Inqilab Logo

শুক্রবার ২৩ নভেম্বর ২০২৪, ০৮ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২০ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

নশ্বর দুনিয়া হলো পরীক্ষা কেন্দ্র

এ. কে . এম. ফজলুর রহমান মুন্শী | প্রকাশের সময় : ১৩ জুলাই, ২০২১, ১২:০০ এএম

ফুলে ফলে ভরা এই পৃথিবী আমাদের কত সুন্দর, মনোহর ও চিত্তাকর্ষক মনে হয়। আসলে কী তাই? না, এমনটি নয়। নশ্বর দুনিয়া হলো পরীক্ষা কেন্দ্র। এখানকার পরীক্ষায় যে উত্তীর্ণ হতে পারবে তার জন্যই অপেক্ষা করছে, পরকালীন অনন্ত জীবনের চূড়ান্ত সফলতা। আল কোরআনে মহান আল্লাহ পাক এই বিশেষত্বটি অত্যন্ত স্পষ্ট করে তুলে ধরেছেন। ইরশাদ হয়েছে : (ক) ‘আমি পৃথিবীর সবকিছু মানুষের জন্য চাকচিক্যময় করে দিয়েছি, যাতে নারী-পুরুষদের পরীক্ষা করতে পারি যে, তাদের মধ্যে কে ভালো কাজে উত্তম।’ (সূরা কাহফ : আয়াত-৭)

(খ) ‘তিনিই সৃষ্টি করেছেন মরণ ও জীবন, যাতে তোমাদের পরীক্ষা করতে পারেন কে তোমাদের মধ্যে কর্মে সর্বোত্তম! তিনি পরাক্রমশালী, ক্ষমাশীল।’ (সূরা মূলক : আয়াত-২) (গ) ‘হে মানবজাতি! তোমরা তোমাদের প্রতিপালককে ভয় কর এবং ভয় কর এমন এক দিনকে, যে দিন পিতা পুত্রের কোনো কাজে আসবে না এবং পুত্র ও পিতার কোনো উপকার করতে পারবে না। নিঃসন্দেহে আল্লাহপাকের প্রতিশ্রুতি সত্য। তাই দুনিয়ার এই জীবন যেন তোমাদের ধোঁকায় ফেলে না দেয় এবং আল্লাহ সম্পর্কে ধোঁকাবাজ শয়তান ও যেন তোমাদের ধোঁকায় না ফেলে’। (সূরা লুকমান : আয়াত-৩৩)

(ঘ)‘হে মানবজাতি! নিশ্চয়ই আল্লাহপাকের প্রতিশ্রুতি সত্য। কাজেই পার্থিব জীবন যেন তোমাদের ধোঁকায় ফেলে না দেয় এবং সেই প্রতারক শয়তান যেন কিছুতেই তোমাদের আল্লাহ সম্পর্কে প্রতারিত না করে।’ (সূরা ফাতির : আয়াত-৫)।

(ঙ) ‘অবশ্যই আমি তোমাদেরকে পরীক্ষা করব কিছুটা ভয়, ক্ষুধা, ধন সম্পদ ও জীবনের ক্ষয়-ক্ষতি দ্বারা, এবং ফল-ফসল বিনষ্টের মাধ্যমে। তবে, সুসংবাদ দাও ধৈর্যশীলদের’। (সূরা বাকারাহ : আয়াত ১৫৪)। উল্লিখিত পাঁচটি আয়াতে দুনিয়া নামক পরীক্ষা কেন্দ্রের স্বরূপ, এখনকার কর্তব্য কর্ম, জীবন-মরণের নাগর দোলা, পরকালীন হিসাব-নিকাশের ভয়াবহতা, ও কোনোক্রমেই শয়তান ও পার্থিব জীবনের প্রতারণার ফাঁদে পা না দেয়ার প্রতি সতর্ক করা হয়েছে।

শুধু তা-ই নয়, এই পরীক্ষা কেন্দ্রের পরীক্ষার বস্তগুলো সম্পর্কে ও আল্লাহপাক মানুষকে অবহিত করেছেন। পার্থিব জগতে মহান আল্লাহপাক ধন-সম্পদ ও সন্তান-সন্ততি দান করেন মানুষকে পরীক্ষার জন্য। এতদ সম্পর্কে কোরআনুল কারীমে ইরশাদ হয়েছে : (ক) ‘আর জেনে রাখ, তোমাদের ধন সম্পদ এবং সন্তান-সন্ততি পরীক্ষা ও বিপর্যয়ের বস্তু। অবশ্য আল্লাহর কাছেই রয়েছে বড় ধরনের প্রতিদান’। (সূরা আনফাল : আয়াত-২৮)।

