Inqilab Logo

শুক্রবার ০৮ নভেম্বর ২০২৪, ২৩ কার্তিক ১৪৩১, ০৫ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

যানজটে নাকাল মানুষ

পুরনো রূপে রাজধানী : ভেঙে পড়েছে ট্রাফিক ব্যবস্থা

স্টাফ রিপোর্টার | প্রকাশের সময় : ১৩ আগস্ট, ২০২১, ১২:০০ এএম

মহামারি করোনাভাইরাসের প্রকোপ নিয়ন্ত্রণে কঠোর বিধিনিষেধ শিথিল হওয়ার সড়কে চলছে গণপরিবহন। দোকান-পাট, বিপণিবিতান খুলছে। শুরু হয়েছে কেনা বেচা। অনেক দোকানে ক্রেতাদের ভিড় বাড়ছে। একইসঙ্গে রাজধানীর চিরচেনা সেই তীব্র যানজটও ফিরে এসেছে। সরকারি বেসরকারি অফিস বন্ধ থাকলেও সপ্তাহের শেষ দিনে গতকাল ঢাকাজুড়েই ছিল তীব্র যানজট। করোনা সংক্রমণের পাশাপাশি মৃত্যুর সংখ্যা বাড়ার বিষয়টি যেনো কারও কাছে পাত্তা পাচ্ছে না। রাজধানীয় সব এলাকায় উপেক্ষিত থাকছে স্বাস্থ্যবিধি। তবে রাস্তায় এমন যানজটের কারণে ভেঙে পড়েছে ট্রাফিক ব্যবস্থা।

গতকাল বৃহস্পতিবার রাজধানীর মোহাম্মদপুর, আসাদগেট, খামারবাড়ি, ফার্মগেট, কারওয়ান বাজার, বাংলামোটর, নিউমার্কেট, শাহবাগ, মৎস্য ভবন মোড়, গুলিস্থান, বঙ্গবাজার, বংশাল, নাবাবপুরসহ বিভিন্ন স্থান ঘুরে যানজটের এমন চিত্র দেখা গেছে। এছাড়া বিজয় সরণি, শ্যামলী, গাবতলী, মিরপুর, ধানমন্ডি, কলাবাগানসহ বিভিন্ন সড়ক ঘুরে দেখা গেছে, ব্যক্তিগত গাড়ি ছাড়াও সড়কে গণপরিবহনের তিব্র চাপ। কিছুক্ষণ পর পরই সৃষ্টি হচ্ছে যানজটের। বিভিন্ন জায়গায় বাসের জন্য অপেক্ষা করতে দেখা গেছে যাত্রীদের। বিধিনিষেধ শিথিল হওয়ার থেকেই রাস্তায় গণপরিবহনের চাপ বাড়ছে। দোকানপাট, শপিংমল, ব্যবসা প্রতিষ্ঠান খোলায় এসব পেশার মানুষরা নিজ নিজ কর্মস্থলের উদ্দেশে ছোটেন। ফলে রাজধানীজুড়ে দেখা দিয়েছে তীব্র যানজট। অনেকে যানজটের কারণে গাড়ি থেকে নেমে ফুটপাত ধরে হেটে চলেছেন গন্তব্যে। আবার অনেক এলাকায় করোনা রোগীর গাড়ি যানজটে আটকে পড়ায় ঘটনা লক্ষ্য করা গেছে। তাদেরকে ট্রাফিক পুলিশের সহযোগিতায় উল্টা পথে চলাচলের ব্যবস্থা করা হয়েছে।

দুপুরে রাজধানীর খামারবাড়ি সিগন্যালে দেখা গেছে শত শত গাড়ি। ঘণ্টার পর ঘণ্টা যানজটে আটকে পড়ায় ঘুমিয়ে নিতেও দেখা গেছে গাড়ির চালককে। তীব্র গরম এবং যানজটে অতিষ্ট হয়ে গাড়ি থেকে নেমে দাঁড়িয়ে থাকছেন মানুষ। ওয়েলকাম গাড়ির চালক নাসির জানান, দীর্ঘদিন পর রাস্তায় গাড়ি নিয়ে বের হয়েছি। প্রথম ট্রিপে এসেই দুই ঘণ্টা জ্যামে বসে আছি। কখন পৌঁছাবো আর কখন আরেকটা ট্রিপ নিয়ে ফিরবো কে বলতে পারে। একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে কাজ করেন সজল। হেঁটে চলেছেন ফুটপাত ধরে। যানজটের কারণে তিনি পায়ে হেঁটেই যাচ্ছেন অফিসে।

