বাড়াবাড়ি ও ছাড়াছাড়ির কবলে শবে বরাত-৩
সুনানে ইবনে মাজায় বর্ণিত হয়েছে : হযরত আলী ইবনে আবু তালেব (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ
কোভিড-১৯ এখন বাংলাদেশে ব্যাপক রূপ নিচ্ছে। গত প্রায় দেড় বছর কমবেশি এই করোনা দেশে ছিল কিন্তু ইদানিং ভারতীয় ধরনের করোনা দেশের সীমান্তবর্তী জেলাগুলোয় আক্রমণ করে, ধীরে ধীরে সারাদেশে ছড়িয়ে পড়ছে। বর্তমানে পশ্চিমাঞ্চলীয় জেলা ও রাজধানীতে আক্রান্ত ও মৃত্যুর পরিমাণ অনেক। এমন সময় আমাদের সামনে ঈদুল আজহা উপস্থিত। পবিত্র হজও গত বছরের মতো এ বছরও সীমিত আকারে পালিত হবে। কেবল সউদী আরবে অবস্থানরত নানাদেশের ৬০ হাজার মানুষ হজ করতে পারবেন। কিন্তু স্বাভাবিক সময়ে এর সংখ্যা হয়ে থাকে ২৫/৩০ লাখ। ঈদ উপলক্ষে বাংলাদেশে লকডাউন শিথিল করা হয়েছে। মানুষ চলাফেরা করলেও খুব সতর্ক। স্বাস্থ্যবিধি মেনে সবকিছু করতে হচ্ছে। হাসপাতালে বেড ও আইসিইউ ভরে গেছে। নতুন রোগীর জায়গা হচ্ছে না।
এই ঈদ আপনার আমার মতোই কিছু লোকের জন্য হতে পারে জীবনের শেষ কোরবানির ঈদ। অনেকের জন্য হতে পারে জীবনের শেষ কোরবানি। অতএব, আল্লাহকে খুশি করার জন্য খুব নিষ্ঠার সাথে আমাদের এবারের কোরবানি অবশ্যই করা উচিত। যারা নিজেরা কোরবানির কাজটি আন্জাম দেয়ার শক্তি সাহস রাখেন না, তারা ইমাম আলেম বা অন্য কারো সহযোগিতায় বেশি করে পশু কিনে অভাবি মানুষকে দিয়ে দিন। নিজ এলাকায় বা পরিচিত লোকের গ্রামে ২০/৩০ জনের জন্য একটি পশু পাঠিয়ে দিন। নিয়্যত আপনি করবেন কোরবানির। গ্রহিতারা উপহার স্বরূপ গোশত বণ্টন করে নেবে। আর্থিক সঙ্কটের দিনে শত শত পরিবারকে কোরবানির গোশত পৌঁছে দেয়ার এটাই সুবর্ণ সুযোগ।
নবী করিম (সা.)-কে সাহাবিরা প্রশ্ন করলেন, এই কোরবানির বিনিময়ে আমরা কী পাব হে রাসূল। নবীজি বললেন, প্রতিটি পশমের বিনিময়ে সওয়াব। একজন বললেন, লেজের গোছার কি হবে? নবীজি (সা.) বললেন, লেজের গোছার প্রতিটি চুলেও একটি করে সওয়াব। (তিরমিজি শরিফ)। নবী করিম (সা.) বলেছেন, কোরবানি হচ্ছে তোমাদের পিতা হযরত ইবরাহীম (আ.)-এর সুন্নত। কোরবানি করার কথা পবিত্র কোরআনে বহু জায়গায় বলা হয়েছে। সূরা কাওসারে আল্লাহ বলেন, অতএব আপনি আল্লাহর জন্য নামাজ পড়ুন আর পশু কোরবানি করুন। (আল কোরআন ৩০)।
