বাড়াবাড়ি ও ছাড়াছাড়ির কবলে শবে বরাত-৩
সুনানে ইবনে মাজায় বর্ণিত হয়েছে : হযরত আলী ইবনে আবু তালেব (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ
ভোরের আজানে মানুষের ঘুম ভেঙে যাওয়ার অভিযোগ আমাদের দেশের এক শ্রেণির লোকের মধ্যে যেমন রয়েছে, তেমনি এটা প্রতিবেশী ভারতের কোনো কোনো রাজ্যেও কিছু দিন আগে তীব্র আকার ধারণ করেছিল। তখন সেখানকার মুসলমানগণ আজানবিরোধী তৎপরতার বিরুদ্ধে সোচ্চার হয়ে উঠেছিলেন, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে সে প্রতিবাদ সমালোচনা অনেকের প্রত্যক্ষ করার কথা। আমরা সেসব ঘটনার পুনরাবৃত্তি না করে আজান সম্পর্কে দুই একটি হাদীসের মধ্যে আমাদের আলোচনা সীমিত রাখতে চাই।
কোরআন ও হাদীসে অসংখ্য স্থানে শয়তানের প্ররোচণা-প্রতারণার বিবরণ রয়েছে এবং সেগুলোতে আজানের ক্ষেত্রে শয়তানের পরাজিত ভ‚মিকার বিষয়টাও স্থান লাভ করেছে। আজানের শব্দ শুনে শয়তান দিশেহারা হয়ে কীভাবে পলায়ন করে, সে সম্পর্কে রসূলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘আজানের আওয়াজ শুনে শয়তান পীঠ ফিরিয়ে পলায়ন করতে থাকে, বায়ু (পাদ) নির্গত হতে থাকে। আজানের পর সে আবার প্রত্যাবর্তন করে। এরপর যখন ইকামত বলা হয়, আবার ফিরে আসে এবং নামাজীদের অন্তরে নানা কুমন্ত্রণা দিতে থাকে, যাতে নামাজী ভুলে যায় সে কত রাকাত নামাজ পড়েছে এবং কী পড়েছে।’ (বোখারী মুসলিম)
আজানের শব্দ শুনে শয়তানের পলায়ন করার কারণ এই যে, আজানের শব্দ শুনে সে এ কারণে পালাতে চায় যে, কেয়ামতের দিন আল্লাহর নিকট তাকে যেন সাক্ষী দিতে না হয়। কেননা হুজুর (সা.) বলেছেন, ‘কেয়ামতের দিন জি¦ন, মানব এবং জমিনের প্রতিটি বস্তু- যারাই আজানের শব্দ শুনবে, সবাই সাক্ষী হবে।’
মোহাদ্দেসীন ও উলামায়ে কেরামের বিভিন্ন বর্ণনা হতে জানা যায় যে, শয়তান ও তার লাও লশকর মানুষকে সত্যের পথ হতে দূরে সরিয়ে রাখার জন্য সর্বদা ব্যস্ত এবং কোফর ও বাতিলে লিপ্ত রাখার জন্য সর্ব প্রকারের অস্ত্র ব্যবহার করে থাকে। কাফের মোশরেকের কথা বাদ দিয়ে মুসলমানের ক্ষেত্রে শয়তান এতই তৎপর থাকে যে, তাদের এবাদত বন্দেগিতে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টিতে তার সর্বশক্তি নিয়োগ করে থাকে। তাদের নিদ্রা-শয়ন, ওযু-গোসল, নামাজ এবং নামাজের বাইরে এমন কী জন্ম থেকে মৃত্যু পর্যন্ত সর্বাবস্থায় তাদের পেছনে লেগে থাকার বিষয় কোরআন ও হাদীস হতে জানা যায়।
‘হায়াতুল হায়ওয়ান’ গ্রন্থের বর্ণনা হতে জানা যায়, শয়তানের স্ত্রী (তর্তবা) প্রতিদিন দশটি করে ডিম দেয় এবং প্রত্যেকটি ডিম হতে সত্তরটি শয়তান (পুরুষ ও নারী) বাচ্চা জন্ম নেয়। হজরত মোজাহেদের বর্ণনা হতে জানা যায়, শয়তানের সাত ছেলের মধ্যে ‘লাকীস’ ও ‘ওয়ালহান’ নামাজীর ওযু ও নামাজে গোলমাল সৃষ্টির জন্য নিয়োজিত। অপর বর্ণনা অনুযায়ী, নামাজে সন্দেহের সৃষ্টির জন্য নিয়োজিত শয়তানের নাম ‘খিনজিব’।
ক্বারীদের সর্দার হজরত ওবাই ইবনে কাব (রহ.) বলেন, হুজুর (সা.) বলেছেন, ‘ওযুর এক বিশেষ শয়তান আছে, তার নাম ওয়ালহান। তোমরা পানির প্ররোচণা (ওজুর সময়কার ওয়াসওয়াসা) হতে বেঁচে থাকো।’ (তিরমিজি, ইবনে মাজা প্রভৃতি)
নামাজের শয়তান ‘খিনজিব’ সম্পর্কে হজরত উসমান ইবনে আবিল আছ (রা.) বলেন, ‘আমি রসূলুল্লাহ (সা.) এর নিকট অভিযোগ করি যে, শয়তান আমার ও আমার নামাজের মধ্যে কেরাতে সন্দেহের সৃষ্টি করে। তার থেকে আমি কীভাবে রক্ষা পেতে পারি?’ হুজুর (সা.) বললেন, ‘এ একটি বিশেষ শয়তান, যার নাম খিনজিব। যখন তুমি তাকে অনুভব কর তখন আল্লাহর কাছে তার থেকে পানাহ চাও এবং পাঠ কর আউজুবিল্লাহি মিনাশশাইত্বনির রাজিম এবং তোমার বাম দিকে তিনবার থুতু কর।’ (মুসলিম, নাসায়ী, আহমদ প্রভৃতি)
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।