Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

রামগতি-কমলনগরে খাদ্য ও আশ্রয় সঙ্কট

লক্ষাধিক মানুষের দুর্ভোগ

আমানত উল্যাহ, রামগতি ও কাজী মো. ইউনুছ কমলনগর (লক্ষ্মীপুর ) থেকে : | প্রকাশের সময় : ১০ আগস্ট, ২০২১, ১২:০১ এএম

লক্ষ্মীপুরের রামগতি-কমলনগর উপজেলায় খাদ্য ও আশ্রয়ের সঙ্কটে মানবিক বিপর্যয়ের মধ্যে রয়েছেন প্রায় লক্ষাধিক মানুষ। মেঘনার ভাঙনে প্রায় লক্ষাধিক মানুষের বাড়িঘর মেঘনার পেটে চলে যাওয়ায় তারা আশ্রয় নিয়েছে রাস্তার পাশে কিংবা আত্মীয় স্বজনদের বাড়িতে। কোন কাজ না পেয়ে বিকল্প উপায় হিসেবে অনকেই বেছে নিয়েছে ভিক্ষাবৃত্তি। এক দিকে মেঘনার ভাঙনে বাড়িঘর হারানো, অন্যদিকে দ্রব্যমূল্যের ঊধর্বগতি তাদের এই বিপর্যয়ের দিকে ঠেলে দিয়েছে বলে জানান কয়েকজন ভুক্তভোগী। ভাঙন কবলিত নদী পাড়ের মানুষগুলো বর্তমানে অনাহারে-অর্ধাহারে দিন কাটাচ্ছে। লকডাউনের এসময়ে চলছে নদী পাড়ে চরম খাদ্য সঙ্কট ও বিশুদ্ধ পানির অভাব। তবে সরকার থেকে পাওয়া বরাদ্দ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা নিজেই উপস্থিত থেকে বিতরণ করলেও চাহিদার তুলনায় বরাদ্দ অপ্রতুল বলে জানান স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরা।

এলাকাবাসী জানান, গত কয়েকদিনের টানা বৃষ্টি ও মেঘনার অস্বাভাবিক জোয়ারের পানিতে উপক‚লের কয়েকটি গ্রামে পানি প্রবেশ করে হাজার-হাজার মানুষ এখন পানিবন্দি হয়ে পড়েন। এতে মেঘনা পাড়ে বসবাসকারী এসব মানুষের মধ্যে খাদ্য সঙ্কট ও বিশুদ্ধ পানির সঙ্কট দেখা দিয়েছে। প্রতিদিন সকাল থেকে গভীর রাত পর্যন্ত উপজেলার বিভিন্ন হাট-বাজারে তাদের ভিক্ষা করতে দোখা যায়। উপজেলার হাজিরহাট, করুনানগর, চরলরেন্স, করইতলা, তোরাবগঞ্জ ও ফজুমিয়ারহাট এবং রামগতি উপজেলার আলেকজান্ডার, জমিদারহাট, আশ্রম, চরসেকান্তর, রামদয়াল, হাজিগঞ্জ, বান্দেরহাট, আযাদনগর, বিবিরহাট ও রামগতি বাজারসহ ছোট বড় হাটবাজারগুলোতে ভিক্ষাবৃত্তি বেড়েছে ব্যাপক হারে। অনেকে লোকলজ্জায় এলাকার বাহিরে গিয়ে ঢাকা-চট্টগ্রাম- কুমিল্লাহ-নোয়াখালী ও লক্ষ্মীপুর জেলা শহরসহ বিভিন্ন স্থানে ভিক্ষাবৃত্তিতে নেমে পড়েন। ব্যবসায়ীরা জানান, ভিক্ষুকের সংখ্যা এতো বেশি বেড়ে গেছে, তাদের যন্ত্রণায় অতিষ্ঠ হয়ে উঠেছে তারা।
উপজেলার চরফলকন ইউনিয়নের আব্দুল আউয়ালের কিছু কৃষি জমি ছিলো। মেঘনার ভাঙনে তার এ জমিগুলো নদীতে বিলীন হয়ে যায়। এতে তিনি এখন সর্বহারা হয়ে ভিক্ষা করছেন। প্রতিদিন ভিক্ষা করে ৩০০-৪০০শ’ টাকা আয় করে ওই টাকা দিয়ে তার সংসারের ৬ জন লোকের খাবারের ব্যবস্থা করেন তিনি ।
চরকালকিনি এলাকার নদী পাড়ের নুরুল হক জানান, রাতে বাড়িতে ঘুমিয়ে ছিলেন, হঠাৎ ঘুম থেকে উঠে দেখেন তার বাড়ি ঘরে মেঘনার পানি প্রবেশ করে। মুহূর্তের মধ্যে ঢেউয়ের আঘাতে তার ঘরবাড়ি নদীতে বিলীন হয়ে যায়। তিনি এখন সরকারি রাস্তার পাশে আশ্রয় নিয়েছেন। শুধু আব্দুল আউয়াল ও নুরুল হক নয়, এই ভাবেই জিবন কাটছে রামগতি-কমলনগর উপজেলার উপক‚লের প্রায় লক্ষাধিক মানুষের।
মেঘনার পাড়ে গিয়ে দেখা যায়, অসহায় মানুষগুলোর ছোখে জল। চেহারায় প্রচন্ড হতাশা। তাদের ঘরে সবজি বা তরকারী বলতে কিছুই নেই। নাজমা নামের সর্বহারা একজন জানালেন, তরকারি ছাড়া ভাত খেতে হয়। অন্যদিকে চালের বাড়তি দাম থাকায় এখন ভিক্ষা দিতে চায়না। খাবারের পাশাপাশি বিশুদ্ধ পানির সঙ্কট রয়েছে ভয়াবহ। বিশুদ্ধ পানির অভাবে নদী পাড়ের লোকজনের মধ্যে ডায়রিয়াসহ বিভিন্ন রোগ বেড়ে গেছে। নদী পাড়ে বসবাসকারী এসব মানুষগুলো প্রতিনিয়ত যোদ্ধ করে টিকে আছে। অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে বসবাস ও অপুষ্টিকর খাবার এবং বিশুদ্ধ পানির অভাব এখন চরমে।
স্থানীয় চরকালকিনি ইউপি চেয়ারম্যান মাষ্টার সাইফুল্লাহ বলেন, এ উপজেলাটি মেঘনা নদীর ভাঙন কবলিত। মেঘনার অব্যাহত ভাঙনের ফলে উপজেলার কয়েক হাজার লোক সহায় সম্বল হারিয়ে এখন মানবেতর জীবনযাপন করছেন। তিনি নিজেও প্রতিদিন ২০-৩০ জনকে ভিক্ষা দিচ্ছেন। এছাড়া চাহিদা অনুযায়ী সহায়তা ও বরাদ্দ অপ্রতুল বলে জানান এই চেয়ারম্যান।
উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো. কামরুজ্জামান বলেন, এখানকার প্রধান সমস্যা নদী ভাঙন। নদী ভাঙলে একজন মানুষের আর কিছুই থাকেনা। তখন তিনি হয়ে যায় সর্বহারা। সরকার থেকে প্রাপ্ত বরাদ্দ তিনি ইউপি চেয়ারম্যান ও মেম্বারদের মাধ্যমে নিয়মিত বিতরণ করে আসছেন। সময় পেলে তিনি নদী পাড়ের লোকজনের খোঁজ খবর নিচ্ছেন বলে জানান এই কর্মকর্তা।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: খাদ্য ও আশ্রয় সঙ্কট
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