পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
বজ্রপাতে মৃত্যুর ঘটনা উদ্বেগজনক হারে বাড়ছে। প্রতিদিনই দেশের কোনো না কোনো জেলায় বজ্রপাতে মৃত্যু হওয়ার খবর আসছে। বিশ্বের বেশি বজ্রপাত সংঘটিত হওয়া দেশগুলোর মধ্যে ভেনিজুয়েলার মারাকাইবো হ্রদ সবার ওপরে। রয়েছে আফ্রিকার কঙ্গো ও ল্যাটিন আমেরিকার দেশ ব্রাজিল। এ তালিকায় ঝুঁকিপূর্ণ হিসেবে বাংলাদেশর নামও রয়েছে। ডিজাস্টার ফোরামের গবেষণা সহযোগী রাফায়েত ইসলাম জানান, চলতি বছরে গতকাল পর্যন্ত দেশে বজ্রপাতে মোট ২৭২ জনের মৃত্যু হয়েছে। এর মধ্যে শিশু ৫৪ জন, নারী ৩৯ এবং পুরুষ ১৭৯ জন।
বিশেষজ্ঞদের মতে, জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে বাড়ছে তাপমাত্রা, এর ফলে বেড়ে গেছে বজ্রমেঘ। দেশে উঁচু গাছ কমছে দিন দিন। এতে বজ্রপাত সরাসরি ফসলের মাঠ বা খোলা জায়গায় থাকা মানুষের ওপর আঘাত হানছে। এ ছাড়া সচেতন না হওয়ায় দুর্যোগের সময় মানুষ এখনো নিরাপদ স্থানে থাকছে না। এসব কারণেই দেশে বজ্রপাত ও মৃত্যুর সংখ্যা বেড়েই চলছে। বজ্রপাতে এ বছর সবচেয়ে বেশি মারা গেছে চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলায় (৩২ জন)। এছাড়া সিরাজগঞ্জ জেলায় ১৯ জন এবং জামালপুরে ১৬, নেত্রোকোনা ১৫, চট্টগ্রামে ১২ এবং কিশোরগঞ্জ ১০ জন মারা গেছে। সবশেষ গতকাল বুধবার চাঁপাইনবাবগঞ্জের শিবগঞ্জ উপজেলায় বজ্রপাতে ১৭ জন নিহত হয়েছে। এর মধ্যে ১২ জন পুরুষ, ৫ জন নারী।
ডিজাস্টার ফোরামের তথ্য বিশ্লেষণে দেখা যায়, দেশে ২০১১ সালের পর থেকে বজ্রপাতে মৃত্যুর প্রবণতা ক্রমাগতভাবেই বেড়ে চলছে। এর মধ্যে ২০১৫ সালে ৯৯ জন, ২০১৬ সালে ৩৫১, ২০১৭ সালে ২৬২, ২০১৮ সালে ৩৫৯, ২০১৯ সালে ১৬৮ জন। এছাড়া ২০২০ সালে বজ্রপাতে মারা গেছে ৩৮০ জন। এর মধ্যে শিশু ৮০, নারী ২৯, এবং পুরুষ ২৭১ জন।
দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা অধিদফতর, বুয়েট, দুর্যোগ ফোরামসহ সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানের তথ্য মতে, গত এক দশকে (২০১০ সাল থেকে) দুই হাজারের বেশি মানুষ বজ্রপাতে মারা গেছেন। এছাড়া আহত হয়েছেন কয়েক হাজার নারী-পুরুষ। এর মধ্যে বেশিরভাগই মাঠে কাজ করতে গিয়ে মারা গেছেন। আবহাওয়াবিদরা জানান, ভারত, বাংলাদেশ, পাকিস্তান, নেপাল এ অঞ্চলে প্রাকৃতিকভাবেই বেশি বজ্রপাত হয়। কেননা, এই অঞ্চলে