Inqilab Logo

শক্রবার ০৯ নভেম্বর ২০২৪, ২৪ কার্তিক ১৪৩১, ০৬ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

সিআরবি সুরক্ষায় অনড় চট্টগ্রামবাসী

প্রতিবাদী কর্মসূচিতে সর্বস্তরের মানুষ

চট্টগ্রাম ব্যুরো | প্রকাশের সময় : ১৯ জুলাই, ২০২১, ১২:০৪ এএম

হেরিটেজ ঘোষিত সংরক্ষিত সিআরবিতে কোন ধরনের স্থাপনা করতে দেয়া হবে না। যারা হাসপাতাল ও মেডিক্যাল কলেজসহ বাণিজ্যিক স্থাপনা নির্মাণের পক্ষে থাকবেন তারা চট্টগ্রাম বিদ্বেষী গণদুশমন হিসেবে চিহ্নিত হবেন। ইতিহাস-ঐতিহ্য ও সাংস্কৃতিক অনুসঙ্গ সিআরবির প্রাণ-প্রকৃতি ধ্বংস করে বাণিজ্যিক স্থাপনা নির্মাণের প্রতিবাদে গতকাল রোববার বিভিন্ন কর্মসূচিতে বক্তারা এসব কথা বলেন। তারা বলেন, ঐতিহ্য রক্ষায় চাটগাঁবাসী এখন ঐক্যবদ্ধ। দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত জনতার এ আন্দোলন অব্যাহত থাকবে।
সিআরবি সাত রাস্তার মাথা থেকে শুরু করে বিভিন্ন পয়েন্টে প্রতিবাদী মানববন্ধন, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান, বৃক্ষরোপণ, মুখাভিনয়, সাইকেল র‌্যালীসহ দিনভর নানা কর্মসূচিতে উত্তাল ছিল সিআরবির সবুজ চত্বর। এসব কর্মসূচিতে শরিক হন সর্বস্তরের পেশাজীবী, সাংস্কৃতিক কর্মী, রাজনৈতিক নেতা থেকে শুরু করে নানা শ্রেণি পেশার মানুষ। একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের উদ্যোগে ৫শ শয্যার হাসপাতাল, ১শ’ আসন বিশিষ্ট মেডিক্যাল কলেজ ও ৫০ আসনের নার্সিং ইনস্টিটিউট নির্মাণের প্রক্রিয়া শুরু হতেই প্রতিবাদে ফেটে পড়ে চট্টগ্রামবাসী। এক সপ্তাহের বেশি সময় ধরে সিআরবি সুরক্ষায় চলছে আন্দোলন কর্মসূচি। দলমত নির্বিশেষে সব মানুষের অংশগ্রহণে চলমান সামাজিক আন্দোলন অব্যাহত রাখার ঘোষণা দিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা। তারা বলছেন, হাসপাতালসহ সব ধরনের স্থাপনা নির্মাণ বন্ধের সিদ্ধান্ত না আসা পর্যন্ত প্রতিবাদ কর্মসূচি অব্যাহত থাকবে।
গতকাল পিপলস ভয়েস, বিপ্লবী তারেকেশ^র দস্তিদার স্মৃতি পরিষদ, বিন্দু ফাউন্ডেশন, বঞ্চিত নারী ও শিশু অধিকার ফাউন্ডেশন, চট্টগ্রাম উন্নয়ন ফাউন্ডেশনসহ বিভিন্ন সংগঠন প্রতিবাদী কর্মসূচি পালন করে। পিপলস ভয়েসের পক্ষ থেকে মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতি বিজড়িত স্থানে হাসপাতাল প্রতিষ্ঠার প্রতিবাদে মুক্তিযুদ্ধে শহীদ বীর মুক্তিযোদ্ধা চাকসুর সাবেক জিএস আবদুর রব-এর নামে ‘শহীদ আবদুর রব চত্বর’ ব্যানার ঝুলিয়ে দেয়। সংগঠনের নেতারা বলেন, মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতি মুছে দিতে এখানে হাসপাতাল নির্মাণ করা হচ্ছে। এ সুযোগ কাউকে দেয়া হবে না। পিপলস ভয়েসের উদ্যোগে প্রতিবাদী সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়।
