Inqilab Logo

মঙ্গলবার ০৫ নভেম্বর ২০২৪, ২০ কার্তিক ১৪৩১, ০২ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

মুসলিম পরিচয় ‘ভুলে’ যাওয়ায় অশান্তির আগুন জ্বলছে

মাওলানা মুহাম্মাদ আব্দুল মালেক | প্রকাশের সময় : ২৭ জুলাই, ২০২১, ১২:০০ এএম

আমরা মুসলিম। আল্লাহ তাআলার অপার করুণা, আমাদের তিনি মুসলিম হওয়ার সৌভাগ্য দান করেছেন। অন্তরের অন্তস্থল থেকে আমরা তাঁর শোকর আদায় করি- আলহামদু লিল্লাহ। কোরআন মাজীদে ইরশাদ হয়েছে : ওই ব্যক্তির চেয়ে ভালো কথা আর কার, যে আল্লাহর দিকে ডাকে এবং ভালো কাজ করে, আর বলে, নিশ্চয়ই আমি মুসলিমদের একজন। (সূরা ফুসসিলাত : ৩৩)। মুসলিম অর্থ, আনুগত্য স্বীকারকারী। যে আল্লাহ তাআলার আনুগত্য স্বীকার করে, তাঁর দ্বীন ও শরীয়তকে সমর্পিতচিত্তে গ্রহণ করে সে মুসলিম। তাই মুসলিম নামটি হচ্ছে আদর্শভিত্তিক নাম। এ আদর্শ এসেছে আল্লাহ তাআলার পক্ষ থেকে, সকল মানুষের জন্য। সব যুগের, সব দেশের সব শ্রেণির মানুষের জন্য। ইসলাম কবুলের ক্ষেত্রে যেমন জবরদস্তি নেই তেমনি কোনো বাধাও নেই। যে-ই ইচ্ছে করবে ইসলাম কবুল করতে পারবে।

আর যে-ই ইসলাম কবুল করবে তার জন্যেই আছে ইসলামের জ্ঞান-অর্জনের এবং নিজ কর্মের মাধ্যমে আল্লাহর নৈকট্য অর্জনের সুযোগ। আল্লাহর কালাম আল কোরআন সবার জন্য। সবার আছে আল কোরআন পড়ার ও বোঝার সুযোগ। আছে হাদীস-সুন্নাহ, ফিকহ পড়ার ও জানার সুযোগ। আমলে সালিহের সুযোগ। এককথায়, জ্ঞান ও কর্ম সকল ক্ষেত্রে অগ্রসর হওয়ার, আল্লাহ তাআলার নৈকট্য অর্জন করার ও চিরস্থায়ী শান্তির জান্নাত লাভের সুযোগ সবার জন্য উন্মুক্ত।

এই সুযোগ ও সৌভাগ্য ইসলাম মুসলমানের বিশেষ কোনো বর্ণ, গোত্র, শ্রেণি বা স¤প্রদায়ের মধ্যে সীমাবদ্ধ করেনি। আসলে ইসলামে তো বর্ণবাদ ও বর্ণভেদ বলতে কিছুই নেই; বরং ইসলামের বিধানেই আছে এর সবচেয়ে জোরালো ও কার্যকর প্রতিরোধ। জ্ঞান অর্জনের ও আল্লাহর নৈকট্য অর্জনের সুযোগ উন্মুক্ত করে ইসলাম একে যুক্ত করেছে ব্যক্তির স্বাধীন ইচ্ছা ও কর্মের সাথে। যে-ই ইসলাম কবুল করবে এবং চেষ্টা-প্রচেষ্টা করবে সৌভাগ্য তার জন্য। কোরআন মাজীদের ইরশাদ : মুমিন হয়ে পুরুষ ও নারীর মধ্যে যে কেউ সৎকর্ম করবে নিশ্চয়ই তাকে আমি দান করব পবিত্র জীবন এবং তাদেরকে তাদের কর্মের শ্রেষ্ঠ পুরস্কার দান করব। (সূরা নাহল : ৯৭)।

