Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

নগরে খেলার মাঠ, পার্ক ও উন্মুক্ত স্থান সংরক্ষণের আহ্বান

আলোচনা সভায় বক্তারা

স্টাফ রিপোর্টার | প্রকাশের সময় : ১৮ জুলাই, ২০২১, ৫:৪৬ পিএম

ঢাকা সিটি কর্পোরেশন এলাকার আয়তন প্রায় ৩০৫ বর্গ কিলোমিটার এবং এ শহরে ২ কোটিরও বেশি লোকের বসবাস। ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশন এলাকায় মাঠ ৬টি, পার্ক ২১টি, শিশু পার্ক ৪টি ও ঈদগাহ মাঠ ৩টি এবং ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশন এলাকায় পার্ক ২৮টি ও খেলার মাঠ ১২টি। যা প্রয়োজনের তুলনায় অত্যন্ত অপ্রতুল। রাজউকের জরিপ থেকে দেখা গেছে ঢাকার দুই সিটি কর্পোরেশনের ১২৯টি ওয়ার্ডের মধ্যে ৩৭টিতে কোন খেলার মাঠ কিংবা পার্ক নেই। এতে শিশুদের, বিশেষত মেয়ে শিশু এবং প্রতিবন্ধী শিশুদের শারীরিক ও মানসিক বিকাশে নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে। এ বিষয়টি বিবেচনায় ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশন বর্তমানে রাজধানীর প্রায় ৪০টি মাঠ ও পার্ক আধুনিকায়নের কাজ করছে। তবে সাম্প্রতিককালে কিছু উদ্যোগ গ্রহণ করা হচ্ছে যা মাঠ-পার্ক সংরক্ষণ বা উন্নয়নের পরিপন্থী। যেকোন উন্নয়ন কার্যক্রম গ্রহণের ক্ষেত্রে মাঠ-পার্ককে প্রাধান্য দেয়া প্রয়োজন। পাশাপাশি যে ওয়ার্ডগুলোতে মাঠ পার্ক নেই, সেখানে জায়গা অধিগ্রহণ করে মাঠ-পার্কের ব্যবস্থা করা যেতে পারে।

রোববার (১৮ জুলাই) ওয়ার্ক ফর এ বেটার বাংলাদেশ ট্রাস্ট এর উদ্যোগে ‘নগরে খেলার মাঠ,পার্ক ও উন্মুক্ত স্থান সংরক্ষণের প্রয়োজনীয়তা’ শীর্ষক ভার্চুয়াল আলোচনা সভায় বক্তারা এ অভিমত ব্যক্ত করেন।

ওয়ার্ক ফর এ বেটার বাংলাদেশ ট্রাস্টের সিনিয়র প্রকল্প কর্মকর্তা জিয়াউর রহমান এর সঞ্চালনায় আলোচনা সভায় মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন ওয়ার্ক ফর এ বেটার বাংলাদেশ ট্রাস্ট এর প্রকল্প কর্মকর্তা নাঈমা আকতার। তিনি তার উপস্থাপনায় বলেন, ঢাকার দুই সিটি কর্পোরেশনের ১২৯টি ওয়ার্ডের মধ্যে ৩৭টিতেই নেই কোন খেলার মাঠ বা পার্ক। প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের জন্য বরাদ্দকৃত খেলার মাঠটি জরাজীর্ণভাবে পরে আছে দীর্ঘদিন যাবত। পার্ক ও খেলার মাঠে নারী, শিশু, বৃদ্ধ, প্রতিবন্ধী ব্যক্তি, দরিদ্র মানুষসহ সকলের প্রবেশগম্যতা অবশ্যই নিশ্চিত করা প্রয়োজন। সামাজিকীকরণের সুযোগ তৈরির জন্য এলাকাভিত্তিক পরিত্যক্ত বা অব্যবহৃত স্থানসমূহ চিহ্নিত করে সেগুলো সামান্য পরিবর্তনের মাধ্যমে সামাজিকীকরণের স্থানে পরিণত করা যেতে পারে।

বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব প্ল্যানার্স (বিআইপি) এর সাধারণ সম্পাদক ও নগর পরিকল্পনাবিদ ড. আদিল মুহাম্মদ খান বলেন, নগরবাসীর প্রয়োজন অনুযায়ী ব্লক আকারে মাঠ-পার্ক তৈরি করা যেতে পারে। পার্ক ও খেলার মাঠ উন্নয়ন কালে অনেক সময় প্রাকৃতিক পরিবেশ নষ্ট করে বাণিজ্যিক অবকাঠামো তৈরির পরিকল্পনা করা হয়। এ ধরণের কার্যক্রম গ্রহণ থেকে বিরত থাকতে হবে। আমাদের যেহেতু জায়গার স্বল্পতা রয়েছে সে ক্ষেত্রে পকেট ওপেন পাবলিক স্পেস তৈরি করা যেতে পারে। পর্যাপ্ত মাঠ-পার্ক নিশ্চিতের লক্ষ্যে সকল সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে এক হয়ে কাজ করতে হবে।

