বাড়াবাড়ি ও ছাড়াছাড়ির কবলে শবে বরাত-৩
সুনানে ইবনে মাজায় বর্ণিত হয়েছে : হযরত আলী ইবনে আবু তালেব (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ
সেক্যুলারিজম শব্দের অনুবাদ ধর্মহীনতা। সীমিত ও সহনীয় অর্থে বঙ্গবন্ধুর ব্যাখায় এবং বাংলাদেশের সংবিধানে সংযোজিত বাংলারূপ হচ্ছে ধর্মনিরপেক্ষতা। যার মর্ম হচ্ছে, রাষ্ট্রের সব ধর্মের মানুষের নিজ নিজ ধর্ম পালনের অধিকার। সংসদনেত্রীর ভাষায়, মুসলমানরা নিজের ধর্ম সঠিকভাবে পালনের পাশাপাশি অন্যান্য ধর্মের মানুষের ধর্মীয় অধিকারের কথা স্বীকার করবে। এটি ইসলামী সভ্যতারও কনসেপ্ট।
তবে সমস্যা হয় অতি ধর্মনিরপেক্ষদের নিয়ে। যারা পূর্ণ সেক্যুলার, ধর্মহীন বা খাঁটি ধর্মনিরপেক্ষতাবাদী হিসাবে সংবিধানের দোহাই দিয়ে বিশ্বব্যাপী মুসলমানদের ওপর ধর্মহীনতা চাপিয়ে দিতে চান। যে অভিজ্ঞতা তুরস্কের খেলাফত বিলোপ ও ইসলাম নির্মূলের ইতিহাস থেকে বোঝে আসে। বৃটিশ সাম্রাজ্যবাদী আগ্রাসন রোধে অখন্ড ভারতীয় নেতৃবৃন্দ যে মহান উদ্দেশ্যে খেলাফত আন্দোলনে ঝাঁপিয়ে পড়েছিলেন।
অতি ধর্মনিরপেক্ষদের জানা কর্তব্য যে, বাংলা একাডেমির ইংলিশ-বাংলা ডিকশনারিতে সেক্যুলার অর্থ পার্থিব, ইহজাগতিকতা, জড়, জাগতিক। সেক্যুলার স্টেট ‘গীর্জার সঙ্গে বৈপরিত্যক্রমে রাষ্ট্র’। এ অর্থ অনুযায়ী মুসলিম দেশে এর ব্যাখ্যা দাঁড়ায় ‘শরীয়তের সঙ্গে বৈপরিত্যক্রমে রাষ্ট্র’। সেক্যুলার মানে, ধর্ম ও আধ্যাত্মিকতার সাথে যে বিষয়ের কোনোই সম্পর্ক নাই।
যেসব দেশে শিক্ষানীতির মূল আদর্শ বানানো হয়েছে সেক্যুলারিজমকে। তাদের শিক্ষানীতি শিশু শ্রেণি থেকেই মুসলিম ছেলেমেয়ের সেক্যুলার আদর্শে গড়ে তোলার প্রত্যয় নিয়েছে। কোমলমতি শিশুদের অঙ্কুর থেকেই ধর্মহীন ভাবধারায় গড়ে তোলার মতো উপাদান রাখা হয়েছে টেক্সটবুকগুলোতে। মুসলিম নাগরিকদের আদালতে বিচারক যুক্তি দিচ্ছেন, যেহেতু আমাদের রাষ্ট্র ধর্মনিরপেক্ষ তাই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে মেয়েদেরকে বোরকা পরতে বলা যাবে না। দাড়ি টুপি বোরকা হিজাবেও শাস্তির ব্যবস্থা এ নীতি থেকেই হতো।
স্পষ্টত রাষ্ট্র থেকে ইসলামকে দূরে সরিয়ে রাখাই আসল উদ্দেশ্য। কেননা একমাত্র ইসলামের নীতিমালাই তাদের পাশ্চাত্যের অন্ধ অনুসরণের পথে বাধা সৃষ্টি করতে পারে। সেক্যুলারিজমের বক্তব্য হচ্ছে, আইন-আদালত, বিচারকার্য এসব চলবে ধর্মহীন রাষ্ট্রীয় নীতি অনুযায়ী। রাষ্ট্র যেভাবে আইন করে সেভাবে নাগরিক চলবে। ধর্মের সেখানে প্রবেশাধিকার নেই। প্রকৃত মুসলমানদের জন্য শরীয়তবিবর্জিত নীতি সংস্কৃতি ও বিধি বিধান নির্বিচারে মেনে চলা কখনই সম্ভব হয় না। বিশ্বব্যাপি এটাই সভ্যতা ও জীবনব্যবস্থার দ্ব›দ্ব।
