Inqilab Logo

সোমবার ১৮ নভেম্বর ২০২৪, ০৩ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ১৫ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

আল্লাহর পথে অর্থ-সম্পদ ব্যয় করা

এ. কে. এম. ফজলুর রহমান মুনশী | প্রকাশের সময় : ১৮ জুলাই, ২০২১, ১২:০০ এএম

বর্তমানে বিশ্বজুড়ে করোনাভাইরাসের প্রকোপ বেড়েই চলেছে। একদিকে যেমন প্রাণহানী বাড়ছে, অন্যদিকে দরিদ্র্যতার কষাঘাতে মানুষ দিন দিন জর্জরিত হয়ে পড়ছে। এহেন নাজুক মুহূর্তে মুসলিম মিল্লাতের ধনবান শ্রেণির উচিত দীন-দরিদ্রদের অভাব বিমোচন ও প্রয়োজন পুরনের জন্য সামর্থ্য অনুসারে অর্থ-সম্পদ ব্যয় করা। মানবতার সেবায় আত্মনিয়োগ করা। আল্লাহর পথে ব্যয় করাকে আরবিতে ‘ইনফাক ফী সাবিলিল্লাহ’ বলা হয়। আরবি ‘ইনফাক’ শব্দটি ‘নাফাক’ মূল ধাতু হতে উৎপন্ন। এর অর্থ সুরঙ্গ যার উভয় মুখ খোলা। অর্থাৎ যার এক দিক দিয়ে প্রবেশ করে অন্য দিক দিয়ে বের হওয়া যায়। মুসলিম মিল্লাতের অর্থ-সম্পদ পুঞ্জীভূত হয়ে থাকার জন্যে নয়, বরং একদিকে আয় হবে, অন্যদিকে তেমন তা’ ব্যয় হতে থাকবে। এই আয় ও ব্যয়ের মাধ্যমেই ইসলামী সমাজব্যবস্থা যেমন অবিচল থাকবে, তেমনি ব্যক্তি, পরিবার, সমাজ ও রাষ্ট্রের সকল অঙ্গনে শান্তি, স্বস্তি, শৃঙ্খলা ও ন্যায়ানুবর্তিতা অব্যাহত থাকবে।

মুসিবতের দিন আসার পূর্বেই দান খয়রাত করা উচিত। আল কোরআনে ইরশাদ হয়েছে : (ক) হে মুমিনগণ! আমি তোমাদেরকে যে রিযিক দিয়েছি, তা’ হতে দান করো, সে দিন আসার পূর্বে, যে দিন কোনো বেচাকেনা থাকবে না, কোনো বন্ধুত্ব থাকবে না, কোনো সুপারিশ থাকবে না। আর অবিশ্বাসীরাই সীমালঙ্ঘনকারী। (সূরা বাকারাহ : আয়াত-২৫৪)।

(খ) আর আমি তোমাদেরকে যে রিযিক দিয়েছি তা’ থেকে দান কর, তোমাদের কারো মৃত্যু আসার পূর্বে। কেননা তখন সে বলবে, হে আমার প্রতিপালক! যদি আপনি আমাকে আরো কিছু দিন পর্যন্ত অবকাশ দিতেন, তাহলে আমি দান-সদকাহ করতাম। আর সৎ লোকদের অন্তর্ভুক্ত হতাম। (সূরা মুনাফিকুন : আয়াত-১০)। (গ) আর আল্লাহ কখনো কোনো ব্যক্তিকেই অবকাশ দেবেন না, যখন তার নির্ধারিত সময় এসে যাবে। আর তোমরা যা কর সে সম্পর্কে আল্লাহ সম্যক অবগত। (সূরা মুনাফিকুন : আয়াত-১১)।

সচ্ছল ও অসচ্ছল সর্বাবস্থায়ই দান করা কল্যাণকর। আল কোরআনে ইরশাদ হয়েছে : (ক) যারা সুসময়ে ও দুঃসময়ে দান করে এবং ক্রোধ সংবরণ করে ও মানুষকে ক্ষমা করে। আর আল্লাহ সৎকর্মশীলদের ভালোবাসেন। (সূরা আলে ইমরান : আয়াত-১৩৪)। (খ) আর তোমরা আল্লাহর রাস্তায় দান কর এবং নিজ হাতে নিজেদেরকে ধ্বংসে নিক্ষেপ করো না। আর সৎ কর্ম কর। নিশ্চয়ই আল্লাহ সৎ কর্মশীলদেরকে ভালোবাসেন। (সূরা বাকারাহ : আয়াত-১৯৫)।