এদিকে বিধিনিষেধ শিথিলের সিদ্ধান্তে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে কোভিড-১৯ সংক্রান্ত জাতীয় কারিগরি পরামর্শক কমিটি। পরামর্শক কমিটির সভাপতি ডা. সহিদুল্লা বলেন, বিধিনিষেধ শিথিলের এই সিদ্ধান্ত তাদের পরামর্শের উল্টো। তার আশঙ্কা এর ফলে সংক্রমণ অনেক বেড়ে যাবে। পরামর্শক কমিটির অন্য একজন সদস্য নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, ভয়াবহ পরিস্থিতির দিকে আমরা অবস্থান করছি। তখন এটা কেমন সিদ্ধান্ত হলো বুঝি না।
শ্যামলী থেকে মতিঝিল যাওয়ার জন্য বাসের জন্য অপেক্ষা করছিলেন একরামুল। তিনি বলেন, বাসের জন্য প্রায় আধাঘণ্টার বেশি সময় ধরে অপেক্ষা করছি, কোন বাসেই উঠতে পারছি না, এছাড়াও অনেক বাসে দাঁড়িয়ে যাত্রী নিতে দেখেছি। যদিও শুনেছি অর্ধেক বাস চলবে, সেজন্যই কি গণপরিবহনের সঙ্কট বুঝতে পারছি না। একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে কর্মরত সোহাগ যাচ্ছিলেন উত্তরায়। রাজধানীর কল্যাণপুর থেকে গণপরিবহনের অপেক্ষায় দীর্ঘক্ষণ থাকার পর কিছু না পেয়ে সিএনজি নিয়ে উত্তরার উদ্দেশে রওনা হন। এর আগে তার সাথে কথা হলে তিনি বলেন, অফিসে তো যেতে হবে। কি আর বলবো ভাই, সমস্যা সব আমাদের মতো সাধারণ জনগণকেই পোহাতে হয়। অনেক দিন পর বাসগুলো এক সঙ্গে রাস্তায় নামার কারণে এতে যানজট।
পুলিশের তেজগাঁও ট্রাফিক বিভাগের উপ-কমিশনার সাহেদ আল মাসুদ ইনকিলাবকে জানান, অনেক দির পরে গণপরিবহন ও ব্যক্তিগত পরিবহনের চাপ বাড়ছে। এ কারণে সড়কের বিভিন্ন জায়গায় যানজটের সৃষ্টি হচ্ছে। আমরা সেসব বিষয় নিয়ে রোদ-বৃষ্টির মধ্যেও কাজ করে যাচ্ছি। ট্রাফিক সিস্টেম যতটুকু সম্ভব মানানোর কাজ করে যাচ্ছি। আগামী সপ্তাহ থেকে যানজট আরও বাড়ার শঙ্কার কথা বলেন তিনি। এখনো যারা রাজধানীতে আসেননি আগামী সপ্তাহে অফিস শুরু হলে তারা যোগ দেবেন। সে সময় রাস্তায় চাপ আরেকটু বাড়বে।
মিরপুর ট্রাফিক বিভাগের পুলিশ সার্জেন্ট বিকাসুজ্জামান রনি বলেন, মিরপুর এলাকায় মেট্রোরেলের কাজ চলমান থাকায় একদিকে যেমন রাস্তার অংশ ছোট হয়ে গেছে। অন্যদিকে গণপরিবহনসহ বিভিন্ন পরিবহন রাস্তায় নামায় চাপ বাড়ছে। মিরপুর-শেওড়াপাড়া-আগারগাঁও-মিরপুর-১১ এই সড়কে গণপরিবহনের চাপ বেশি রয়েছে। তবে গণপরিবহনের চাপসহ ট্রাফিক ব্যবস্থাপনা চলমান রাখতে আমরা মাঠে কাজ করে যাচ্ছি।

এদিকে আগামী ১৯ আগস্ট থেকে যথাযথভাবে স্বাস্থ্যবিধি অনুসরণ করে সড়ক, রেল ও নৌপথে সকল প্রকার গণপরিবহন চলাচল করতে পারবে। পর্যটন কেন্দ্র, রিসোর্ট, কমিউনিটি সেন্টার ও বিনোদন কেন্দ্র আসন সংখ্যার শতকরা ৫০ ভাগ ব্যবহার করে চালু করতে পারবে। সকল ক্ষেত্রে মাস্ক পরিধান নিশ্চিত করতে হবে এবং স্বাস্থ্য অধিদফতর প্রণীত স্বাস্থ্যবিধি যথাযথভাবে অনুসরণ করতে হবে। যেকোনো প্রতিষ্ঠানে স্বাস্থ্যবিধি প্রতিপালনে অবহেলা পরিলক্ষিত হলে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ দায়িত্ব বহন করবে এবং তাদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। এর আগে ১৯ দিন পর গত ১১ আগস্ট থেকে সরকারি-বেসরকারি সব অফিস, ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলো খুলে দিয়েছে সরকার। ওইদিন থেকে আদালত ও সব ধরনের শিল্প কলকারখানাও চালু হয়েছে। স্বাস্থ্যবিধি মেনে সব লঞ্চ চললেও সরকারের নির্দেশনা অনুযায়ী মোট সংখ্যার অর্ধেক বাস ও ট্রেন চলছিল। আগামী ১৯ আগস্ট থেকে শতভাগ গণপরিবহন চলতে পারবে। এছাড়াও শপিংমল, মার্কেট, দোকানপাট সকাল ১০টা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত এবং খাবারের দোকান, হোটেল, রেস্তোরাঁ অর্ধেক আসন খালি রেখে সকাল ৮টা থেকে রাত ১০টা পর্যন্ত খোলার রাখার অনুমতি দেওয়া হয়েছে। গতকাল বৃহস্পতিবার মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের জারি করা প্রজ্ঞাপনে বলা হয়েছে।

করোনা সংক্রমণ রোধে গত ১ জুলাই থেকে কঠোর বিধি-নিষেধ শুরু হয়। ঈদের সময় আটদিন বিরতি দিয়ে গত ২৩ জুলাই সকাল ৬টা থেকে কঠোর বিধি-নিষেধ আরোপ করে সরকার। এই সময়ে গণপরিবহন, অফিস এবং দোকানপাট বন্ধ রাখা হয়। তবে এরই মধ্যে গত ১ আগস্ট থেকে রফতানিমুখী শিল্প-কলকারখানা খুলে দেওয়া হবে। কিন্তু করোনা পরিস্থিতির উন্নতি না হওয়ায় বিধি-নিষেধ ১০ আগস্ট পর্যন্ত বৃদ্ধির সিদ্ধান্ত হয়।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: সড়ক


আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