Inqilab Logo

শনিবার ১৬ নভেম্বর ২০২৪, ০১অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ১৩ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

বস্তিবাসীর দায় মাসিক ভাড়া

জাতীয় গৃহায়ণ কর্তৃপক্ষের পুনর্বাসন প্রকল্প মাসে খরচ হবে সাড়ে সাত হাজার টাকা

স্টাফ রিপোর্টার | প্রকাশের সময় : ১২ আগস্ট, ২০২১, ১২:০৫ এএম

রাজধানীর বস্তিবাসীকে ভাড়ায় ফ্ল্যাট দেওয়ার উদ্যোগকে অনেকেই ইতিবাচক হিসেবে দেখলেও আসলে সেগুলো বস্তিবাসীকে স্থায়ী বরাদ্দ দেওয়া হয়নি। বস্তির এক কক্ষের ঘর ছেড়ে নতুন বহুতল ভবনের ফ্ল্যাটে ওঠার বরাদ্দপত্র গত সপ্তাহেই হাতে পেয়েছেন মিরপুরের অনেকেই। তবে ফ্ল্যাট দেখে খুশি হলেও তারা ভাড়া নিয়েই আপত্তি করছেন। মিরপুরের বাউনিয়া বাঁধ এলাকায় বস্তিবাসীর জন্য পাঁচটি বহুতল ভবন হচ্ছে। এদিকে জাতীয় গৃহায়ণ কর্তৃপক্ষ যতগুলো প্রকল্পের কাজ করেছে সবগুলো অনিয়ম দুর্নীতির মধ্যে করা হয়েছে। যার মধ্যে জাতীয় গৃহায়ণ কর্তৃপক্ষের অনেক কর্মকর্তা জড়িত রয়েছে।
ইতোমধ্যে তিনটি ভবনে ভাড়ায় ৩০০টি ফ্ল্যাট বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। আরো ২৩৩টি রয়েছে। মোট ফ্ল্যাট হবে ৫৩৩টি। এর মধ্যে ৬৫টি ফ্ল্যাট ৭২০ বর্গফুটের (কমন স্পেসসহ)। প্রথম তিনটি ভবনের নির্মাণকাজ শেষের পর ফ্ল্যাটের বরাদ্দ দিয়েছে জাতীয় গৃহায়ণ কর্তৃপক্ষ। ভবন নির্মাণের জন্য বস্তির যেসব বাসিন্দা উচ্ছেদ হয়েছেন, তারা ফ্ল্যাট বরাদ্দের তালিকায় অগ্রাধিকার পেয়েছেন। এ ছাড়া মিরপুরের বিভিন্ন বস্তির বাসিন্দারাও এই তালিকায় রয়েছেন। তালিকা তৈরির কাজে জাতীয় গৃহায়ণ কর্তৃপক্ষ স্থানীয় জনপ্রতিনিধির সহায়তা নিয়েছে রাজধানীর বস্তিবাসীকে ভাড়ায় ফ্ল্যাট দেওয়ার উদ্যোগ ইতিবাচকভাবেই দেখছেন সাবেক তত্ত¡াবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা হোসেন জিল্লুর রহমান। তিনি বলেন, মাসে অন্তত ২০ হাজার টাকা আয় না হলে ওই ভাড়ায় ফ্ল্যাটে থাকা সম্ভব হবে না। ভাড়ায় ফ্ল্যাট বরাদ্দের বিষয়টি হয়তো তাদের কাছে সঠিকভাবে উপস্থাপন করা হয়নি। বস্তিবাসী কেন ফ্ল্যাটে উঠতে চাচ্ছেন না তা নীতিনির্ধারকদের খুঁজে দেখা দরকার।
জানা গেছে, বস্তিবাসীদের জন্য রাজধানীর মিরপুরের বাউনিয়া বাঁধের সøুইসগেট এলাকায় ১৪তলা মোট পাঁচটি ভবন নির্মাণ করছে জাতীয় গৃহায়ণ কর্তৃপক্ষ। এর মধ্যে তিনটি ভবনের নির্মাণকাজ ইতোমধ্যে শেষ হয়েছে। এই তিনটি ভবনে ফ্ল্যাট রয়েছে ৩০০টি। এসব ফ্ল্যাট বিভিন্ন বস্তিতে থাকা ৩০০ জনকে ভাড়ায় বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। প্রতিটি ফ্ল্যাটের আয়তন ৫১০ বর্গফুট (কমন স্পেসসহ ৬৭৩ বর্গফুট)। প্রতি ফ্ল্যাটে শোবার ঘর দুটি। এ ছাড়া বসার ও খাবার ঘর, বারান্দা, শৌচাগার ও স্নানাগার রয়েছে। প্রতিটি ফ্ল্যাটের জন্য সরকার ভাড়া নেবে মাসে সাড়ে চার হাজার টাকা। তবে এই ভাড়ার সঙ্গে যোগ হবে গ্যাস, বিদ্যুৎসহ অন্যান্য সেবার খরচও (ইউটিলিটি বিল)। তাতে আরো প্রায় তিন হাজার টাকা ব্যয় করতে হবে। সব মিলিয়ে বস্তির একজন বাসিন্দাকে ফ্ল্যাটে থাকার জন্য মাসে প্রায় সাড়ে সাত হাজার টাকা খরচ করতে হবে। ভাড়ার সঙ্গে অন্যান্য খরচ যোগ করা নিয়েই মূল আপত্তি ফ্ল্যাট বরাদ্দ পাওয়া বস্তির মানুষদের। বরাদ্দ পাওয়া ব্যক্তিরা এসব অভিযোগ করেন। তারা বলেছেন, সরকারি কর্মকর্তারা প্রথমে বলেছিলেন তাদের পুনর্বাসন করা হবে। যে কারণে তারা ভেবেছিলেন ফ্ল্যাট স্থায়ীভাবে বরাদ্দ পাবেন। পরে জেনেছেন, এসব ফ্ল্যাটে ভাড়ায় থাকতে হবে তাদের। আর এখন তাদের বলা হচ্ছে, ভাড়ার সঙ্গে বিভিন্ন সেবার খরচও বহন করতে হবে। মাসে মাসে এত টাকা জোগাড় করা তাদের