কাজেই ইসলাম সা¤প্রদায়িকতার নাম নয়, এক উন্মুক্ত আদর্শের নাম। ‘মুসলিম’ও কোনো সা¤প্রদায়িক পরিচয় নয়, আদর্শিক পরিচয়। যে আদর্শ আল্লাহপ্রদত্ত এবং যা মানবীয় দুর্বলতা ও সীমাবদ্ধতাজাত সকল সংকীর্ণতা থেকে মুক্ত। তাই মুসলিম পরিচয় এর পরিচয়বাহীকে ক্ষুদ্রতা ও সংকীর্ণতার চেতনা দান করে না, উদারতা ও ন্যায়নিষ্ঠার চেতনা দান করে।

‘মুসলিম’ পরিচয় মানুষকে স্মরণ করিয়ে দেয়, সে মুক্ত-স্বাধীন নয়; আল্লাহর বিধানের অধীন। তাই তার স্বেচ্ছাচারী হওয়ার সুযোগ নেই। সে প্রবৃত্তির দাস নয়, আল্লাহর বান্দা। তাই তার অনাচার-পাপাচারে লিপ্ত হওয়ার ও লিপ্ত থাকার সুযোগ নেই। আল্লাহর আনুগত্যের শৃঙ্খলে তার হাত বাঁধা। তাই কোনো মানুষের প্রতি- সে যে ধর্মেরই হোক, যে শ্রেণি-পেশারই হোক, জুলুম-অত্যাচারের হাত বাড়ানোর তার সুযোগ নেই। কথা ও কাজ সকল ক্ষেত্রে মুসলিম এমন এক নীতি-আদর্শের অধীন, যা সর্বকালীন, সার্বজনীন, যথার্থ ও ন্যায়সঙ্গত।

যা গোটা সৃষ্টিজগতের স্রষ্টা আল্লাহ তাআলার বিধান, গোটা সৃষ্টি জগৎ যাঁর বিধানের অধীন। চন্দ্র-সূর্য-গ্রহ-নক্ষত্র, আকাশ-পৃথিবী, নদী-সাগর যাঁর আজ্ঞাবহ। পার্থক্য এই যে, প্রকৃতির সবকিছুর জন্য তাঁর প্রাকৃতিক বিধান আর মানুষের জন্য প্রাকৃতিক বিধানও, করণীয়-বর্জনীয়ের বিধানও। তাই মুসলিম পরিচয় মানুষকে সংযম ও আত্মনিয়ন্ত্রণে ব্রতী হতে বলে, উদ্ধত-অত্যাচারী হওয়া থেকে নিবৃত্ত করে। বলা বাহুল্য যে, সুস্থ সমাজ ও সুন্দর জীবনের জন্য এর বিকল্প নেই। আমাদের ব্যক্তিগত ও সামাজিক জীবনের শান্তি ও কল্যাণের জন্যই প্রয়োজন আমাদের মুসলিম-পরিচয় সম্পর্কে সচেতন হওয়া।

মুসলিম-পরিচয় সম্পর্কে সচেতনতা বিস্তারকারীগণই হচ্ছেন ব্যক্তি ও সমাজের প্রকৃত বন্ধু। এরাই বার্তাবাহক শান্তি ও শৃঙ্খলার, প্রচারক উদারতা ও মানবতার। পক্ষান্তরে মুসলিমের মুসলিম-পরিচয় সম্পর্কে ভীতি ও সন্দেহ বিস্তারকারীরাই হচ্ছে মুসলিম-সমাজের ঘরের শত্রু বিভীষণ। শান্তি-শৃঙ্খলা, সাম্য-উদারতা ও মানবতা-মহানুভবতার বিপক্ষ শক্তি। এই সত্য আমাদের গভীরভাবে উপলব্ধি করতে হবে।



 

