Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

জেনারেল হাসপাতালসহ ১০ উপজেলায় ১৭৬ চিকিৎসকের বিপরীতে আছে মাত্র ৮৬ জন

রাঙ্গামাটিতে স্বাস্থ্যসেবার বেহাল অবস্থা

প্রকাশের সময় : ২৯ সেপ্টেম্বর, ২০১৬, ১২:০০ এএম

‘লিখিত অনুরোধ জানানোর পরও প্রশাসন কেন উদাসীন বোধগম্য নয়’
রাঙ্গামাটি জেলা সংবাদদাতা

রাঙ্গামাটি জেনারেল হাসপাতালের চিকিৎসা ব্যবস্থা ভেঙে পড়েছে। ডাক্তার সংকট, জনবল সংকট ও সেবার মান, অবকাঠামো, পরিবেশ ও পারিপার্শ্বিক অবস্থা কোনো কিছুই রোগীবান্ধব নয় বলে অভিযোগ করেছেন হাসপাতালে আগত রোগীরা। এই হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে আসা রোগী সুস্থতো দূরে থাক আরো বেশি অসুস্থ হয়ে পড়ছে। রাঙ্গামাটি জেলা পরিষদের হাতে ন্যস্ত হলেও পরিষদের নজরদারি না থাকায় এই হাসপাতালের কার্যক্রম আরো বেশি ঝিমিয়ে পড়েছে। রাঙ্গামাটি জেনারেল হাসপাতালসহ দশটি উপজেলা স্বাস্থ্যকেন্দ্রে চিকিৎসকদের মঞ্জুরিকৃত পদের সংখ্যা হচ্ছে ১৭৬ জন। এর বিপরীতে রয়েছেন মাত্র ৮৬ জন চিকিৎসক। হাসপাতালের ভেতরের যেমন অবকাঠামোগত বেহাল অবস্থা তেমনি বাইরের চারপাশের অবস্থা। জেনারেল হাসপাতাল চত্বর ময়লা- আবর্জনা আর দুর্গন্ধে বেসামাল অবস্থা হাসপাতাল এলাকায় স্থায়ীভাবে বসবাসকারী ও রোগীদের। ৫০ শয্যাবিশিষ্ট এই হাসপাতালটি ১৯৮৬ সালে সরকারিভাবে ১০০ শয্যা ঘোষণার পরও অবকাঠামোগতভাবে এখনো চলছে সেই ৫০ শয্যা হাসপাতালের সরঞ্জাম দিয়ে। প্রতিদিন রোগী থাকে ২ শতাধিক। নেই কেবিনের পর্যাপ্ত ব্যবস্থা। ২টি মাত্র কেবিন দিয়ে চলছে যুগ যুগ ধরে। প্রতিদিনের রোগীদের চিকিৎসা ও সার্বিক ব্যবস্থাপনার জন্য ডাক্তার, নার্স, অ্যাম্বুলেন্স ও জনবল সংকট লেগেই আছে। রাঙ্গামাটি জেনারেল হাসপাতালের জন্য স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় থেকে বরাদ্দকৃত সরঞ্জামগুলো ঢাকা থেকে যখন রাঙ্গামাটি আনা হয় তখন সেসব সরঞ্জাম পাওয়া যায় বেশিরভাগই ব্যবহার অযোগ্য এবং নষ্ট। স্থানীয়ভাবে এসব সরঞ্জাম ক্রয় ও মেরামত করার কোনো টাকা বরাদ্দ নেই। এতে হাসপাতালের সরঞ্জাম সবসময়ে অপূরণীয় থাকে। জেনারেল হাসপাতালের বাইরে রাস্তার বেহাল দশা। যেটুকু রাস্তা সেটারও বেহাল দশা। ভাঙা, গর্ত আর আবর্জনায় ভরপুর। রাঙ্গামাটি-চট্টগ্রাম মূল সড়ক থেকে জেনারেল হাসপাতালের সংযোগ সড়কের স্থানে বিটিসিএল তাদের ক্যাবল বসানোর সময় হাসপাতালের রাস্তাটি কেটে ফেলে যা অদ্যাবধি মেরামত করে দেয়নি। এতে রোগীবাহী গাড়িগুলো হাসপাতালের প্রবেশপথে চলাচল করতে অসুবিধা হচ্ছে। এছাড়া জেনারেল হাসপাতালের মূল রাস্তা অবৈধভাবে দখল করে রেখেছে রাঙ্গামাটি জেনারেল হাসপাতালের কতিপয় কর্মচারী ও সাধারণ ব্যবসায়ীরা। নার্সিং ডরমিটরি (আন্টাগার) যে নার্সেস কর্মকর্তারা অবস্থান করছেন, তাদেরও রয়েছে চাপা ক্ষোভ। সরকারিভাবে প্রতি মাসে ভাড়া আদায় করা