Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

নির্বাচন কমিশন সংক্রান্ত আইন করতে হবে

প্রকাশের সময় : ১ অক্টোবর, ২০১৬, ১২:০০ এএম

মুনশী আবদুল মাননান
জাতীয় সংসদ নির্বাচন নিয়ে বিভিন্ন মহলে কথাবার্তা শুরু হয়েছে। বিধি মোতাবেক পরবর্তী নির্বাচন হওয়ার কথা ২০১৯ সালে। কারো কারো ধারণা, নির্বাচন তার আগেও হতে পারে। সেটা মধ্যবর্তী নির্বাচন। আবার কেউ কেউ মনে করেন, যেহেতু ২০১৯ সালের জানুয়ারির মধ্যেই নির্বাচন হওয়ার কথা, সেই হিসেবে নির্বাচন খুব দূরে নয়। কাজেই, মধ্যবর্তী নির্বাচনের প্রয়োজন কি! তবে সরকার যদি চায় নির্ধারিত সময়ের আগেও নির্বাচন হতে পারে। আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ আশরাফুল ইসলামের অভিমত : নির্বাচন কবে হবে তা সংবিধান অনুসারে প্রধানমন্ত্রীর সিদ্ধান্তের ওপরই নির্ভর করে। মধ্যবর্তী নির্বাচনের সম্ভাবনা সম্পর্কিত এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেছেন ঃ দেশের সংবিধান অনুযায়ী প্রেসিডেন্ট এবং প্রধানমন্ত্রী যদি মনে করেন সেটা হবে, না হয় হবে না। সৈয়দ আশরাফুল ইসলামের বক্তব্য থেকে স্পষ্ট ধারণা পাওয়া না গেলেও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা স্বয়ং বিষয়টি খোলাসা করে দিয়েছেন। বলেছেন ঃ মধ্যবর্তী নির্বাচনের কোনো সম্ভাবনা নেই। এ কথা যদি ঠিক থাকে তবে মধ্যবর্তী নির্বাচনের কোনো সম্ভাবনা নেই। নির্বাচন হলে একাদশতম নির্বাচনই হবে।
নির্বাচন নিয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যেও এক ধরনের নড়াচড়া লক্ষ্যণীয় হয়ে উঠেছে। ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ নির্বাচনের জন্য প্রস্তুতিমূলক কাজ শুরু করেছে। নেতাকর্মীদের প্রস্তুত করার পাশাপাশি উন্নয়নমূলক কাজ দ্রুত শেষ করা ও সম্ভাব্য প্রার্থীদের জনসম্পৃক্ততা বাড়ানোর পদক্ষেপ নিয়েছে। আসন্ন জাতীয় কাউন্সিলে নির্বাচন সংক্রান্ত দিকনির্দেশনা আসতে পারে বলে অনেকে মনে করছেন। ‘গৃহপালিত বিরোধী দল’ হিসেবে অভিহিত জাতীয় পার্টি ঈদুল আজহার প্রাক্কালে নির্বাচনী প্রচারণা শুরু করার ঘোষণা দিয়েছে এবং কবে, কোথা থেকে এই প্রচারণা শুরু হবে তাও জানিয়ে দিয়েছে। বোঝা যায়, নির্বাচনের প্রস্তুতিমূলক কাজে দলটি এগিয়ে রয়েছে। বিএনপিসহ বিরোধী দলগুলোর নির্বাচনের ব্যাপারে এবং এ সম্পর্কিত প্রস্তুতির বিষয়ে তেমন কিছু জানা যায়নি। শোনা যাচ্ছে, বিএনপিও তলে তলে কিছু কাজ করছে। সম্ভাব্য প্রার্থী কারা হতে পারেন তাদের ইতি ও নেতিবাচক দিকগুলো খতিয়ে দেখা হচ্ছে।
এসব থেকে বলা যায়, নির্বাচন নিয়ে সব দলের মধ্যেই এক ধরনের সক্রিয়তা দেখা দিয়েছে, যা আগামীতে স্বাভাবিকভাবেই আরও বাড়তে পারে। এটা অবশ্য পরের কথা। এ মুহূর্তে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো, নতুন নির্বাচন কমিশন গঠন। অর্থাৎ প্রধান নির্বাচন কমিশনারসহ অন্যান্য নির্বাচন কমিশনার নিয়োগ। বর্তমান নির্বাচন কমিশনের মেয়াদ আগামী ফেব্রুয়ারিতে শেষ হবে। তার আগেই নির্বাচন কমিশনের প্রধানসহ নির্বাচন কমিশনারদের নিয়োগ দিয়ে নতুন নির্বাচন কমিশন গঠন করতে হবে। এ নিয়েও বিভিন্ন মহলে আলাপ-আলোচনা শুরু হয়েছে।
