বাড়াবাড়ি ও ছাড়াছাড়ির কবলে শবে বরাত-৩
সুনানে ইবনে মাজায় বর্ণিত হয়েছে : হযরত আলী ইবনে আবু তালেব (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ
হিজরি ১৪৪২ সালের শেষ পাদমূলে দাঁড়িয়ে আছে শশাগড়া এই পৃথিবী। এই পৃথিবীর অধিবাসীদের মধ্যে সর্ববৃহৎ দল খ্রিষ্টানরা ইঞ্জিলের ব্যবস্থাকে আল্লাহ প্রদত্ত অবশ্য পালনীয় ব্যবস্থা বলে দাবি করে। যদিও আসল ইঞ্জিলকে পরিবর্তন ও পরিবর্ধন করা হয়েছে বহুবার। একই সাথে মুশরিকরা বিশ্বজনতার দ্বিতীয় বৃহৎ দল হিসেবে নিজেদের বিভিন্ন দল ও স্ব-স্ব ধর্মীয় আচার অনুষ্ঠানকে আল্লাহ প্রদত্ত বিধান বলেই দাবি করে থাকে। তাদের কোনো আসমানী কিতাব নেই। যে সকল কিতাবাদি তারা অনুসরণ করে, তা সবই মানুষের লেখা। মানুষের পরিপূর্ণ জীবন ব্যবস্থার রূপ রেখা সে সকল পুস্তকে পাওয়া যায় না। তার পর বিশ্ব মানবের তৃতীয় বৃহৎ দল হচ্ছে মুসলমান। তাদের ধর্মগ্রন্থের নাম আল কোরআন। যাতে রয়েছে জীবন ও জগতের যাবতীয় ব্যবস্থাপনার মূল উৎস। এই কিতাবটি আসল কিতাব হিসেবে পৃথিবীর বুকে টিকে আছে এবং থাকবে। কোনো মানুষের পক্ষে এই কিতাবের পরিবর্তন ও পরিবর্ধন সম্ভব নয়। কারণ, মহান আল্লাহপাক স্বয়ং এই কিতাবের হেফাজতকারী।
তারপর আসে ইয়াহুদীদের কথা। তারা তাওরাতের ব্যবস্থাকে আল্লাহ প্রদত্ত পালনীয় ব্যবস্থা বলে দাবি করে। অথচ তারা নিজেরাই মূল তাওরাত কিতাবকে রদবদল করে ফেলেছে। বর্তমানে যে তাওরাত পাওয়া যায়, তা আসল তাওরাত নয়। প্রচলিত তাওরাতের সকল কথা ওহী নয়। এতে বোঝা যায় যে, কোনো মানুষের মস্তিষ্ক নিঃসৃত ব্যবস্থা অথবা কিছু সংখ্যক লোকের রচিত ব্যবস্থা ও পরিকল্পনাকে ঐশী বিধান বলে জনগণের ওপর চাপিয়ে দেয়া বিবেক ও ন্যায় বিচারের পরিপন্থী ও আত্মপ্রবঞ্চনা ছাড়া কিছুই নয়।
তবে বিশ্ব জাহানের স্রষ্টা ও পালনকর্তা মহান আল্লাহপাক সর্বশেষ আসমানী কিতাব আল কোরআনকে চিরস্থায়ী ব্যবস্থাপত্র হিসেবে নাযিল করেছেন। তিনি অত্যান্ত সাবলিল ও বিজ্ঞজনোচিত ভঙ্গিতে ইরশাদ করেছেন : আর তোমরা সকলে আল্লাহর রজ্জুকে সুদৃঢ়ভাবে ধারণ কর, পরস্পর বিচ্ছিন্ন হয়ো না। আর তোমরা সে নেয়ামতের কথা স্মরণ করো, যা আল্লাহপাক তোমাদের দান করেছেন। তোমরা পরস্পর শত্রু ছিলে। অতঃপর আল্লাহপাক তোমাদের মনে সম্প্রীতি দান করেছেন। ফলে, এখন তোমরা তাঁর অনুগ্রহের কারণে পরস্পর ভাই ভাই হয়েছে। তোমরা এক অগ্নিকুণ্ডের পাড়ে অবস্থান করছিলে। অতঃপর তা’ থেকে তিনি তোমাদেরকে মুক্তি দিয়েছেন। এভাবেই আল্লাহপাক নিজের নিদর্শনসমূহ প্রকাশ করেন, যাতে তোমরা হেদায়েতপ্রাপ্ত হতে পার। (সূরা আলে ইমরান : ১০৩)
