Inqilab Logo

রোববার, ১২ মে ২০২৪, ২৯ বৈশাখ ১৪৩১, ০৩ জিলক্বদ ১৪৪৫ হিজরী

নবীগণের ধৈর্য

তানভীর সাকী ভূঁইয়া | প্রকাশের সময় : ৭ আগস্ট, ২০২১, ১২:০০ এএম

মহান আল্লাহর নবী হজরত ইব্রাহিম (আ.) এর বংশধর, তৎকালীন রোমের অধিবাসী, আল্লাহ তায়া’লার ওহী প্রাপ্ত নবী ও প্রিয় বান্দা, ধৈর্যের বে-মিসাল প্রতীক হজরত আইয়ুব (আ.) সুদীর্ঘ আঠারো বছর পর্যন্ত সহিষ্ণুতার চরম পরাকাষ্ঠা দেখিয়ে পরম সাফল্য অর্জন করেছিলেন। তাঁর চরম দুঃখ, কষ্ট এবং ধৈর্য পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হওয়ার বর্ণনা পবিত্র কোরআন শরীফে এসেছে। যা গোটা বিশ্ববাসীর জন্য এক অমূল্য শিক্ষা।

জীবনের পড়ন্ত বিকেলে উপনীত হযরত আইয়ূব (আ.) রোগাক্রান্ত হয়ে মহান আল্লাহর পক্ষ থেকে এমন এক কঠিন পরীক্ষার সম্মুখীন হন যেখানে তিনি সন্তান-সন্ততি, আত্মীয়-স্বজন, দাস-দাসী, বিশাল সম্পত্তিসহ সবকিছু হারান। এক পর্যায়ে জীবনধারণের জন্য শহরের বাইরে এক ছোট্ট কুটিরে আশ্রয় নেন। এই পরীক্ষাকালে স্ত্রী রাহিমাই ছিলেন তাঁর একমাত্র সঙ্গী।
কোরআনের ভাষায়, ‘এবং স্মরণ কর, আইয়ুবের কথা, যখন সে তার প্রতিপালককে আহ্বান করে বলেছিল, আমি দুঃখ-কষ্টে পড়েছি। তুমি তো দয়ালুদের মধ্যে সর্বশ্রেষ্ঠ দয়ালু। তখন আমি তার ডাকে সাড়া দিলাম। তার দুঃখ-কষ্ট দূরীভ‚ত করে দিলাম, তাকে তার পরিবার-পরিজন ফিরিয়ে দিলাম এবং তাদের সঙ্গে তাদের মতো আরো দিয়েছিলাম, আমার বিশেষ রহমতরূপে এবং ইবাদতকারীদের জন্যে উপদেশস্বরূপ।’ (সূরা আম্বিয়া, আয়াত : ৮৩-৮৪)

সামান্য কষ্ট হলে, বিপদ আসলেই আমরা ধৈর্যহারা হয়ে পড়ি। আশ্রয় নেই মিথ্যার, চতুরতার। আল্লাহর রহমতের ওপর আস্থা হারিয়ে হয়ে যাই নিরাশ। অথচ সুদীর্ঘ আঠারো বছর যাবত বিপদাপদ, দুঃখ, কষ্ট, মুসীবতে আবদ্ধ থেকেও হজরত আইয়ুব (আ.) কখনো ধৈর্যচ্যুত হননি। কঠিন পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হওয়ার জন্য সিজদায় লুটিয়ে বা-সবর মশগুল থেকেছেন মহান আল্লাহর জিকিরে।

মহান আল্লাহ রাব্বুল আলামিন বলেন, ‘নিঃসন্দেহে আমি তাকে (আইয়ুবকে) ধৈর্যশীল পেয়েছি; কত উত্তম বান্দা ছিল সে; নিশ্চয় সে ছিল প্রত্যাবর্তনশীল।’ (সূরা সোয়াদ, আয়াত : ৪৪)। অপরদিকে মহান আল্লাহ তাঁর রহমত থেকে নিরাশ না হওয়ার নির্দেশ দিয়ে বলেন, ‘তোমরা আল্লাহর রহমত থেকে নিরাশ হয়ো না। নিশ্চয়ই আল্লাহ রহমত থেকে কেবল অবিশ্বাসী স¤প্রদায়ই নিরাশ হয়।’ (সুরা ইউসুফ, আয়াত: ৮৭)।
সুরা যুমারের ৫৩ নং আয়াতে আরো বলেন, ‘বলুন, হে আমার বান্দাগণ! যারা নিজেদের ওপর জুলুম করেছ; তোমরা আল্লাহর রহমত থেকে নিরাশ হইও না। নিশ্চয় আল্লাহ সব গোনাহ মাফ করেন। তিনি ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু।’