গণতান্ত্রিক ব্যবস্থায় নির্বাচন কমিশনের গুরুত্ব বিশদভাবে বলার অপেক্ষা রাখে না। নির্বাচন কমিশনের দায়িত্ব জাতীয় সংসদসহ বিভিন্ন নির্বাচন পরিচালনা। নির্বাচন কমিশনের ওপরই নির্বাচনের ভালো-মন্দ নির্ভর করে। অংশগ্রহণমূলক অবাধ, সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ ও শান্তিপূর্ণ নির্বাচন নিশ্চিত করা নির্বাচন কমিশনের দায়িত্ব। গণতান্ত্রিক ব্যবস্থাকে এগিয়ে নেয়া ও বিকশিত করার ক্ষেত্রে নির্বাচন কমিশনের ভূমিকা অপরিসীম ও গুরুত্বপূর্ণ। এ জন্য যিনি হবেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার এবং তার সহকর্মী অন্যান্য কমিশনার, তাদের সৎ, যোগ্য, দক্ষ, সাহসী ও সর্বমহলে গ্রহণযোগ্য হতে হবে। তাদের এই গুণাবলি থাকলেই কেবল নির্বাচন যথাযথ ও কাক্সিক্ষত হতে পারে। অংশগ্রহণমূলক, অবাধ, সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ ও শান্তিপূর্ণ নির্বাচন উপহার দেয়ার জন্য যে ধরনের আইন, বিধি, সুযোগ ও সহায়তা প্রয়োজন, তার সবকিছুই নিশ্চিত করা হয়েছে। তারপরও বিভিন্ন সময় নির্বাচন নিয়ে, নির্বাচন কমিশনের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। নির্বাচন কমিশন সততা, দক্ষতা, যোগ্যতা, নিরপেক্ষতা ও সাহসিকতার পরিচয় যখন দিতে পারেনি তখনই এ প্রশ্ন উঠেছে। নির্বাচন প্রশ্নবিদ্ধ ও গ্রহণযোগ্য বলে চিহ্নিত ও বিবেচিত হয়েছে। এর কারণ নিহিত রয়েছে প্রধান নির্বাচন কমিশনার ও অন্যান্য নির্বাচন কমিশনার নিয়োগের মধ্যে।
সংবিধানের ১১৮ নম্বর অনুচ্ছেদে বলা আছে : ‘বাংলাদেশে একটি নির্বাচন কমিশন থাকিবে এবং উক্ত বিষয়ে প্রণীত কোনো আইনের বিধানাবলী সাপেক্ষে রাষ্ট্রপতি প্রধান নির্বাচন কমিশনারকে ও অন্যান্য নির্বাচন কমিশনারকে নিয়োগদান করিবেন।’ এখানে স্পষ্টতই জানানো হয়েছে, রাষ্ট্রপতি প্রণীত আইনের বিধানাবলী সাপেক্ষে প্রধান নির্বাচন কমিশনার ও অন্যান্য নির্বাচন কমিশনারকে নিয়োগ দান করবেন। এ ক্ষেত্রে বিস্ময়কর বাস্তবতা হলো, গত ৪৪ বছরে নির্বাচন কমিশন সংক্রান্ত কোনো আইন প্রণীত হয়নি। অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ও জরুরি এই আইনটি না হওয়ার কারণে ক্ষমতাসীনদের মর্জি মোতাবেক নির্বাচন কমিশন গঠিত হচ্ছে। প্রধান নির্বাচন কমিশনার ও অন্যান্য নির্বাচন কমিশনার হিসেবে যারাই নিয়োগ পাচ্ছেন ব্যতিক্রম বাদে তারা সবাই ক্ষমতাসীনদের অনুগত বা দলভুক্ত ব্যক্তি হিসেবেই নিয়োগ পাচ্ছেন। অনেক ক্ষেত্রে তাদের সততা, দক্ষতা, যোগ্যতা নিয়েও প্রশ্ন থেকে যাচ্ছে। এমন ব্যক্তিদের নিয়ে গঠিত নির্বাচন কমিশন কতটা সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন উপহার দিতে পারে, সহজেই অনুমেয়। এ কারণে প্রতি সংসদ নির্বাচনের আগেই নির্বাচন কমিশন গঠন নিয়ে বাদ-বিতর্কের অবতারণা হচ্ছে। অথচ এর কোনোই অবকাশ থাকত না যদি নির্বাচন কমিশন সম্পর্কিত সংবিধান বর্ণিত আইন প্রণীত হতো। এটাও কম বিস্ময়ের ব্যাপার নয় যে, দেশের বিভিন্ন রাজনৈতিক দল ক্ষমতাসীন হলেও কোনো দলই এই আইনটি প্রণয়নের উদ্যোগ নেয়নি। অপ্রীতিকর হলেও বলতে হচ্ছে, আইন না থাকার যে সুবিধা তা সব দলই নিতে চায়। আর নিতে চায় বলেই আইনের বিষয়টি বরাবর তারা এড়িয়ে গেছে।
