বিএনপির মানববন্ধন আজ, পাল্টা কর্মসূচি আওয়ামী লীগ
সারা দেশের মহানগর ও জেলা পর্যায়ে আজ মানববন্ধন করবে বিএনপি ও তার মিত্ররা। আর এ
লক্ষ্মীপুরের মেঘনার তলদেশের বালু লুটে নিচ্ছে ভোলার বহুল আলোচিত শামীম-নকীব বাহিনী!
নদীর তলদেশ থেকে অবৈধ বালু উত্তোলনের ফলে মেঘনার ভাঙ্গন ভয়াবহ রূপ নিচ্ছে।
প্রমত্ত্বা মেঘনার অব্যাহত ভাঙ্গনে লক্ষ্মীপুর জেলার রামগতি -কমলনগর উপজেলার বিস্তীর্ণ এলাকা বিলীন হয়ে যাচ্ছে। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে,কমলনগর উপজেলার সীমান্তবর্তী মেঘনানদী হতে পার্শ্ববর্তী জেলা ভোলার একদল দুর্বৃত্ত গত কয়েক বছর যাবৎ রাত-দিন পালা করে মেশিনের সাহায্যে কমলনগর সীমানার দশ কিলোমিটার নদীএলাকা থেকে বালু উত্তোলন করে নিয়ে যাচ্ছে। মেঘনানদীর তলদেশ হতে অবৈধভাবে বালু উত্তোলনের ফলে রামগতি-কমলনগর উপজেলার আয়তন দিন দিন ছোট হয়ে আসছে। বদলে যাচ্ছে দৃশ্যপট,চলছে ভাঙা-গড়ার খেলা। নদী ভাংগনের ফলে দেশের মানচিত্র থেকে হারিয়ে যচ্ছে এ দুই উপজেলা বিস্তীর্ণ জনপদ।মেঘনানদীর কমলনগর অংশে তথ্যানুসন্ধান কালে দেখা গেছে, প্রায় অর্ধশত ব্যক্তি চারটি ড্রেজার মেশিন দ্বারা মেঘনানদীর কমলনগর সীমানার তলদেশ হতে দেদারসে বালু উত্তোলন করে নিয়ে যাচ্ছে। এসব ড্রেজারগুলো কাদের জিজ্ঞেস করলে তারা জানান,এগুলো ভোলা জেলা আ'লীগের যুগ্ম সম্পাদক জহুরুল ইসলাম নকীব ও তার আপন ভাতিজা আনোয়ার হোসেন শামীম মোরাদার সহ উঠে আসে রামগতি-কমলনগর ও লক্ষ্মীপুরের কতিপয় বালু দস্যুদের নাম। এসব বালু তারা রামগতি-কমলনগর ও ভোলার বিভিন্ন বালু ব্যবসায়ীদের নিকট বিক্রি করে হাতিয়ে নিচ্ছে কোটি কোটি টাকা। আর এতে নদীর গতিপথ বাধাগ্রস্ত হয়ে নিঃস্ব হচ্ছে নদীপাড়ের লাখো মানুষ।মেঘনায় মৎস্য শিকারী জেলেরা জানান, বালু লুটেরা এচক্রটি কমলনগর উপজেলার মেঘনানদীর প্রায় দশ কিলোমিটার এলাকা জুড়ে নিজেদের দখলদারিত্ব রেখে নদীর তলদেশ হতে বালু লুটের মহোৎসব চালাচ্ছে। এদের বাহিনীর লোকদের কেউ বাধা দিতে সাহস করছেনা। জেলেরা আরো জানায়,ভোলা শহর ও সেখানকার জল-স্থলের দূই আতঙ্কের নাম জহুরুল ইসলাম নকীব ও তার ভাতিজা আনোয়ার হোসেন শামীম মোরাদার। তাদের দাপটে ভোলা ও লক্ষ্মীপুরের মেঘনার জেলেরা সর্বদাই আতঙ্কিত ও ভীত-সন্ত্রস্ত থাকতে হয়। তথ্যমতে,চারটি ড্রেজার দ্বারা এচক্রটি প্রতিদিন মেঘনার তলদেশ হতে প্রায় ১৪ /১৫ লাখ টাকার বালু তুলে বিক্রি করছে। ক্ষমতার দাপট দেখিয়ে গত ১০ বছর ধরে ভোলার বালুদস্যুখ্যাত শামীম-নকীব বাহিনী মেঘনার বুকে জেগে উঠা নতুন নতুন চরাঞ্চল সমূহ কেটে বিরান করে ফেলেছেন বলেও বিস্তর অভিযোগ রয়েছে।
