Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

বছর সংখ্যার মর্মকথা

এ. কে.এম ফজলুর রহমান মুনশী | প্রকাশের সময় : ১৩ আগস্ট, ২০২১, ১২:০০ এএম

সৃষ্টি বিকাশের পূর্বেই মহান আল্লাহ পাক সংখ্যাতাত্তি¡কভাবে সৃষ্টির ক্রমধারা অব্যাহত রাখার উদ্দেশে সংখ্যার বিষয়টিকে প্রাধান্য প্রদান করেছেন। কেননা, সংখ্যা ছাড়া অগণিত সৃষ্টির সুশৃঙ্খল অগ্রযাত্রা কল্পনা করা যায় না। বাংলা ভাষায় আমরা সংখ্যা বা ১,২,৩,৪ ইত্যাদি বলতে যা বুঝি, তার আরবি পরিভাষা হলো ‘আদদ’। আল কোরআনে ‘আদদ’ শব্দটি তিনবার ব্যবহৃত হয়েছে।

যথা : (ক) এরশাদ হয়েছে : ‘যখন আমি কয়েক বছরের জন্য (আদাদা-সীনিনা) গুহায় তাদের কানের উপর নিদ্রার পর্দা ঢেলে দিলাম।’ (১৮নং সুরা কাহফ : আয়াত-১১)। (খ) এরশাদ হয়েছে : ‘এমন কি যখন তারা প্রতিশ্রুত শাস্তি দেখতে পাবে, তখন তারা জানতে পারবে, কার সাহায্যকারী দুর্বল এবং কার সংখ্যা কম (আকাল্লা আদাদা)।’ (৭২নং সুরা জ্বিন : আয়াত-২৪)। (গ) এরশাদ হয়েছে : ‘যাতে আল্লাহ তায়ালা জেনে নেন যে, রাসুলগণ তাদের পালনকর্তার পয়গাম পৌঁছিয়েছেন কি-না, রাসুলগণের কাছে যা আছে তা তার গোচরীভূত এবং তিনি সব কিছুর সংখ্যার হিসাব রাখেন। (৭২নং সুরা জ্বিন, আয়াত-২৮)।

এ ক্ষেত্রে লক্ষণীয় বিষয় হচ্ছে এই যে, মহান রাব্বুল আলামীন সুরা জ্বিনের সর্বশেষ বাক্যে বলে দিয়েছেন যে, তিনি প্রতিটি বস্তুর সংখ্যার হিসাব রাখেন। অর্থাৎ ‘প্রতিটি বস্তুর পরিসংখ্যান আল্লাহ তায়লার গোচরীভ‚ত। পাহাড়, পর্বতের অভ্যন্তরে কি পরিমাণ অণু-পরমাণু আছে, সারা বিশ্বের জলাধিসমূহের মধ্যে কি পরিমাণ পানিবিন্দু আছে, প্রত্যেক বৃষ্টিতে কত সংখ্যক ফোঁটা বর্ষিত হয় এবং সারা জাহানের বৃক্ষসমূহের পত্র-পল্লবের সঠিক পরিমাণ তাঁর জানা আছে।’ মোটকথা, তিনি যাবতীয় সৃষ্ট বস্তুর পরিমাণ, পরিমিতি সম্পর্কে সম্পূর্ণ অবগত আছেন।

এর দ্বারা এ কথাও প্রতিপন্ন হয় যে, সৃষ্টি বিকাশের পূর্বের তিনি এর সংখ্যাতাত্তি¡ক হিসাব-নিকাশের কাজ সমাধা করে রেখেছিলেন। এ জন্য সংখ্যা ও সংখ্যাতাত্তি¡ক পরিসংখ্যান যথাযথরূপে বুঝা উপলব্ধি করা ও এর ধারাবাহিকতা রক্ষা করা মানুষের জন্য সহজতর হয়ে উঠেছে। এটা আল্লাহ পাকেরই বিশেষ অনুগ্রহ ও দান। তা’ না হলে এই পৃথিবীতে নিয়মশৃঙ্খলা বলতে কোনো কিছুই অবশিষ্ট থাকত না। বাংলা ভাষায় আমরা যে সংখ্যাটিকে ছয় (৬) বলি, তার আরবী নাম হলো ছিত্তাতুন।

এই ‘ছিত্তাতুন’ (ছয়) শব্দটি আল কোরআনে ৭ বার ব্যবহৃত হয়েছে। যথা : (১) এরশাদ হয়েছে : ‘নিশ্চয় তোমার প্রতিপালক আল্লাহ যিনি নভোমন্ডল ও ভূমন্ডলকে ছয় দিনে (ফি ছিত্তাতি আইয়্যাম) সৃষ্টি করেছেন।’(৭নং সুরা আ’রাফ : আয়াত-৫৪)। (২) এরশাদ হয়েছে : নিশ্চয়ই তোমাদের পালনকর্তা আল্লাহ, যিনি সৃষ্টি করেছেন আসমান ও জমিনকে ছয়দিনে।’ (১০নং সুরা ইউনুস : আয়াত-৩)।