স্বাধীনতার পর থেকে এ পর্যন্ত জনগণের প্রত্যক্ষ ভোটে দু’টি প্রেসিডেন্ট নির্বাচনসহ ১০টি জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছে। যেহেতু নির্বাচন কমিশন সংক্রান্ত কোনো আইন আজ পর্যন্ত হয়নি, সে কারণে অধিকাংশ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছে দলীয় সরকারের অধীনে এবং দলীয় সরকারের গঠন করা নির্বাচন কমিশনের মাধ্যমে। দেখা গেছে, দলীয় সরকারের অধীনে অনুষ্ঠিত দু’টি প্রেসিডেন্ট নির্বাচনেই সরকার দলীয় মনোনীত প্রার্থী প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হয়েছেন। একইভাবে দলীয় সরকারের অধীনে অনুষ্ঠিত ছয়টি সংসদ নির্বাচনে ক্ষমতাসীন দলই বিজয়ী হয়েছে। বাকী চারটি সংসদ নির্বাচনের একটি অনুষ্ঠিত হয়েছে অস্থায়ী সরকারের অধীনে এবং তিনটি অনুষ্ঠিত হয়েছে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে। এই চারটি নির্বাচনের কোনোটিতেই অব্যবহিত পূর্বের ক্ষমতাসীন দল বিজয়ী হতে পারেনি। অস্থায়ী ও তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে অনুষ্ঠিত চারটি নির্বাচনের শেষেরটিতে নির্বাচন কমিশনের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন উঠলেও অন্য তিনটি নির্বাচন ও নির্বাচন কমিশনের ভূমিকা নিয়ে তেমন কোনো প্রশ্ন ওঠেনি। এ থেকে স্পষ্টই প্রতীয়মান হয়, ক্ষমতাসীন দলের অধীনে নয় এবং ক্ষমতাসীন দলের নিয়োগ প্রাপ্ত নয়Ñ এমন নির্বাচন কমিশনের পরিচালনায় অনুষ্ঠিত নির্বাচন তুলনামূলকভাবে সুষ্ঠু, অবাধ, নিরপেক্ষ ও গ্রহণযোগ্য হয়। স্মরণ করা যেতে পারে, ক্ষমতাসীন দলের অধীনে এবং ক্ষমতাসীন দলের নিয়োগকৃত নির্বাচন কমিশনের পরিচালনায় অনুষ্ঠিত নির্বাচনের সুষ্ঠুতা, অবাধতা, নিরপেক্ষতা ও গ্রহণযোগ্যতা নিয়ে ব্যাপক প্রশ্ন থাকার প্রেক্ষাপটেই নির্বাচনকালীন সরকার হিসেবে তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা প্রবর্তন ও সংবিধানে অন্তর্ভুক্ত করা হয়। বিগত মহাজোট সরকারের ক্ষমতাকালে সংবিধান থেকে তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা উঠিয়ে দেয়া হয়। অতঃপর পুনরায় ক্ষমতাসীন দলের অধীনে এবং ক্ষমতাসীন দলের মনোনীত ও নিয়োগকৃত নির্বাচন কমিশনের পরিচালনায় নির্বাচন অনুষ্ঠানের ব্যবস্থা ফিরে আসে। এখনো এই ব্যবস্থাই বহাল আছে।
