Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

কিংকোবরার কামরে সুমনের মৃত্যু : সাপ মেরে প্রতিশোধ নিলেন স্বজনরা

মৌলভীবাজার জেলা সংবাদদাতা | প্রকাশের সময় : ১৯ জুলাই, ২০২১, ১:৫৬ পিএম

শ্রীমঙ্গল জেরিন চা বাগানে সুমন মিয়াকে কামর দেয়া কিংকোবরাকে মেরে সুমন হত্যার প্রতিশোধ নিয়েছে স্বজনরা। খবর পেয়ে রবিবার সন্ধায় সুমন মিয়ার বাড়ি থেকে জীবিত ৩টি ও বাড়ির পাশে চা বাগানের সেকশন থেকে মৃত অবস্থায় আরো ২টি বিষাক্ত সাপ উদ্ধার করে বন বিভাগ।
বাংলাদেশ বন্যপ্রাণী সেবা ফাউন্ডেশনের পরিচালক সজল দেব জানান, জেরিন চা বাগানের শ্রমিক বিষামনি এলাকার বাসিন্দা সুমন মিয়া সাপ ধরেতে জানতো এবং যে সাপে কামর দিয়েছে এটি সে দুদিন আগেই ধরেছে। শনিবার সাপের দাঁত ভাংতে গিয়ে একটি কিংকোবরা সাপ তাকে কামর দেয় এবং হাসপাতাল যাওয়ার পর সে মারা যায়। এদিকে রবিবার তার জানাজার পরে তাকে দাফন করার পর তার পরিবারের লোকজন যে সাপ কামর দিয়েছিলো সেটিসহ আরো একটি বিষাক্তখইয়া গোকরা সাপ কে হত্যা করে সুমন হত্যার প্রতিশোধ নেয়। পরে সাপ দুটিকে তারা চা বাগানের সেকশনে পরিত্যাক্ত জায়গায় ফেলে আসে।
এদিকে তাদের ঘরে সাপ রয়েছে এমন খবরের রোববার সন্ধ্যায় বন বিভাগ ও শ্রীমঙ্গল বন্যপ্রাণী সেবা ফাউন্ডেশনের কর্মকর্তারা সাপ উদ্ধারে প্রয়াত সুমন মিয়ার বাড়িতে গেলে পরিবারের লোকজন তাদের সাপের দুটি বাক্স তাদের হাতে তুলে দেন। সাপগুলো নিয়ে যখন লাউয়াছড়ারে রেসকিউসেন্টারে বক্স খুলেন তখন সেখানে দুটি দাড়াশ সাপ বা দুধরাজ সাপ দেখতে পান সজলদেব জানান, এ সাপের কামরে কোন মানুষ মারা যায় না। এদের কাছে আরো সাপ রয়েছে। সজল দেবের পীড়াপিড়িতে বনবিভাগের কর্মীরা আবারও ফিরে আসে তার বাড়িতে। আরও সাপ আছে জিজ্ঞেস করলে প্রথমে সুমনের পরিবার তা অস্বীকার করে। পরে বন বিভাগ ভয় দেখালে তারা ঘর থেকে আরো একটি দূলর্ভ প্রজাতির কালনাগিনি সাপ বেরকরে দেয়। যে সাপে কামর মেরেছে সে সাপকে মেরে ফেলে দিয়েছে বলে তারা জানায়। তাদের কথা মতো জেরিন চা বাগানের বিষামনী সংলগ্ন একটি পরিত্যাক্ত জায়গা থেকে মেরে ফেলা দুটি বিষাক্ত সাপকে উদ্ধার করে বন বিভাগ। মেরে ফেলা সাপের মধ্যে একটি কিংকোবরা অপরটি খইয়া গোকরা। দুটি সাপে মারাত্মক বিষ রয়েছে।
এ ব্যপারে মৃত সুমনের স্ত্রী রাবেয়া বেগম জানান, স্বামী হত্যার প্রতিশোধ নিতে তারা বিষাক্ত এই সাপ দুটিকে মেরে ফেলে দেন।
লাউয়াছড়া বনরেঞ্জ কর্মকর্তা শহিদুল হক জানান, জীবিত সাপ তিনটি কে জানকিছড়ারে সকিউ সেন্টারে রাখা হয়েছে এবং মৃত সাপ দুটি কেমাটি চাপা দেয়া হয়েছে।
জেরিন চা বাগানের ব্যবস্থাপক সেলিম রেজা চৌধুরী জানান, মানুষের বাড়িতে বা ঘরে সাপের উৎপাত হলে সুমনের ডাক পরতো। সুমন সেখানে গিয়ে সাপ ধরে নিয়ে আসতেন। একই ভাবে সুমনের বাবা ও সাপ ধরতে পারতেন। তিনি জানান, শনিবার দুপুরে তাদের বাগানের স্থায়ী শ্রমিক মৃত বাবুল মিয়ার ছেলে সুমন মিয়াকে একটি বিষাক্ত সাপ কামর দেয়। তিনি জানান, সুমন নিজেই সাপ ধরতে জানতেন এবং দু দিন আগে এই সাপটিকে তিনি নিজেই ধরে ছিলেন। তিনি চা বাগানে কাজের পাশাপাশি সাপে কামরের জড়ি বিক্রি করতেন। নিজে সাপের জড়ি দিতেন তাই সাপের কামর খেয়ে প্রথমে নিজেই নিজের চিকিৎসা শুরু করেন। কিন্তু তার অবস্থা যখন অবনতির দিকে যায় তখন তিনি খবর পান। সাথে তাকে বাগানের গাড়ি দিয়ে প্রথমে শ্রীমঙ্গল ৫০ শয্যা হাসপাতালে, সেখান থেকে মৌলভীবাজার ২৫০ শয্যা হাসপাতালে পরে সিলেট ওসমানী হাসপাতালে নিয়ে গেলে সন্ধার দিকে সিলেটেই তিনি মারা যান। এ দিকে মারা যাওয়ার পর রাতেই তার মরদেহ নিয়ে আসা হয় বাগানে। তবে তার পরিবারের লোকজন তাকে দাফন না করে সাপে কাটার উজা ডাকেন। গভীর রাতে উজা এসে তার আর প্রাণ ফেরার সম্ভাবনা নেই বলে জানালে রবিবার সকাল ১১টায় জানাজা শেষে তাকে দাফন করা হয়।
৩নং শ্রীমঙ্গল ইউনিয়ন পরিষদের সদস্য বিশ্বজিৎ দেব বর্মা জানান, সুমনের বাবা ও সাপ ধরা জানতেন। সুমন মিয়া ও সাপ ধরতে পারতো। এ কাজ সুমনের ভাইসহ পরিবারের অনেকেই জানেন। তিনি জানান, সাপটির কামর খাওয়ার পরেও তিনি সাপটিকে আটক করে তাদের ঘরে রেখে ছিলেন।
এ ব্যাপারে শ্রীমঙ্গল বন্যপ্রাণী বিভাগ জানায়, কামর দেয়া এই সাপটিকে উদ্ধার করে শ্রীঘ্রইবনে অবমুক্ত করা হবে।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