তবে ভোলার সাংসদ তোফায়েল আহমেদের নির্দেশে এখন তারা বালু উত্তোলন করছেনা বলে দাবী করেন অভিযুক্ত আনোয়ার হোসেন শামিম।
অনুসন্ধানে জানা গেছে, আ'লীগ ক্ষমতায় আসার পর থেকে সেখানকার জেলা সদরের কাঁচিয়া ইউপি চেয়ারম্যান পদ বাগিয়ে নেন জহুরুল ইসলাম নকীব। মেঘনার তীরবর্তী কমলনগর উপজেলার অপর প্রান্তে অবস্থিত ভোলার কাচিয়া ইউনিয়নটি। মূলতঃ সেইখানে বসেই কমলনগরের মেঘনানদীর বালু লুটের নাটাই ঘুড়াচ্ছেন শামীম-নকীব বাহিনী।
নির্ভরযোগ্য তথ্যানুসন্ধানকালে ভোলার বিভিন্ন শ্রেনীপেশার লোকজনের সাথে আলাপ করে জানা গেছে,জহুরুল ইসলাম নকীব সেখানকার সাংসদ তোফায়েল আহমাদের খুব আস্থাভাজন থাকার সুবাদে ভোলার বিভিন্ন দপ্তরের পাশাপাশি মেঘনানদীর ও একক আধিপত্য লুটে নেন। তাছাড়া লক্ষ্মীপুর সদর আসনের সাংসদ শাহজাহান কামাল আওয়ামীলীগ নেতা তোফায়েল আহমাদের বেয়াই হওয়ার সুবাদে তার সাথেও নকীবের সখ্যতা রয়েছে। মেঘনার দূইপাড়ের দুই হেভীওয়েট সাংসদের সাথের সখ্যতাকে পুঁজি করে আ'লীগ নেতা নকীব ও তার ভাতিজা আনোয়ার হেসেন শামীম মোরাদার ভোলা এবং লক্ষ্মীপুরের মেঘনানদীতে বালু লুটের মহোৎসব চালাচ্ছে। বিরামহীন এমন বালুদস্যুতায় মেঘনার প্রবল ভাঙনে যেমনি ছোট হয়ে আসছে ভোলা, তেমনি ভাঙনের শিকার হয়ে সর্বশ্বান্ত হচ্ছে লক্ষ্মীপুরের রামগতি ও কমলনগরের লাখো পরিবার। মেঘনানদী হতে এভাবে বছরের পর বছর বালু উত্তোলনের ফলে ঘনবসতিপূর্ণ এ জনপদটি দিন দিন দেশের মানচিত্র থেকে মূছে যাচ্ছে।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে,শামীম মোরাদার ভোলার কাচিয়া ইউনিয়নের একটি প্রাইমারী স্কুলের একজন শিক্ষক ছিলেন। মেঘনায় বালু দস্যুবৃত্তি আর নানা অপকর্মের কারনে চাকুরী ছেড়ে দেন তিনি। শিক্ষকতা ছেড়ে দেয়ার পর থেকেই যেন আলাদ্বীনের আশ্চর্য প্রদ্বীপ পেয়ে বসেন শামীম। দলের কোন পদ-পদবী না থাকলেও শামীম মোরাদার ভোলার আওয়ামীলীগের কাছে আবির্ভূত হয়ে উঠেন শক্তিধর মূকুহটহীন সম্রাট হিসেবে।
