ট, ২০২১, ৬:১৮ এএম says : 0
    আশুরার রোজা রাখার ফজিলত অনেক বেশি। এ দিনের রোজা রাখার ফজিলত বর্ণনায় রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, ‘আল্লাহর কাছে আশা করি তিনি বিগত এক বছরের গোনাহ ক্ষমা করে দেবেন।’ (মুসলিম)
    Total Reply(0) Reply
  • Nazmul Hasan ১৫ আগস্ট, ২০২১, ৬:১৯ এএম says : 0
    এ দিনটিকে কেউ কেউ শুধু কারবালার মাতক ও শোকানুষ্ঠান হিসেবে উদযাপন করে থাকে। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের প্রিয় নাতি হজরত ইমাম হুসাইন রাদিয়াল্লাহু আনহুর হৃদয়বিদারক শাহাদাত দিবস হিসেবে শরীরে আঘাত করতে থাকে; শরীর রক্তাক্ত করতে থাকে; তাজিয়া মিছিল তথা যুদ্ধের সাজ সাজ পোশাকে ঘোড়া সাজিয়ে রাস্তায় বেরিয়ে পড়ে; হজরত হুসাইন রাদিয়াল্লাহু আনহু কৃত্রিম মাজার তৈরি করে রাস্তায় প্রদর্শণীতে নেমে পড়ে; আশুরা উপলক্ষ্যে এসব আয়োজন ও আমল বর্জন করা। এ সব আমলের ব্যাপারে ইসলামের কোনো অনুমোদনই নেই।
    Total Reply(0) Reply

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: ইসলাম

৩ মার্চ, ২০২৩
২ মার্চ, ২০২৩
১ মার্চ, ২০২৩
২৮ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩
২৬ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩

আরও
আরও পড়ুন