দোয়া কালাম পড়ে এবং স্বাস্থ্যবিধি মেনে হাট থেকে কোরবানির পশু কিনে কিংবা অনলাইনে পশু কিনে আল্লাহর ওয়াস্তে কোরবানি করতে হবে। নিজে কেনার ঝামেলায় না গিয়ে আগ্রহী মানুষকে দায়িত্ব দিলেও চলে। তারা পশু কেনা থেকে শুরু করে গোশত তৈরি পর্যন্ত করে দিতে পারে। কোরবানির গোশত নিজে যতটুকু ইচ্ছা রাখা যায়। একভাগ আত্মীয়, পাড়া-প্রতিবেশী। আরেকভাগ অভাবি মানুষকে প্রদান করা উত্তম। কেউ নিজের ওয়াজিব কোরবানির পর নফল হিসাবে আরো বহু কোরবানি দিতে পারেন। নবী করিম (সা.) একবার নিজ হাতে ৬০টি পশু কোরবানি দেন। তিনি জীবনের প্রতি বছর কোরবানি করতেন।
করোনার এ সময় কোরবানি না করার চিন্তা সঠিক নয়। এ সময়ে সবচেয়ে বেশি কোরবানি করা উচিত। এতে দেশের লাখো মানুষ নানাভাবে উপকৃত হয়ে থাকে। সাধারণত দেড় কোটি পশু কোরবানির সময় কেনাবেচা হয়। এবার ৯০ লাখের মতো পশু কোরবানির নিয়তেই পালন করে প্রস্তুত করা হয়েছে। এদিয়ে বিভিন্ন পর্যায়ের মানুষের ব্যাপক উপকার ছাড়াও দেশের অর্থনীতি চাঙ্গা হবে। আল্লাহর দেওয়া রিজিক পশুসম্পদের শুকরিয়াও আদায় হবে। যাদের আল্লাহপাক সামর্থ দান করেছেন, তাদের উচিত অভাবি আত্মীয়-স্বজনদের জন্য পশু কিনে দেওয়া, এলাকার অসহায় মানুষকে কোরবানির পশু দান করা, শ্রমিকদের কোরবানির পশু উপহার প্রদান করা। বিভিন্ন জায়গায় মাদরাসা ও এতিমখানায় একেকটি কোরবানির পশু কিনে দিয়ে দেওয়া। যাদের কোরবানি করার লোক নেই, তারা খোঁজ নিয়ে মাদরাসা ও এতিমখানায় দায়িত্ব দিতে পারেন। পশু কিনে কোরবানি করে আপনার বলে দেয়া অংশ আপনাকে পৌঁছে দিয়ে বাকিটা তারা রেখে দেবেন। কোরবানির পশুর চামড়া মাদরাসার লিল্লাহ বোর্ডিংয়ে দান করে দিন।
কোরবানির চামড়া মাদরাসার এতিমখানা ও লিল্লাহ বোর্ডিংয়ে দিলে দ্বিগুণ সওয়াব হয়। এক. দানের সওয়াব। দুই. দীনি শিক্ষা বিস্তারের সওয়াব। কোরবানির চামড়ার মূল্য বৃদ্ধি করে ব্যবসায়ীরা ও সরকার ইসলামী শিক্ষার প্রসারে অংশ নিতে পারে। এতে সবার উপর রহমত বরকত নেমে আসে। আজাব গজব ফিরে যায়। গত কয়েকবছর ধরে কোরবানির চামড়া নিয়ে এক ধরনের হতাশা চলছে। রফতানির সুব্যবস্থা করে এবং সীমান্ত দিয়ে চামড়া পাচার বন্ধ করে সরকার চামড়ার মূল্য যৌক্তিক এবং স্থিতিশীল করবেন এটাই প্রত্যাশা। করোনায় বেশি বেশি কোরবানি করে আসুন আমরা আল্লাহর সন্তুষ্টি ও দয়া লাভ করি। কোরবানির ওসিলায় আল্লাহ এই ভয়াবহ করোনা থেকে আমাদের হেফাজত করুন। সারাবিশ্বের মানুষকে হেদায়েত দান করে নিরাপদ রাখুন।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।