আল্লাহর অপর এক প্রিয় বান্দা, নবী হজরত ইউনুস (আ.) কেও সামান্য অধৈর্য হওয়ার কারণে রাতের আঁধারে উত্তাল সমুদ্রবক্ষে হিংস্র মৎস্যের উদরে যেতে হয়েছিল। এ প্রসঙ্গ উল্লেখ করে মহানবী হজরত মুহাম্মদ (সা.)-কে উদ্দেশ্য করে পবিত্র কোরআনে আল্লাহ বলেন, ‘অতএব, তুমি ধৈর্য ধারণ করো তোমার প্রতিপালকের নির্দেশের অপেক্ষায়, তুমি মৎস্য-সহচর (ইউনুস (আ.)-এর ন্যায় অধৈর্য হয়ো না, সে বিষাদাচ্ছন্ন অবস্থায় কাতর প্রার্থনা করেছিল আপনি ব্যতীত কোনো মাবুদ নাই, আপনি পবিত্র; নিশ্চয় আমি জালিমদের অন্তর্ভুক্ত। তখন আমি তার ডাকে সাড়া দিলাম এবং তাকে দুশ্চিন্তা হতে মুক্ত করলাম। এভাবেই আমি সৎকর্মশীলদের মুক্তি দিয়ে থাকি।’ (সূরা কলম, আয়াত: ৪৮-৫০)।

ধৈর্য বা সবরের প্রয়োজনীয়তা বুঝার জন্য পবিত্র কোরআনের সূরা কাহাফের (৬৫ - ৮২ নং) আয়াতে বর্ণিত হজরত মূসা (আ.) ও খিজির (আ.)-এর ঐতিহাসিক শিক্ষণীয় কাহিনী বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য। কারণ, ইলম অর্জনসহ যেকোনো কাজে সবর এক আবশ্যকীয় গুণ। কেননা ধৈর্যের পরীক্ষা সম্পর্কে আল্লাহ বলেন, ‘আমি অবশ্যই তোমাদেরকে পরীক্ষা করব যতক্ষণ না আমি তোমাদের মধ্যে মুজাহিদ ও ধৈর্যশীলদেরকে জেনে নেই এবং আমি তোমাদের অবস্থা পরীক্ষা করি।’ (সূরা মুহাম্মাদ, আয়াত : ৩১)। অন্যত্র বলেন, ‘অবশ্যই যে ধৈর্য ধারণ করে এবং ক্ষমা করে, নিশ্চয় তা দৃঢ়-সংকল্পের কাজ।’ (সূরা শুরা, আয়াত: ৪৩)।

ওহুদ যুদ্ধ এক অবিস্মরণীয় ইতিহাস। যা হিজরতের পঞ্চম বছরে শাওয়াল মাসের ১৫ তারিখে মদিনা মুনাওয়ারা থেকে তিন মাইল উত্তরে অবস্থিত ওহুদ উপত্যকায় মুসলিম ও কোরাইশদের মাঝে সংগঠিত হয়েছিল। যুদ্ধ শুরু হওয়ার পূর্বে মুসলিম বাহিনীর সেনাপতি মহানবী (সা.) ওহুদ পাহাড়ের পাদদেশে ৫০ জনের একদল তিরন্দাজকে গিরিপথ পাহারায় নিযুক্ত করেন এবং বলেন, ‘আমাদের জয়-পরাজয় যা-ই হোক, তোমরা এই স্থান পরিত্যাগ করবে না’।
ফলশ্রæতিতে, কোরাইশ অশ্বারোহী বাহিনী দুই-দুবার গিরিপথে প্রবেশের চেষ্টা করে ব্যর্থ হয়ে ফিরে যায়। কিন্তু বে-সবর মুসলিমগণ মুসলিম বাহিনীর সেনাপতি মহানবী (সা.)-এর নির্দেশ ভুলে গিয়ে গনিমত সংগ্রহে প্রবৃত্ত হয়। গিরিরক্ষী তিরন্দাজদের ১২ জন বাদে বাকি ৩৮ জন যুদ্ধ শেষ মনে করে স্থান ত্যাগ করে মশগুল হয় সম্পদ সঞ্চয়ে। ঠিক এই সময়ে সুযোগের সদ্ব্যবহার করে কোরাইশ বাহিনী।

