পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
শিমুলিয়ায়, পাটুরিয়া ঘাটে ঢাকামুখী মানুষের উপচেপড়া ভিড়
স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা আরো করোনা ভয়াবহ পরিস্থিতির আশঙ্কা করছেন
দেশ করোনাভাইরাস মহামারিকালে সবচেয়ে ভয়াবহ সময় পার করছে। প্রতিদিন গড়ে ২৫০ জন করে মানুষ মারা যাচ্ছেন। সীমিত পরিসরে নমুনা পরীক্ষায় গড়ে শতকরা ৩০ জন করে আক্রান্ত হচ্ছেন। অদৃশ্য এই ভাইরাসের সংক্রমণ রোধে চলমান রয়েছে কঠোর বিধিনিষেধ। গতকালও স্বাস্থ্য অধিদফতর আরো ১০ দিন লকডাউন বাড়ানোর পরামর্শ দিয়েছে। সড়কে মোতায়েন রয়েছে পুলিশ, বিজিবি ও সেনাবাহিনী। অথচ রাজধানীর পথঘাট, হাটবাজার, মাওয়া, শিমুলিয়া, বাংলাবাজার, পাটুরিয়া, কাঠালবাড়ি ঘাট দেখে বোঝার উপায় নেই দেশে করোনার ভয়াবহতা চলছে।
গতকাল শুক্রবার সপ্তাহিক ছুটির দিনে দেখা গেছে, বৈরী আবহাওয়ার মধ্যেও ঢাকামুখী মানুষের স্রোত চলছেই। একদিকে সরকার ঘোষিত কঠোর বিধিনিষেধ, অন্যদিকে গত তিন দিন ধরে ঝড়ো হাওয়াসহ বৃষ্টি এসবের মধ্যেই নানান পন্থায় মানুষ আসছেন ঢাকার দিকে। কারো কারো মুখে মাস্ক থাকলেও স্বাস্থ্যবিধি মানার বালাই নেই। গণপরিবহন বন্ধ থাকলেও রাস্তায় প্রচুর যানবাহন; কোথাও কোথাও যানজট পর্যন্ত লেগে যাচ্ছে।
লকডাউন চলাকালে নিত্যপ্রয়োজনীয় সামগ্রী বেচাকেনায় সরকারের স্বাস্থ্যবিধি মানার নির্দেশনা রয়েছে। সে নির্দেশনামূলক আইন মানছেন না সাধারণ মানুষ থেকে শুরু করে বিক্রেতারা। গতকাল শুক্রবার যাত্রাবাড়ি আড়তে গিয়ে দেখা গেল, ক্রেতা-বিক্রেতা যে যার মতো চলাফেরা করছেন; কেনাকাটা করছেন। স্বাস্থ্যবিধি মানা তো দূরের কথা বেশিরভাগের মুখেই নেই মাস্ক। গাদাগাদি করেই চলছে ক্রেতা-বিক্রেতাদের মাছ দরদাম। রাজধানীর সড়ক মহাসড়কে একই চিত্র। স্বাস্থ্যবিধি মানা সম্ভব না হওয়ায় গণপরিবহন বন্ধ রেখেছে সরকার। কিন্তু ছোট ছোট যানবাহনে মানুষ ঢাকায় ফিরছেন। এতে আরো ক্ষতি হচ্ছে। বাসে স্বাস্থ্যবিধি মানা সম্ভব হলেও বাইক, সিএনজি, ভ্যান, পিকআপে স্বাস্থ্যবিধি মানা সম্ভব নয়। গাদাগাদি করে ঢাকায় ফিরছে মানুষ।
গতকালও দেশে করোনায় মারা গেছে ২১২ জন। সীমিত পরিসরে নমুনা পরীক্ষায় আক্রান্ত হয়েছেন ১৩৮৬২ জন। স্বাস্থ্য অধিদফতর চলমান কঠোর বিধিনিষেধ তথা ‘লকডাউন কনটিনিউ’ করার সুপারিশ করেছে। অধিদফতরের মহাপরিচালক (ডিজি) অধ্যাপক ডা. আবুল বাসার মোহাম্মদ খুরশীদ আলম জানান, চলমান লকডাউন আগামী ৫ আগস্ট পর্যন্ত চলবে। এই লকডাউন আরো ১০ দিন বাড়ানোর সুপারিশ করা হয়েছে। ডিজি বলেন, লকডাউনের সিদ্ধান্ত নিবে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়। আমরা বলেছি লকডাউন কনটিনিউ করতে। কেবলমাত্র অতিজরুরি সেবা ছাড়া যেভাবেই হোক সবকিছু সীমিত রাখতে হবে। এগুলো মনিটর করতে হবে। সব খুলে দিলে করোনা সংক্রমণ বেড়ে যাবে।