বজ্রমেঘের সৃষ্টিই হয় বেশি। বজ্রমেঘ বেশি তৈরি হওয়ার কারণও প্রাকৃতিক। পৃথিবীর আদিকাল থেকেই বজ্রপাত ছিল। তবে মৃত্যুর হার স¤প্রতি বেড়েছে বলেই মনে করছেন আবহাওয়াবিদরা। দেশে সবচেয়ে বেশি বজ্রপাত হয় মার্চ থেকে জুন পর্যন্ত। তবে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত বজ্রপাতের ঘটনা ঘটে।
ফিনল্যান্ডের বজ্রপাতবিষয়ক গবেষণা সংস্থা ভাইসালার তথ্য মতে, দেশে বজ্রপাতে মৃত্যুর ৭০ শতাংশ ঘটনা ঘটে মাঠে-ঘাটে কৃষিকাজ করার সময়। এ ছাড়া বাড়ি ফেরার পথে সাড়ে ১৪ শতাংশ এবং গোসল করা ও মাছ ধরার সময় ১৩ শতাংশের মৃত্যুর ঘটনা ঘটে। আন্তর্জাতিক গবেষণা মতে, আমাদের প্রতি বর্গকিলোমিটারে অন্তত ৪০টি বজ্রপাত হয়। বাংলাদেশ পৃথিবীর বজ্রপাতপ্রবণ অঞ্চলের মধ্যে অন্যতম ঝুঁকিপূর্ণ দেশ। তাই প্রযুক্তি ব্যবহার করে বজ্রপাতে মৃত্যুর হার কমিয়ে আনার কোনো বিকল্প নেই।
এদিকে, বিশ্বে সবচেয়ে বেশি বজ্রপাতের ঘটনা ঘটে ভেনিজুয়েলা ও ব্রাজিলে। সেখানকার চেয়েও বাংলাদেশে মৃতের সংখ্যা বেশি। এর কারণ হিসেবে বিশেষজ্ঞরা অসচেতনতাকেই বেশি দায়ী করছেন। তারা বলেন, কোন পরিস্থিতিতে ঘরে থাকতে হবে, সেটা সাধারণ মানুষ জানে না। জানলেও অনেকে মেনে চলে না। তবে থাইল্যান্ডে তালগাছ লাগিয়ে এবং ভিয়েতনামে উঁচু টাওয়ারের মাধ্যমে বজ্রপাতে মৃতের সংখ্যা কমিয়েছে। এ ছাড়া অনেক দেশই বজ্রপাত নিরোধক দন্ড ব্যবহার করছে। অথচ বাংলাদেশে প্রতিবছর বজ্রপাতে প্রাণহানির সংখ্যা বাড়ছে। সরকার ২০১৬ সালে একে প্রাকৃতিক দুর্যোগ হিসেবে ঘোষণা দিলেও তেমন কোনো উদ্যোগ দৃশ্যমান নয়।
জানা গেছে, আগে সাধারণত প্রতি বাড়িতেই তালগাছ, নারিকেলগাছ, সুপারিগাছ থাকত। এ ছাড়া মাঠের মধ্যেও তালগাছ ও বটগাছ থাকত। আর বজ্রপাত যেহেতু ভূপৃষ্ঠের উঁচু জায়গায় পড়ে থাকে, তাই গাছ মানুষকে রক্ষা করত। কিন্তু এ ধরনের উঁচু গাছের সংখ্যা কমে যাওয়ায় বজ্রপাতে মানুষের মৃত্যুর সংখ্যা বাড়ছে। এ প্রসঙ্গে আবহাওয়াবিদ বজলুর রশীদ বলেন, বজ্রপাত প্রথমেই খোঁজে উঁচু গাছ। সেটি না পাওয়ায় মাঠ, হাওর বা খোলা জায়গায় যদি কোনো মানুষ থাকে তাহলে সে-ই থাকে সবচেয়ে উঁচুতে। তাই তাদের ওপরই বাজ পড়ে। এ ছাড়া জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে তাপমাত্রা বাড়ছে। এতে বজ্র মেঘ তৈরির প্রবণতা বেড়ে গেছে। ফলে আগের চেয়ে বজ্র পাতের সংখ্যা বেড়েছে। গত ৩০ বছরের চেয়ে তাপমাত্রা এক থেকে দেড় ডিগ্রি বেড়েছে।
