পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
পবিত্র কোরবানির শিক্ষা ত্যাগের শিক্ষা। কোরবানির শিক্ষা আল্লাহর হুকুমের সামনে বান্দার নিজেকে সোপর্দ করার শিক্ষা। লোক দেখানো কোরবানি বর্জন করে ইখলাস ওয়ালা কোরবানি করতে হবে।
আল্লাহ তায়ালা ইরশাদ করেন, আপনার পালনকর্তার উদ্দেশ্যে নামাজ পড়ুন ও কোরবানি করুন। (সুরা কাউছার, আয়াত নং ৩)। সুতরাং সক্ষমতা ও সুযোগ থাকা সত্তে¡ও যদি কেউ কোরবানি না করে তবে সে আল্লাহর বিধান লঙ্ঘনকারী হিসেবে বিবেচিত হবে। বিভিন্ন মসজিদে গতকাল জুমার খুৎবা-পূর্ব বয়ানে পেশ ইমাম ও খতিবরা এসব কথা বলেন। জুমার খুৎবা-পূর্ব বয়ানে পবিত্র কোরবানির গুরুত্ব, তাৎপর্য ও ফজিলত সর্ম্পকে বিভিন্ন মসজিদের পেশ ইমামরা গুরুত্বপূর্ণ বয়ান পেশ করেন। স্বাস্থ্যবিধি অনুসরণ করে নগরীর মসজিদগুলোর জুমার নামাজে উপচেপড়া ভিড় পরিলক্ষীত হয়। করোনা মহামারি থেকে মুক্তির জন্য মসজিদগুলোতে বিষেশ দোয়া করা হয়।
বায়তুল মোকাররম জাতীয় মসজিদের পেশ ইমাম মুফতি এহসানুল হক জিলানী গতকাল জুমার বয়ানে বলেন, কোরবানি হলো আল্লাহ তায়ালার সন্তুষ্টি অর্জনের অনন্য মাধ্যম। কোরবানির শুরু হয়েছিল হযরত আদম আলাইহিস সালামের দুই ছেলে হাবিল ও কাবিলের মধ্যে সংঘটিত কোরবানির মাধ্যমে।
কোরবানির ইতিহাস হযরত আদম আলাইহিস সালামের যুগ থেকে শুরু হলেও মুসলিম উম্মাহর প্রচলিত কোরবানি মূলতঃ হযরত ইবরাহিম আলাইহিস সালামের আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভের পরীক্ষায় হযরত ইসমাইল আলাইহি সালামকে কোরবানির স্মৃতিময় ঘটনার মাধ্যমেই সূচনা হয়েছে। আল্লাহ তায়ালা ইরশাদ করেন ‘যখন ইসমাইল আলাইহিস সালাম চলাফেরা করার বয়সে উপণীত হলেন; তখন হযরত ইবরাহিম আলাইহিস সালাম তাঁর প্রাণপ্রিয় সন্তানকে আল্লাহর রাস্তায় কোরবানির জন্য স্বপ্নে আদিষ্ট হন। (আর নবীদের স্বপ্ন কোনো কল্পনা প্রসূত ঘটনা নয় বরং তা আল্লাহ প্রদত্ত ওহী) হযরত ইবরাহিম আলাইহিস সালাম পুত্র ইসমাইলকে বললেন, ‘হে ছেলে! আমি স্বপ্নে দেখেছি যে, তোমাকে জবেহ করছি। এ বিষয়ে তোমার অভিমত কি? সে (হযরত ইসমাইল আলাইহিস সালাম) বললেন, পিতা! আপনাকে যা আদেশ করা হয়েছে, আপনি তা পালন করুন। আল্লাহর ইচ্ছায় আপনি আমাকে ধৈর্যশীলদের মধ্যে পাবেন’। পেশ ইমাম বলেন, রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, কোরবানি তোমাদের পিতা ইবরাহিম আলাইহিস সালামের সুন্নত। রাসুল (সা.) কোরবানির ফজিলত সম্পর্কে বলেন, কোরবানির পশুর প্রতিটি চুলের বিনিময়ে একটি করে নেকি দান করবেন। সাহাবায়ে কেরাম প্রশ্ন করলেন পশমের বিনিময়েও কি নেকি দিবেন? তিনি বললেন, প্রতিটি পশমের বিনিময়েও একটি করে নেকি দান করবেন’। আল্লাহ তায়ালা মুসলিম উম্মাহকে লোক দেখানো কোরবানি বর্জন করে ইখলাস ওয়ালা কোরবানি করার তৌফিক দান করুন। আমীন!