পরিবার পরিজনদের জন্য ব্যয় করাটাও দান তুল্য। আল কোরআনে ইরশাদ হয়েছে : (ক) আর তোমরা যথাসাধ্য আল্লাহকে ভয় কর, শ্রবণ কর, আনুগত্যকর, এবং তোমাদের নিজেদের কল্যাণে ব্যয় কর; আর যাদেরকে অন্তরের কার্পণ্য থেকে রক্ষা করা হয়, তারাই মূলত : সফলকাম। (সূরা তাগাবুন : আয়াত-১৬) (খ) হযরত সাওবান (রা.) হতে বর্ণিত : রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন : সর্বোত্তম দীনার হলো ঐ দীনার যা নিজের সন্তান-সন্তুতি ও পরিবারের জন্য ব্যয় করা হয়। আর সে দীনারও উত্তম সে দীনার জিহাদের জন্য রক্ষিত পশুর জন্য ব্যয় করা হয়। আর সে দীনারও উত্তম যে দীনার জিহাদে অংশগ্রহণকারী স্বীয়-সাথীগণের জন্য খরচ করা হয়। (সহীহ মুসলিম : ২/৯৯৪)।

দান করলে আল্লাহপাক প্রতিদান প্রদান করেন। আল কোরআনে ইরশাদ হয়েছে : (ক) যদি তোমরা আল্লাহকে উত্তম ঋণ দান করো, তিনি তা তোমাদের জন্যে দ্বিগুণ করে দিবেন এবং তোমাদেরকে ক্ষমা করে দিবেন। আল্লাহ গুণগ্রাহী, পরম ধৈর্যশীল। (সূরা তাগাবুন : আয়াত-১৭) (খ) হযরত আবু হুরায়রা (রা.) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন : যখনই আল্লাহর বান্দারা প্রত্যুষে শয্যা ত্যাগ করে, তখনই দু’জন ফিরিশতা অবতীর্ণ হন। তন্মধ্যে একজন বলতে থাকেন, হে আল্লাহ! তুমি দাতা ব্যক্তিকে প্রতিদান দাও। অন্যজন বলতে থাকেন, হে আল্লাহ! কৃপণ ব্যক্তিকে ধ্বংস করো। (সহীহ বুখারী : ২/১৪৪২)। (গ) হযরত আবু হুরায়রা (রা.) হতে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন : আল্লাহ তায়ালা ফরমান : হে আদম সন্তান! তুমি দান করতে থাক, আমিও তোমাকে দান করতে থাকব। (সহীহ বুখারী : হাদীসে কুদসী : ৭/৫৩৫২)।

দান একটি শস্য বীজ দানার ন্যায়। যা বাড়তেই থাকে। আল কোরআনে ইরশাদ হয়েছে : (ক) যারা আল্লাহর পথে তাদের সম্পদ ব্যয় করে, তাদের উপমা একটি বীজের মতো। যা সাতটি শীষ উৎপন্ন করল, প্রতিটি শীষে রয়েছে একশত দানা। আর আল্লাহ যাকে চান তার জন্য বাড়িয়ে দেন। আর আল্লাহ প্রাচুর্যময়, সর্বজ্ঞ। (সূরা বাকারাহ : আয়াত-২৬১)। (খ) হযরত খুরাইম ইবনে ফাতিক (রা.) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন : যে আল্লাহর পথে একটি বস্তু দান করল, তার জন্য সাতশতগুণ সওয়াব লেখা হবে। (জামেয়ে তিরমিজী : ৪/১৬২৫)।

প্রিয় বস্তু দান করাই উত্তম। আল কোরআনে ইরশাদ হয়েছে : তোমরা কখনো সওয়াব অর্জন করতে পারবে না, যতক্ষণ না ব্যয় করবে তা থেকে, যা তোমরা ভালোবাস। আর যা কিছু তোমরা ব্যয় করবে, তবে নিশ্চয়ই আল্লাহ সে বিষয়ে সম্যক পরিজ্ঞাত। (সূরা আলে ইমরান : আয়াত-৯২)।