জেলা শহর ভোলার গাজীপুর রোডের যেখানে সাংসদ তোফায়েল আহমেদের বাসভবন, ঠিক তার পূর্বপার্শ্বেই নির্মিত প্রাসাদসম আলীশান পাঁচতলা বাড়ীতে বাস করেন আনোয়ার হেসেন শামীম মোরাদার। তিনি চলাচল করেন কোটি টাকা মূল্যের লাক্সারিয়াস গাড়ীতে। রাজধানী ঢাকার অভিজাত কয়েকটি এলাকায় নকীব ও শামীমের বেশ কয়েকটি বিলাস বহুল বাড়ী ও ফ্ল্যাট রয়েছে বলে গোয়েন্দা সংস্থাগুলোর কাছে তথ্য রয়েছে। সাংসদ তোফায়েল আহমেদের বাড়ীর পশ্চিম পার্শ্বে জহুরুল ইসলাম নকীবের বিলাসবহুল বাড়ী বিদ্যমান। তিনি ভোলায় চড়েন দামী পাজেরো গাড়ীতে। পরিবার থাকেন ঢাকার ধানমন্ডিতে। তাদের জন্যও সেখানে নানা ব্র্যান্ডের কোটি টাকা মূল্যের কয়েকটি গাড়ী রয়েছে। জানা গেছে, ভোলার যে পরিবারটি'র একসময় নূন আনতে পান্থা ফুরাতো সেই পরিবারের সদস্যরা এখন শত শত কোটি টাকার মালিক হওয়ার উৎস্য কি? তা নিয়ে চলছে নানা সমালোচনার ঝড় ।
নির্ভরযোগ্য সূত্রমতে, ভোলার মেঘনা-তেতুলিয়া ও তৎসংলগ্ন সকল নদী হতে অবৈধভাবে বালু উত্তোলনের বিরুদ্ধে ২০১৪ সালের ১ লা ডিসেম্বর জনৈক শেখ ফরিদ নামের এক ব্যাক্তি জনস্বার্থে হাইকোর্টে একটি রিট পিটিশন দায়ের করেন। (যার নাম্বার-১১১২৪)। ওই রিটে ভোলার তৎকালীন জেলা প্রশাসক সেলিম রেজা,নির্বাহী ম্যাজিষ্ট্রেট মাকসুদুর রহমান, ম্যাজিষ্ট্রেট আশিকুর রহমান ও ভোলা সদর মডেল থানার তৎকালীন ওসি মোবাশ্বির আলীকে বিবাদী করা হয়। রিট পিটিশনের বিষয়বস্তু নিয়ে বিচারপতি ফরিদ উদ্দিন ও বিচারপতি এমডি রেজাউল হাসানের দ্বৈত বেঞ্চ দীর্ঘ শুনানী শেষে অবৈধ বালু উত্তোলনের বিরুদ্ধে স্থায়ী নিষেধাজ্ঞা আদেশ প্রদান করেন। ২০১৫ সালের ২৮ আগষ্ট ওই আদেশটি ভোলা-লক্ষ্মীপুর ও বরিশাল এলাকার নদ-নদীগুলোর জন্য বলবৎ থাকবে বলেও হাইকোর্ট নির্দেশনা জারি করেন। তখন ভোলার জেলা প্রশাসকসহ বিবাদীগন উচ্চ আদালতের নিষেধাজ্ঞামতে অবৈধ বালু উত্তোলন বন্ধ করে দেয়া হয়েছে বলেও হাইকোর্টকে অবহিত করেন।ভোলার জেলা প্রশাসক উচ্চ আদালতের সেই আদেশের কপি লক্ষ্মীরের ডিসিকেও অবহিত করেছিলেন। কিন্তু সেইসময়কার দুই জেলার প্রশাসকদ্বয় বদলির পর পরই শামীম-নকীব বাহিনী ফের কমলনগর ও ভোলা এলাকার মেঘনার বুক চিরে বালু উত্তোলনের কার্যক্রম শুরু করেন। যা এখনো অব্যাহত রয়েছে।
এ বিষয়ে সাবেক মন্ত্রী ও স্থানীয় সাংসদ তোফায়েল আহমেদ ঘটনার আদ্যোপান্ত জানতে পারেন। তিনি এদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে জেলা প্রশাসক ও এসপিকে নির্দেশ দেন। সম্প্রতি মেঘনায় দস্যুতা নিধনে জেলা প্রশাসন ও পুলিশের যৌথ উদ্যোগে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রট (ভোলার সাবেক এ্যাসিল্যান্ড) আবি আব্দুল্লাহর নেতৃত্বে ভোলার মেঘনা নদীতে অভিযান পরিচালনা করে ১৯ জন বালুদস্যুকে ড্রেজার এবং ভলগেটসহ আটক করা হয়। যদিও বালুদস্যুদের সেই গডফাদার বিশেষ কায়দায় ম্যানেজ প্রক্রিয়ার মাধ্যমে তার বাহিনীর দূর্বৃত্তদের ছাড়িয়ে আনেন। তখন ম্যাজিষ্ট্রেট