২০১২ সালের ফেব্রুয়ারিতে যখন নতুন নির্বাচন কমিশন গঠনের প্রয়োজনীয়তা দেখা দেয়, তখন ক্ষমতাসীন সরকার নির্বাচন কমিশন গঠন, তথা প্রধান নির্বাচন কমিশনারসহ অন্যান্য নির্বাচন কমিশনার নিয়োগের ক্ষেত্রে ভিন্ন একটি পন্থা অবলম্বন করে। এর আগে প্রেসিডেন্ট বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের সঙ্গে সংলাপ করে আইন প্রণয়ন বা প্রজ্ঞাপন জারির সুপারিশ করেন। ওই সুপারিশে পাঁচ সদস্যের একটি অনুসন্ধান কমিটি গঠনের কথা বলা হয়। পরে মন্ত্রিপরিষদ প্রেসিডেন্টের সুপারিশ অগ্রাহ্য করে চার সদস্য বিশিষ্ট অনুসন্ধান কমিটি গঠন করে। এই অনুসন্ধান কমিটির সুপারিশের ভিত্তিতে প্রেসিডেন্ট প্রধান নির্বাচন কমিশনার ও অন্যান্য নির্বাচন কমিশনারকে নিয়োগ দান করেন। বিশ্লেষক-পর্যবেক্ষকরা মনে করেন, কথিত অনুসন্ধান কমিটি গঠন ছিল আইওয়াশ মাত্র। উপরে উপরে দেখানো হয় স্বচ্ছভাবে, নিরপেক্ষভাবে নিয়োগ কাজটি সম্পন্ন করা হয়েছে। কিন্তু আসলে সরকারের মনোনীত ও পছন্দের ব্যক্তিরাই নিয়োগ লাভ করেন। শুরু থেকে শেষাবধি নির্বাচন কমিশনের ভূমিকা ও কার্যকলাপ থেকেই এটা প্রমাণিত হয়েছে। নির্বাচন কমিশন প্রকৃতপক্ষে সরকারের ইচ্ছা ও পরিকল্পনা বাস্তবায়নের হাতিয়ার হিসেবে ভূমিকা পালন করেছে।
অনেকে মনে করেন, দেশে যে রাজনৈতিক অস্থিরতা ও স্থিতিহীনতা বিদ্যমান তার মূলে রয়েছে বর্তমান নির্বাচন কমিশন। একটি বিনাভোটের, প্রশ্নবিদ্ধ ও অগ্রহণযোগ্য সংসদ নির্বাচন উপহার দিয়েছে এই নির্বাচন কমিশন। এছাড়া এই নির্বাচন কমিশনের অধীনে এ যাবৎ স্থানীয় পর্যায়ের যত নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছে, তার কোনোটাই অবাধ, সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ, শান্তিপূর্ণ ও গ্রহণীয় হয়নি। নির্বাচনকেন্দ্রিক যত রকমের অনিয়ম, দুর্নীতি, পক্ষপাতিত্ব হতে পারে তার সবই অবলীলায় হয়েছে। সন্ত্রাস, খুনোখুনি, ব্যালট ব্যাক্স ছিনতাই, কারচুপি, হস্তক্ষেপ ফ্রি স্টাইলে হয়েছে। সরকার বা সরকারী দলের পক্ষে, তার ইচ্ছা পূরণে যা কিছু করা সম্ভব, সব কিছুই করেছে নির্বাচন কমিশন। কথায় কথায় নির্বাচন কমিশনকে স্বাধীন ও নিরপেক্ষ বলা হলেও কার্যত নির্বাচন কমিশন নির্বাহী বিভাগের অধীনস্থ একটি বিভাগ বা প্রতিষ্ঠানের মতোই কাজ করেছে বা ভূমিকা পালন করেছে। এর মধ্য দিয়ে নির্বাচন কমিশনের অযোগ্যতা, ব্যর্থতা ও অগ্রহণযোগ্যতাই প্রমাণিত হয়নি, সেই সঙ্গে দলীয় সরকারের নিয়োগকৃত ব্যক্তিদের নিয়ে গঠিত নির্বাচন কমিশন যে আমাদের দেশের জন্য মোটেই উপযোগী নয়, সেটাও প্রমাণিত হয়েছে। এও প্রমাণিত হয়েছে, দলীয় সরকারের অধীনে কোনো অংশগ্রহণমূলক অবাধ, সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ, শান্তিপূর্ণ ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন সম্ভব নয়।
একাদশ সংসদ নির্বাচনের বিষয় যখন আলোচনা হচ্ছে তখন অনিবার্যভাবে একটি স্বাধীন ও শক্তিশালী নির্বাচন কমিশন গঠনের কথাও আলোচিত হচ্ছে। এ প্রসঙ্গে আরো গুরুত্বের সঙ্গে উঠে আসছে দলীয় সরকারের অধীনে কাক্সিক্ষত নির্বাচন আদৌ সম্ভবপর কি না। নির্বাচনের আগে এ দু’টি বিষয়ের ফয়সালা হওয়া জরুরি। ইতোমধ্যে আইনমন্ত্রী জানিয়ে দিয়েছেন, আগে যেভাবে নির্বাচন কমিশনার নিয়োগ দেয়া হয়েছে, এবারও সেই প্রক্রিয়ায় নিয়োগ দেয়া হবে। অর্থাৎ অনুসন্ধান কমিটির মাধ্যমে কিছু ব্যক্তির নাম প্রেসিডেন্টের বরাবরে পাঠানো হবে এবং তিনি তাদের মধ্য থেকে প্রধান