(৩) এরশাদ হয়েছে : ‘তিনিই সেই সত্তা যিনি আসমান ও জমিন ছয়দিনে সৃষ্টি করেছেন।’ (১১নং সুরা হুদ : আয়াত-৭)। (৪) এরশাদ হয়েছে : ‘তিনিই সেই সত্তা যিনি নভোমন্ডল ও ভূমন্ডলের অন্তর্বর্তী সব কিছু ছয়দিনে সৃষ্টি করেছেন।’ (২৫নং সুরা ফুরকান : আয়াত-৫৯)। (৫) এরশাদ হয়েছে : ‘আল্লাহ, যিনি নভোমন্ডল, ভূমন্ডল ও এতদুভয়ের মধ্যবর্তী সব কিছু ছয়দিনে সৃষ্টি করেছেন।’ (৩২নং সুরা সেজদাহ : আয়াত-৪)। (৬) এরশাদ হয়েছে : ‘আমি নভোমন্ডল, ভূমন্ডল ও এতদুভয়ের মধ্যবর্তী সব কিছু ছয়দিনে সৃষ্টি করেছি এবং আমাকে কোনো রূপ ক্লান্তি স্পর্শ করেনি।’ (৫০নং সুরা ক্বাফ : আয়াত-৩৮)।

(৭) এরশাদ হয়েছে : ‘তিনিই সেই সত্তা যিনি নভোমন্ডল ও ভূমন্ডল সৃষ্টি করেছেন ছয়দিনে।’ (৫৭নং সুরা হাদীদ : আয়াত-৪)। বস্তুত : আল্লাহ পাকের সৃষ্টি কৌশলের বাস্তবায়ন দু’ভাগে বিভক্ত। (১) আলমে আমর বা ‘নির্দেশ জগত’। সে জগত বস্তুহীন। সেখানে আল্লাহ পাক ‘কুন’ বলার সাথেই তাঁর প্রার্থিত বস্তুটির পূর্ণাঙ্গ ‘স্মৃতি’ তৈরি হয়ে যায়। এ জগত আল্লাহ পাকের আরশে মোয়াল্লার উপরে অবস্থিত। (২) আলমে খালক বা ‘সৃষ্টি জগত’। এ জগতহলো বস্তুময়। এখানে ‘ফাইয়াকুন’ পদ্ধতিতে আল্লাহ পাকের প্রার্থিত বস্তুর পূর্ণাঙ্গ স্মৃতি তরতীব মতো ধাপে ধাপে, পর্যায়ক্রমে বাস্তবে পরিপূর্ণতা লাভ করে।

এ জন্য আরশে মোয়াল্লা হতে শক্ত স্তর জমিনের নিম্নভাগ পর্যন্ত বিস্তৃত। দিন ও রাতের আগমন নিগর্মনের ক্রমধারা সৃষ্টি জগতের সূর্য ও চন্দ্রের উদয় অস্তের সাথে জড়িত। ‘নির্দেশ জগতে’ এদিন এবং রাতের প্রভাব বলতে কিছুই নেই। সেযাই হোক, আমরা পরবর্তী পর্যায়ে ছয়দিনে নভোমন্ডল ও ভূমন্ডল এবং এতদুভয়ের মধ্যস্থিত বস্তু সৃষ্টির ব্যাপারে বিশাদ আলোচনা করতে প্রয়াস পাব। মহান রাব্বুল আলামীন আমাদের তাঁর রহমত ও বরকতের শামিয়ানার নিচে স্থান দান করুন।-আমীন!



 