এই আয়াতে কারীমায় শুরুতেই সর্বপ্রথম মানুষকে বিশেষ করে মুসলমানদেরকে পরস্পর ঐক্য বন্ধনে আবদ্ধ হওয়ার নির্দেশ দেয়া হয়েছে এবং বিভেদ ও বিচ্ছিন্নতা সৃষ্টি করতে নিষেধ করা হয়েছে। কিন্তু বর্তমান বিশ্বের চলমান অবস্থা এই সাক্ষ্য প্রদান করে যে, গোটা মানবজাতি বিভিন্ন দল, উপদল ও ধর্ম মতে বিভক্ত হয়ে পড়েছে। এমন কি মুসলমান সমাজ ও শতধাবিভক্ত হয়ে অনৈক্যের নাগরদোলায় চড়ে দিন দিন ধ্বংসের দিকে এগিয়ে চলেছে।
বিশ্বের কম-বেশি ৫৮টি মুসলিম রাষ্ট্রের মধ্যে কোনো ঐক্য নেই, সংহতি নেই, আল্লাহর রজ্জুকে সবাই মিলে ধারণ করার প্রবণতা নেই। একদিকে করোনা আক্রান্ত মুসলিম রাষ্ট্রগুলো জনবল ও অর্থবল হারিয়ে নিঃস্ব ও অসহায় হয়ে পড়ছে এবং অন্য দিকে আল্লাহর রজ্জুকে দৃঢ়ভাবে ধারণ না করে আল্লাহদ্রোহী শক্তির হাতের পুতুলে পরিণত হয়ে চলেছে। দিন দিন অবনতির এমন এক পর্যায়ে এসে পৌঁছেছে যে, ইসলামী জীবন ব্যবস্থার মৌলিক স্তম্ভগুলোর মূল উৎপাটন করার সকল যোগার যন্ত্র সহজলভ্য করা হয়েছে।
এহেন নাজুক মুহূর্তে প্রত্যেক মুসলমানের উচিত আল্লাহর রজ্জু কী এবং কেমন তা উপলব্ধি করা ও তা দৃঢ়ভাবে আকড়ে ধরা। উল্লিখিত আয়াতে কারীমায় আল্লাহর রজ্জু বলতে আল কোরআনকে বুঝানো হয়েছে। হযরত আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রা.) হতে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন : আল কোরআন হলো আল্লাহ তায়ালার রজ্জু যা আসমান হতে জমিন পর্যন্ত প্রলম্বিত। (তাফসীরে ইবনে কাছির)।
হযরত যায়েদ ইবনে আরকাম (রা.) এর রেওয়ায়েতে বলা হয়েছে, আল্লাহর রজ্জু হচ্ছে কোরআন, অথবা দ্বীন ইসলাম। আল কোরআন অথবা দ্বীনকে রজ্জু বলার কারণ হলো এই যে, এটা একদিকে আল্লাহ তায়ালার সাথে দুনিয়ার মানুষের বিশেষ করে মুসলমানদের সম্পর্ক কায়েম করে এবং অন্যদিকে ঈমানদারদেরকে পরস্পর ঐক্যবন্ধ করে একদল ও এক জামাতে পরিণত করে। এই একতা ও ঐক্যবদ্ধতাই মুসলমানদের জাতীয় শক্তির ভিত্তি। এই বিশেষত্বটি মুসলমানগণ যত তাড়াতাড়ি উপলব্ধি করতে পারবে ততই মঙ্গল।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।