বজ্রপাত থেকে রক্ষায় এই আবহাওয়াবিদ বেশ কিছু পরামর্শ দেন। তিনি বলেন, প্রথমত মানুষকে সচেতন হতে হবে। বিশেষ করে এপ্রিল, মে ও জুন মাসে বেশি বজ্রপাত হয়। এই সময়ে ঘরের বাইরে বের হওয়ার আগে আবহাওয়া পরিস্থিতি দেখতে হবে। আর বজ্রপাত শুরু হওয়ার আগে কিছুটা বোঝা যায়। তখন নিরাপদ জায়গায় যেতে হবে। সরকারের পক্ষ থেকে বজ্র নিরোধক দন্ড বসাতে হবে। সবাইকে তাল, নারিকেল ও সুপারিগাছের মতো উঁচু গাছ লাগাতে হবে। আর বজ্রপাতের সময় গাছের নিচে থাকাটাও নিরাপদ নয়। অন্তত গাছের গোড়া থেকে ১০ হাত দূরে উপুড় হয়ে থাকতে হবে। এ সময় ব্যবহার করতে হবে রাবারের স্যান্ডেল।’
দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, বজ্রপাতের আগাম সংকেত জানতে এরই মধ্যে দেশের আট স্থানে বসানো হয়েছে লাইটেনিং ডিটেকটিভ সেন্সর। আটটি সেন্সরে উঠে আসবে পুরো দেশের চিত্র। প্রতিটি সেন্সর থেকে এক হাজার কিলোমিটার পর্যন্ত তদারকি করা যাবে। এক মৌসুমে (এপ্রিল থেকে জুন) দেশে কতবার বিদ্যুৎ চমকায় এবং বজ্রপাত হয় সেটিও সংরক্ষণ করা হবে। গেল কয়েক বছর ধরেই সেগুলো পরীক্ষামূলকভাবে চলছে। এর আগে বজ্রপাতে মৃত্যু কমাতে সারা দেশে তালগাছ লাগানোর উদ্যোগ নেয় দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা অধিদপ্তর। কিন্তু সে উদ্যোগেও গতি নেই। কর্মকর্তারা জানান, বিপুলসংখ্যক গাছ পেতে কিছুটা বেগ পেতে হচ্ছে। এরই মধ্যে ২৮ লাখ বীজ লাগানো হয়েছে। তবে তালগাছ বড় হতে কিছুটা সময় লাগে। অধিদপ্তর বলছে, গাছ লাগানোর যে উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে, সেই প্রক্রিয়া শুরু হতে আরো কিছুটা সময় লাগবে।
এ প্রসঙ্গে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আবহাওয়াবিজ্ঞান বিভাগের চেয়ারপারসন অধ্যাপক ড. তৌহিদা রশীদ বলেন, বজ্রপাত থেকে বাঁচতে সচেতনতাই হচ্ছে আসল। বজ্রপাতের আগের ও পরের মুহূর্তগুলো বুঝতে হবে। সরকারের পক্ষ থেকে এর পূর্বাভাস কৃষক পর্যন্ত পৌঁছাতে হবে। বজ্রপাতের সময় ঘরে থাকতে হবে। এ ছাড়া অনেক দেশই বজ্রপাত থেকে বাঁচতে প্রযুক্তি ব্যবহার করছে। বজ্রপাতের ৩০ মিনিট আগে সাইরেন বাজাচ্ছে। বজ্রপাত নিরোধক দন্ড ব্যবহার করছে। আমাদেরও সেসব ব্যবস্থা নিতে হবে।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।