Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

ফুলবাড়ীতে নামমাত্র মূল্যে কোরবানির পশুর চামড়া বেচা-কেনা

চামড়ার বাজারে ধস,বঞ্চিত দুস্থরা

ফুলবাড়ী(দিনাজপুর)প্রতিনিধি | প্রকাশের সময় : ২৩ জুলাই, ২০২১, ৫:০৯ পিএম

দিনাজপুরের ফুলবাড়ীতে করোনার প্রভাবে এবছর পশু কোরবানির পরিমাণ অর্ধেকেরও নিচে নেমেছে। গত বছর যে পরিমাণ চামড়া বেচাকেনা হয়েছিল এবার তারচেও কম চামড়া কেনা হয়েছে। এবার মৌসুমী চামড়া ব্যবসায়ীদেরও তেমন একটা দেখা মেলেনি। পানির দরে বিক্রি হয়েছে কোরবানির পশুর চামড়া। অনেকটা নামমাত্র মূল্যে বিক্রি হয়েছে এবারের কোরবানির পশুর চামড়া। সবমিলিয়ে বলা যায় চামড়ার বাজারে ধস নেমেছে। আর এতে বঞ্চিত হয়েছে দুস্থ্য ও এতিমখানা গুলো।
প্রকারভেদে প্রতিটি গরুর চামড়া ১০০ থেকে ৪০০ টাকা ও ছাগলের চামড়া ৫-১০ টাকায় কেনা হয়েছে। তবে বড় গরুর চামড়া সর্বোচ্চ ৫০০ টাকায় বিক্রি হয়েছে। মূল্য কম হওয়ায় অনেক কোরবানিদাতা চামড়া বিক্রি না করে নদীতে ফেলে দিয়েছেন কেউ মাদরাসাসহ বিভিন্ন ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানে দান করেছেন।

চামড়া ব্যবসায়ী সূত্রে জানা গেছে,দিনাজপুরের ফুলবাড়ীতে ঈদের দিন সকাল ১১টার পর থেকে চামড়া কেনাবেচা শুরু হয়। গরুর চামড়া ১০০ টাকা (গাভী) থেকে ৪০০ টাকায় (ষাঁড়) বিক্রি হয়েছে। তবে বড় সাইজের গরুর চামড়া (২৫-৩০ বর্গফুট) ৫০০ থেকে ৫৫০টাকায় কেনা হয়েছে। ছাগলের চামড়া বিক্রি হয়েছে ৫ টাকা থেকে ১৫ টাকায়। ভেড়ার চামড়ার দাম দেয়া হয়নি। বিক্রেতারা অনেকে গরুর চামড়ার সাথে ছাগলের চামড়া ফ্রি দিয়ে গেছেন ব্যবসায়ীদের।
স্থানীয় পৌর প্যানেল মেয়র মোঃ মামুনুর রশিদ চৌধুরী বলেন, এখানকার বেশিরভাগ বাসিন্দা যৌথভাবে কোরবানির আয়োজন করেছিলেন। তিনি বলেন, করোনার কারণে অনেকের আয় কমেছে। আবার অনেকের চাকরি ও ব্যবসা নেই, ফলে কোরবানির এই অবস্থা। কাঁটাবাড়ী নয়াপাড়া গ্রামের বাসিন্দা সাখয়াত হোসেন জানান,গত বছর তাদের গ্রামে ১৫টি পশু কোরবানি হয়েছিল। এবার সেখানে ৪টি কোরবানি হয়েছে। মাদিলা হাটের কোরবানীদাতা রইস উদ্দিন জানান, তিনি অনেক দরকষাকষি করে একটি গরুর চামড়া বিক্রয় করেছেন মাত্র ১৬০টাকায়।

বেজাইমোড় এলাকার শহিদুল ইসলাম বলেন তিনি ৫টি ছাগলের চামড়া ৪০ টাকা ভ্যান ভাড়া দিয়ে বাজারে বিক্রি করতে এনেছেন ব্যবসায়ীরা ৫টি ছাগলের চামড়া ২৫ টাকা দাম বলেছেন তাই তিনি চামড়া গুলো নদীতে ফেলে দেবেন বলে জানান।

ফুলবাড়ী উপজেলার অধিকাংশ এলাকায় এবারের কোরবানির পশুর চামড়া বিক্রির একই চিত্র লক্ষ্য করা গেছে । ফুলবাড়ী বাজারের চামড়ার ফড়িয়া ব্যবসায়ীরা বলেছেন, গতবারের চেয়ে এবার অর্ধেকরও কম পরিমাণ চামড়া তারা সংগ্রহ করেছেন ।
চামড়া ব্যবসায়ী কোরবান আলী,সাইলু,মজিবরসহ অনেকে জানান, গত বছর তারা যে পরিমান চামড়া সংগ্রহ করেছিলেন। এবার দর পতনের কারনে তার চেয়ে অনেক কম চামড়া সংগ্রহ হয়েছে।

ফুলবাড়ীর চামড়া ব্যবসায়ী শাকিল আহম্মেদ জানান হাজারী বাগের পুরোনো একটি ট্যানারী ছিলো,এখন নাই। সেই সাথে বিদেশে চামড়া রপ্তানি হচ্ছেনা সে কারনে চামড়ার চাহিদা কমে যাওয়ায় চামড়ার এই দর পতন।

পাইকারী চামড়া ব্যবসায়ী সেলিম জানান,তিনি হিলি থেকে ফুলবাড়ী এসেছেন চামড়া কিনতে তিনি এবার একটি গরুর চামড়া কিনছেন ২৫০-৪৫০টাকা পর্যন্ত,ছাগলের চামড়া ১৫-২০টাকা পর্যন্ত। তিনি প্রতি বছর এক হাজার চামড়া কেনেন কিন্তু এবছর চামড়া কিনেছেন ৬শ টি। তিনি বলেন লকডাউন আর বর্তমান করোনা পরিস্থিতির কারনে খুব বেশি চামড়া কিনতে সাহস পাচ্ছেন না তিনি।

এদিকে কোরবানির গরু-ছাগলের চামড়ার কেনাবেচা নিয়ে বিক্রেতা ফরিয়া ও বেপারি, তিনপক্ষই অসন্তুষ্ট। বিক্রেতারা বলছেন, সরকারের নির্ধারিত মূল্য পাচ্ছেন না তারা। ফরিয়ারা বলছেন,যে দামে বিভিন্ন মহল্লা থেকে চামড়া কিনেছে, সেই দামে বেপারিদের কাছে বিক্রি করতে পারছেন না তারা। আর বেপারিরা বলছেন,যে দামে চামড়া কেনার কথা সে দামে পাচ্ছেন না তারা। চামড়ার এই দরপতন করোনা মহামারি আর ট্যানারি মালিকদের কারনকেই এমনটিই দাবী স্থানীয় ব্যবসায়ীদের।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: চামড়া বেচা-কেনা
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