পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
দীর্ঘদিন পর নিয়ন্ত্রকসংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) নানামুখী পদক্ষেপে দেশের পুঁজিবাজারের প্রতি বিনিয়োগকারীদের আস্থা ফিরেছে। প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারী থেকে সাধারণ বিনিয়োগকারী- সবাই এখন পুঁজিবাজারমুখী। গলির চায়ের দোকান, বাস, ট্রেন থেকে শুরু করে অফিস-আদালত, সকল স্থানেই আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে এখন শেয়ারবাজার। বিএসইসি’র নানামুখী উদ্যোগে তারল্য ও আস্থার সঙ্কট কাটিয়ে নতুন আশায় বুক বাঁধছেন বিনিয়োগকারীরা। গত কয়েকমাস থেকে উত্থানে রয়েছে বাজার। আর তাই শেয়ারবাজারে বিদেশি ও প্রবাসীদের বিনিয়োগ বাড়াতে চায় সরকার। বাংলাদেশ ও দেশের পুঁজিবাজারকে বিদেশী বিনিয়োগের জন্য আরো আকর্ষণীয় স্থান হিসাবে তুলে ধরতে বিশ্বের বিভিন্ন দেশ ও শহরে ধারাবাহিকভাবে রোডশো আয়োজনের পরিকল্পনা করেছে বিএসইসি। এই ধারাবাহিকতায় পুঁজিবাজারে বিদেশি ও নন-রেসিডেন্ট বাংলাদেশিদের (এনআরবি) বিনিয়োগ বাড়াতে আজ সোমবার থেকে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের বড় শহর নিউইয়র্ক, ওয়াশিংটন ডিসি, লস এ্যাঞ্জেলেস ও সিলিকন ভ্যালিতে রোডশো শুরু হচ্ছে। এতে বাংলাদেশের শক্তিশালী অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি এবং বিনিয়োগের সম্ভাবনা, বিনিয়োগের সুযোগ, এনআরবি এবং বিদেশী বিনিয়োগকারীদের জন্য সহজলভ্য সুবিধা, পণ্য ও পরিষেবাদি তুলে ধরা হবে। ৭ দিনব্যাপি ‘দি রাইজ অব বেঙ্গল টাইগার: পটেনশিয়াল অব বাংলাদেশ ক্যাপিটাল মার্কেট’ শীর্ষক এ রোডশো শেষ হবে আগামী ২ আগস্ট। এর আগে দেশের পুঁজিবাজারে বিনিয়োগে উৎসাহিত করতে গত ৯ থেকে ১২ ফেব্রুয়ারি সংযুক্ত আরব আমিরাতের দুবাইয়ে আয়োজিত প্রথম রোডশোটি সফলভাবে অনুষ্ঠিত হয়। দুবাইয়ে রোডশোর পর পুঁজিবাজারে ইতিবাচক প্রভাব পড়েছে।
বিশেষজ্ঞদের মতে, বহুজাতিক কোম্পানি তালিকাভুক্ত হলে শেয়ারবাজার শক্তিশালী হয়। বিদেশে এ ধরণের রোড শো খুবই প্রয়োজন। বিনিয়োগে আগ্রহী করতে যে সব সুযোগ-সুবিধা রয়েছে তা তুলে ধরা সম্ভব হয়। একই সঙ্গে পুঁজিবাজারে একাধিক পণ্য বা পণ্য বৈচিত্রায়ন করা গেলে বিনিয়োগকারীদের অংশগ্রহণ বৃদ্ধি পাবে। বাড়বে বিনিয়োগের পরিমাণও। দীর্ঘমেয়াদী মূলধন উত্তোলনে শিল্পখাতের উদ্যোক্তারাও পুঁজিবাজারমুখী হবে।