চট্টগ্রাম উন্নয়ন ফাউন্ডেশনের উদ্যোগে অনুষ্ঠিত হয় প্রতিবাদ সভা। এতে সংগঠনের চেয়ারম্যান লায়ন ডা. আর কে রুবেল বলেন, চট্টগ্রামের ফুসফুস সিআরবিকে অবরুদ্ধ করে ইউনাইটেড যে হাসপাতাল করার ঘোষণা দিয়েছেন চট্টগ্রামের জনগণ ইতিহাস-ঐতিহ্যের সিআরবিতে কোন ধরনের স্থাপনা মেনে নিবে না। এখানে বিভিন্ন প্রজাতির পাখ-পাখালির আবাসস্থল। পহেলা বৈশাখসহ নানা অনুষ্ঠানের আয়োজন হয় সিআরবি শিরীষ তলায়। ছায়া ঘেরা পরিবেশ নগরবাসীর প্রাতঃ বৈকালিক ভ্রমন ও বিনোদনের কেন্দ্র এই স্থানটি। কিন্তু এখানে প্রাইভেট হাসপাতাল ও মেডিকেল কলেজ নির্মাণ করা হলে ফুসফুস ধ্বংস হয়ে যাবে। সিআরবিতে বাণিজ্যিক হাসপাতাল ও মেডিকেল কলেজ স্থাপনের প্রতিবাদে সেখানে মানববন্ধন ও বৃক্ষরোপণ করেছে কনজ্যুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ক্যাব) চট্টগ্রাম, ক্যাব যুব গ্রুপ, লায়ন্স ও লিও প্রগ্রেসিভ ওয়েস্ট। সাত রাস্তামোরে আয়োজিত মানববন্ধনে সংহতি জানিয়েছেন ক্যাব কেন্দ্রিয় কমিটির ভাইস প্রেসিডেন্ট এস এম নাজের হোসাইন, মহানগরের সভাপতি জেসমিন সুলতানা পারু, বিশিষ্ট পরিবেশ গবেষক প্রফেসর ড. ইদ্রিস আলী প্রমুখ।
‘সংরক্ষিত এলাকায় বাণিজ্যিক বাণিজ্যিক স্থাপনা হতে পারেনা’
সিডিএর সাবেক চেয়ারম্যান ও মহানগর আওয়ামী লীগের কোষাধ্যক্ষ আব্দুচ ছালাম বলেছেন, সিআরবি সংরক্ষিত এলাকা। সেখানে কোন বাণিজ্যিক স্থাপনা হতে পারে না। বিশেষায়িত হাসপাতাল হোক এটা সবাই চায়। তবে তা কোনভাবেই চট্টগ্রামের ঐতিহ্য ধ্বংস করে নয়। এক বিবৃতিতে তিনি আরও বলেন, ভৌগলিক অবস্থান ও বন্দরের সুবিধা বিবেচনায় তৎকালীন ব্রিটিশ সরকার আসাম বেঙ্গল রেলওয়ের কর্মকাণ্ড পরিচালনার জন্য কেন্দ্রীয় রেল ভবন প্রতিষ্ঠার জন্য পূর্ববঙ্গের চট্টগ্রামকে বেছে নিয়েছিল। চট্টগ্রাম বন্দরের অদূরেই নৈসর্গিক শোভামন্ডিত খুব বেশী উঁচু নয় এমন পাহাড়ের মাঝখানেটাতেই ১৮৯৯ সালে সেন্ট্রাল রেলওয়ে বিল্ডিংটি নির্মাণ করে। নান্দনিক স্থাপত্যশৈলীতে গড়া রেলওয়ে ভবন, রেলওয়ে হাসপাতাল, স্টাফ কোয়ার্টার ও শতাধিক বৎসরেরও অধিক বয়সী বৃক্ষরাজি অনেক গুরুত্বপূর্ণ ইতিহাসের সাক্ষী হয়ে এখনো সমহিমায় টিকে আছে। এখানে রয়েছে মহান মুক্তিযুদ্ধের বীর শহীদদের সমাধি। সবুজ ধ্বংস করে এখানে কোন স্থাপনা করা যাবে না।
অভিযোগ করা হবে দুদকে
সরকারকে ‘ভুল’ তথ্য দিয়ে সিআরবিতে হাসপাতাল নির্মাণে ইউনাইটেড প্রাইভেট লিমিটেডকে অনুমতি দেয়ার সাথে জড়িত কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে দুর্নীতি দমন কমিশন-দুদকে অভিযোগ দিচ্ছে মানবাধিকার সংগঠন বাংলাদেশ হিউম্যান রাইটস ফাউন্ডেশন বিএইচআরএফ। বিএইচআরএফ’র মতে এটি একটি ফৌজদারী অপরাধ। এর সাথে জড়িত সবাইকে আইনের আওতায় আনতে হবে।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: চট্টগ্রাম


আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