ভূমিজ লিমিটেড এর প্রতিষ্ঠাতা ও সিইও ফারহানা রশীদ তনু বলেন, মাঠ-পার্ক এর অবকাঠামো উন্নয়নের আগে ব্যবস্থাপনার দিকে লক্ষ্য রাখতে হবে। রক্ষনাবেক্ষণ এর জন্য আমাদেরও কিছু দায়িত্ব রয়েছে। আমরা পরীক্ষক্ষমূলকভাবে ছোট ছোট কিছু গণপরিসর তৈরি করতে পারি। মানুষের চাহিদা অনুযায়ী অবকাঠামো তৈরি করতে হবে। নগর উন্নয়নে নি¤œ আয়ের মানুষের চাহিদা ও প্রয়োজনীতা অনুযায়ী পরিকল্পনা করতে হবে। বাংলাদেশ সোসাইটি ফর চেঞ্জ অ্যান্ড অ্যাডভোকেসি নেক্সাস (বি-স্ক্যান) এর সাধারণ সম্পাদক সালমা মাহবুব বলেন, বর্তমান সময়ে ঢাকা শহরে অবস্থিত পার্ক ও খেলার মাঠে কোন প্রতিবন্ধী মানুষের প্রবেশগম্যতা নেই। নগর উন্নয়নেও প্রতিবন্ধী মানুষের প্রবেশগম্যতার বিষয়টি তেমন দেখা যাচ্ছে না। যে সকল মাঠ পার্ক সংস্কার করা হচ্ছে সেখানে প্রতিবন্ধী মানুষের প্রবেশগম্যতা নিশ্চিত করা হচ্ছে না। উন্নয়ন কার্যক্রমে প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের সম্পৃক্ততা নিশ্চিত করা প্রয়োজন।

ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনের প্রধান নগর পরিকল্পনাবিদ মাকসুদ হাসেম বলেন, নগরে বৃহৎ আকারে পাবলিক স্পেস বিষয়ে আমরাও চিন্তা করছি। তবে সে ক্ষেত্রে কিছু সীমাবদ্ধতা রয়েছে। পার্ক ও খেলার মাঠ উন্নয়নে সকল প্রতিবন্ধী মানুয়ের প্রবেশগম্যতা নিশ্চিতের জন্য আমরা কাজ করে যাচ্ছি। পার্ক ও খেলার মাঠ তদারকিতে আমরা আইসিটির সহায়তায় নিতে পারি। আমাদের মাঠ, পার্কগুলো ব্যবস্থাপনার ক্ষেত্রে সমস্যা হয়েছে। এগুলো সমাধানে আমরা কাজ করছি। ডিএনসিসি মাঠ, পার্ক ও উন্মুক্তস্থান সংরক্ষণে কাজ করছে। ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের প্রধান নগর পরিকল্পনাবিদ মো. সিরাজুল ইসলাম বলেন, ডিএসসিসি’র আওতাধীন সকল মাঠ, পার্ক সকলের মতামতের ভিত্তিতে উন্নয়ন করা হচ্ছে। ঢাকা শহরের মাঠ, পার্ক শুধু দুই সিটি কর্পোরেশনেরই নয় এখানে গণপূর্ত, রাজউকেরও কিছু মাঠ, পার্ক রয়েছে। শহরে সকল খেলার মাঠ, পার্কগুলোকে তালিকাভুক্ত করে একটি ম্যাপিং করা হচ্ছে। যেসকল ওয়ার্ডে মাঠ, পার্ক নেই সেগুলো চিহিৃত করা যেতে পারে। নগরবাসীর শারিরীক ও মানসিক স্বাস্থ্যের জন্য মাঠ, পার্ক এর বিকল্প নাই।

অনুষ্ঠানে সভাপতির বক্তব্যে ওয়ার্ক ফর এ বেটার বাংলাদেশ ট্রাস্ট এর পরিচালক গাউস পিয়ারী বলেন, শিশু থেকে বৃদ্ধ, প্রতিবন্ধী-অপ্রতিবন্ধী ব্যক্তিসহ সকলের কথা মাথায় রেখে নগর উন্নয়নের চিন্তা করতে হবে। উন্মুক্তস্থানগুলো নারীরা যাতে ব্যবহার করতে পারে সে জন্য তাদের নিরাপত্তা নিশ্চিতে গুরুত্ব দিতে হবে। নগরের যে সকল স্থানে মাঠ, পার্ক নেই সেখানে কিভাবে মাঠ, পার্ক তৈরি করা যায় সে বিষয়ে কর্পোরেশনকে উদ্যোগী হতে হবে।

ভার্চুয়াল আলোচনা সভায় উপস্থিত ছিলেন সাফ এর নির্বাহী পরিচালক মীর আবদুর রাজ্জাক, ঢাকা আইডিয়াল ক্যাডেট স্কুলের প্রধান শিক্ষক এম এ মান্নান মনির, ধ্রুব তারা যুব উন্নয়ন ফাউন্ডেশনের পরিচালক অর্ক চৌধুরী, ডিজেবিলিটি ডিফারেন্ট প্রোগ্রাম (ডিডিপি)-এর প্রতিষ্ঠাতা মো জাকির হোসেন, টার্নিং পয়েন্টের নির্বাহী পরিচালক মো. ফরহাদ হোসেন, এইচডিডিএফ এর চেয়ারম্যান রাজিব শেখ, ঢাকা ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির ফারহানা জামান লিজাসহ আরো অনেকে।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