 

Show all comments
  • তৌহিদুজ জামান ১৮ জুলাই, ২০২১, ১:৩৯ এএম says : 0
    আল্লাহর পথে দানকে কুরআনের ভাষায় বলা হয় ইনফাক ফি সাবিলিল্লাহ। ইনফাকের মূল ধাতু নিফাক এর অর্থ হল সুড়ঙ্গ। যার একদিক দিয়ে প্রবেশ করে অপর দিক দিয়ে বের হওয়া যায়। তার মানে হল মুমিনের মাল সম্পদ সঞ্চিত হয়ে থাকার জন্য নয়। তার সম্পদ এক দিক থেকে যেমন আয় হবে তেমনী অপর দিকে তা ব্যয় হয়ে যাবে।
    Total Reply(0) Reply
  • কুদ্দুস তালুকদার ১৮ জুলাই, ২০২১, ১:৩৯ এএম says : 0
    ‘খরচ কর আল্লাহর পথে, নিজের হাতে নিজকে ধ্বংসের মুখে ঠেলে দিওনা। উক্তরূপে নেক কাজে আঞ্জাম দাও। এভাবে যারা নেক কাজে উত্তমরূপে আঞ্জাম দিতে যতœবান আল্লাহ তাদের অবশ্যই ভালবাসেন।’ (বাকারা ১৯৫)
    Total Reply(0) Reply
  • তানিম আশরাফ ১৮ জুলাই, ২০২১, ১:৪০ এএম says : 0
    আবু যার (রা) থেকে বর্ণিত। নবী (স) বলেন, ‘কিয়ামত দিবসে আল্লাহ তায়ালা তিন ব্যক্তির সাথে কথা বলবেন না, তাদের দিকে তাকাবেন না, তাদেরকে পবিত্র করবেন না এবং তাদের জন্য রয়েছে যন্ত্রনাদায়ক শাস্তি। কথাটি তিনি তিনবার বললেন। আবু যার (রা) বললেন, ওরা ধ্বংস হোক, ক্ষতিগ্রস্ত হোক - কারা তারা হে আল্লাহর রাসূল? তিনি বললেন টাখনুর নীচে ঝুলিয়ে যে কাপড় পরিধান করে, দান করে যে খোঁটা দেয় এবং মিথ্যা শপথ করে যে ব্যবসায়ী পণ্য বিক্রয় করে।’ (সহীহ মুসলিম শরীফ)
    Total Reply(0) Reply
  • রুকাইয়া খাতুন ১৮ জুলাই, ২০২১, ১:৪১ এএম says : 0
    রাসূলুল্লাহ (স)বলেন, যে ব্যক্তি মহান আল্লাহর পথে কোন কিছু ব্যয় করবে তাকে সাত শত গুন সওয়াব প্রদান করা হবে। (মুসনাদে আহমাদ)
    Total Reply(0) Reply
  • md zakir hossain ১৮ জুলাই, ২০২১, ৬:৫০ এএম says : 0
    the rasul{sm} told that once peple will not think about source of earning.
    Total Reply(0) Reply
  • শেখ আল হেলাল ১৮ জুলাই, ২০২১, ৮:১৫ এএম says : 0
    হযরত আয়েশা (রা) হতে বর্ণিত,একদা তিনি রসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে জিজ্ঞেস করলেন ইয়া রসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম, আমার দুই প্রতিবেশী আছে। এদের মধ্যে কাকে আমি উপহার দেব? রসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন দু'য়ের মধ্যে যার ঘরের দরজা তোমার নিকটবর্তী তাকে দিবে। মেশকাত শরীফ, হাদীস নং ১৮৪০
    Total Reply(0) Reply
  • Abdurrhim ১৮ জুলাই, ২০২১, ১০:২৬ এএম says : 0
    জিলহজ মাসের 9তারিখের রাখার চেষ্টা করুন সবাই বলছি
    Total Reply(0) Reply

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: ইসলাম

৩ মার্চ, ২০২৩
২ মার্চ, ২০২৩
১ মার্চ, ২০২৩
২৮ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩
২৬ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩

আরও
আরও পড়ুন