লৌহজং (মুন্সীগঞ্জ) উপজেলা সংবাদদাতা জানান, কঠোর লকডাউনের ৮ম দিনে ভোর থেকে দেখা যায় বৈরী আবহাওয়ার মধ্যেও মুন্সীগঞ্জের শিমুলিয়া প্রান্তে দক্ষিণবঙ্গ থেকে ঢাকা অভিমুখী মানুষের উপচেপড়া ভিড়। স্বাভাবিকের চেয়ে অনেক বেশি যাত্রী ও পণ্যবাহীসহ ব্যক্তিগত গাড়ি দেখা যায়। জেলার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (অপরাধ ও প্রশাসন) সুমন দেব জানান, শিমুলিয়া ঘাট অভিমুখে ঢাকা-মাওয়া এক্সপ্রেস ওয়েতে পণ্যবাহী ট্রাকের দীর্ঘ সারি। গাড়িগুলো যাতে সারিবদ্ধভাবে ফেরিতে উঠতে পারে, সে জন্য শিমুলিয়া ঘাটে ফেরির পন্টুনে দুটি চেকপোস্ট বসানো হয়েছে। ঢাকা-মাওয়া মহাসড়কের নিমতলায়ও রয়েছে চেকপোস্ট। সেখান থেকে যাত্রী এবং ব্যক্তিগত গাড়ি ফিরিয়ে দেওয়া হচ্ছে।
বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন করপোরেশন (বিআইডব্লিউটিসি)-এর শিমুলিয়া ঘাটের সহকারী ব্যবস্থাপক (বাণিজ্য) মো. মাহবুবুর রহমান বলেন, ভোর থেকেই মুন্সীগঞ্জের শিমুলিয়া ঘাটে মাদারীপুরের বাংলাবাজার ঘাট থেকে ছেড়ে আসা ঢাকামুখী কর্মজীবী মানুষের ভিড় চলছে। যাত্রী ও যানবাহন পারাপারে এই নৌরুটে ১৭টি ফেরির মধ্যে রো রো চারটি, কে-টাইপ চারটি ও মিডিয়াম একটিসহ মোট ৯টি ফেরি চলছে। লঞ্চ ও স্পিডবোট চলাচল সম্পূর্ণ বন্ধ রয়েছে। পণ্যবাহী যানবাহন ও ব্যক্তিগত গাড়িসহ দুই শতাধিক গাড়ি রয়েছে পারের অপেক্ষায়।
মাদারীপুর, শরীয়তপুর, গোপালগঞ্জ ও বরিশালের জেলাগুলো থেকে আসা যাত্রীরা শিমুলিয়া ঘাটে এসে হেঁটে, সিএনজি ও ব্যক্তিগত গাড়িতে যাত্রীরা ঢাকায় ছুটছেন। তবে চলমান কঠোর বিধিনিষেধের কারণে শিমুলিয়া ঘাটসহ জেলার বিভিন্ন প্রবেশপথে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর চেকপোস্ট দেখা গেছে। যাত্রীরা নদী পাড় হয়ে গণপরিবহন বন্ধ থাকায় ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা, সিএনজি, মোটরসাইকেলসহ বিভিন্ন ছোট ছোট যানবাহনে করে ভেঙে ভেঙে গন্তব্যে যাচ্ছে।
মানিকগঞ্জ সংবাদদাতা জানান, বিধিনিষেধে গণপরিবহন বন্ধ। রিকশা-ভ্যানে করেই ঢাকায় ফিরছে মানুষ। মহাসড়কের মানিকগঞ্জে বিভিন্ন স্থানে পুলিশের তল্লাশি চৌকিতে ছোট যানবাহনে আসা যাত্রীদের নামিয়ে দেওয়া হচ্ছে। তবু আটকে রাখা যাচ্ছে না তাদের। হেঁটে তল্লাশি চৌকি এড়িয়ে কিছু দূর গিয়ে আবার রিকশা-ভ্যান ও ইজিবাইকে করে গন্তব্য ঢাকার দিকে যাচ্ছেন।