Show all comments
  • Md Faruque Ahmed ২৭ জুলাই, ২০২১, ৫:৪৮ এএম says : 0
    কেউ মুখে আমি মুসলিম বলে ঘোষণা দিলেই যেমন মুসলিম হয়ে যাবে না। মুসলিম হওয়ার জন্য কুরআন-সুন্নাহর দিকনির্দেশনা অনুযায়ী জীবন পরিচালনার বিকল্প নেই।
    Total Reply(0) Reply
  • Jamal Hossain ২৭ জুলাই, ২০২১, ৫:৪৮ এএম says : 0
    আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহকে কুরআনুল কারিমের নির্দেশনা অনুযায়ী নিজেদের ইসলামের অনুসারি হিসেবে তৈরি করার তাওফিক দান করুন।
    Total Reply(0) Reply
  • Jamal Hossain Mizi ২৭ জুলাই, ২০২১, ৫:৫৪ এএম says : 0
    আল্লামা ইকবাল তাঁর এক কবিতায় লিখেছেন, ‘ওহ যামানা মে মুআযযায থী হামেলে কুরআন হো কর/ আওর তুম খার হুয়ী তারেকে কুরআন হো কর’Ñ অর্থাৎ ইসলামের প্রথম যুগের মানুষ সম্মানিত ছিলেন কুরআনের বাহক হয়ে, আর তোমরা অপদস্থ হচ্ছো কুরআন ছেড়ে দিয়ে। কবি ইকবাল যথার্থই বলেছেন।
    Total Reply(0) Reply
  • Obaid Ullah ২৭ জুলাই, ২০২১, ৫:৫৪ এএম says : 0
    পুরো মুসলিম উম্মাহ আজ ব্যক্তিগত, সামাজিক, রাষ্ট্রীয় এবং অন্তর্জাতিকভাবে যেখানেই অধপতন ও আগ্রাসনের শিকার, গভীরভাবে লক্ষ্য করলে দেখা যায় এর মূলে হলো পবিত্র কুরআন থেকে আমাদের দূরে সরে যাওয়া
    Total Reply(0) Reply
  • Nakib Khan ২৭ জুলাই, ২০২১, ৫:৫৪ এএম says : 0
    সময় যত গড়াচ্ছে কুরআন থেকে আমাদের দূরত্ব ততোই বাড়ছে। কুরআন না আছে আমাদের সকালের তেলাওয়াতে, না আছে সারাদিনের ব্যস্ততায়। না আছে আমাদের পারিবারিক শাসনে, না আছে সুস্থ সুন্দর সমাজ গঠনে
    Total Reply(0) Reply
  • MD FOKHRUL ISLAM ২৭ জুলাই, ২০২১, ৫:৫৪ এএম says : 0
    কুরআন নেই আমাদের চেতনায়, নেই আমাদের দিনরাতের ভাবনায়। কুরআনের ভেতরে আমরা খুঁজি না আগামী দিনের প্রেরণা, কুরআন নিয়ে নেই আমাদের কোনো তাড়না। কুরআন নেই আমাদের জীবন সমস্যা সমাধানে, নেই উম্মাহর রাষ্ট্রীয় সংবিধানে। মহাগ্রন্থ নেই আমাদের বিচারে, নেই কুরআনের বাহকদের প্রচারে। ফলে যা হওয়ার তাই হয়েছে। ব্যক্তি, সমাজ ও রাষ্ট্রসহ সর্বক্ষেত্রে আমরা সর্বগ্রাসী অধপতনের শিকার হয়েছি।
    Total Reply(0) Reply
  • Zobayer ২৭ জুলাই, ২০২১, ৭:১৪ এএম says : 0
    আল্লাহ আমাদের ভালো মন্দ বুজার তওফিক দান করুক।
    Total Reply(0) Reply

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: ইসলাম

৩ মার্চ, ২০২৩
২ মার্চ, ২০২৩
১ মার্চ, ২০২৩
২৮ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩
২৬ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩

আরও
আরও পড়ুন