Inqilab Logo

বুধবার, ২২ মে ২০২৪, ০৮ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১, ১৩ জিলক্বদ ১৪৪৫ হিজরী

মুহাররম আল্লাহর মাস

মাওলানা মুহাম্মাদ আব্দুল মালেক | প্রকাশের সময় : ১৪ আগস্ট, ২০২১, ১২:০০ এএম

মুহাররম চান্দ্রবছরের প্রথম মাস। সম্মানিত চার মাসের তৃতীয় মাস। হাদীস শরীফে এ মাসের অনেক ফজিলতের কথা উল্লেখিত হয়েছে। এ মাসে বেশি বেশি নফল রোজা ও তাওবা ইসতিগফারের প্রতি উৎসাহিত করা হয়েছে। ইরশাদ হয়েছে : রমহজানের পর সবচে উত্তম রোজা হলো আল্লাহর মাসের রোজা, যে মাসকে তোমরা মুহাররম নামে চেন। আর ফরয নামাজের পর সবচে উত্তম নামাজ হলো রাতের নামাজ। (সহীহ মুসলিম : ১১৬৩)।
এই হাদীসে লক্ষণীয় বিষয় হলো, (সা.) মুহাররম মাসকে বলছেন ‘শাহরুল্লাহ’ বা আল্লাহর মাস। জানা কথা, সকল মাসই আল্লাহর মাস। এর পরও কোনো এক মাসকে আল্লাহর মাস বলার রহস্য কী? রহস্য হলো, এই মাসের বিশেষ কিছু বৈশিষ্ট্য আছে। সেজন্যই তাকে আল্লাহর মাস বলা হয়েছে। যেমন দুনিয়ার সব ঘরই আল্লাহর ঘর। কিন্তু সব ঘরকে বাইতুল্লাহ বলা হয় না।

মুহাররমের গুরুত্বপূর্ণ একটি ফজিলত হলো, এর সঙ্গে তাওবা কবুলের ইতিহাস যুক্ত। মুসনাদে আহমাদ ও জামে তিরমিযীতে বর্ণিত একটি হাদীসে আছে- এক ব্যক্তি নবী (সা.) এর নিকট এসে জিজ্ঞেস করল : আল্লাহর রাসূল! রমজানের পর আপনি আমাকে কোন্ মাসে রোজা রাখার নির্দেশ দেন? উত্তরে নবী (সা.) বললেন : তুমি যদি রমজানের পর আরও কোনো মাসে রোজা রাখতে চাও তাহলে মুহাররমে রোজা রাখ। কেননা সেটি আল্লাহর মাস। সেই মাসে এমন একটি দিন রয়েছে, যেদিন আল্লাহ তাআলা অনেকের তাওবা কবুল করেছেন। ভবিষ্যতেও সেদিন আরো মানুষের তাওবা কবুল করবেন। (জামে তিরমিযী : ৭৫১)।

এই হাদীসে যেই দিনের দিকে ইশারা করা হয়েছে খুব সম্ভব সেটি আশুরার দিন। তবে বান্দার উচিত বছরের সব দিনেই তাওবা ইসতিগফারের প্রতি গুরুত্ব দেওয়া। বিশেষ করে এই মাসের প্রতিটি দিনেই তাওবা ইসতিগফারের প্রতি বেশি গুরুত্ব দেওয়া। আর আশুরার দিন অনেক বেশি ইসতিগফার করবে।
ইসতিগফারের জন্য সবচেয়ে উত্তম হলো কোরআন ও হাদীসে বর্ণিত ইসতিগফার বিষয়ক দুআগুলো বুঝে বুঝে মুখস্থ করবে। সেই দুআগুলোর মাধ্যমে রাব্বে কারীমের দরবারে ক্ষমা প্রার্থনা করবে। তবে নিজের ভাষায় নিজের মতো করে ইসতিগফার করলেও ঠিক আছে। কারণ আল্লাহ সকল ভাষারই স্রষ্টা। তিনি সবার কথা বুঝেন। সকলের আরজি কবুল করেন।

ইসতিগফারের কয়েকটি দুআ এখানে উল্লেখ করা হলো : ‘হে আমাদের প্রতিপালক! আমরা নিজেদের ওপর জুলুম করে ফেলেছি। আপনি যদি আমাদের ক্ষমা না করেন ও আমাদের প্রতি রহম না করেন তাহলে অবশ্যই আমরা অকৃতকার্যদের অন্তর্ভুক্ত হয়ে যাব।’ (সূরা আরাফ : ২৩)।
‘(হে আমার প্রতিপালক!) আপনি যদি আমাকে ক্ষমা না করেন ও আমার প্রতি দয়া না করেন তাহলে আমিও ক্ষতিগ্রস্তদের অন্তর্ভুক্ত হয়ে যাব।’ (সূরা হুদ : ৪৭)। ‘হে আমার রব! আমি নিজের প্রতি জুলুম করেছি। আপনি আমাকে ক্ষমা করে দিন।’ (সূরা কাসাস : ১৬)। ‘হে আল্লাহ! আপনি ছাড়া কোনো মাবুদ নেই। আপনি সকল ত্রæটি থেকে পবিত্র। নিশ্চয়ই আমি অপরাধী। ’(সূরা আম্বিয়া : ৮৭)। পবিত্র কোরআন মাজীদে আরো অনেক ইসতিগফারের আয়াত রয়েছে। এখানে অল্প সংখ্যক আয়াত উল্লেখ করা হলো।