জন্য কঠিন। বস্তিবাসীদের জন্য যে জায়গায় পাঁচটি ভবন হয়েছে, সেখানেও আগে বস্তি ছিল। ২০১৮ সালের ১৬ জানুয়ারি প্রকল্পটি অনুমোদন দেয়া হয়। যার প্রকল্পের মূল ব্যয় ধরা হয়েছে ১শত ১ কোটি ৭৫ লাখ ৫১ হাজার টাকা। পরে আবারো প্রকল্পের ব্যয় বৃদ্ধি করা হয়। সেখানে ১শত ৪৮ কোটি ৭৭ লাখ ৮৫ হাজার টাকা বৃদ্ধি করা হয়। একই বছরে জুন মাসে এসব ভবনের নির্মাণকাজ শুরু হয়। গত ডিসেম্বরে নির্মাণকাজ শেষ হওয়ার কথা ছিল। করোনার কারণে প্রকল্পের মেয়াদ ও ব্যয় দুটিই বেড়েছে। মেয়াদ বাড়ানো হয় এ বছরের ডিসেম্বর পর্যন্ত। পাঁচটি ভবনে মোট ফ্ল্যাট হবে ৫৩৩টি। এর মধ্যে ৬৫টি ফ্ল্যাট ৭২০ বর্গফুটের (কমন স্পেসসহ)। প্রথম তিনটি ভবনের নির্মাণকাজ শেষের পর ফ্ল্যাটের বরাদ্দ দিয়েছে জাতীয় গৃহায়ণ কর্তৃপক্ষ। ভবন নির্মাণের জন্য বস্তির যেসব বাসিন্দা উচ্ছেদ হয়েছেন, তারা ফ্ল্যাট বরাদ্দের তালিকায় অগ্রাধিকার পেয়েছেন। এ ছাড়া মিরপুরের বিভিন্ন বস্তির বাসিন্দারাও এই তালিকায় রয়েছেন। তালিকা তৈরির কাজে গৃহায়ণ কর্তৃপক্ষ স্থানীয় জনপ্রতিনিধির সহায়তা নিয়েছে। বস্তিবাসীর জন্য ভাড়াভিত্তিক ফ্ল্যাট প্রকল্পের উদ্বোধন ও হস্তান্তর করা হয় ৩ আগস্ট। ওই দিনই ৩০০ বস্তিবাসীর হাতে ফ্ল্যাটের সাময়িক ভাড়াপত্র তুলে দেওয়া হয়। জাতীয় গৃহায়ণ কর্তৃপক্ষ সূত্র বলছে, বস্তিবাসীর জন্য পাঁচটি ভবন নির্মাণে ১শত ৪৮কোটি ৮৫ লাখ টাকা খরচ হচ্ছে।
জাতীয় গৃহায়ণ কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান দেলওয়ার হায়দার ইনকিলাবকে বলেন, বস্তি এলাকায় বেশিরভাগ ব্যক্তিই ভাড়া নিয়ে থাকেন। ওই ভাড়ার সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখেই নতুন ভবনের ভাড়া নির্ধারণ করা হয়েছে। সর্বোচ্চ মহলের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী ভাড়াভিত্তিক ফ্ল্যাট বরাদ্দের জন্য এসব ভবন নির্মাণ করা হয়েছে। স্থায়ী বরাদ্দ দেওয়া হলে দেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে অনেকেই ঢাকায় চলে আসবেন। তাই স্থায়ী বরাদ্দ দেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়নি। ভাড়ায় বরাদ্দ দেওয়ার পরিকল্পনা থেকেই এসব ভবন নির্মাণ করা হচ্ছে। তাই সাময়িক ভাড়াপত্র পাওয়া ব্যক্তিদের মধ্যে কেউ যদি থাকতে না চান, তাহলে বস্তির অন্য বাসিন্দাদের কাছে এসব ফ্ল্যাট ভাড়া দেওয়া হবে।
প্রকল্পের পরিচালক ও তত্ত¡াবধায়ক প্রকৌশলী মোহাম্মদ মোস্তফা কামাল ইনকিলাবকে বলেন, সরকার যে উদ্দেশ্য এগুলো করেছে তা ভালো উদ্যোগ। আসলে রাজধানীতে এখন একটি রুম ভাড়া নিয়ে থাকলে সব কিছু দিতে হয়। আর এখনো সব কিছু কম করা হয়েছে। তারপর বলছে ভাড়া বেশি হচ্ছে। এ অভিযোগ ঠিক না।
জাতীয় গৃহায়ণ কর্তৃপক্ষ ঢাকা অঞ্চল-১ এর নির্বাহী প্রকৌশলী জোয়ারদার তাবেদুন নবী বলেন, ফ্ল্যাটের সাময়িক ভাড়াপত্র যারা পেয়েছেন, এখন তাদের ৩০০ টাকার নন জুডিশিয়াল স্ট্যাম্পে চুক্তিপত্র করতে হবে। এরপরই তাদের কাছে ফ্ল্যাট হস্তান্তর করা হবে। এ ছাড়া ফ্ল্যাটে ওঠার আগে দুই মাসের আগাম ভাড়া দিতে হবে। ভবনের শৃঙ্খলা রক্ষায় ভাড়া বরাদ্দ পাওয়া ব্যক্তিদের অবশ্যই কিছু নিয়ম ও শর্ত মেনে সেখানে বসবাস করতে হবে। এসব শর্ত না মানলে তাদের বরাদ্দ বাতিল হবে। বস্তির বাসিন্দা মো. কাসেম বলেন, বস্তির জায়গাতেও এ রকম বহুতল ভবন তৈরি করা হবে বলে তারা শুনেছেন। প্রথম দফায় ফ্ল্যাট বরাদ্দ পাওয়া ব্যক্তিদের মধ্যে কাসেমও রয়েছেন। তিনি বলেন, ভাড়ায় বস্তিবাসীদের ফ্ল্যাট না দিয়ে একটি মূল্য নির্ধারণ করে কিস্তিতে স্থায়ী বরাদ্দ দিলে অনেকেই আগ্রহী হবেন। তখন কষ্ট করে হলেও কিস্তির টাকা শোধ করা যাবে।