বাজার সংশ্লিষ্টদের মতে, বিদেশে অবস্থান করা অনেক সম্পদশালী বাংলাদেশি রয়েছেন। যাদের প্রচুর অলস অর্থ রয়েছে। কিন্তু তারা বিনিয়োগ করার মতো কোনো জায়গা খুঁজে পাচ্ছে না। তাদের সঞ্চিত অর্থ পুঁজিবাজারের মাধ্যমে দেশের শিল্পায়নে কাজে লাগাতে চায় সরকার। এছাড়া এই রোড শো’র মাধ্যমে বিদেশী বড় বড় বিনিয়োগকারীদেরও দেশের শেযারবাজারে বিনিয়োগে উৎসাহিত করা হবে।
বিএসইসি’র সহকারি পরিচালক মোহাম্মদ এমদাদুল হক ইনকিলাবকে জানিয়েছেন, ২৬ জুলাই থেকে আগামী ২ আগস্ট এই রোডশো অনুষ্ঠিত হবে। এ সময় নিউ ইয়র্ক, ওয়াশিংটন ডিসি, লস এঞ্জেলস এবং সান ফ্রান্সিকো’র সান্তা ক্লারায় দেশে বিদেশে অবস্থান করা বাংলাদেশী বিনিয়োগকারী ও বিদেশী বিনিয়োগকারীদের সঙ্গে বিনিয়োগের সম্ভাবনা, বিনিয়োগের সুযোগের বিষয়টি তাদের কাছে তুলে ধরে হবে।
বিএসইসি’র চেয়ারম্যান প্রফেসর শিবলি রুবায়াত-উল-ইসলামের নেতৃত্বে সাত সদস্যের একটি দল এই রোড শো আয়োজনের জন্য যুক্তরাষ্ট্র সফর করছেন। প্রধানমন্ত্রীর বেসরকারী শিল্প খাত ও বিনিয়োগ বিষয়ক উপদেষ্টা সালমান এফ রহমান, অর্থ বিভাগের সিনিয়র সচিব মো. আব্দুর রউফ তালুকদার, বাণিজ্য সচিব তপন কান্তি ঘোষ, ইকোনমিক রিলেশান্স ডিপার্টমেন্টের (ইআরডি) সচিব ফাতিমা ইয়াসমিন, বাংলাদেশ ইনভেস্টমেন্ট ডেভলপমেন্ট অথরিটির (বিডা) নির্বাহী চেয়ারম্যান মো. সিরাজুল ইসলাম এবং বাংলাদেশ এক্সপোর্ট প্রসেসিং জোনস অথরিটির (বেপজা) নির্বাহী চেয়ারম্যান মেজর জেনারেল মো. নজরুল ইসলামসহ বিশিষ্ট ব্যক্তিরা রোডশোতে অংশগ্রহণ করছেন বলে সূত্র জানিয়েছে। বাংলাদেশ ব্যাংক, এনবিআরসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের উর্ধ্বতন কর্মকর্তারাও এই কর্মসূচিতে অংশ নিচ্ছেন।
সূত্র মতে, চারদিনব্যাপি এই রোডশোতে আগামী ১০ ফেব্রুয়ারি সকালে সুকুক: দ্যা নিউ ইনভেস্টমেন্ট অপরচুনিটি ইন বাংলাদেশ শিরোনামে একটি সেমিনার হবে। এতে প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীরা অংশ নেবে। ১১ ফেব্রুয়ারি সকালে স্কোপ অব প্রাইভেট ইক্যুইটি অ্যান্ড ভেঞ্চার ক্যাপিটাল ইনভেস্টমেন্ট ইন বাংলাদেশ শিরোনামে একটি সেমিনার হবে। এখানেও অংশ নেবে প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীরা। শেষ দিনে ১২ ফেব্রুয়ারি দিনব্যাপী অনুষ্ঠিত হবে দ্বিপাক্ষিক ও বহুপাক্ষিক বৈঠক। এখানে বিনিয়োগকারীদের ছোট ছোট গ্রুপ অংশ নেবে।
কমিশন মনে করছে, পুঁজিবাজারে এনআরবি ও বিদেশিদের বিনিয়োগ থাকলেও তা খুব কম। কাজেই এখন এই বিনিয়োগ বাড়ানো গেলে পুঁজিবাজারের গভীরতা বৃদ্ধির পাশাপাশি গতিশীলতাও বাড়বে। বর্তমান পুঁজিবাজারে শেয়ার কেনাবেচায় যে বেনেফিসিয়ারি ওনার্স অ্যাকাউন্ট (বিও) রয়েছে, তার মাত্র ৬ শতাংশ এনআরবি ও বিদেশিদের। আর প্রায় ৯৪ শতাংশই দেশীয় বিনিয়োগকারীর, যার