(খ) ‘বস্তুত : তোমাদের ধন-সম্পদ ও সন্তান-সন্ততি তো কেবল পরীক্ষা স্বরূপ। আর আল্লাহর কাছেই রয়েছে মহাপুরস্কার।’ (সূরা তাগাবুন : আয়াত-১৫)। বর্তমান সমাজের নারী-পুরুষ নির্বিশেষে দুনিয়ার জীবনের খেল-তামাশা ও প্রাচুর্যের লোভে পড়ে পরকালীন মহা পুরস্কারের কথা বেমালুম ভুলে যাচ্ছে। অথচ তারা জানেনা বা চিন্তা করে দেখে না যে, পরকালের জীবনই উত্তম ও চিরস্থায়ী। এই দিক নির্দেশনা আল্লাহপাক আল কোরআনে খোলাখুলি প্রদান করেছেন। ইরশাদ হয়েছে : (ক) ‘তোমরা জেনে রাখ, পার্থিব জীবন ক্রীড়া-কৌতুক, সাজ-সজ্জা, পারস্পরিক গর্ব অহঙ্কার এবং ধন সম্পদ ও সন্তান-সন্ততির প্রাচুর্য ছাড়া আর কিছুই নয়। যেমন এক পশলা বৃষ্টির অবস্থা, যার কলে উৎপাদিত সবুজ ফসল কাফেরদের চমৎকৃত করে। এর পর তা’ শুকিয়ে যায়, ফলে তুমি তাকে পীতবর্ণ দেখতে পাও। এরপর তা’ খরকুটা হয়ে যায়। তেমনি দুনিয়ার চাকচিক্যের পরিবর্তে আখেরাতে রয়েছে কঠিন শাস্তি এবং আল্লাহর ক্ষমা ও সন্তোষ, পার্থিব জীবন প্রতারণার সামগ্রী ছাড়া আর কিছুই নয়’। (সূরা হাদীদ : আয়াত-২০)। (খ) ‘পার্থিব জীবন তো কেবল খেলাধুলা; যদি তোমরা বিশ্বাসী হও এবং সংযম অবলম্বন কর,আল্লাহপাক তোমাদেরকে তোমাদের প্রতিদান প্রদান করবেন। আর তিনি তোমাদের কাছে ধন সম্পদ কামনা করেন না’। (সূরা মোহাম্মাদ : আয়াত-৩৬)।

(গ) ‘এই পার্থিব জীবন ক্রীড়া-কৌতুক ছাড়া আর কিছুই নয়। পরকালের গৃহেই রয়েছে প্রকৃত জীবন। যদি তারা একথা জানত? (সূরা আনকাবুত : আয়াত-৬৪)।

মোট কথা, এই দুনিয়া ক্ষণস্থায়ী। একদিন এ জগতের সবকিছু ধ্বংস হয়ে যাবে। তাই মানুষের উচিত আল্লাহর প্রতিনিধি হিসেবে আল্লাহর বিধানকে ব্যক্তি জীবন, সামাজিক জীবন ও রাষ্ট্রীয় জীবনের সর্বত্র পরিপূর্ণভাবে প্রতিষ্ঠিত করা। এছাড়া পরকালীন জীবনে সফলতার আশা করা বৃথা।



 

Show all comments
  • শেখ আল হেলাল ১৩ জুলাই, ২০২১, ১১:১২ এএম says : 0
    নারী, সন্তান,রাশিকৃত স্বণরৌপ্য আর চিহ্নিত অশ্বরাজি, গবাদি পশু এবং ক্ষেত-খামারের প্রতি আসক্তি মানুষের নিকট সুশোভিত করা হয়েছে। এইসব ইহজীবনের ভোগ্য বস্তু। আর আল্লাহ, তাঁরই নিকট রয়েছে উত্তম আশয়স্হল। সূরা আলে ইমরান, আয়াত ১৪। মহান আল্লাহ তায়ালা আমাদেরকে দুনিয়া ও আখেরাতের কল্যাণ দান করুন আমীন।
    Total Reply(1) Reply
    • ferdous ali ১৩ জুলাই, ২০২১, ৫:৫১ পিএম says : 0
      মোট কথা, এই দুনিয়া ক্ষণস্থায়ী। একদিন এ জগতের সবকিছু ধ্বংস হয়ে যাবে। তাই মানুষের উচিত আল্লাহর প্রতিনিধি হিসেবে আল্লাহর বিধানকে ব্যক্তি জীবন, সামাজিক জীবন ও রাষ্ট্রীয় জীবনের সর্বত্র পরিপূর্ণভাবে প্রতিষ্ঠিত করা। এছাড়া পরকালীন জীবনে সফলতার আশা করা বৃথা।alright.. aamin..

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: ইসলাম

৩ মার্চ, ২০২৩
২ মার্চ, ২০২৩
১ মার্চ, ২০২৩
২৮ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩
২৬ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩

আরও
আরও পড়ুন