হচ্ছে অথচ বৈদ্যুতিক সুইচবোর্ড নষ্ট, পয়ঃনিষ্কাশনের স্যুয়ারেজ পাইপ নষ্ট, দরজা-জানালা ভাঙা মেয়াদ উত্তীর্ণ ঝুঁকিপূর্ণ বসবাসের অযোগ্য নার্সিং ডরমিটরির নেই কোনো নিরাপত্তার বাউন্ডারি প্রাচীর। নার্সিং ডরমিটরির বাইরে চারপাশে রয়েছে ঝুঁকিপূর্র্ণ রেন্টি কড়াই ও ইউ কালেক্টর গাছ। এছাড়া লাশকাটা ঘরটি স্যাঁতসেঁতে তার চারপাশ ডাবের খোলস দিয়ে ভর্তি হয়ে আছে। হাসপাতালের রোগীদের যে খাবার পরিবেশন করা হচ্ছে সেই খাবারগুলো তৈরি হচ্ছে অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে। হাপাতালের প্রাচীরের ভেতর অবৈধ দখলদারদের কবল থেকে রক্ষা করা গেলে হাসপাতালের পরিবেশ যেমন ফিরে আসবে তেমনি মেডিকেল কলেজের অবস্থানও মজবুত হবে। হাসপাতালের সীমানা প্রাচীরের ভেতরে কতিপয় ব্যক্তি পানির রিংওয়েল নির্মাণসহ প্রায় পঞ্চাশ শতক জায়গাজুড়ে রীতিমত প্রতি বছর মৌসুমি সবজির ক্ষেত বানিয়ে নিজস্ব ভূমির ন্যায় চাষাবাদ করছে। লাকড়ি ব্যবসায়ী, সিএনজি চালক, ঠেলাগাড়ি চালক, ভাঙারি ব্যবসায়ীরা যত্রতত্র ঠেলাগাড়ি ও ভাঙারির ঠেলা রেখে দিয়েছে। বিষয়গুলো নিয়ে প্রতি মাসে রাঙ্গামাটি জেলা আইনশৃঙ্খলা কমিটির সভায় হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ বারবার উত্থাপন করলেও অজ্ঞাত কারণে স্থানীয় আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারী প্রশাসন কোনো পদক্ষেপ নিচ্ছে না। রাঙ্গামাটি জেলার স্বাস্থ্য বিভাগের বেহাল দশা এবং নানা সমস্যায় জর্জরিত বিষয়ে প্রতিবেদককে রাঙ্গামাটি জেলা সিভিল সার্জন ও রাঙ্গামাটি সদর হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডা. ¯েœহ কান্তি চাকমার কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, রাঙ্গামাটি পার্বত্য জেলায় জেলা সিভিল সার্জন কার্যালয়ে চিকিৎসক থাকার কথা ৫ জন রয়েছেন ৩ জন, রাঙ্গামাটি জেনারেল হাসপাতালে থাকার কথা ৩১ জন রয়েছেন ১৮ জন, সদর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে থাকার কথা ৯ জন রয়েছেন ৩ জন, লংগদু উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে থাকার কথা ১৬ জন রয়েছেন ৮ জন, বাঘাইছড়ি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে থাকার কথা ১৬ জন রয়েছেন ৬ জন, বিলাইছড়ি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে থাকার কথা ১২ জন রয়েছেন ৩ জন, রাজস্থলী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে থাকার কথা ১২ জন রয়েছেন ৭ জন, জুরাছড়ি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে থাকার কথা ১৩ জন রয়েছেন ৬ জন, নানিয়ারচর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে থাকার কথা ১৩ জন রয়েছেন ৫ জন, কাপ্তাই উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে থাকার কথা ১৬ জন রয়েছেন ১০ জন, কাউখালী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে থাকার কথা ১৩ জন রয়েছেন ৩ জন, বরকল উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে থাকার কথা ১৪ জন রয়েছেন ৪ জন ও রাঙ্গামাটি সদরে বিদ্যালয় স্বাস্থ্যকেন্দ্রে থাকার কথা ২ জন রয়েছেন ১ জন, বক্ষব্যাধি হাসপাতালে থাকার কথা ২ জন রয়েছেন ১ জন, রাঙ্গামাটি পুলিশ হাসপাতালে থাকার কথা ১ জন রয়েছেন ১ জন ও রাঙ্গামাটি জেলা কারাগারে থাকার কথা ১ জন রয়েছেন ১ জন। রাঙ্গামাটি জেনারেল হাসপাতালসহ দশটি উপজেলা স্বাস্থ্যকেন্দ্রে চিকিৎসকদের মঞ্জুরিকৃত পদের সংখ্যা হচ্ছে ১৭৬ জন। এর বিপরীতে রয়েছেন মাত্র ৮৬ জন চিকিৎসক। সিভিল সার্জন বলেন, হাসপাতালের জায়গা পরিমাপ পরিচিহ্নিত করে অবৈধ দখলদারদের উচ্ছেদ করতে হবে। অবৈধ দখলদারদের তাৎক্ষণিকভাবে উচ্ছেদ করা প্রয়োজন আছে। হাসপাতালের জায়গা পরিমাপ পরিচিহ্নিত করে এসব অবৈধ দখলদারদের উচ্ছেদ করে হাসপাতালের জায়গা বুঝিয়ে দেয়ার জন্য হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ স্থানীয় প্রশাসনের কাছে বারবার লিখিতভাবে অনুরোধ জানানোর পরও প্রশাসন কেন পদক্ষেপ নেয় না, কেন প্রশাসন নীরব ভূমিকা পালন করে, কেন উদাসীন তা আমার বোধগম্য নয়। হাসপাতালের চারপাশে ময়লা-আবর্জনা আর দুর্গন্ধের বিষয়ে সিভিল সার্জন বলেন, আমাদের হাসপাতাল ও বিভিন্ন ওয়ার্ড সবসময় পরিচ্ছন্ন থাকে কিন্তু চারপাশের যে ময়লা-আবর্জনা সেগুলো পৌর কর্তৃপক্ষ কেন পরিষ্কার করে না আমি জানি না, সেসব আবর্জনা নেয়া ও পরিচ্ছন্ন রাখার দায়িত্ব পৌরসভা কর্তৃপক্ষের। হাসপাতালের চারপাশ কেন পরিষ্কার করে না ব্যাপারটা পৌর কর্তৃপক্ষকে জিজ্ঞাসা করবেন। প্রধান সড়ক থেকে হাসপাতালে যাওয়ার পথে যে ডাস্টবিন সেটাও অপরিষ্কার, মূল সড়কে প্রধান ডাকঘরের সামনে ডাস্টবিন সেটাও অপরিষ্কার, দুর্গন্ধে রাস্তা দিয়ে যাওয়া যায় না। হাসপাতাল এলাকায় নার্সিং হোস্টেলের আগে-পিছে জায়গাগুলোর পরিবেশ মারাত্মকভাবে নষ্ট করে ফেলেছে বহিরাগত আশপাশের লোকজন। পৌরসভার কাজ কি আমি বুঝি না। জেলার জনগুরুত্বপূর্ণ একটা প্রতিষ্ঠান জেনারেল হাসপাতাল, সরকার তথা জনগণের সম্পদের এমন দশা, অথচ কোনো প্রশাসনই হাসপাতালের পরিবেশ সুরক্ষা, সংরক্ষণের ব্যাপারে কোনো পদক্ষেপ নেয় না বলে ক্ষোভ প্রকাশ করেন রাঙামাটি জেলা সিভিল সার্জন। ডা. ¯েœহ কান্তি চাকমা বলেন, আমি নিজে জানি না কেবা কারা জেনারেল হাসপাতাল বাউন্ডারির ভেতর দোকানপাট করতেছে, কারা এসব দোকানপাটের ভাড়া নিচ্ছে। আমি মনে করি, এ জনগুরুত্বপূর্ণ প্রতিষ্ঠান তথা জেলার সম্পদ রক্ষায় দলমত নির্বিশেষে একমত পোষণ করা উচিৎ।

 



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: জেনারেল হাসপাতালসহ ১০ উপজেলায় ১৭৬ চিকিৎসকের বিপরীতে আছে মাত্র ৮৬ জন
আরও পড়ুন
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