মধ্যে ব্যক্তিগত অ্যকাউন্টই বেশি। পুঁজিবাজারে বিদেশিদের বিনিয়োগ বৃদ্ধি ও সহজে বিনিয়োগের জন্য কমিশন ডিজিটাল বুথ খোলার বিষয়ে নীতিমালা জারি করেছে। দুবাইতে ইতোমধ্যে ডিজিটাল বুথ খোলা হয়েছে। বিভিন্ন দেশে এভাবে ডিজিটাল বুথ চালু হলে এনআরবিসহ বিদেশিরা সহজে বাংলাদেশের পুঁজিবাজারে বিনিয়োগ করতে পারবে। এতে করে পুঁজিবাজারে বিদেশি অর্থপ্রবাহ বাড়বে।
বিদেশে অবস্থানরত নন-রেসিডেন্ট বাংলাদেশিদের (এনআরবি) পাঠানো রেমিট্যান্স বিনিয়োগে রূপান্তর করতে চায় কমিশন, সেই ক্ষেত্রে পুঁজিবাজার হতে পারে ভালো জায়গা। কমিশনের এক কর্মকর্তা এ বিষয়ে বলেন, প্রবাসীরা অর্জিত অর্থ পাঠায়, বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই এ অর্থ নতুন বাড়ি বানিয়ে শেষ করে। কিন্তু সেটা বিনিয়োগে রূপান্তর করা গেলে তাদের আয়ের উৎস বাড়বে। কমিশন সে বিষয়টির উপর জোর দিচ্ছে।
বিএসইসির চেয়্যারম্যান প্রফেসর ড. শিবলী রুবাইয়াত-উল ইসলাম বলেছেন, রোডশো’র মাধ্যমে দেশের পুঁজিবাজারকে বিদেশিদের কাছে তুলে ধরা ও বিনিয়োগের সম্ভাবনা সম্পর্কে অবগত করা হবে। পুঁজিবাজারে বিদেশি বিনিয়োগের যে সম্ভাবনা রয়েছে, সেটা তুলে ধরে বিনিয়োগের আহ্বান জানানো হবে। তিনি বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের নন-রেসিডেন্ট বাংলাদেশিরা অনেকেই পুঁজিবাজারে আসে না। তাদের পাঠানো রেমিট্যান্সে পুঁজিবাজারে বিনিয়োগের সুযোগ ও সম্ভাবনা থাকলেও সেটা জানে না। এ জন্যই রোডশো’র মাধ্যমে তাদেরকে বিনিয়োগ সম্পর্কে উৎসাহিত করা হবে।
দ্বিতীয় উদ্যোগ : প্রতিষ্ঠার ২৭ বছরে উপনীত হলেও বিদেশি ও প্রবাসী বাংলাদেশিদের পুঁজিবাজারে টানতে দুবাইয়ের পর দ্বিতীয়বারের মতো মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের বড় শহরগুলোতে এ উদ্যোগ নিয়েছে বিএসইসি। দেশের বাইরে বাংলাদেশের পুঁজিবাজার সম্পর্কে ব্যাপকভাবে তুলে ধরে বিনিয়োগে উৎসাহিত করার উদ্যোগ আগে নেয়া হয়নি। কমিশনের কর্মকর্তারা মনে করছেন, করোনার কারণে বিশ্বে বিনিয়োগের পরিবেশ সঙ্কুচিত হয়েছে। কিন্তু অন্যান্য দেশের তুলনায় বাংলাদেশের অর্থনীতির অবস্থা কিছুটা হলেও ভালো অবস্থানে রয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রের বড় শহরগুলোতে থাকা নন-রেসিডেন্ট বাংলাদেশী ও বিদেশীদের বিনিয়োগে সম্ভাবনা রয়েছে। ২০১৯ সালে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে কৌশলগত অংশীদার হিসাবে বিনিয়োগ করেছে চীনের সাংহাই স্টক এক্সচেঞ্জ ও শেনজেন স্টক এক্সচেঞ্জ।##
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।