কেউ যদি ধর্মহীনতায় বিশ্বাসী হন সেটি তার ব্যক্তিগত ব্যাপার। রিদ্দাহ বা ইরতিদাদ ইসলামে কুফুরীর চেয়েও বেশি নিন্দিত বিষয়। বাংলাদেশে মুরতাদ বলে যা পরিচিত। কেননা ঈমান পাওয়ার পর আবার বেঈমান হয়ে যাওয়া মানবজীবনের সবচেয়ে দুঃখজনক ঘটনা। একজন মুসলমান বিশ্বাসগতভাবে সেক্যুলার হওয়া এ ধরনেরই একটি দুঃখজনক বিষয়। আরেকটি পর্যায় আছে পশ্চিমা সেক্যুলার বা ধর্মহীন না হয়ে নিজেদের তৈরি পরিভাষায় ভিন্ন অর্থবোধক ধর্মনিরপেক্ষ হওয়া।
যার উদ্দেশ্য হচ্ছে একটি সমাজে সকল ধর্মের মানুষের নিজ নিজ ধর্ম পালনের স্বাধীনতা। রাষ্ট্র ও রাজনীতি, শাসন ও বিচার বিবেচনায় ইসলামী পদ্ধতিতে এই স্বাধীনতা সবচেয়ে বেশি সুরক্ষিত। মুসলিম শাসননীতিতে জিম্মিদের (প্রচলিত অর্থে জিম্মি নয়, এর অর্থ মুসলিম শাসিত রাষ্ট্রের অমুসলিম নাগরিক) অধিকার একটি আকর্ষণীয় বিষয়। অমুসলিম জিম্মি নাগরিকদের জন্য মুসলমানদের জন্য হারাম এমন কোনো কোনো বিষয়ও তাদের সমাজে প্রচলিত থাকায় মুসলিম রাষ্ট্রে এসবের বিশেষ অনুমতি থাকে। যা ইসলামই পৃথিবীকে শিখিয়েছে। আধুনিক উন্নত রাষ্ট্রগুলোতে ক‚টনীতিকদের বেলায় যেমন বিশেষ আইন থাকে ঠিক তেমনই মুসলিম রাষ্ট্রে অমুসলিম জিম্মি নাগরিকদের জন্য অধিক মানবাধিকার সম্বলিত বিশেষ আইন রয়েছে।
উদাহরণ স্বরূপ জিম্মিদের নিজস্ব বলয়ে মদ্যপান, শুকরের ব্যবহার, এসবের ব্যবসা, নারী-পুরুষের বেপর্দা একত্রে চলাফেরা প্রভৃতি মুসলিম সমাজের মতো নিষিদ্ধ নয়। তাদের ধর্ম কর্ম পালন নিষিদ্ধ নয়। তাদের ধর্মীয় উপাসনালয়, ধর্মীয় সংস্কৃতি, ধর্মীয় সম্পত্তি ইত্যাদি নির্মাণ উন্নয়ন এবং এসবের নিরাপত্তা মুসলিম রাষ্ট্রের দায়িত্বের মধ্যে পড়ে। কেবল ধর্মীয় কারণে এদের উপর কোনোরূপ জুলুম ইসলামী রাষ্ট্র হতে দেয় না। নবী করীম (সা.) বলেছেন, মুসলিম সমাজে যদি কোনো অমুসলিম জিম্মি নির্যাতিত হয় তাহলে রোজ কেয়ামতে আমি নিজে বাদী হয়ে আল্লাহর দরবারে তার পক্ষে নালিশ করব।
এ বিধান ও সংস্কৃতিকে কেউ যদি ইসলামের উদারতা বলে তাহলে কি বেশি ভালো শোনায়, না এ সবকে ধর্মনিরপেক্ষতা বললে বেশি ভালো হয়। এ বিবেচনা বিজ্ঞ পাঠককে করতে হবে। তারা কি ধর্মনিরপেক্ষতার অর্থ ও এর প্রয়োগ চিন্তা না করেই বলতে আগ্রহী হবেন যে, কোরআন শরীফেও ধর্মনিরপেক্ষতা আছে। মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নিজেও (নাঊজুবিল্লাহ) ধর্মনিরপেক্ষ ছিলেন। এ ধরনের অসংযত বাক্য প্রয়োগের ফেতনায় বর্তমানে মুসলমানরা পতিত হয়েছে।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।