নির্বাচন কমিশনার ও অন্যান্য নির্বাচন কমিশনারকে নিয়োগ প্রদান করবেন। এখানে স্মরণ করা যেতে পারে, নিয়োগদাতা হিসেবে প্রেসিডেন্টর ক্ষমতা সংবিধানে সুনির্দিষ্টভাবে উল্লেখ করা আছে। সাংবিধানিক পদাধিকারীদের মধ্যে প্রেসিডেন্ট, প্রধানমন্ত্রী ও প্রধান বিচারপতি ছাড়া অন্যদের নিয়োগ দান করেন প্রধানমন্ত্রীর পরামর্শ অনুযায়ী। সে মতে, দু’টি ছাড়া অন্যান্য সব পদে প্রেসিডেন্টের নিয়োগপ্রাপ্তগণ প্রধানমন্ত্রীর সুপারিশকৃত বলেই গণ্য। প্রধান নির্বাচন কমিশনার ও অন্যান্য নির্বাচন কমিশনারও তার ব্যতিক্রম নন।
আগামীতে প্রধান নির্বাচন কমিশনার ও অন্যান্য নির্বাচন কমিশনার নিয়োগ এবং ক্ষমতাসীন দলের অধীনে নির্বাচন অনুষ্ঠানের বিষয়ে আলোচনা-বিতর্ক যে জোরদার হবে, সঙ্গতকারণেই তা আন্দাজ করা যায়। দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে নির্বাচনকালীন সরকার ব্যবস্থা নিয়ে বিরোধ তুঙ্গে ওঠার প্রেক্ষাপটেই প্রধান বিরোধীদল বিএনপি ও তার নেতৃত্বাধীন জোট নির্বাচন বয়কট করে। এখনও তাদের পূর্ব দাবি বহাল আছে। ক্ষমতাসীন দলের অধীনে নির্বাচন অনুষ্ঠানের অভিজ্ঞতা যেখানে সুখকর নয়, সেখানে নির্বাচনকালীন সরকারের দাবী ও প্রয়োজনীয়তা অস্বীকার করা যায় না। বিষয়টি সরকারকে নতুন করে গুরুত্বের সঙ্গে ভাবতে হবে। অনেকেই এটা মনে করেন ও বিশ্বাস করেন, নির্বাচন কমিশন স্বাধীন ও শক্তিশালী হলে দলীয় সরকারের অধীনেও অবাধ, সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ, শান্তিপূর্ণ ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন সম্ভব। নজির হিসেবে তারা ভারতসহ বিভিন্ন দেশের কথা উল্লেখ করেন। ক্ষমতাসীন দলের অধীনে নির্বাচন হলেও ভারতে নির্বাচন নিয়ে কোনো দলের তরফে কখনোই কোনো প্রশ্ন তোলার উদাহরণ নেই। বিবেচ্য হলো, ভারতের মতো বিশাল দেশে সে দেশের নির্বাচন কমিশন যদি অবাধ, সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন করতে পারে, বাংলাদেশের নির্বাচন কমিশন কেন পারবে না? বলা বাহুল্য, বাংলাদেশের নির্বাচন কমিশনও পারবে যদি নির্বাচন কমিশন গঠনের ক্ষেত্রে উপযুক্ত আইন বিধি প্রণয়ন ও অনুসরণ করা যায়। সৎ, দক্ষ, যোগ্য, অভিজ্ঞ, নিরপেক্ষ ও সাহসী ব্যক্তিদের যদি নির্বাচন কমিশনে নিয়োগ দান করা যায় তাহলে দলীয় সরকারের অধীনেও প্রত্যাশিত নির্বাচন হতে পারে। তবে শর্ত এই যে, নির্বাচনের সময় সরকারকে নিরপেক্ষ থাকতে হবে। নির্বাচনী সকল কার্যক্রমে নির্বাচন কমিশনকে প্রয়োজনীয় সর্বপ্রকার সহায়তা দিতে হবে। অবাধ, সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ, শান্তিপূর্ণ ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন এবং তার মাধ্যমে শান্তিপূর্ণভাবে সরকার পরিবর্তন কেবল গণতন্ত্রের জন্যই অপরিহার্য নয়, দেশের শান্তি, স্থিতি, উন্নয়ন ও সমৃদ্ধির জন্যও অপরিহার্য।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: নির্বাচন কমিশন সংক্রান্ত আইন করতে হবে
আরও পড়ুন
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