সরেজমিন দেখা গেছে, পাটুরিয়া ও আরিচা ঘাট থেকে সিএনজিচালিত অটোরিকশা, রিকশা, মোটরসাইকেল, রিকশা-ভ্যান ও ইজিবাইকে করে পথ ভেঙে ভেঙে মানিকগঞ্জ বাসস্ট্যান্ডের দিকে আসছেন ঢাকায় কর্মস্থলগামী মানুষ। তবে বাসস্ট্যান্ড এলাকা পুলিশের তল্লাশি চৌকির আগে সদর উপজেলা পরিষদ চত্বরের পাশে এসব যানবাহন থেকে নেমে হেঁটে বাসস্ট্যান্ড এলাকার পূর্বপাশে পানি উন্নয়ন বোর্ড কার্যালয়ের সামনে আসেন। এরপর সেখান রিকশা-ভ্যানসহ ছোট ছোট যানবাহনে নয়াডিঙ্গী পর্যন্ত যাচ্ছেন মানুষ। ঢাকার অদূরে সালেপুর সেতুর দুইপাশে যানজট লেগে যাচ্ছে।
এদিকে করোনাভাইরাস সংক্রমণ রোধে সরকার ঘোষিত কঠোর লকডাউনের অষ্টম দিনের সকালে রাস্তাঘাটে মানুষ ও যানবাহনের চাপ কিছুটা বেড়েছে। রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় ব্যক্তিগত গাড়ি ও রিকশার কিছুটা বাড়তি চলাচলের চিত্র দেখা গেছে। শুক্রবার রাজধানীর বিভিন্ন সড়ক ঘুরে ঘুরে প্রচুর যানবাহন চলাচলের দৃশ্য দেখা গেছে। ছোট ছোট ফুটপাতের দোকানগুলো খুলতে দেখা যাচ্ছে। নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে রিকশা ও ভ্যানে চড়ছেন একাধিক মানুষ। বৃষ্টির কারণে সকালে যানবাহন সড়কে কম থাকলেও বেলা বাড়ার সাথে সাথে বেড়েছে যানবাহনের চলাচল। নগরীর বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্টে সেনা, বিজিবি, র্যাব ও পুলিশ মোতায়েন রয়েছে।
তবে কিছু কিছু জায়গায় জরুরি প্রয়োজন ছাড়া বেড় হলে জরিমানা ও গ্রেফতার করা হচ্ছে। জরুরি পরিষেবায় নিয়োজিতরা পরিচয়পত্র দেখিয়ে কর্মস্থলে যেতে পারছেন। শুক্রবার সরকারি ছুটির দিন যাত্রাবাড়ি আড়তে দেখা গেলে মানুষ গিজগিজ করছে। বেশিরভাগের মুখে মাস্ক নেই। ক্রেতা-বিক্রেতা কারো মধ্যেই স্বাস্থ্যবিধির বালাই নেই।
যাত্রাবাড়িতে পথে নামা সাধারণ মানুষের সাথে কথা বলে জানা গেছে, জীবিকার তাগিদে তারা পথে নেমেছেন। সিএনজিচালক মোহম্মাদ রহমতুল্লাহ বলেন, গতকয়েকদিন ধরে ঘরে বসেছিলাম। আবার বাইরে বের হলেও ট্রাফিক পুলিশের মামলায় পড়তে হচ্ছে। শুক্রবার সরকারি ছুটি তাই জীবিকার তাগিদে ঝুঁকি নিয়ে বের হয়েছি।
কঠোর লকডাউনের মধ্যে রাস্তায় গিজগিজ করা মানুষ দেশে স্বাস্থ্যবিশেষজ্ঞরা উদ্বেগ প্রকাশ করছেন। তারা বলছেন, লকডাউনের মধ্যে এমন অবস্থা। রোববার গার্মেন্টস খোলা হলে কর্মীরা সারাদেশ থেকে ঢাকায় ফিরে আসবেন। তখন পরিস্থিতি আরো ভয়াবহ হবে।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।