 

Show all comments
  • Mmd Hossain ১২ আগস্ট, ২০২১, ১০:৪৫ এএম says : 0
    আপনি বিশ্বাস করেন আর নাই করেন, এই সমস্ত পাগলরাই বাংলাদেশ কে নিয়ন্ত্রন করে!
    Total Reply(0) Reply
  • Mohammad Oli Ullah ১২ আগস্ট, ২০২১, ১০:৪৬ এএম says : 0
    যারা টাকার অভাবে খেতে পায় না বস্তিতে থাকে তারা ৭ হাজার টাকা খরচ করবে কেমনে?
    Total Reply(0) Reply
  • Lutfur Rahman Babor ১২ আগস্ট, ২০২১, ১০:৫০ এএম says : 0
    টাকা হাতিয়ে নেওয়ার কৌশল
    Total Reply(0) Reply
  • Wahid Soruar ১২ আগস্ট, ২০২১, ১০:৫১ এএম says : 0
    Thanks to daily inqilab for Reporting this concerning issue which will save the public.
    Total Reply(0) Reply
  • Ismail Hossain ১২ আগস্ট, ২০২১, ১০:৫২ এএম says : 0
    আর কত অনিয়ম দেখতে হবে ?
    Total Reply(0) Reply
  • Imran Khan ১২ আগস্ট, ২০২১, ১০:৫২ এএম says : 0
    দুঃখজনক
    Total Reply(0) Reply

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