ঢাকার ডেমরার ঐতিহ্যবাহী দারুননাজাত সিদ্দিকীয়া কামিল মাদরাসা জামে মসজিদে জুমার খুৎবা-পূর্ব বয়ানে মাদরাসার প্রিন্সিপাল মাওলানা আবু বকর সিদ্দিক বলেন, কোরবানির শিক্ষা ত্যাগের শিক্ষা। কোরবানির শিক্ষা আল্লারহ হুকুমের সামনে বান্দার নিজেকে সোপর্দ করার শিক্ষা। প্রিন্সিপাল মাওলানা আবু বকর সিদ্দিক বলেন, কোরবানির শিক্ষা তাকওয়ার শিক্ষা। মহান আল্লাহ তায়ালা ইরশাদ করেন, আল্লাহর দরবারে না উহার (কোরবানির) গোশত পৌঁছে, না উহার রক্ত পৌঁছে; বরং তার কাছে তোমাদের তাকওয়া পৌঁছে।
হযরত আয়শা রাদি. বলেন যে, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেছেন, বনী আদম কোরবানির দিন এমন কোনো আমল করে না যে আমলটি কোরবানি করার চেয়েও আল্লাহর কাছে বেশি প্রিয়। কিয়ামতের দিন ঐ পশু তার শিং, খুর ও পশমসহ উঠবে। আর কোরবানির পশুর রক্ত জমিনে পড়ার আগেই আল্লাহ দরবারে তা কবুল হয়ে যায়। সুতরাং তোমরা এর দ্বারা আত্মতৃপ্তি লাভ কর।
ঢাকার বাংলা মটরস্থ বাইতুল মোবারক জামে মসজিদের অনারারী খতিব অধ্যাপক ড. মাওলানা মুহাম্মদ আব্দুর রশীদ গতকাল জুমার বয়ানে বলেন, আরবি ‘কোরবান’ ও ‘কোরবাতুন’ শব্দের অর্থ হচ্ছে নৈকট্য লাভ করা, নেক আমল দ্বারা মহান আল্লাহর নৈকট্য অর্জন করা। বাংলা ভাষায়, ‘কোরবানি’ মানে ত্যাগ, উৎসর্গ করা, পশু কোরবানির মাধ্যমে মহান আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জন করা। আল্লাহর নৈকট্য অর্জনকল্পে কোরবানির দিনে যে পশু জবাই করা হয়, তারই নাম ‘কোরবানি’। একই কারণে কোরবানির দিনকে ‘ইয়াওমুল-আদ্বহা’ ও কোরবানির ঈদকে ঈদুল-আদ্বহা বলা হয়।
হযরত আয়েশা সিদ্দিকা (রা.) বলেন, রাসুল (সা.) বলেছেন, আদম সন্তান কোরবানির দিন যত নেক আমল করে তার মধ্যে আল্লাহর কাছে সবচেয়ে প্রিয় আমল হচ্ছে (পশু কোরবানির মাধ্যমে) রক্ত প্রবাহিত করা। খতিব বলেন, আমাদের লক্ষ্য রাখতে হবে সমাজের পথশিশু, দিনমজুর, গরিব, দুঃখী, অসহায় কেউ যাতে ঈদের আনন্দ থেকে বঞ্চিত না হয়। মহান আল্লাহ আমাদেরকে ক্ষমা করুন, যাবতীয় বিপদাপদ থেকে রক্ষা করুন। আমীন!
মিরপুরের বাইতুল আমান কেন্দ্রীয় জামে মসজিদের খতীব মুফতি আবদুল্লাহ ফিরোজী গতকাল জুমার খুৎবা-পূর্ব বয়ানে বলেন, আসছে কোরবানিকে কেন্দ্র করে বহু মানুষ অশুভ প্রতিযোগিতায় লিপ্ত হয়। কে কার চেয়ে সুন্দর গরু কিনতে পারে, কার গরু মহল্লার মধ্যে সবচেয়ে দামি। অনেকে আবার ক্রয়কৃত গরুকে সাজিয়ে মহল্লায় চক্কর দেয়। যাতে এলাকাবাসী জানে যে, তার গরু এত টাকা দিয়ে কেনা হয়েছে। আল্লাহ তায়ালা আমাদেরকে তার সন্তুষ্টি অর্জন করার তৌফিক দান করুন। আমীন। ঢাকা উত্তরা ৩নং সেক্টরের মসজিদ আল-মাগফিরাহ এর খতিব মুফতি ওয়াহিদুল আলম জুমার খুৎবায় বলেন, সুরা হজের ৩৭নং আয়াতে আল্লাহ তায়ালা বলেন, কোরবানিকৃত পশুগুলোর গোশত ও রক্ত আল্লাহ তায়ালার নিকট পৌঁছে না বরং তোমাদের তাক্বওয়া তাঁর নিকট পৌঁছে। সুতরাং কোরবানি শুধুমাত্র আল্লাহ তায়ালাকে খুশি করার নিয়তে করতে হবে। সামাজিকতা রক্ষা বা মানুষ দেখানো কিংবা গোশত খাওয়ার নিয়ত হলে কোরবানি শুদ্ধ হবে না।
মিরপুরের ঐতিহ্যবাহী বাইতুল মামুর জামে মসজিদের খতিব মুফতি আব্দুর রহীম কাসেমী জুমার খুৎবা-পূর্ব বয়ানে বলেন, পশু জবাহের মাধ্যমে আল্লাহ নৈকট্য অর্জনের অপর নাম কোরবানি। ইসলামী শরীয়তে ১০ জিলহজ থেকে ১২ জিলহজ পর্যন্ত সময়ে আল্লাহর সন্তুষ্টির লক্ষ্যে নির্দিষ্ট পশু জবেহ করাকে কোরবানি বলা হয়। কোরবানি মহান আল্লাহর পক্ষ থেকে অবধারিত একটি গুরুত্বপূর্ণ ইবাদত। সক্ষমতা ও সুযোগ থাকা সত্তে¡ও যদি কেউ কোরবানি না করে তবে সে আল্লাহর বিধান লঙ্ঘনকারী হিসেবে বিবেচিত হবে। আল্লাহ সকলকে তৌফিক দান করুন। আমীন!
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।