Show all comments
  • মেঘদূত পারভেজ ১৩ আগস্ট, ২০২১, ৬:৪৯ এএম says : 0
    সংখ্যাতত্ত্বে এই ঐশীগ্রন্থ মহাবিশ্বের এক চরম বিস্ময়! কোরআন শরিফের মোট ১১৪টি সূরার সর্বমোট আয়াত সংখ্যা ৬৬৬৬টি। এতে জান্নাত ও জাহান্নামের ওয়াদার আয়াত ১০০০টি, ভীতিপ্রদর্শক আয়াত ১০০০টি, আদেশসূচক আয়াত ১০০০টি, নিষেধসূচক আয়াত ১০০০টি, উদাহরণ সংবলিত আয়াত ১০০০টি, ঘটনা সংবলিত আয়াত ১০০০টি, হালাল নির্দেশক আয়াত ২৫০টির মতো, হারাম নির্দেশক আয়াত ২৫০টি, তাসবিহ সংবলিত আয়াত ১০০টি এবং নানা প্রসঙ্গে আয়াত ৬৬টি।
    Total Reply(0) Reply
  • সাইফুল ইসলাম ১৩ আগস্ট, ২০২১, ৬:৫০ এএম says : 0
    পবিত্র এই গ্রন্থে অনেকবার একের সঙ্গে অন্যের তুলনা করা হয়েছে। এই তুলনীয় নাম বা বস্তু দুটিকে আল্লাহতায়ালা সমান সংখ্যাতেই উল্লেখ করেছেন। এখানে ‘তিনি বললেন’ এবং ‘তারা বলল’ শব্দ দুটি এসেছে ৩৩২ বার করে। ‘আব্দ (গোলামি)’ ও ‘আবিদ (গোলাম)’ কথা দুটি এসেছে ১৫২ বার করে। ‘জীবন’ ও ‘মৃত্যু’ ১৪৫ বার, ‘দুনিয়া’ ও ‘আখেরাত’ ১১৫ বার, ‘কষ্ট’ ও ‘ধৈর্য’ ১০২ বার, ‘শয়তান’ ও ‘ফেরেশতা’ ৮৮ বার, ‘বেহেশত’ ও ‘দোজখ’ ৭৭ বার, ‘বিপর্যয়’ ও ‘কৃতজ্ঞতা’ ৭৫ বার, ‘চন্দ্র’ ও ‘সূর্য’ ৩৩ বার, ‘জাকাত’ ও ‘জাকাত প্রদানের ফলে বরকত’ ৩২ বার, ‘ঈমান’ ও ‘কুফর’ ২৫ বার, ‘পবিত্র’ ও ‘অপবিত্র’ সাতবার, ‘গরম’ ও ‘ঠাণ্ডা’ পাঁচবার করে এসেছে
    Total Reply(0) Reply
  • গাজী ফজলুল করিম ১৩ আগস্ট, ২০২১, ৬:৫১ এএম says : 0
    পবিত্র কোরআন নারী-পুরুষের সমঅধিকার প্রদান করেছে। তাই সমগ্র গ্রন্থে ‘নারী’ ও ‘পুরুষ’ শব্দ দুটি এসেছে ২৩ বার করে। এখানে বিশেষভাবে বলা যায়, মানবদেহের ক্রমোজমের মোট সংখ্যা ৪৬টি। এর ২৩টি এসেছে মায়ের থেকে এবং ২৩টি বাবার থেকে।
    Total Reply(0) Reply
  • তৌহিদুজ জামান ১৩ আগস্ট, ২০২১, ৬:৫২ এএম says : 0
    সময়, মুহূর্ত, দিন, রাত, ঘণ্টা, মাস, বছর নিয়ে রয়েছে ৩৬৫টি আয়াত; যা মিরাকেল অব কোরআন হিসেবে বিবেচিত। মহান আল্লাহ আমাদের দুটি সময়জ্ঞান দান করেছেন—একটি সূর্যের মাধ্যমে, অন্যটি চন্দ্রের মাধ্যমে। সূর্য বছর ৩৬৫ দিন তথা ১২ মাসে এক বছর। আর চন্দ্র বছর ৩৫৪ দিনে, কিন্তু ১২ মাসেই এক বছর। দুটি ক্যালেন্ডার মানুষের জন্য অতীব জরুরি। তা
    Total Reply(0) Reply
  • হাদী উজ্জামান ১৩ আগস্ট, ২০২১, ৬:৫২ এএম says : 0
    বার জন্য জরুরি হচ্ছে আল্লাহ পাকের নিদর্শন সূর্য ও চন্দ্র অনুসারে যেই পঞ্জিকা বা ক্যালেন্ডার রয়েছে তা অনুসরণ করা। মহান আল্লাহ বলেন: তিনি এমন সত্তা, যিনি বানিয়েছেন সূর্যকে প্রচণ্ড দীপ্তিময় এবং চন্দ্রকে স্নিগ্ধ আলোকময় এবং নির্ধারিত করেছেন এর জন্য মনজিল, যাতে তোমরা জানতে পর বছরের গণনা ও হিসাব। আল্লাহ এসব নিরর্থক সৃষ্টি করেননি। তিনি বিস্তারিতভাবে বিবৃত করেন আয়াতসমূহ সেই সব লোকের জন্য, যারা জ্ঞান রাখে (সূত্র: আল-কোরআন, সুরা ইউনুছ)
    Total Reply(0) Reply
  • সাইফুল ইসলাম ১৩ আগস্ট, ২০২১, ৬:৫৩ এএম says : 0
    আল্লাহ তাআলা বলেছেন, নিশ্চয় মাসসমূহের সংখ্যা আল্লাহর কাছে ১২ মাস, সুনির্দিষ্ট রয়েছে আল্লাহর কিতাবে সেদিন থেকে, যেদিন তিনি সৃষ্টি করেছেন আসমান ও জমিন, এর মধ্যে চারটি মাস সম্মানিত। এটিই সুপ্রতিষ্ঠিত ধর্মপথ। সুতরাং এই মাসগুলোর ব্যাপারে তোমরা নিজেদের প্রতি জুলুম কোরো না (সূত্র: আল-কোরআন, সুরা তওবা)।
    Total Reply(0) Reply

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: ইসলাম

৩ মার্চ, ২০২৩
২ মার্চ, ২০২৩
১ মার্চ, ২০২৩
২৮ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩
২৬ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩

আরও
আরও পড়ুন