মনে রাখতে হবে, ইসতিগফারের প্রাণ হলো তাওবা। আর তাওবার হাকীকত হলো, মানুষ আল্লাহ তাআলার নাফরমানী ছেড়ে আল্লাহর দিকে ফিরে আসবে। পিছনের অন্যায়গুলোর কাফফারা আদায় করবে। যেখানে যে কাফফারার কথা বলা হয়েছে সেখানে তা-ই আদায় করবে। বিশেষ করে মানুষের কোনো হক নষ্ট হয়ে থাকলে সেগুলো আদায়ের ব্যাপারে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিবে।

একথাও মনে রাখবে, ইসতিগফারের গুরুত্বপূর্ণ একটি সুরত হলো, কোরআনে কারীমে কিংবা হাদীস শরীফে যে আমল ও ইবাদাতের প্রসঙ্গে মাগফিরাতের ওয়াদা করা হয়েছে সেগুলোর প্রতি বেশি গুরুত্ব দিবে।
প্রত্যেক মুমিনের যেহেনেই সেই আমলগুলোর একটা তালিকা থাকা উচিত। এই তালিকায় সর্বপ্রথম রয়েছে ফরয নামাজ ও অন্যান্য ফরয ইবাদাত। এরপর মাগফিরাত পাওয়ার আমলগুলোর মধ্যে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো কবীরা গোনাহ থেকে বেঁচে থাকা। তাছাড়া দান-সদকা, যিকির-আযকার ও অন্যান্য নফল ইবাদতগুলো তো রয়েছেই।



 

Show all comments
  • Md. Mofazzal Hossain ১৪ আগস্ট, ২০২১, ১:০৯ এএম says : 0
    মহররম হিজরি সনের প্রথম মাস। আরবি মহররম শব্দের অর্থ সম্মানিত বা মর্যাদাবান। মহররম একটি সম্মানিত মাস। এ মাসের আছে বিশেষ গুরুত্ব ও তাৎপর্য। আছে আলাদা সম্মান ও মর্যাদা
    Total Reply(0) Reply
  • Imran Selim ১৪ আগস্ট, ২০২১, ১:০৯ এএম says : 0
    এটি ইসলামপূর্ব যুগ থেকেই গুরুত্বপূর্ণ মাস হিসেবে বিবেচিত। জাহেলি যুগেও আরবরা এ মাসকে বিশেষ মর্যাদার চোখে দেখত।
    Total Reply(0) Reply
  • MD FOKHRUL ISLAM ১৪ আগস্ট, ২০২১, ১:১০ এএম says : 0
    হররম মাসের অন্যতম বৈশিষ্ট্য হলো এটি নিষিদ্ধ মাস। এ মাসে আরবরা কোনো ধরনের যুদ্ধবিগ্রহ করত না। তারা এ মাসে রক্তপাত থেকে বিরত থাকত।
    Total Reply(0) Reply
  • Billal Hossain ১৪ আগস্ট, ২০২১, ১:১০ এএম says : 0
    হাদিসে মহররম মাসকে ‘আল্লাহর মাস’ হিসেবে আখ্যায়িত করা হয়েছে। আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুল (সা.) বলেন, ‘রমজানের পর সর্বোত্তম রোজা হলো আল্লাহর মাস মহররমের রোজা। আর ফরজ নামাজের পর সর্বোত্তম নামাজ হলো রাতের নামাজ।’ (সহিহ মুসলিম, হাদিস : ৭৪৭)
    Total Reply(0) Reply
  • Nazrul Islam ১৪ আগস্ট, ২০২১, ১:১১ এএম says : 0
    সুদূর অতীত থেকেই আশুরার দিনের ফজিলত স্বীকৃত। আশুরার দিনে কারবালার ঘটনা সংঘটিত হওয়ার বিষয়টি কাকতালীয়।
    Total Reply(0) Reply

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: ইসলাম

৩ মার্চ, ২০২৩
২ মার্চ, ২০২৩
১ মার্চ, ২০২৩
২৮ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩
২৬ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩

আরও
আরও পড়ুন