গিরিপথ অতিক্রম করে মুসলমানদের পেছন দিক থেকে আক্রমণ করে ছত্রভঙ্গ করে দেয়। অনাকাক্সিক্ষত এই পরিস্থিতিতে হযরত মুসআব ইবনে উমায়ের (রা.) ও নবীজির চাচা হযরত হামজা (রা.) সহ অনেক মুসলমান শহীদ হন। তাই, ওহুদের প্রান্তরে নবীজির নির্দেশ উপেক্ষাকারী অধৈর্যশীলদের ভুলের মাশুল দিতে হয় গোটা মুসলিম বাহিনীকে। শহীদ হয় প্রিয় নবীজীর দাঁত মুবারক।



 

Show all comments
  • মোঃ নাজমুল ইসলাম ৭ আগস্ট, ২০২১, ১:০৯ এএম says : 0
    পূর্ববর্তী নবী-রাসূলগণের মধ্যে 'আইয়ুব (আ)' এর ধৈর্য পরীক্ষা ছিলো একটু ভিন্ন । তাকে ধন-সম্পদ, সন্তান-সন্তনি হারানো ও বিভিন্ন রোগ প্রদানে আল্লাহ সুবাহানওয়া তা'আলা পরীক্ষা করেছিলেন । আর পরীক্ষার মাত্রা এমন হয়েছিল যে তাকে ছেড়ে তার স্ত্রীও চলে যাওয়ার ইচ্ছা পোষণ করতেন ।
    Total Reply(0) Reply
  • Odhora Shopno ৭ আগস্ট, ২০২১, ১:০৯ এএম says : 0
    ইয়া আল্লাহ্ আমাদের আইয়ুব নবীর মত ধর্য্য দাও ।
    Total Reply(0) Reply
  • Gazi Samol ৭ আগস্ট, ২০২১, ১:০৯ এএম says : 0
    দুঃখ যদি তুমি দাও হে প্রভু শক্তি দিও মোরে সহিবার
    Total Reply(0) Reply
  • M NI Mithu ৭ আগস্ট, ২০২১, ১:০৯ এএম says : 0
    সুবহানআল্লাহ। মহান আল্লাহ পাক রব্বুল আলামিন আমাকে ধৈর্য্য দান করুন, আমিন।
    Total Reply(0) Reply
  • Muhammad Azad Rahman ৭ আগস্ট, ২০২১, ১:১০ এএম says : 0
    আল্লাহ যেন সকল মুছলিমকে ধৈর্য ধারন করার তৌফিক দান করেন ।
    Total Reply(0) Reply
  • Rabiul Islam Rubel ৭ আগস্ট, ২০২১, ১:১০ এএম says : 0
    এটা আল্লাহর একটা রহমত। যা সবাইকে তিনি দেন না।
    Total Reply(0) Reply
  • মোহাম্মদ আব্দুছ ছালাম ভূঁইয়া ৭ আগস্ট, ২০২১, ১২:১২ পিএম says : 0
    ধৈর্যই কার্য
    Total Reply(0) Reply
  • Md. Abdul Matin ৭ আগস্ট, ২০২১, ৪:০৮ পিএম says : 0
    প্রকৃতপক্ষে হযরত আইয়ূব (আঃ) ের জীবনে কী ঘটেছিল, কী কষ্ট তাঁর ছিল, কী ভোগান্তি ছিল সে সম্পর্কে কথিকায় বিস্তারিত কিছুই আসে নি।
    Total Reply(0) Reply
  • Mohammed Siddiqui ৮ আগস্ট, ২০২১, ৫:২৮ এএম says : 0
    Read: Allahumma inni as alukal a'fiah. Meaning: O Allah give us ease.
    Total Reply(0) Reply
  • MD.SABBIR HOSSAIN ৮ আগস্ট, ২০২১, ৭:৫৯ পিএম says : 0
    মুসলিম বাহিনীর সেনাপতি মহানবী (সা.) ওহুদ পাহাড়ের পাদদেশে ৫০ জনের একদল তিরন্দাজকে গিরিপথ পাহারায় নিযুক্ত করেন এবং বলেন, ‘আমাদের জয়-পরাজয় যা-ই হোক, তোমরা এই স্থান পরিত্যাগ করবে না’। সুবহানআল্লাহ। মহান আল্লাহ পাক রব্বুল আলামিন আমাকে ধৈর্য্য দান করুন, আমিন।
    Total Reply(0) Reply

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: ইসলাম

৩ মার্চ, ২০২৩
২ মার্চ, ২০২৩
১ মার্চ, ২০২৩
২৮ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩
২৬ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩

আরও
আরও পড়ুন