আবিআব্দুল্লাহ গণমাধ্যম কর্মীদের কাছে দাবী করেন অবৈধভাবে বালু উত্তোলন এলাকাটি লক্ষ্মীপুরের রামগতি -কমলনগর উপজেলার অংশ হওয়ায় ড্রেজার,ভলগেট এবং বালুদস্যুদের তিনি ছেড়ে দিতে বাধ্য হয়েছেন। ওইদিনের নাটকীয় সেই ঘটনাটি তখন ভোলার টক অব দ্যা টাউনে রুপ নেয়।
বর্তমানে কমলনগরের মেঘনায় অবৈধভাবে বালু লুটতরাজ আর নৌযানে দস্যুবৃত্তির ফলে যেমনি নদী ভাঙনে নিঃস্ব হচ্ছে হাজারো মানুষ,তেমনি নদীপথের নৌযানে কর্মরত মানুষগুলো চরম আতঙ্ক, উদ্বেগ আর উৎকন্ঠার মধ্যে দিন কাটাচ্ছেন।
মেঘনায় ড্রেজার দ্বারা অবৈধ বালু উত্তোলনের কথা স্বীকার করে অভিযুক্ত আনোয়ার হোসেন শামীম বলেন,দেড় মাস আগ থেকেই তার সকল মেশিন বন্ধ রয়েছে। এর আগে তিনি মেঘনার তলদেশ থেকে বালু উত্তোলন করে বিক্রি করেছেন। এখন ভোলার এমপি তোফায়েল আহমদের নির্দেশে তিনি এখন নদী থেকে অবৈধ বালু উত্তোলন করছেননা। তবে জেলা প্রশাসন নদী থেকে বালু উত্তোলনের জন্য সরকারি ভাবে ইজারা বা টেন্ডার দিলে যদি তিনি ডাক পান তাহলে আবার বালু উত্তোলন করবেন বলে জানান।
ভোলা জেলা আওয়ামীলীগের যুগ্ম সম্পাদক
জহুরুল ইসলাম নকিবের মুঠোফোনে একাধিকবার কল করলেও তিনি ফোন রিসিভ করেননি।
কমলনগর থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি )
মোহাম্মদ মোছলেহ উদ্দীন বলেন ,বালু উত্তোলনের বিষয়ে সরকারের নির্দিষ্ট আইন আছে। আইন লঙ্ঘন করে যে বা যাহারা এই ধরনের অন্যায় কাজ করছে তাদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহন করা হবে। তবে বিষয়টি সম্পর্কে তিনি মোটেও অবগত নয় বলে দাবী করেন।
এসব বিষয়ে কলনগর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোঃ কামরুজ্জামান বলেন, বিষয়টি সম্পর্কে তিনি অবগত নন। কোষ্টগার্ড সহ নদী সংশ্লিষ্টদের তিনি এবিষয়ে খোঁজ খবর নেওয়ার নির্দেশ দিবেন।মেঘনানদীর কমলনগর এরিয়া থেকে বালু উত্তোলন করা হলে যতবড় শক্তিশালী হউক না কেন, কোন প্রকার ছাড় দেওয়া হবেনা বলে জানান তিনি।
ভোলা জেলা প্রশাসক তৌফিক-ই এলাহী বলেন,সেখানকার মেঘনায় অবৈধভাবে বালু কাটার কোন সুযোগ নেই। এধরণের সুনির্দিষ্ট অভিযোগ আসলেই তিনি ব্যাবস্থা নিবেন বলে জানিয়েছেন।
লক্ষ্মীপুর জেলা প্রশাসক (ডিসি ) আনোয়ার হোসেন আকন্দের মুঠোফোনে একাধিকবার কল করেও তার বক্তব্য নেওয়া সম্ভব হয়নি।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।